বাংলাদেশের শীর্ষ আলেম ওলামা তথা কওমি মাদরাসাগুলো সর্বোচ্চ অথরিটি আল হাইয়াতুল উলিয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া মাদ্রাসা গুলোতে ইতিমধ্যেই ক্লাস বন্ধ সহ যাবতীয় কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। অবশ্য এর আগে সরকার দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ১০ আগষ্ট পর্যন্ত বন্ধ থাকবে বলে ঘোষণা করেছে।
মহামারীতে মসজিদে জামাআত আদায়ে নিষেধাজ্ঞা, আযানের শব্দে পরিবর্তন; এ বিষয়ে কি বলে ইসলামী শরীয়াহ্

সূচিপত্র

মহামারীতে মসজিদে জামাআত আদায়ে নিষেধাজ্ঞা, আযানের শব্দে পরিবর্তন; এ বিষয়ে কি বলে ইসলামী শরিয়া ?

মুফ্তী মুহসিন উদ্দীন (শান্তিনগর,ঢাকা)
যাবতীয় প্রশংসা মহান আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত এর জন্য, যিনি আমাদেরকে এ ধারায় বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাম এর উম্মত বানিয়ে পাঠিয়েছেন, সে জন্য আমরা সকলে অন্তরের অন্তস্থল থেকে মহান আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জ্ঞাপন করি, আল-হামদুলিল্লাহ।
এবং শতকোটির দরুদ প্রেরণ করি মানবতার মুক্তির অগ্রদূত, দোজাহানের সরদার, আখেরি পয়গম্বর, মুহাম্মাদে আরাবী, সাইয়্যেদুনা হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি, যিনি এধারায় অন্ধকারে আচ্ছন্ন লোকদেরকে দেখিয়েছেন আলোর পথ এবং মাটির মানুষকে করেছেন সোনার মানুষের পরিণত।

হামদ ও সালাতের পর মূলকথা হল !

বিশ্ব এখন প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস এর আঘাতে বিধ্বস্ত বিপর্যস্ত। ২১৬ দেশ এখন পর্যন্ত আক্রান্ত (https://www.who.int/emergencies/diseases/novel-coronavirus-2019) আমাদের দেশেও সহকারী (https://www.iedcr.gov.bd/) হিসেবে গত ০৪-০৭-২০২০ পর্যন্ত ১৫৬,৩৯১ জন আক্রান্ত এবং অন্তত ১,৯৬৮ জন মৃত্যু বরণ করেছেন। জনবহুল ও ঘন বসতির এই দেশে সামনে ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টি হওয়ার প্রবল আশঙ্কা রয়েছে।

করোনার সংক্রমনের আশঙ্কায় প্রায় দেশেই এখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সরকারি-বেসরকারি সকল খাতকে বন্ধ ঘোষণা করেছে। ইংল্যান্ড সে দেশের সকল কার্যক্রমকে শাটডাউন করে দিয়ে নাগরিকদের ঘরে থাকার নির্দেশ জারি করেছে অনুরূপ বিধান জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মান ও ইতালীসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ। এই তালিকায় বাদ পড়েনি সৌদি আরব, আরব আমিরাত, কুয়েত ও কাতার সহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন ইসলামিক দেশ সমূহ।

এরই ধারাবাহিকতায় সৌদি আরব, আরব আমিরত, কুয়েত ও জর্দানসহ মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশের শীর্ষ ওলামা ও ইসলামিক স্কলারগণ মসজিদে গিয়ে নামাজ আদায়ের ব্যাপারে ফতোয়া জারি করেছেন,
ফলে এই সিদ্ধান্ত বা ফতোয়ার উপর ভিত্তি করে সেসব দেশে সাময়িকভাবে মসজিদে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জুমার নামাজ আদায়ের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

বাংলাদেশের শীর্ষ আলেম ওলামা তথা কওমি মাদরাসাগুলো সর্বোচ্চ অথরিটি আল হাইয়াতুল উলিয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া মাদ্রাসা গুলোতে ইতিমধ্যেই ক্লাস বন্ধ সহ যাবতীয় কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে।
অবশ্য এর আগে সরকার দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ১০ আগষ্ট পর্যন্ত বন্ধ থাকবে বলে ঘোষণা করেছে।

আমি আমার প্রবন্ধে উপস্তাপিত বর্তমান সংকটে মসজিদে জামাআত আদায়ে নিষেধাজ্ঞা, আযানের শব্দে পরিবর্তন; এই বিষয়ে কি বলে ইসলামী শরিয়া ? কুরআন ও হাদীসের আলোকে এ বিষয়ে দলীল ভিত্তিক আলোচনা করব, ইনশাআল্লাহ্।

আলোচিত বিষয়ে আমাদের উদ্ভুত প্রশ্ন কোরআন ও হাদিসের আলোকে তার সমাধান..!

 

আমরা মুসলিম তাই আমাদের উচিত আল্লাহর উপর ভরসা করা কিন্তু আমরা আল্লাহর উপর ভরসা না করে মসজিদ থেকে পালন করছি…?

চায়নায় মসজিদগুলি খুলে দেয়া হয়েছে অথচ মুসলিম দেশগুলিতে মসজিদ গুলো বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে…? এটা কি সঠিক হচ্ছে..?

حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عَبْدِ الْوَهَّابِ، قَالَ حَدَّثَنَا حَمَّادُ بْنُ زَيْدٍ، قَالَ حَدَّثَنَا عَبْدُ الْحَمِيدِ، صَاحِبُ الزِّيَادِيِّ قَالَ سَمِعْتُ عَبْدَ اللَّهِ بْنَ الْحَارِثِ، قَالَ خَطَبَنَا ابْنُ عَبَّاسٍ فِي يَوْمٍ ذِي رَدْغٍ، فَأَمَرَ الْمُؤَذِّنَ لَمَّا بَلَغَ حَىَّ عَلَى الصَّلاَةِ‏.‏ قَالَ قُلِ الصَّلاَةُ فِي الرِّحَالِ، فَنَظَرَ بَعْضُهُمْ إِلَى بَعْضٍ، فَكَأَنَّهُمْ أَنْكَرُوا فَقَالَ كَأَنَّكُمْ أَنْكَرْتُمْ هَذَا إِنَّ هَذَا فَعَلَهُ مَنْ هُوَ خَيْرٌ مِنِّي ـ يَعْنِي النَّبِيَّ صلى  الله عليه وسلم ـ إِنَّهَا عَزْمَةٌ، وَإِنِّي كَرِهْتُ أَنْ أُحْرِجَكُمْ‏.‏

৬৬৮. ‘আবদুল্লাহ্ ইবনু হারিস (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ঝড়-বৃষ্টির দিনে ইবনু ‘আববাস(রাযি.) আমাদের উদ্দেশে খুত্বাহ দিচ্ছিলেন। মুয়াযযিন যখন حَيَّ عَلَى الصَّلاَةِ  পর্যন্ত পৌঁছল, তখন তিনি তাকে বললেন, ঘোষণা করে দাও যে, ‘‘সালাত যার যার আবাসস্থলে।’’ এ শুনে লোকেরা একে অন্যের দিকে তাকাতে লাগলো- যেন তারা বিষয়টাকে অপছন্দ করলো। তিনি তাদের লক্ষ্য করে বললেন, মনে হয় তোমরা বিষয়টি অপছন্দ করছ। তবে, আমার চেয়ে যিনি উত্তম ছিলেন অর্থাৎ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনিই এরূপ করেছেন। একথা সত্য যে, জুমু‘আর সালাত ওয়াজিব। তবে তোমাদের অসুবিধায় ফেলা আমি পছন্দ করি না। (সহীহ বুখারী)

(আধুনিক প্রকাশনীঃ ৬২৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৬৩৫)এবং(মুসলিমঃ১৪৮৯, আবু দাউদঃ১০৬৬)

  حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، قَالَ حَدَّثَنَا حَمَّادٌ، عَنْ أَيُّوبَ، وَعَبْدِ الْحَمِيدِ، صَاحِبِ الزِّيَادِيِّ وَعَاصِمٍ الأَحْوَلِ عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ الْحَارِثِ قَالَ خَطَبَنَا ابْنُ عَبَّاسٍ فِي يَوْمٍ رَدْغٍ، فَلَمَّا بَلَغَ الْمُؤَذِّنُ حَىَّ عَلَى الصَّلاَةِ‏.‏ فَأَمَرَهُ أَنْ يُنَادِيَ الصَّلاَةُ فِي الرِّحَالِ‏.‏ فَنَظَرَ الْقَوْمُ بَعْضُهُمْ إِلَى بَعْضٍ فَقَالَ فَعَلَ هَذَا مَنْ هُوَ خَيْرٌ مِنْهُ وَإِنَّهَا عَزْمَةٌ‏.‏

৬১৬. ‘আবদুল্লাহ্ ইবনু হারিস (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার বর্ষণ মুখর দিনে ইবনু ‘আববাস (রাযি.) আমাদের উদ্দেশে খুত্বাহ দিচ্ছিলেন। এদিকে মুআয্যিন আযান দিতে গিয়ে যখন حَيَّ عَلَى الصَّلاَةِ  -এ পৌঁছল, তখন তিনি তাকে এ ঘোষণা দেয়ার নির্দেশ দিলেন যে, ‘লোকেরা যেন আবাসে সালাত আদায় করে নেয়।’ এতে লোকেরা একে অপরের দিকে তাকাতে লাগল। তখন ইবনু ‘আববাস (রাযি.) বললেন, তাঁর চেয়ে যিনি অধিক উত্তম ছিলেন (রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) তিনিই এরূপ করেছেন। অবশ্য জুমু‘আর সালাত ওয়াজিব। (তবে ওযরের কারণে নিজ আবাসস্থলে সালাত আদায় করার অনুমতি আছে)।
(সহীহ বুখারী)-(আধুনিক প্রকাশনীঃ ৫৮১, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৫৮৯)

عَبْدُ اللهِ بْنُ يُوسُفَ قَالَ أَخْبَرَنَا مَالِكٌ عَنْ نَافِعٍ أَنَّ ابْنَ عُمَرَ أَذَّنَ بِالصَّلاَةِ فِي لَيْلَةٍ ذَاتِ بَرْدٍ وَرِيحٍ ثُمَّ قَالَ أَلاَ صَلُّوا فِي الرِّحَالِ ثُمَّ قَالَ إِنَّ رَسُولَ اللهِ صلى  الله عليه وسلم  كَانَ يَأْمُرُ الْمُؤَذِّنَ إِذَا كَانَتْ لَيْلَةٌ ذَاتُ بَرْدٍ وَمَطَرٍ يَقُولُ أَلاَ صَلُّوا فِي الرِّحَالِ

৬৬৬. নাফি‘ (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইবনু ‘উমার (রাযি.) একদা তীব্র শীত ও বাতাসের রাতে সালাতের আযান দিলেন। অতঃপর ঘোষণা করলেন, প্রত্যেকেই নিজ নিজ আবাসস্থলে সালাত আদায় করে নাও, অতঃপর তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রচন্ড শীত ও বৃষ্টির রাত হলে মুআয্যিনকে এ কথা বলার নির্দেশ দিতেন- ‘‘প্রত্যেকে নিজ নিজ আবাসস্থলে সালাত আদায় করে নাও।’’
(৬৩২)(সহীহ বুখারী)-(আধুনিক প্রকাশনীঃ ৬২৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৬৩৩)

এ তিন হাদীসের সারমর্ম হলো-

রায়ীসুল মুফাসসিরিন আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. নির্দেশ দিলেন তাঁর মুয়াজ্জিনকে-

মুয়াযযিন যখন حَيَّ عَلَى الصَّلاَةِ  পর্যন্ত পৌঁছল, তখন তিনি তাকে বললেন, ঘোষণা করে দাও যে, ‘‘সালাত যার যার আবাসস্থলে।’’ এ কথা শুনে লোকেরা একে অন্যের দিকে তাকাতে লাগলো- যেন তারা বিষয়টাকে অপছন্দ করলো। তিনি তাদের লক্ষ্য করে বললেন, মনে হয় তোমরা বিষয়টি অপছন্দ করছ। তবে, আমার চেয়ে যিনি উত্তম ছিলেন অর্থাৎ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনিই এরূপ করেছেন। একথা সত্য যে, জুমু‘আর সালাত ওয়াজিব। তবে তোমাদের অসুবিধায় ফেলা অর্থাৎ কাঁদাযুক্ত পিচ্ছিল পথে কষ্ট করে চলবে আমি পছন্দ করি না।

অনুরুপ ইবনু ‘উমার (রাযি.) তীব্র শীত ও বাতাসের রাতে সালাতের আযান দিলেন। অতঃপর ঘোষণা করলেন,  প্রত্যেকেই নিজ নিজ আবাসস্থলে সালাত আদায় করে নাও, অতঃপর তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রচন্ড শীত ও বৃষ্টির রাত হলে মুআয্যিনকে এ কথা বলার নির্দেশ দিতেন- ‘‘প্রত্যেকে নিজ নিজ আবাসস্থলে সালাত আদায় করে নাও।’’

বড়ই আশ্চর্যজনক বিষয়…?

যখন মসজিদ আমাদের জন্য উন্মুক্ত থাকে তখন আমরা মসজিদে লোক খুঁজে পাই না আর যখন করোনা ভাইরাসের প্রশ্ন আসে তখন আমরা মসজিদের প্রশ্ন তুলে একটা আবেগ তৈরি করতে চাই এটা কিন্তু আবেগের বিষয় নয় এটা বাস্তবতা, প্রকৃত বিষয় আমাদের অনুধাবন করতে হবে এবং সে অনুপাতে জবিন পরিচারনা করতে হবে।

   حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ، حَدَّثَنَا جَرِيرٌ، عَنْ أَبِي جَنَابٍ، عَنْ مَغْرَاءٍ الْعَبْدِيِّ، عَنْ عَدِيِّ بْنِ ثَابِتٍ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ جُبَيْرٍ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم ‏”‏ مَنْ سَمِعَ الْمُنَادِيَ فَلَمْ يَمْنَعْهُ مِنَ اتِّبَاعِهِ عُذْرٌ ‏”‏ ‏.‏ قَالُوا وَمَا الْعُذْرُ قَالَ خَوْفٌ أَوْ مَرَضٌ
‏”‏ لَمْ تُقْبَلْ مِنْهُ الصَّلَاةُ الَّتِي صَلَّى ‏”‏

৫৫১। ইবনু  আব্বাস (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি মুয়াযযিনের আযান শুনা সত্ত্বেও কোনরূপ ওজর ছাড়া (বিনা কারণে) জামাআতে সলাত আদায়ে বিরত থাকে তার অন্যত্র (একাকী) সলাত কবুল হবে না।
সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, ওজর কি ?
নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ ভয়-ভীতি অথবা অসুস্থতা।
(আবু দাউদঃ৫৫১, ইবনে মাজাহ্ঃ৭৯৩)

عَبْدُ الْأَعْلَى بْنُ حَمَّادٍ حَدَّثَنَا وُهَيْبٌ عَنْ أَيُّوبَ وَعُبَيْدِ اللهِ عَنْ نَافِعٍ عَنْ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ  صلى  الله عليه وسلم صلى  الله عليه وسلم اجْعَلُوا فِي بُيُوتِكُمْ مِنْ صَلاَتِكُمْ وَلاَ تَتَّخِذُوهَا قُبُورًا تَابَعَهُ عَبْدُ الْوَهَّابِ عَنْ أَيُّوبَ

১১৮৭. ইবনু  উমার (রাযি.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ তোমরা তোমাদের কিছু কিছু সালাত তোমাদের ঘরে আদায় করবে, তোমাদের ঘরগুলোকে কবর বানাবে না।
(সহীহ বুখারী-১১৮৭) এবং (আধুনিক প্রকাশনীঃ ১১১০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ১১১৫)

عَنْ أَبِي سَلَمَةَ سَمِعَ أَبَا هُرَيْرَةَ بَعْدُ يَقُوْلُ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم لاَ يُورِدَنَّ مُمْرِضٌ عَلٰى مُصِحٍّ

৫৭৭১. আবূ সালামাহ হতে বর্ণিত। তিনি আবূ হুরাইরাহ -কে বলতে শুনেছেন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কেউ যেন কখনও রোগাক্রান্ত উট সুস্থ উটের সাথে না রাখে।  (সহীহ বুখারী-৫৭৭১), [৫৭৭৪; মুসলিম ৩৯/৩৩, হাঃ ২২২১, আহমাদ ৯২৭৪]
(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩৪৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫২৪৫)

  حَدَّثَنَا عَبْدُ الْعَزِيْزِ بْنُ عَبْدِ اللهِ قَالَ حَدَّثَنِيْ مَالِكٌ عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ الْمُنْكَدِرِ وَعَنْ أَبِي النَّضْرِ مَوْلَى عُمَرَ بْنِ عُبَيْدِ اللهِ عَنْ عَامِرِ بْنِ سَعْدِ بْنِ أَبِيْ وَقَّاصٍ عَنْ أَبِيْهِ أَنَّهُ سَمِعَهُ يَسْأَلُ أُسَامَةَ بْنَ زَيْدٍ مَاذَا سَمِعْتَ مِنْ رَسُوْلِ اللهِ صلى  الله عليه وسلم فِي الطَّاعُونِ فَقَالَ أُسَامَةُ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ  الطَّاعُونُ رِجْسٌ أُرْسِلَ عَلَى طَائِفَةٍ مِنْ بَنِيْ إِسْرَائِيْلَ أَوْ عَلَى مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ فَإِذَا سَمِعْتُمْ بِهِ بِأَرْضٍ فَلَا تَقْدَمُوْا عَلَيْهِ وَإِذَا وَقَعَ بِأَرْضٍ وَأَنْتُمْ بِهَا فَلَا تَخْرُجُوْا فِرَارًا مِنْهُ
 قَالَ أَبُوْ النَّضْرِ لَا يُخْرِجْكُمْ إِلَّا فِرَارًا مِنْهُ

৩৪৭৩. সা’দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) উসামাহ্ ইবনু যায়দ (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করেন, আপনি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হতে প্লেগ সম্বন্ধে কী শুনেছেন ?  উসামাহ্ (রাঃ) বলেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, প্লেগ একটি আযাব। যা বনী ইসরাঈলের এক সম্প্রদায়ের উপর পতিত হয়েছিল অথবা তোমাদের পূর্বে যারা ছিল। তোমরা যখন কোন স্থানে প্লেগের ছড়াছড়ি শুনতে পাও, তখন তোমরা সেখানে যেয়ো না। আর যখন প্লেগ এমন জায়গায় দেখা দেয়, যেখানে তুমি অবস্থান করছো, তখন সে স্থান হতে পালানোর লক্ষ্যে বের হয়ো না।
(মুসলিম ৩৯/৩২ হাঃ ২২১৮) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩২১৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩২২৪)

আবূ নযর (রহ.) বলেন, পলায়নের লক্ষ্যে এলাকা ত্যাগ করো না। তবে অন্য কারণে যেতে পার, তাতে বাধা নেই।
(৫৭২৮, ৬৯৭৪)
(সহীহ বুখারী-৩৪৭৩, মুসলিমঃ ৫৬৬৫, আবু দাউদঃ ৩১০৩, তিরমিযিঃ ১০৬৫)

حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ يَحْيَى، أَخْبَرَنَا هُشَيْمٌ، ح وَحَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا شَرِيكُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ، وَهُشَيْمُ بْنُ بَشِيرٍ، عَنْ يَعْلَى بْنِ عَطَاءٍ، عَنْ عَمْرِو بْنِ الشَّرِيدِ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ كَانَ فِي وَفْدِ ثَقِيفٍ رَجُلٌ مَجْذُومٌ فَأَرْسَلَ إِلَيْهِ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم ‏ “‏ إِنَّا قَدْ بَايَعْنَاكَ فَارْجِعْ ‏”‏ ‏.‏

৫৭১৫-(১২৬/২২৩১) ইয়াহইয়া ইবনু ইয়াহইয়া ও আবূ বাকর ইবনু আবূ শাইবাহ্ (রহঃ) ….. আমর ইবনু শারদ (রাযিঃ)-এর সানাদে তার পিতা হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, সাকীফ সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি দলের মধ্যে জনৈক কুষ্ঠ রোগী ছিলেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার নিকট (খবর) পাঠালেন যে, আমরা তোমাকে বাইআত করে নিয়েছি; তুমি ফিরে যাও।
(সহীহ মুসলিমঃ ৫৭১৫, ইবনু মাজাহ্ঃ ৩৫৪৪, নাসায়ীঃ ৪১৮২) এবং (ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৫৬২৮, ইসলামিক সেন্টার ৫৬৫৭)

حَدَّثَنِي عَنْ مَالِك عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِي بَكْرِ بْنِ حَزْمٍ عَنْ ابْنِ أَبِي مُلَيْكَةَ أَنَّ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ مَرَّ بِامْرَأَةٍ مَجْذُومَةٍ وَهِيَ تَطُوفُ بِالْبَيْتِ فَقَالَ لَهَا يَا أَمَةَ اللَّهِ لَا تُؤْذِي النَّاسَ لَوْ جَلَسْتِ فِي بَيْتِكِ فَجَلَسَتْ فَمَرَّ بِهَا رَجُلٌ بَعْدَ ذَلِكَ فَقَالَ لَهَا إِنَّ الَّذِي كَانَ قَدْ نَهَاكِ قَدْ مَاتَ فَاخْرُجِي فَقَالَتْ مَا كُنْتُ لِأُطِيعَهُ حَيًّا وَأَعْصِيَهُ مَيِّتًا

ইবন আবি মুলায়কা (রহঃ) বর্ণনা করেন, বায়তুল্লাহর তাওয়াফরত কুষ্ঠ রোগাক্রান্ত এক মহিলার নিকট দিযে উমর ইবন খাত্তাব (রাঃ) যাচ্ছিলেন। তখন তিনি তাকে বললেনঃ হে আল্লাহর দাসী, অন্য মানুষকে কষ্ট দিও না। হায়, তুমি যদি তোমার বাড়িতেই বসে থাকতে। পরে উক্ত মেয়েলোকটি নিজের বাড়িতেই বসে থাকত। একদিন একটি লোক তাকে বললঃ যিনি তোমাকে বাড়ির বাহিরে যাইতে নিষেধ করেছিলেন, তিনি ইনতিকাল করেছেন। এখন তুমি বাহির হয়ে আসতে পার। মেয়েটি বলিলঃ জীবদ্দশায় তাঁকে মানব, আর মৃত্যুর পর অবাধ্য হইব, আমি এমন স্ত্রীলোক নই।
(মুয়াত্তা ইমাম মালিক-৯৪৮)

এসকল কিছু থেকে আমরা বুঝতে পারি যে, যখন এ জাতীয় ঘটনা ঘটবে অর্থাৎ সংক্রামক রোগ চারদিকে ছড়িয়ে পড়বে তখন আমাদেরকে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে,

আমরা যাতে অন্য কাউকে সংক্রমিত না করি অথবা আমরা সংক্রমিত কিনা এটি কিন্তু আমরা এখনো জানি না, ফলে অন্যদের মাঝে যাতে সংক্রমণ না ঘটে অথবা অন্যদের মাধ্যমে আমরা যেন সংক্রমিত না হই সে বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা আমাদের জন্য অতি জরুরী।

কেননা হাদীসে পাকে এরশাদ হয়েছে,-

حَدَّثَنَا سَلِيمُ بْنُ حَيَّانَ حَدَّثَنَا سَعِيدُ بْنُ مِينَاءَ قَالَ سَمِعْتُ أَبَا هُرَيْرَةَ يَقُوْلُ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى  الله عليه وسلم لاَ عَدْو‘ى وَلاَ طِيَرَةَ وَلاَ هَامَةَ وَلاَ صَفَرَ وَفِرَّ مِنَ الْمَجْذُومِ كَمَا تَفِرُّ مِنْ الأَسَدِ

৫৭০৭. আফফান (রহ.) বলেন, সালীম ইবনু হাইয়ান, আবূ হুরাইরাহ হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ রোগের কোন সংক্রমণ নেই, কুলক্ষণ বলে কিছু নেই, পেঁচা অশুভের লক্ষণ নয়, সফর মাসের কোন অশুভ নেই। কুষ্ঠ রোগী থেকে দূরে থাক, যেভাবে তুমি বাঘ থেকে দূরে থাক।
( সহীহ বুখারী-৫৭০৭)

عَنْ أَبِي سَلَمَةَ سَمِعَ أَبَا هُرَيْرَةَ بَعْدُ يَقُوْلُ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم لاَ يُورِدَنَّ مُمْرِضٌ عَلٰى مُصِحٍّ

৫৭৭১. আবূ সালামাহ হতে বর্ণিত। তিনি আবূ হুরাইরাহ -কে বলতে শুনেছেন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ কেউ যেন কখনও রোগাক্রান্ত উট সুস্থ উটের সাথে না রাখে।
(সহীহ বুখারী-৫৭৭১), [৫৭৭৪; মুসলিম ৩৯/৩৩, হাঃ ২২২১, আহমাদ ৯২৭৪]
(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩৪৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫২৪৫)

حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ يَحْيَى، حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّزَّاقِ، أَنْبَأَنَا مَعْمَرٌ، عَنْ جَابِرٍ الْجُعْفِيِّ، عَنْ عِكْرِمَةَ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ “‏ لاَ ضَرَرَ وَلاَ ضِرَارَ ‏”‏ ‏.‏

২৩৪১। ইবনে আববাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ক্ষতি করা উচিত নয়, আর ক্ষতির সম্মুখীন হওয়াও উচিত নয়।
(ইবনে মাজাহ্ঃ ২৩৪১)

আর কুরআনুল কারমে মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলমীন বরেন,

وَأَنفِقُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَلَا تُلْقُوا بِأَيْدِيكُمْ إِلَى التَّهْلُكَةِ ۛ وَأَحْسِنُوا ۛ إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ

অনুবাদঃ-
তোমরা মহান আল্লাহ্‌র পথে ব্যয় করো এবং স্বহস্তে নিজেদের ধ্বংসে নিক্ষেপ করো না এবং কল্যাণকর কাজ করে যাও। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ্‌ কল্যাণকারীদের ভালোবাসেন।
(আল কুরআন: আল বাকারা/২:১৯৫)

সংক্ষিপ্ত তাফসরিঃ-
কারো নিকট এর অর্থ হল, (আল্লাহর পথে) ব্যয় না করা। কেউ বলেছেন, জিহাদ না করা। আবার কেউ বলেছেন, অব্যাহতভাবে পাপ করা। আর এ সবগুলোই ধ্বংস ডেকে আনে। (আহসানুল বায়ান)

মহান রব্বে কারীম আরো বলেন;

يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَأْكُلُوا أَمْوَالَكُمْ بَيْنَكُمْ بِالْبَاطِلِ إِلَّا أَنْ تَكُونَ تِجَارَةً عَنْ تَرَاضٍ مِنْكُمْ وَلَا تَقْتُلُوا أَنْفُسَكُمْ إِنَّ اللَّهَ كَانَ بِكُمْ رَحِيمًا [النساء: 29

অনুবাদঃ-
হে ঈমানদারগণ! তোমরা অন্যায়ভাবে একে অন্যের সম্পদ গ্রাস করো না, তবে পারস্পরিক সম্মতিতে ব্যবসায় বৈধ এবং নিজেদের ধ্বংস ডেকে এনো না কিংবা তোমরা পরস্পরকে হত্যা করো না, নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের প্রতি কৃপাময়।
(আল কুরআন: আন নিসা/৪:২৯)

সংক্ষিপ্ত তাফসরিঃ-
[১] بِالْبَاطِلِ (অন্যায়ভাবে) এর মধ্যে ধোঁকা-প্রতারণা এবং জাল-জুয়াচুরি, ছল-চাতুরী ও ভেজাল মিশ্রিত করা সহ এমন সব ব্যবসা ও অর্থ উপার্জনের পদ্ধতিও শামিল, যা শরীয়ত কর্তৃক নিষিদ্ধ। যেমন, জুয়া, সুদ ইত্যাদি। অনুরূপ নিষিদ্ধ হারাম জিনিসের ব্যবসা করাও অন্যায়ভাবে পরের মাল ভক্ষণ করার শামিল। যেমন, বিনা প্রয়োজনের ছবি তোলা, গান-বাজনা বা ফিল্ম তথা অশ্লীল ছবির ক্যাসেট, সিডি বা তার প্লেয়ার যন্ত্র ইত্যাদি তৈরী করা, বিক্রি করা এবং মেরামত করা সব কিছুই নাজায়েয।

[২] এর জন্যও শর্ত হল, এই আদান-প্রদান হালাল জিনিসের হতে হবে। হারাম জিনিসের ব্যবসা আপোসে সম্মতিক্রমে হলেও তা হারাম হবে। তাছাড়া আপোসের সম্মতিতে ‘খিয়ারে মজলিস’-এর বিষয়ও এসে যায়। অর্থাৎ, যতক্ষণ তারা একে অপর থেকে পৃথক না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত ক্রয়-বিক্রয় বানচাল করার অধিকার থাকবে। যেমন হাদীসে এসেছে, ((البَيْعَانِ بِالْخِيَارِ مَالَمْ يَتَفَرَّقاَ)) “ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের ততক্ষণ পর্যন্ত (ক্রয়-বিক্রয়ের ব্যাপারে) এখতিয়ার থাকে, যতক্ষণ না তারা একে অপর থেকে পৃথক হয়।” (বুখারী, মুসলিম)

[৩] এর অর্থ আত্মহত্যাও হতে পারে, যা মহাপাপ। আর পাপ করাও হতে পারে, কেননা তাও ধ্বংসের কারণ হয়। আবার কোন মুসলিমকে হত্যা করাও হতে পারে। কারণ, সকল মুসলিম একটি দেহের মত। কাজেই কোন মুসলিমকে হত্যা করা মানেই নিজেকে হত্যা করা।

الَّذِي لَهُ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَلَمْ يَتَّخِذْ وَلَدًا وَلَمْ يَكُنْ لَهُ شَرِيكٌ فِي الْمُلْكِ وَخَلَقَ كُلَّ شَيْءٍ فَقَدَّرَهُ تَقْدِيرًا
[الفرقان: 2 ]

অনুবাদঃ-
যিনি যমীন ও আসমানের রাজত্বের মালিক, তিনি কোন সন্তান গ্রহণ করেননি, রাজত্বে তাঁর কোন অংশীদার নেই, তিনি সমস্ত কিছু সৃষ্টি করেছেন, আর সেগুলোকে যথাযথ করেছেন পরিমিত অনুপাতে।
(আল কুরআন: আল ফুরকান/২৫:২)

সংক্ষিপ্ত তাফসরিঃ-
[১] এটি তাঁর প্রথম গুণ।
অর্থাৎ সৃষ্টি জগতে একমাত্র আধিপত্য তাঁর, অন্য কারো নয়।
[২] এখানে খ্রিষ্টান ও ইয়াহুদীদের এবং আরবের সেই লোকদের বিশ্বাস খন্ডন করা হয়েছে, যারা ফিরিশতাদেরকে আল্লাহর কন্যা মনে করত।
[৩] এখানে মূর্তিপূজক মুশরিক ও (ভাল-মন্দ, আলো-অন্ধকারের স্রষ্টাস্বরূপ) দুই আল্লাহতে বিশ্বাসীদের বিশ্বাস খন্ডন করা হয়েছে।
[৪] প্রত্যেক বস্তুর স্রষ্টা একমাত্র তিনিই এবং তিনি নিজ জ্ঞান ও ইচ্ছানুসারে নিজের সৃষ্টিকে প্রত্যেক সেই জিনিস দান করেছেন যা তার অবস্থার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। অথবা প্রত্যেকের জীবিকা ও মৃত্যু আগে থেকেই নির্ধারিত করে রেখেছেন।

মহামারী প্রতিরোধে হজরত ওমর রা.-এর সিদ্ধান্ত;

৬৩৯ খ্রিস্টাব্দ মোতাবেক ১৮ হিজরির ঘটনা। হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তখন ইসলামি খেলাফতের আমির। সে সময় সিরিয়া ও প্যালেস্টাইনে দেখা দেয় মহামারী প্লেগ। খলিফা ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু সিরিয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে জানতে পারেন সিরিয়ায় মহামারী প্লেগ দেখা দিয়েছে। তাতে তিনি তাঁর সিরিয়া সফর স্থগিত করেছিলেন। মহামারী প্রতিরোধ ও আত্মরক্ষায় তা ছিল হজরত ওমরের সময়ের সেরা কার্যকরী সিদ্ধান্ত। ইসলামি খেলাফতের প্রথম যুগে হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর শাসনামলে সিরিয়ায় মহামারী প্লেগ দেখা দেয়। সে সময় হজরত ওমর ছিলেন প্রায় অর্ধ জাহানের খলিফা। সে সময় সিরিয়া-প্যালেস্টাইনে ছিল হজরত ওমরের রাষ্ট্রীয় সফর।

সফরের উদ্দেশ্যে তিনি মদিনা থেকে সিরিয়ার উদ্দেশ্যে বের হয়ে যান। মদিনা থেকে ‘সারগ’ নামক অঞ্চলে পৌছলে সেনাপতি আবু উবায়দাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু জানান যে, সিরিয়ায় প্লেগ তথা মহামারীর প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। তিনি ইসলামে ইতিহাস এ ঘটনা তাউন আম্মাউস (طاعون عمواس) নামে পরিচিত। সে সময় তিনি সফর স্থগিত করেছিলেন। মুসলিম উম্মাহর জন্য তা ছিল অনেক বড় শিক্ষানীয় বিষয়।

হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর সে ঘটনায় রয়েছে করোনা প্রতিরোধ ও প্রতিকারে রয়েছে উদ্দীপনা। আর তা তুলে ধরা হলো-

                    عَبْدُ اللهِ بْنُ يُوسُفَ أَخْبَرَنَا مَالِكٌ عَنْ ابْنِ شِهَابٍ عَنْ عَبْدِ الْحَمِيدِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمٰنِ بْنِ زَيْدِ بْنِ الْخَطَّابِ عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَبْدِ اللهِ بْنِ الحَارِثِ بْنِ نَوْفَلٍ عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَبَّاسٍ أَنَّ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ  خَرَجَ إِلَى الشَّأْمِ حَتّٰى إِذَا كَانَ بِسَرْغَ لَقِيَه“ أُمَرَاءُ الأَجْنَادِ أَبُو عُبَيْدَةَ بْنُ الْجَرَّاحِ وَأَصْحَابُه“ فَأَخْبَرُوه“ أَنَّ الْوَبَاءَ قَدْ وَقَعَ بِأَرْضِ الشَّأْمِ

قَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ فَقَالَ عُمَرُ ادْعُ لِي الْمُهَاجِرِينَ الأَوَّلِينَ فَدَعَاهُمْ فَاسْتَشَارَهُمْ وَأَخْبَرَهُمْ أَنَّ الْوَبَاءَ قَدْ وَقَعَ بِالشَّأْمِ فَاخْتَلَفُوا فَقَالَ بَعْضُهُمْ قَدْ خَرَجْتَ لأَ÷مْرٍ وَلاَ نَر‘ى أَنْ تَرْجِعَ عَنْه“ وَقَالَ بَعْضُهُمْ مَعَكَ بَقِيَّةُ النَّاسِ وَأَصْحَابُ رَسُوْلِ اللهِ صلى  الله عليه وسلم وَلاَ نَر‘ى أَنْ تُقْدِمَهُمْ عَلٰى هٰذَا الْوَبَاءِ فَقَالَ ارْتَفِعُوا عَنِّي ثُمَّ قَالَ ادْعُوا لِي الأَنْصَارَ فَدَعَوْتُهُمْ فَاسْتَشَارَهُمْ فَسَلَكُوا سَبِيلَ الْمُهَاجِرِينَ وَاخْتَلَفُوا كَاخْتِلاَفِهِمْ فَقَالَ ارْتَفِعُوا عَنِّي ثُمَّ قَالَ ادْعُ لِي مَنْ كَانَ هَا هُنَا مِنْ مَشْيَخَةِ قُرَيْشٍ مِنْ مُهَاجِرَةِ الْفَتْحِ فَدَعَوْتُهُمْ فَلَمْ يَخْتَلِفْ مِنْهُمْ عَلَيْهِ رَجُلاَنِ فَقَالُوا نَر‘ى أَنْ تَرْجِعَ بِالنَّاسِ وَلاَ تُقْدِمَهُمْ عَلٰى هٰذَا الْوَبَاءِ فَنَاد‘ى عُمَرُ فِي النَّاسِ إِنِّي مُصَبِّحٌ عَلٰى ظَهْرٍ فَأَصْبِحُوا عَلَيْهِ

قَالَ أَبُو عُبَيْدَةَ بْنُ الْجَرَّاحِ أَفِرَارًا مِنْ قَدَرِ اللهِ فَقَالَ عُمَرُ لَوْ غَيْرُكَ قَالَهَا يَا أَبَا عُبَيْدَةَ نَعَمْ نَفِرُّ مِنْ قَدَرِ اللهِ إِلٰى قَدَرِ اللهِ أَرَأَيْتَ لَوْ كَانَ لَكَ إِبِلٌ هَبَطَتْ وَادِيًا لَه“ عُدْوَتَانِ إِحْدَاهُمَا خَصِبَةٌ وَالأُخْر‘ى جَدْبَةٌ أَلَيْسَ إِنْ رَعَيْتَ الْخَصْبَةَ رَعَيْتَهَا بِقَدَرِ اللهِ وَإِنْ رَعَيْتَ الْجَدْبَةَ رَعَيْتَهَا بِقَدَرِ اللهِ قَالَ فَجَاءَ عَبْدُ الرَّحْمٰنِ بْنُ عَوْفٍ وَكَانَ مُتَغَيِّبًا فِي بَعْضِ حَاجَتِه„ فَقَالَ إِنَّ عِنْدِي فِي هٰذَا عِلْمًا سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صلى  الله عليه وسلميَقُوْلُ إِذَا سَمِعْتُمْ بِه„ بِأَرْضٍ فَلاَ تَقْدَمُوا عَلَيْهِ وَإِذَا وَقَعَ بِأَرْضٍ وَأَنْتُمْ بِهَا فَلاَ تَخْرُجُوا فِرَارًا مِنْه“ قَالَ فَحَمِدَ اللهَ عُمَرُ ثُمَّ انْصَرَفَ

৫৭২৯.আবদুল্লাহ ইবনু আববাস হতে বর্ণিত যে, উমার ইবনু খাত্তাব সিরিয়ার দিকে রওনা করেছিলেন। শেষে তিনি যখন সারগ এলাকায় গেলেন, তখন তাঁর সঙ্গে সৈন্য বাহিনীর প্রধানগণ তথা আবূ উবাইদাহ ইবনু জার্রাহ ও তাঁর সঙ্গীগণ সাক্ষাৎ করেন। তাঁরা তাঁকে জানালেন যে, সিরিয়া এলাকায় প্লেগের বিস্তার ঘটেছে।
ইবনু আববাস বলেন, তখন উমার বললঃ
আমার নিকট প্রবীণ মুহাজিরদের ডেকে আন। তখন তিনি তাঁদের ডেকে আনলেন। উমার তাঁদের সিরিয়ার প্লেগের বিস্তার ঘটার কথা জানিয়ে তাঁদের কাছে পরামর্শ চাইলেন। তখন তাঁদের মধ্যে মতভেদের সৃষ্টি হল। কেউ বললেনঃ আপনি একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারে বের হয়েছেন; কাজেই তা থেকে প্রত্যাবর্তন করা আমরা পছন্দ করি না।

আবার কেউ কেউ বললেনঃ বাকী লোক আপনার সঙ্গে রয়েছেন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর সহাবীগণ। কাজেই আমরা সঠিক মনে করি না যে, আপনি তাদের এই প্লেগের মধ্যে ঠেলে দিবেন।

উমার বললেনঃ তোমরা আমার নিকট থেকে চলে যাও। এরপর তিনি বললেনঃ আমার নিকট আনসারদের ডেকে আন। আমি তাদের ডেকে আনলাম। তিনি তাদের কাছে পরামর্শ চাইলে তাঁরাও মুহাজিরদের পথ অবলম্বন করলেন এবং তাঁদের মতই মতপার্থক্য করলেন।

উমার বললেনঃ তোমরা উঠে যাও। এরপর আমাকে বললেনঃ
এখানে যে সকল বয়োজ্যেষ্ঠ কুরাইশী আছেন, যাঁরা মক্কা জয়ের বছর হিজরাত করেছিলেন, তাদের ডেকে আন। আমি তাদের ডেকে আনলাম, তখন তাঁরা পরস্পরে মতভেদ করলেন না। তাঁরা বললেনঃ আপনার লোকজনকে নিয়ে প্রত্যাবর্তন করা এবং তাদের প্লেগের মধ্যে ঠেলে না দেয়াই আমরা ভাল মনে করি। তখন উমার লোকজনের মধ্যে ঘোষণা দিলেন যে, আমি ভোরে সাওয়ারীর পিঠে আরোহণ করব (ফিরার জন্য)। অতএব তোমরাও সকালে সওয়ারীর পিঠে আরোহণ করবে।

আবূ উবাইদাহ বললেনঃ আপনি কি আল্লাহর নির্ধারিত তাকদীর থেকে পালানোর জন্য ফিরে যাচ্ছেন? উমার বললেনঃ হে আবূ উবাইদাহ! যদি তুমি ব্যতীত অন্য কেউ কথাটি বলত! হাঁ, আমরা আল্লাহর, এক তাকদীর থেকে আল্লাহর আরেকটি তাকদীরের দিকে ফিরে যাচ্ছি।
তুমি বলত, তোমার কিছু উটকে যদি তুমি এমন কোন উপত্যকায় নিয়ে যাও যেখানে আছে দুটি মাঠ। তন্মধ্যে একটি হল সবুজ শ্যামল, আর অন্যটি হল শুষ্ক ও ধূসর। এবার বল ব্যাপারটি কি এমন নয় যে, যদি তুমি সবুজ মাঠে চরাও তাহলে তা আল্লাহর তাকদীর অনুযায়ীই চরিয়েছ। আর যদি শুষ্ক মাঠে চরাও, তাহলে তাও আল্লাহর তাকদীর অনুযায়ীই চরিয়েছ। বর্ণনাকারী বলেন, এমন সময় আবদুর রহমান ইবনু আওফ আসলেন। তিনি এতক্ষণ যাবৎ তাঁর কোন প্রয়োজনের কারণে অনুপস্থিত ছিলেন।

তিনি (আবদুর রহমান ইবনু আওফ) বললেনঃ এ ব্যাপারে আমার নিকট একটি তথ্য আছে, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছিঃ তোমরা যখন কোন এলাকায় প্লেগের) বিস্তারের কথা শোন, তখন সেখানে প্রবেশ করো না। আর যদি কোন এলাকায় এর প্রাদুর্ভাব নেমে আসে, আর তোমরা সেখানে থাক, তাহলে সেখান থেকে বেরিয়ে যেয়ো না।
বর্ণনাকারী (আবদুল্লাহ ইবনু আববাস) বলেনঃ
এরপর উমার আল্লাহর প্রশংসা করলেন, তারপর প্রত্যাবর্তন করলেন।
[৫৭৩০, ৬৯৭৩; মুসলিম ৩৯/৩২, হাঃ ২২১৯] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩০৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫২০৫)

( সহীহ বুখারী-৫৭০৭, মুসলিমঃ ৫৬৭৭, মুয়াত্তা মালেকঃ ১৫৯৭)

হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর মাহামারী আক্রান্ত অঞ্চলে যাওয়ার সমাধান যেভাবে এ হাদিসের মাধ্যমে এসেছিল। এ হাদিসের ওপর যথাযথ আমলই বর্তমান সময়ে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া মহামারী করোনা থেকে মুক্ত থাকা সম্ভব।

আর বাকী থাকলো আমাদের মাতৃভূমি বাংলাদেশে চলমান পরিস্থিতিতে মসজিদে জামাতে;

সালাত আদায়ে নিষেধাজ্ঞা এবং আযানের শব্দে পরিবর্তন এখনো-ই প্রয়োজন
কিনা ?

এ প্রশ্নের উত্তর আমি নয় বরং প্রদান করবেন আমাদের দেশের বিজ্ঞ ওলামায়ে কেরাম-এর সম্মিলিত বোর্ড প্রকৃত পরিস্থিতি পার্যালোচনা, যাচাই-বাছাই, গভীর অুসন্ধান ও স্থান-কাল-পাত্র অনুযায়ী।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে করোনাসহ সব সংক্রামক মহামারী রোগ-ব্যাধিতে হাদিসের ওপর আমল ও সতর্ক থাকার তাওফিক দান করুন।

এখানে মন্তব্য করুন

লেখক পরিচিতি

নামঃ মুহসিন উদ্দীন
 

খুব শিঘ্রই বাকী তথ্য যুক্ত করা হবে।

আমাদের অনুসরণ করুন

সর্বশেষ ইউটিউব ভিডিও

Play Video

সাম্প্রতিক পোস্ট

সাম্প্রতিক পৃষ্ঠা