
সূচিপত্র
ইসলামী শরী‘আতে সুন্নাহর অপরিহার্যতা
আল্লাহ তা‘আলা রাসূলুল্লাহ সা. কে সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ আল-কুরআন দিয়ে সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেছেন। পাশাপাশি রাসূলুল্লাহ সা. এর মুখ নিসৃত বাণী, আচার-ব্যবহার ও কর্মকে অনুকরণীয় আদর্শ হিসেবে গোষণা করেছেন। কুরআন ও সুন্নাহ ইসলামী শরী‘আতের অন্যতম উৎস ও জীবনবিধানের মূলভিত্তি। পবিত্র কুরআনে ইসলামী জীবনব্যবস্থার মূলনীতি বাস্তবায়নের কার্যকর পন্থা ও যাবতীয় বিধিবিধানের বিস্তৃত বিশ্লেষণ বিধৃত হয়। আল-কুরআন ইসলামের প্রদীপ স্তম্ভ এবং সুন্নাহ এর আলোক রশ্মি। আলোহীন প্রদীপ যেমন অবাস্তব, সুন্নাহকে বাদ দিয়ে কুরআন অনুধাবনের চেষ্টাও তেমন ব্যর্থ প্রয়াস। ইসলামী জ্ঞান-বিজ্ঞানে কুরআন যেন হৃদপি- আর সুন্নাহ বা হাদীস এ হৃদপি-ের সাথে সংযুক্ত ধমনী। সুন্নাহ এক দিকে যেমন আল-কুরআনের নির্ভুল ব্যাখ্যা দান করে, অনুরূপভাবে এটি উপস্থাপন করে কুরআনের বাহক রাসূলুল্লাহ সা. এর সর্বোত্তম জীবনচরিত, কর্মনীতি ও আদর্শ এবং তাঁর কথা, কাজ, হিদায়াত ও উপদেশাবলীর বিস্তচারিত বিবরণ।
রাসূলুল্লাহ সা. এর জীবনের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, ইতিহাস, শাসন ও বিচার, বাণিজ্য ও কৃষি, আন্তর্জাতিক আইন-কানুন, সমরনীতি, দেশ ও জনসেবা প্রভৃতি সংক্রান্ত শিক্ষা সম্যকরূপে অবগত হতে হলে, আত্মকর্মফল, পরকাল, মানবীয় জ্ঞান ও বিবেকের দাসত্ব মোচন এবং আত্মার বিকাশ ও মুক্তি সম্বন্ধে রাসূলুল্লাহ সা. যে মহীয়সী শিক্ষা ও স্বর্গীয় আদর্শ এ বসুন্ধরায় সু-প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন, তা জ্ঞাত হতে হলে সুন্নাহর আশ্রয় গ্রহণ ব্যতীত গত্যন্তর নেই। আবূ ইসহাক ইবরাহীম ইবন মূসা আশ-শাতিবী (মৃ. ৭৯০/১৩৮৮) এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘সুন্নাহ হচ্ছে কুরআনের সংক্ষিপ্ত তথ্যের বর্ণনা দানকারী, কুরআনের দ্ব্যর্থবোধক তথ্যের স্পষ্ট ব্যাখ্যাদানকারী ও কুরআনের ইঙ্গিতের বিস্তৃত বিবরণ দানকারী।’ এজন্য ইসলামী জীবনবিধানে কুরআনের পরেই সুন্নাহর অপরিহার্যতা অনস্বীকার্য। বস্তুতঃ সুন্নাহ ব্যতিরেকে ইসলামের রূপ রেখা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা কোন মতেই কল্পনা করা যায় না। রাসূলুল্লাহ সা. এর সুন্নাহ যে ইসলামী শরী‘আতের উৎস মহাগ্রন্থ আল-কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে তার দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করা হয়েছে নিম্নোক্তভাবে,
আল- কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে রাসূলুল্লাহ সা. কে অনুসরণ করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে এবং তাঁর অনুসরণকে প্রকারান্তে আল্লাহর অনুসরণ বলে সাব্যস্ত করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
مَّنْ يُطِعِ الرَّسُوْلَ فَقَدْ أَطَاعَ اللهَ
“যে ব্যক্তি রাসূলের আনুগত্য করল সে মূলত আল্লাহরই আনুগত্য করল।”
(সূরাহ আন-নিসা: ৮০)
রাসূলুল্লাহ সা. এর প্রতি ঈমান না আনলে আল্লাহর প্রতি ঈমান আনয়ন পরিপূর্ণ হয় না। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
اِنَّمَا الۡمُؤۡمِنُوۡنَ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا بِاللّٰہِ وَ رَسُوۡلِہٖ وَ اِذَا کَانُوۡا مَعَہٗ عَلٰۤی اَمۡرٍ جَامِعٍ لَّمۡ یَذۡہَبُوۡا حَتّٰی یَسۡتَاۡذِنُوۡہُ ؕ اِنَّ الَّذِیۡنَ یَسۡتَاۡذِنُوۡنَکَ اُولٰٓئِکَ الَّذِیۡنَ یُؤۡمِنُوۡنَ بِاللّٰہِ وَ رَسُوۡلِہٖ ۚ فَاِذَا اسۡتَاۡذَنُوۡکَ لِبَعۡضِ شَاۡنِہِمۡ فَاۡذَنۡ لِّمَنۡ شِئۡتَ مِنۡہُمۡ وَ اسۡتَغۡفِرۡ لَہُمُ اللّٰہَ ؕ اِنَّ اللّٰہَ غَفُوۡرٌ رَّحِیۡمٌ
“ঈমানদার তো তারাই যারা ঈমান আনে আল্লাহর উপর ও তাঁর রসূলের উপর আর তারা যখন রসূলের সঙ্গে সমষ্টিগত কাজে মিলিত হয়, তখন তার অনুমতি না নিয়ে চলে যায় না। যারা তোমার কাছে অনুমতি প্রার্থনা করে তারাই আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি বিশ্বাসী। কাজেই তাদের কেউ তাদের কোন কাজে যাওয়ার জন্য তোমার কাছে অনুমতি চাইলে তুমি তাদের যাকে ইচ্ছে অনুমতি দিবে আর তাদের জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করবে। আল্লাহ বড়ই ক্ষমাশীল, বড়ই দয়ালু। ”
(সূরাহ আন-নূর: ৬২)
এভাবে বিভিন্ন আয়াতে সুস্পষ্টভাবে রাসূলুল্লাহ সা. আনুগত্য ও অনুসরণ করার কথা নির্দেশ করা হয়েছে। এতে প্রতীয়মান হয় যে, সুন্নাহ এর অনুশীলন ও বাস্তবায়ন আল্লাহর নির্দেশের অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং কুরআনের পরেই সুন্নাহর গুরুত্ব অনস্বীকার্য। আল্লাহ তা‘আলা রাসূলুল্লাহ সা. কে প্রেরণের উদ্দেশ্য সম্বন্ধে বলেন,
هُوَ الَّذِي بَعَثَ فِي الْأُمِّيِّينَ رَسُولًا مِّنْهُمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَاتِهِ وَيُزَكِّيهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَإِن كَانُوا مِن قَبْلُ لَفِي ضَلَالٍ مُّبِينٍ
“সে মহান সত্তাই উম্মীদের মধ্য হতে তাদেরই একজনকে রাসূলরূপে প্রেরণ করেছেন। যিনি আল্লাহর আয়াতসমূহ তাদের মাঝে তিলাওয়াত করেন, তাদেরকে পরিশুদ্ধ করেন এবং কিতাব ও হিকমাত শিক্ষা দেন। যদিও তারা ইতিপূর্বে সুস্পষ্ট ভ্রষ্টতায় নিমজ্জিত ছিল।”
(সূরা আল-জুমু‘আ: ২)
অত্র আয়াতে হিকমাত বলতে রাসূলুল্লাহ সা. এর সুন্নাকে বুঝানো হয়েছে।
এ সম্পর্কে ইবন জারির আত-তাবারী (মৃ. ৩১০ হি./৯২২ খ্রি.) বলেন, ‘হিকমাত হচ্ছে আল্লাহর আদেশ নিষেধ সম্বলিত জ্ঞান যা রাসূলুল্লাহ সা. কর্তৃক বিশ্লেষণ বৈ কিছুতেই লাভ করা সম্ভব নয়।’
ইমাম শাফে‘ঈ (মৃ. ২০৪ হি./৮১৯ খ্রি) বলেন, ‘কুরআনের জ্ঞানে সর্বাধিক পারদর্শী আস্থাভাজন লোকদেরকে বলতে শুনেছি, তাঁরা বলেছেন, হিকমাত হচ্ছে রাসূলুল্লাহ সা. এর সুন্নাত।’
‘আল্লামা ‘আয়নী বলেন, ‘সুন্নাত বা হাদীসকে হিকমাত বলার তাৎপর্য এই যে, এটি দ্বারাই হক ও বাতিলের মধ্যে পার্থক্য করা যায়।’
প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ তা‘আলা বিশ্বমানবতার পথ নির্দেশনার জন্য কেবল কুরআন অবতরণই যথেষ্ট মনে করেননি, পাশাপাশি হিকমাত তথা রাসূলুল্লাহ সা. এর সুন্নাহকে অনুকরণীয় আদর্শ হিসেবে গণ্য করেছেন। ফলে সুন্নাহ ও কুরআনের ন্যায় মুসলিম উম্মাহর কাছে গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদার বস্তুতে পরিণত হয়েছে।
সুন্নাহ কুরআনের বিশ্লেষক
রাসূলুল্লাহ সা. কে আল্লাহ তা‘আলা মহাগ্রন্থ আল-কুরআন সহকারে প্রেরণ করেছেন এবং এ কুরআনকে জনসম্মুখে বর্ণনা ও বিশ্লেষণের দায়িত্বও তাঁর উপর অর্পণ করেছেন।
এ মর্মে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
بِالۡبَیِّنٰتِ وَ الزُّبُرِ ؕ وَ اَنۡزَلۡنَاۤ اِلَیۡکَ الذِّکۡرَ لِتُبَیِّنَ لِلنَّاسِ مَا نُزِّلَ اِلَیۡہِمۡ وَ لَعَلَّہُمۡ یَتَفَکَّرُوۡنَ
“(অতীতের রসূলদেরকে পাঠিয়েছিলাম) স্পষ্ট প্রমাণাদি আর কিতাব দিয়ে; আর এখন তোমার প্রতি কুরআন অবতীর্ণ করছি মানুষকে স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দেয়ার জন্য যা তাদের প্রতি অবতীর্ণ করা হয়েছে আর যাতে তারা চিন্তা-ভাবনা করে।’
(সূরাহ আন-নাহাল : ৪৪)
অর্থাৎ কুরআনের বিস্তারিত ব্যাখ্যা ও সুনিপুণ বিশ্লেষণ করাই রাসূল প্রেরণের অন্যতম উদ্দেশ্য। বস্তুতঃ কোন বিষয়কে সঠিক ও পূর্ণাঙ্গরূপে বিশ্লেষণ করতে গেলে তিনটি কার্য অপরিহার্য হয়ে পড়ে।
- ক. বক্তব্য বা কথার মাধ্যমে এর ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ করা এবং আলোচনার দ্বারা সংশ্লিষ্ট প্রতিটি বিষয়ের তাত্ত্বিক ও বাহ্যিক স্বরূপ উন্মোচন করা।
- খ. নিজে বাস্তবজীবনের প্রতিটি শাখা-প্রশাখায় এর ব্যবহারিক মূল্য ও গুরুত্ব সমোজ্জলরূপে তুলে ধরা।
- গ. সাধারণ্যে একে কার্যকর ও বাস্তবায়িত করার জন্য ব্রতী হওয়া। তারা এর সঠিক মর্মার্থ অনুধাবন ও অনুসরণ করছে কি না, সে দিকে সজাগ দৃষ্টি রাখা, যাচাই ও পরীক্ষা কার্যে আত্মনিয়োগ করা এবং সঠিকরূপে কার্যকর হতে দেখলে তাতে সমর্থন যোগানো আর ভুল-ভ্রান্তি পরিলক্ষিত হলে আশু সংশোধনের কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
আমরা রাসূলুল্লাহ সা. এর জীবন পর্যালোচনা করলে দেখতে পাই তিনি আল্লাহ প্রদত্ত এ দায়িত্ব তাঁর ২৩ বছরের নবুওয়াতী জীবনে পূর্ণমাত্রায় পালন করেছেন। এ দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তিনি যা করেছেন, বলেছেন বা অনুমোদন দিয়েছেন তার নির্ভরযোগ্য রেকর্ডই হচ্ছে সুন্নাহ। সুতরাং সুন্নাহ কুরআন সমর্থিত ও কুরআনের বিশ্লেষক।
ইমাম শাতিবী বলেন, ‘সুন্নাহ এ এমন জিনিসই পাওয়া যাবে, কুরআন যার পূর্ণ সমর্থন করে।’
রাসূলুল্লাহ সা. যে সুন্নাহর দ্বারা কুরআনের অনেক জটিল আয়াতের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করেছেন তার অসংখ্য প্রমাণ রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
الَّذِينَ آمَنُواْ وَلَمْ يَلْبِسُواْ إِيمَانَهُم بِظُلْمٍ
“যারা ঈমান এনেছে এবং তাদের ঈমানকে কোন প্রকার যুলমের সাথে মিশ্রিত করেনি।”
(সূরা আল-আন‘আম: ৮২)
এ আয়াত যখন নাযিল হয়, তখন তা সাহাবীদের নিকট বড়ই উদ্বেগের কারণ হয়ে পড়ে। তাঁরা এর সঠিক ব্যাখ্যা জানার জন্য রাসূল সমীপে হাযির হয়ে বলেন,
يا رسولَ اللَّهِ وأيُّنا لا يظلِمُ نفسَهُ ؟
الراوي : عبدالله بن مسعود | المحدث : الألباني | المصدر : صحيح الترمذي |الصفحة أو الرقم: 3067 | خلاصة حكم المحدث : صحيح
“আমাদের মাঝে এমন কে আছে যে যুলম করেনি।”
(সহীহ তিরমিযী, পৃ. ৩০৬৭)
এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ সা. বুঝতে পারলেন যে, সাহাবীদের নিকট আয়াতটি দুর্বোধ্য অনুভূত হয়েছে, তাঁরা এর সঠিক অর্থ উপলব্ধি করতে পারেনি। তখন তিনি বললেন, তোমরা যে ধারণা করেছ আয়াতের অর্থ তা নয়। এখানে যুলম অর্থ শিরক। তোমরা কি লুকমান আ. কর্তৃক তদীয় পুত্রকে দেয়া উপদেশ শুননি? তিনি বলেছিলেন,
یٰبُنَیَّ لَا تُشۡرِکۡ بِاللّٰہِ ؕؔ اِنَّ الشِّرۡکَ لَظُلۡمٌ عَظِیۡمٌ
“হে বৎস ! আল্লাহর সাথে শিরক কর না। নিশ্চয় শিরক এক বড় যুলম।”
(সূরাহ লুকমান : ১৩)
সুন্নাহ কখনও কুরআনের মুতলাক হুকুমকে মুকায়্যিদ করে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَ السَّارِقُ وَ السَّارِقَۃُ فَاقۡطَعُوۡۤا اَیۡدِیَہُمَا
‘চোর এবং চোরনীর হাত কেটে দাও।’
(সূরাহ আল-মায়েদাহ : ৩৮)
কিন্তু হাত কতটুকু কাটতে হবে তা বলা হয়নি। অথচ রাসূলুল্লাহ সা. এর সুন্নাহ সেটি স্পষ্ট করে দিয়েছে। রাসূলুল্লাহ সা. এর কাছে একজন চোর আনা হলে তিনি তার হাতের কব্জি পর্যন্ত কেটে দিলেন।
অনুরূপভাবে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَكُلُواْ وَاشْرَبُواْ حَتَّى يَتَبَيَّنَ لَكُمُ الْخَيْطُ الأَبْيَضُ مِنَ الْخَيْطِ الأَسْوَدِ مِنَ الْفَجْرِ ثُمَّ أَتِمُّواْ الصِّيَامَ إِلَى الَّليْلِ
“তোমরা পানাহার কর যতক্ষণ না তোমাদরে কাছে (রাতের) কালো রেখার পরে প্রত্যুষের শ্রুভ্র রেখা স্পষ্ট হয়ে উঠে। এরপর রাত্রি পর্যন্ত রোযা পূর্ণ কর।”
(সূরাহ বাকারাহ: ১৮৭)
উপরিউক্ত আয়াতের সঠিক মর্ম বুঝতে না পেরে বিশিষ্ট সাহাবী আদী ইবন হাতিম রা. একটি কালো সুতা ও একটি সাদা সুতা বালিশের নিচে রাখলেন। রাতের গভীরতা অতিবাহিত হওয়ার পর থেকে তিনি সে সুতাদ্বয়কে বার বার দেখতে লাগলেন। কিন্তু তার নিকট কালো ও সাদার মাঝে কোনরূপ পার্থক্য সূচিত হলো না। এরপর সকালে তিনি রাসূলুল্লাহ সা. এর দরবারে এসে ঘটনা বিবৃত করলে রাসূলুল্লাহ সা. বললেন, তা হলে তো তোমার বালিশ খুব বড় দেখছি। কারণ রাতের কালো প্রান্তের রেখা ও ভোরের সাদা প্রান্তের রেখার জন্য তোমার বালিশের নিচে স্থান সংকুলান হয়েছে। অপর এক বর্ণনায় এসেছে যে, রাসূলুল্লাহ সা. তাকে বলেছিলেন, না, এ দুটো সুতা নয়, বরং রাতের অন্ধকার ও দিনের আলো।
অনুরূপভাবে কুরআনের অনেক মুজমাল আয়াতের ব্যাখ্যা রাসূলুল্লাহ সা. সুন্নাহ দ্বারা করেছেন। যেমন, সালাত, সাওম, হজ্জ, যাকাত ইসলামের এ ভিত্তি চতুষ্টয় সম্পর্কে কুরআনে শুধু ফরযিয়াতের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। এগুলো যথাযথভাবে আদায় করার পদ্ধতি রাসূলুল্লাহ সা. সুন্নহ এর মাধ্যমে বর্ণনা করেছেন। যেমন তিনি বলেছেন,
صَلُّوا كَمَا رَأيَتُمُوْنِي أُصَلَّي
الراوي : مالك بن الحويرث | المحدث : الألباني | المصدر : صحيح الجامع | الصفحة أو الرقم: 893 | خلاصة حكم المحدث : صحيح
“তোমরা সালাত পড় যেমনটি দেখতে পাও আমাকে নামায পড়তে।”
(সহীহ আল-জা‘মে, পৃ. ৮৯৩)
خُذُوْا عَنِّي مَنَاسِكَكُـمْ
“তোমরা আমার নিকট থেকে তোমাদের হজ্জের নিয়মাবলী গ্রহণ কর।”
(নাসবুর রায়, পৃ. ১৫৪, খ. ৪, মাকতাবায়ে শামেলা)
পরিশেষে বলতে পারি সুন্নাহ মূলত কুরআনের এক অনুপম বিশ্লেষণ। সুন্নাহকে বাদ দিয়ে কুরআন সঠিকভাবে বুঝা যায় না। ইমাম আওযায়ী বলেন, কুরআন সুন্নাহ এর প্রতি তার চেয়ে অধিক মুখাপেক্ষী, যতটুকু সুন্নাহ কুরআনের প্রতি মুখাপেক্ষী। এ বক্তব্যের ব্যাখ্যায় হাফিয ইবন আব্দিল বার বলেন, সুন্নাহ কুরআনের (মর্ম ও অর্থের) ফয়সালা করে এবং তার উদ্দেশ্য ব্যক্ত করে। এ জন্যই কুরআনের পরে সুন্নাহ এর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। রাসূলুল্লাহ সা. নিজেও তাঁর বিভিন্ন বাণীতে কুরআনের পাশাপাশি সুন্নাহ এর অনুসরণ করা ও মেনে চলার জোর তাগিদ দিয়েছেন । উল্লেখ্য যে, পাশ্চাত্যবাদী ইসলাম বিদ্বেষী একটি মহল সুন্নাহ এর প্রামাণিকতা ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তারা সুন্নাহকে অস্বীকার করার অপপ্রয়াস ও অপপ্রচেষ্টা চালিয়েছে এবং হাতিয়ার হিসেবে কুরআনের কিছু আয়াতের অপব্যাখ্যার আশ্রয় গ্রহণ করেছে। আল্লাহ তাদেরকে সঠিক বুঝ দান করার তৌফিক দান করুন। আমীন!!
এখানে মন্তব্য করুন
লেখক পরিচিতি
নামঃ ড. ফেরদৌস আলম ছিদ্দিকী।
শিক্ষাগত যোগ্যতাঃ
বি. এ (অনার্স), (১৯৯৮ শিক্ষাবর্ষ),
এম. এ, (১৯৯৯ শিক্ষাবর্ষ),
পিএইচ.ডি, (২০০৬ শিক্ষাবর্ষ), ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
পেশাঃ সহকারী অধ্যাপক, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ।
মোবাইলঃ +৮৮০১৭১৮ -৫৭৭১২২
ই-মেইলঃ dfas122@gmail.com