
- ইসলামী শরীয়াহ্ অর্গানাইজেশন
- July 26, 2020
- 12:48 pm
সূচিপত্র
ঈদুল আযহার দিনের বিশেষ কিছু আমল
জিলহজ মাসের প্রথম দশক অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ ও ফযিলতপূর্ণ সময় । পবিত্র কুরআনুল কারীমেও সহীহ হাদীসে এ বিষয়ে অসংখ্য ফজিলত ও আমলের কথা বর্ণিত হয়েছে ।(এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে আমাদের ওয়েব সাইটে জিলহজ মাসের প্রথম দশকের ফজিলত নামক প্রবন্ধটি পড়তে পারেন)। কুরবানী ঈদের রাত ও ঈদের দিন উক্ত ফযিলত পূর্ণ সময়ের অন্তর্ভুক্ত। তাই এদিনে ও বেশী বেশী আল্লাহ তায়ালা ইবাদত করা উচিত।
পবিত্র কুরআনুল কারীমে ইরশাদ হয়েছে;
الفجر وليال عشر
শপথ ,ফজরের,শপথ দশ রাতের,
হযরত ইবনে আব্বাস রাযিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হযরত ইবনে জুবায়ের রাযিআল্লাহ তা’আলা আনহুও হযরত মুজাহিদ রহমতুল্লাহি আলাইহি প্রমুখ মুফাসসির সাহাবী ও তাবেয়ীর মতে দশ রাত বলতে জিলহজ মাসের প্রথম দশ রাতকে বোঝানো হয়েছে।
(তাফসীরে ইবনে কাসির ৪/৫৩৫)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একটি হাদিস দ্বারা বিষয়টি আরো স্পষ্ট ভাবে প্রমানিত। হযরত ইবনে আব্বাস রাযিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন এরশাদ করেছেন;
، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم أَنَّهُ قَالَ ” مَا الْعَمَلُ فِي أَيَّامِ الْعَشْرِ أَفْضَلَ مِنَ الْعَمَلِ فِي هَذِهِ ”. قَالُوا وَلاَ الْجِهَادُ قَالَ ” وَلاَ الْجِهَادُ، إِلاَّ رَجُلٌ خَرَجَ يُخَاطِرُ بِنَفْسِهِ وَمَالِهِ فَلَمْ يَرْجِعْ بِشَىْءٍ ”.
ইব্নু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত: নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন; যিলহাজ্জ মাসের প্রথম দশ দিনের ‘আমলের চেয়ে অন্য কোন দিনের ‘আমলই উত্তম নয়। তাঁরা জিজ্ঞেস করলেন, জিহাদও কি (উত্তম) নয়? নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন; জিহাদও নয়। তবে সে ব্যক্তির কথা ছাড়া যে নিজের জান ও মালের ঝুঁকি নিয়েও জিহাদে যায় এবং কিছুই নিয়ে ফিরে আসে না।
(সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৯৬৯, শরহু মুসকিলিল আছার হাদিস নং ২৯৭০)
অপর একটি হাদীসে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন;
من قام ليلة العيد . وفي لفظ : من أحياها محتسبًا لم يمت قلبه يوم تموت القلوب
বর্ণনাকারী থেকে বর্ণিতঃ:যে ঈদের রাত জাগ্রত থাকে” অন্য বর্ণনায় আছে, “যে ব্যক্তি ঈদের রাত সওয়াবের নিয়তে জাগ্রত থাকে, তার অন্তর মারা যাবে না, যে দিন সকল অন্তর মারা যাবে।”
(সুনানে ইবনে মাজাহ,হাদীস নং-৩১)
তাই উক্ত ফজিলত পাওয়ার আশায় ঈদের রাত্রি জাগরন করে ইবাদত করা উচিত । আর সম্ভব না হলে কমপক্ষে ইশাও ফজরের নামায জামাতের সাথে আদায় করা ।
কেননা হাদীস শরীফে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন;
حَدَّثَنَا إِسْحَاقُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، أَخْبَرَنَا الْمُغِيرَةُ بْنُ سَلَمَةَ الْمَخْزُومِيُّ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الْوَاحِدِ، – وَهُوَ ابْنُ زِيَادٍ – حَدَّثَنَا عُثْمَانُ بْنُ حَكِيمٍ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ أَبِي عَمْرَةَ، قَالَ دَخَلَ عُثْمَانُ بْنُ عَفَّانَ الْمَسْجِدَ بَعْدَ صَلاَةِ الْمَغْرِبِ فَقَعَدَ وَحْدَهُ فَقَعَدْتُ إِلَيْهِ فَقَالَ يَا ابْنَ أَخِي سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ “ مَنْ صَلَّى الْعِشَاءَ فِي جَمَاعَةٍ فَكَأَنَّمَا قَامَ نِصْفَ اللَّيْلِ وَمَنْ صَلَّى الصُّبْحَ فِي جَمَاعَةٍ فَكَأَنَّمَا صَلَّى اللَّيْلَ كُلَّهُ ”
‘আবদুর রহ্মান ইবনু আবূ ‘আম্রাহ্ (রহঃ) থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন: একদিন মাগরিবের সলাতের পর ‘উসমান ইবনু ‘আফ্ফান মাসজিদে এসে একাকী এক জায়গায় বসলেন। তখন আমি তার কাছে গিয়ে বসলাম। তিনি আমাকে বললেন- ভাতিজা, আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি জামা’আতের সাথে ‘ইশার সলাত আদায় করল সে যেন অর্ধেক রাত পর্যন্ত সলাত আদায় করল। আর যে ব্যক্তি ফাজ্রের সলাত জামা’আতের সাথে আদায় করল সে যেন সারা রাত জেগে সলাত আদায় করল।
(সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১৩৭৭)
প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বক্তিগত জীবন ও সালাফের থেকে ঈদুল আজহার দিনে বিশেষ কিছু আমলের কথা থেকে প্রমানীত । নিম্নে আমরা ঈদুল আযহার দিনের বিশেষ কিছু আমলের কথা পেশ করছি । আল্লাহ সহায় হোন। আমীন
১. মিসওয়াক করাঃ
মিসওয়াক করা একটি বিশেষ ও ফযিলত পূর্ণ ইবাদাত। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মেসওয়াক করার ব্যপারে অনেক গুরত্ব দিতেন । এমনকি তিনি বলেছেন;
عَن أَبِي هُرَيْرَةَأَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ لَوْلَا أَنْ أَشُقَّ عَلَى أُمَّتِي أَوْ عَلَى النَّاسِ لَأَمَرْتُهُمْ بِالسِّوَاكِ مَعَ كُلِّ صَلاةٍ
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:আল্লাহ্র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ আমার উম্মাতের জন্য বা তিনি বলেছেন, লোকদের জন্য যদি কঠিন মনে না করতাম, তাহলে প্রত্যেক সালাতের সাথে তাদের মিস্ওয়াক করার হুকুম করতাম।
(সহিহ বুখারী, হাদিস নং-৮৮৭, মুসনাদে আহমাদ হাদিস নং ৭৪১৬)
অপর এক হাদীসে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন;
عن عَائِشَةَ، عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” عَشْرَةٌ مِنَ الْفِطْرَةِ: قَصُّ الشَّارِبِ، وَقَصُّ الْأَظْفَارِ، وَغَسْلُ الْبَرَاجِمِ، وَإِعْفَاءُ اللِّحْيَةِ، وَالسِّوَاكُ، وَالِاسْتِنْشَاقُ، وَنَتْفُ الْإِبْطِ، وَحَلْقُ الْعَانَةِ، وَانْتِقَاصُ الْمَاءِ ” قَالَ مُصْعَبٌ: وَنَسِيتُ الْعَاشِرَةَ إِلَّا أَنْ تَكُونَ الْمَضْمَضَةَ
আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন; দশটি কাজ স্বভাবগত-
- ০১. মোচ কাঁটা।
- ০২. অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ধৌত করা।
- ০৩. দাড়ি লম্বা করা।
- ০৪. মিসওয়াক করা।
- ০৫. নাকে পানি দেওয়া।
- ০৬. বগলের পশম উপড়ে ফেলা।
- ০৭. নাভির নীচের পশম কামানো।
- ০৮. পেশাবের পর পানি দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করা।
- ০৯. শৌচকর্ম করা।
- ১০. মুসআব ইব্ন শায়বা (রাঃ) বলেনঃ আমি দশম কথাটি ভুলে গেছি, সম্ভবত তা হল কুল্লি করা।
(সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ৫০৪০)
এছাড়াও অসংখ্য হাদিসে মিসওয়াকের ফলিজত বর্ণিত হয়েছে। এজন্য উলামায়ে কেরাম তাকে সুন্নাত বলেছেন।
(আননুতাফু ফিল ফতোয়া ৬৬, তুহফাতুল ফুকাহা ১৭১)
২. গোশল করা;
হাফেজ ইবনে তাইমিয়া রহঃ বলেছেন যে ঈদের দিন গোসল করা বিষয়টি সাহাবায়ে কেরামদের আমল দ্বারা প্রমাণিত।
ﻋﻦ اﺑﻦ ﻋﻤﺮ ﺃﻧﻪ ﻛﺎﻥﻳﻐﺘﺴﻞ ﻟﻠﻌﻴﺪﻳﻦ
ইবনে উমর রাদিআল্লাহু দুই ঈদের দিন গোসল করতেন
(মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা হাদীস নং-৫৭৭৩)
এছাড়াও ঈদের দিন গোসল করার বিষয়টি অন্যান্য সালাফ থেকে প্রমানিত। যেমন;
ﺣﺪﺛﻨﺎ ﻭﻛﻴﻊ، ﻭاﻟﻔﻀﻞ ﺑﻦ ﺩﻛﻴﻦ، ﻋﻦ اﺑﻦ ﺯﺭ، ﻋﻦ ﺇﺑﺮاﻫﻴﻢ اﻟﺘﻴﻤﻲ، ﻋﻦ ﺃﺑﻴﻪ، ﺃﻧﻪ ﻛﺎﻥ ﻳﺴﺘﺤﺐ اﻟﻐﺴﻞ ﻟﻠﺠﻤﻌﺔ ﻭ اﻟﻌﻴﺪﻳﻦ
ইব্রাহীম তাইমী তার পিতা থেকে বর্ণনা করে বলেন; তিনি জুমআ ও ঈদের নামাজের জন্য গোশল করা পছন্দ করতেন।
(মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-৫৭৮২)
৩. উত্তম ও পরিচ্ছন্ন কাপড় পড়া;
এক্ষেত্রে কাপড় নতুন হওয়া জরুরি নয় বরং ব্যবহৃত পরিচ্ছন্ন কাপড় ও হতে পারে। হাদীসে এসেছে-
ﺃﻥ اﺑﻦ ﻋﻤﺮ ﻛﺎﻥ ﻳﻠﺒﺲ ﻓﻲ اﻟﻌﻴﺪﻳﻦ ﺃﺣﺴﻦ ﺛﻴﺎﺑﻪ
হযরত ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু ঈদের দিন উত্তম পোষাক পরতেন।
(আসসুনানুল কুবরা, হাদিস নং-৬১৪৩)
যেহেতু ঈদগাহে অনেক মানুষ একত্রিত হয় তাই নিজের শরীর ও পোশাক পরিছন্ন না হলে নিজের এবং অন্যান্যদের কষ্ট হয় ।তাই মানবিক ও উত্তম আখলাকের ও পরিচয় হলো এসময় নিজের যাবতীয় সবকিছু পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হওয়া।
৪) সুগন্ধি ব্যবহার করা
৫) ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে কিছু না খাওয়া;
، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ بُرَيْدَةَ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ كَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم لاَ يَخْرُجُ يَوْمَ الْفِطْرِ حَتَّى يَطْعَمَ وَلاَ يَطْعَمُ يَوْمَ الأَضْحَى حَتَّى يُصَلِّيَ .
আবদুল্লাহ ইবনু বুরাইদা (রাঃ) হতে তাঁর পিতা থেকে বর্ণিত: তিনি (বুরাইদা) বলেন; নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘ঈদুল ফিতরের দিন কিছু না খাওয়া পর্যন্ত নামাযে বের হতেন না এবং ‘ঈদুল আযহার দিন নামায না আদায় করা পর্যন্ত কিছু খেতেন না।
(সুনানে ইবনু মাজাহ- (১৭৫৬)।জামে’ আত-তিরমিজি, হাদিস নং ৫৪২)
৬. ঈদের নামাজ পড়ার জন্য এক রাস্তা দিয়ে যাওয়া এবং ভিন্ন রাস্তা দিয়ে আসা;
عَنْ جَابِرٍ، قَالَ كَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم إِذَا كَانَ يَوْمُ عِيدٍ خَالَفَ الطَّرِيقَ. تَابَعَهُ يُونُسُ بْنُ مُحَمَّدٍ عَنْ فُلَيْحٍ. وَحَدِيثُ جَابِرٍ أَصَحُّ.
জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘ঈদের দিন (বাড়ি ফেরার পথে) ভিন্ন পথে আসতেন। ইউনুস ইব্নু মুহাম্মদ (রহঃ) আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে হাদীস বর্ণনায় আবূ তুমাইলা ইয়াহইয়া (রহঃ) এর অনুসরণ করেছেন। তবে জাবির (রাঃ) হতে হাদীসটি অধিকতর বিশুদ্ধ।
(বুখারী, হাদিস নং ৯৮৬)
৭. পায়ে হেঁটে ঈদগাহে যাওয়াঃ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন;
، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ “ صَلاَةُ الْجَمِيعِ تَزِيدُ عَلَى صَلاَتِهِ فِي بَيْتِهِ، وَصَلاَتِهِ فِي سُوقِهِ خَمْسًا وَعِشْرِينَ دَرَجَةً، فَإِنَّ أَحَدَكُمْ إِذَا تَوَضَّأَ فَأَحْسَنَ وَأَتَى الْمَسْجِدَ، لاَ يُرِيدُ إِلاَّ الصَّلاَةَ، لَمْ يَخْطُ خُطْوَةً إِلاَّ رَفَعَهُ اللَّهُ بِهَا دَرَجَةً، وَحَطَّ عَنْهُ خَطِيئَةً، حَتَّى يَدْخُلَ الْمَسْجِدَ، وَإِذَا دَخَلَ الْمَسْجِدَ كَانَ فِي صَلاَةٍ مَا كَانَتْ تَحْبِسُهُ، وَتُصَلِّي ـ يَعْنِي عَلَيْهِ ـ الْمَلاَئِكَةُ مَا دَامَ فِي مَجْلِسِهِ الَّذِي يُصَلِّي فِيهِ اللَّهُمَّ اغْفِرْ لَهُ، اللَّهُمَّ ارْحَمْهُ، مَا لَمْ يُحْدِثْ فِيهِ ”.
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন; জামা’আতের সাথে সালাত আদায় করলে ঘর বা বাজারে সালাত আদায় করার চেয়ে পঁচিশ গুণ সওয়াব বৃদ্ধি পায়। কেননা, তোমাদের কেউ যদি ভাল করে উযূ করে কেবল সালাতের উদ্দেশ্যেই মসজিদে আসে, সে মসজিদে প্রবেশ করা পর্যন্ত যতবার কদম রাখে তার প্রতিটির বিনিময়ে আল্লাহ তা’আলা তার মর্যাদা ক্রমান্বয়ে উন্নীত করবেন এবং তার এক একটি করে গুনাহ মাফ করবেন। আর মসজিদে প্রবেশ করে যতক্ষণ পর্যন্ত সালাতের অপেক্ষায় থাকে, ততক্ষণ তাকে সালাতেই গণ্য করা হয়। আর সালাত শেষে সে যতক্ষণ ঐ স্থানে থাকে ততক্ষণ মালাকগণ (ফেরেশতাগণ) তার জন্যে এ বলে দু’আ করেনঃ হে আল্লাহ! তাকে ক্ষমা করুন, হে আল্লাহ! তাকে রহম করুন- যতক্ষণ সে কাউকে কষ্ট না দেয়, উযূ ভেঙ্গে যাওয়ার কোন কাজ সেখানে না করে।
(সহীহ বুখারী, হাদিস নং-৪৭৭)
হযরত আলী রাদিআল্লাহু বলেছেন;
، عَنْ عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ، قَالَ مِنَ السُّنَّةِ أَنْ تَخْرُجَ، إِلَى الْعِيدِ مَاشِيًا وَأَنْ تَأْكُلَ شَيْئًا قَبْلَ أَنْ تَخْرُجَ قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَسَنٌ وَالْعَمَلُ عَلَى هَذَا الْحَدِيثِ عِنْدَ أَكْثَرِ أَهْلِ الْعِلْمِ يَسْتَحِبُّونَ أَنْ يَخْرُجَ الرَّجُلُ إِلَى الْعِيدِ مَاشِيًا وَأَنْ يَأْكُلَ شَيْئًا قَبْلَ أَنْ يَخْرُجَ لِصَلاةِ الْفِطْرِ قَالَ أَبُو عِيسَى وَيُسْتَحَبُّ أَنْ لا يَرْكَبَ إِلا مِنْ عُذْرٍ
আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, ঈদের মাঠে পায়ে হেঁটে যাওয়া এবং যাওয়ার আগে কিছু খাওয়া সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত।
নোটঃ
আবু ‘ঈসা (ইমাম তিরমিযি) বলেনঃ এ হাদীসটি হাসান। বেশিরভাগ বিদ্বান এ হাদীস অনুসারে আমল করেছেন। কোন অজুহাত না থাকলে যানবাহনে চড়ে না গিয়ে বরং ঈদের মাঠে হেঁটে যাওয়াকে তাঁরা মুস্তাহাব বলেছেন। ঈদুল ফিতরের দিন ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে কিছু খাওয়া মুস্তাহাব।
(জামে’ আত-তিরমিজি, হাদিস নং-৫৩০)
৮. ফিতরের নামাজে যাওয়ার সময় তাকবীর পড়া;
(আন নুতাফু ফিল ফতোয়া ৬৬, তুহফাতুল ফুকাহা ১৬৭)
৯. ঈদগাহে যাওয়ার সময় জোরে জোরে তাকবীর পড়া;
১০. ঈদের নামায পড়া;
১১. কুরবানী করা;
কোরবানির ফজিলত ও সাওয়াব;
حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ إِبْرَاهِيمَ الدِّمَشْقِيُّ، حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ نَافِعٍ، حَدَّثَنِي أَبُو الْمُثَنَّى، عَنْ هِشَامِ بْنِ عُرْوَةَ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ عَائِشَةَ، أَنَّ النَّبِيَّ ـ صلى الله عليه وسلم ـ قَالَ “ مَا عَمِلَ ابْنُ آدَمَ يَوْمَ النَّحْرِ عَمَلاً أَحَبَّ إِلَى اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ مِنْ هِرَاقَةِ دَمٍ وَإِنَّهُ لَيَأْتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِقُرُونِهَا وَأَظْلاَفِهَا وَأَشْعَارِهَا وَإِنَّ الدَّمَ لَيَقَعُ مِنَ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ بِمَكَانٍ قَبْلَ أَنْ يَقَعَ عَلَى الأَرْضِ فَطِيبُوا بِهَا نَفْسًا ” .
আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত: নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন; কোরবানির দিন আদম সন্তান এমন কোন কাজ করতে পারে না যা মহামহিম আল্লাহর নিকট রক্ত প্রবাহিত (কোরবানি) করার তুলনায় অধিক পছন্দনীয় হতে পারে। কোরবানির পশুগুলো কিয়ামতের দিন এদের শিং, খুর ও পশমসহ উপস্থিত হবে। কোরবানির পশুর রক্ত মাটিতে পড়ার পূর্বেই (কোরবানি) মহান আল্লাহর নিকট সম্মানের স্থানে পৌছে যায়। অতএব তোমরা আনন্দ সহকারে কোরবানি করো।
অপর এক হাদীসে এসেছে;
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ خَلَفٍ الْعَسْقَلاَنِيُّ، حَدَّثَنَا آدَمُ بْنُ أَبِي إِيَاسٍ، حَدَّثَنَا سَلاَّمُ بْنُ مِسْكِينٍ، حَدَّثَنَا عَائِذُ اللَّهِ، عَنْ أَبِي دَاوُدَ، عَنْ زَيْدِ بْنِ أَرْقَمَ، قَالَ قَالَ أَصْحَابُ رَسُولِ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ يَا رَسُولَ اللَّهِ مَا هَذِهِ الأَضَاحِيُّ قَالَ ” سُنَّةُ أَبِيكُمْ إِبْرَاهِيمَ ” . قَالُوا فَمَا لَنَا فِيهَا يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ ” بِكُلِّ شَعَرَةٍ حَسَنَةٌ ” . قَالُوا فَالصُّوفُ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ ” بِكُلِّ شَعَرَةٍ مِنَ الصُّوفِ حَسَنَةٌ ” .
যায়দ বিন আরকাম (রাঃ) থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাহাবিগণ বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! এই কোরবানী কী? তিনি বলেন, তোমাদের পিতা ইব্রাহিম (আ:) এর সুন্নাত (ঐতিয্য)। তারা পুনরায় জিজ্ঞাসা করেন, হে আল্লাহর রাসূল! এতে আমাদের জন্য কী (সওয়াব) রয়েছে? তিনি বলেন, প্রতিটি পশমের পরিবর্তে পুণ্য হবে (এদের পশম তো অনেক বেশি)? তিনি বলেন, লোমশ পশুর প্রতিটি পশমের বিনিময়েও একটি করে নেকী রয়েছে।
(সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৩১২৭, সুনানে তিরমিযী হাদিস নং১৪৯৩, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৩১২৬)
এসকল ফজিলত বর্ণিত হ ওয়ার পর ও মে ব্যক্তি সক্ষমতা সত্বেও কুরবানী করবে না তাকে গুরুত্ব ও না করার ভয়াবহতা বোঝানোর জন্য প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন;
، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ قَالَ “ مَنْ كَانَ لَهُ سَعَةٌ وَلَمْ يُضَحِّ فَلا يَقْرَبَنَّ مُصَلانَا ”
আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্তেও কোরবানি করে না, সে যেন আমাদের ঈদের মাঠের কাছেও না আসে।
(সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৩১২৩)
উল্লেখিত হাদীসে মূলত তাকে ঈদগাহে যাওয়া থেকে নিষেধ করা উদ্দেশ্য নয় বরং তাকে গুরুত্ব ও ভয়াবহতা বোঝানো উদ্দেশ্য। যাতে করে সে তা জেনে হলেও কুরবানী আদায় করে।
আল্লাহ তায়ালা সকলকে সহীহভাবে দ্বীন বোঝার তাওফিক দান করেন। এবং কুরবানী করতে সক্ষম ব্যক্তিদেরকে কুরবানী করার জন্য তাওফিক দান করেন। আমীন
এখানে মন্তব্য করুন
লেখক পরিচিতি
নামঃ মুহাম্মদ সালমান হুসাইন।
ইফতাঃ ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ, জামিয়া শারইয়্যাহ মালিবাগ।
উলুমুল হাদিসঃ ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষ, মাদ্রাসা বাইতুল উলুম ঢালকানগর।
তাকমীলঃ ২০১৫ শিক্ষাবর্ষ, মাদ্রাসা বাইতুল উলুম ঢালকানগর।
হিফজঃ ২০০৭ শিক্ষাবর্ষ, জামিয়া আরাবিয়া হাজী ইউনুস কওমী মাদ্রাসা।
শিক্ষকঃ হাজিপাড়া কাশীপুর নারায়ণগঞ্জ