
সূচিপত্র
তাকবীরে তাশরীক
باسم الله الرحمن الرحيم
তাকবীরে তাশরীক পড়া করা জিলহজ মাসের একটি বিশেষ আমল। এ আমলটি বছরে একবার নির্দিষ্ট কিছু দিন করতে হয় । নিম্নে আমরা এ সম্পর্কে কিছু জরুরি মাসয়ালা পেশ করছি;
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সহীহভাবে আমল করার তাওফিক দান করেন এবং যাবতীয় ভুল ভ্রান্তি থেকে হেফাজত করেন। আমীন
তাকবীরে তাশরীক;
তাকবীরে তাশরীক বিভিন্ন শব্দে বর্ণিত হয়েছে। তন্মধ্যে সর্বোত্তম ও সর্বজনবিদিত পাঠ হলো;
الله أكبر الله أكبر لا الله الا الله و الله أكبر الله أكبر ولله الحمد
(মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা ৫৬৯৬-৯৯, আত আওসাত, ইমাম ইবনুল মুনজির ৪/৩৪৯)
তাকবিরে তাশরিকের শুরু ও শেষ সময়;
আরাফার দিন তথা নয় তারিখ ফজর থেকে ১৩ তারিখ আছর (আছর সহ) পর্যন্ত মোট ২৩ ওয়াক্ত ফরয নামাযের পর একবার তাকবিরে তাশরীক পড়া ওয়াজিব।
হাদিস শরীফে এসেছে;
ﻋﻦ ﺟﺎﺑﺮ ﻗﺎﻝ: ﻛﺎﻥ اﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ اﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻳﻜﺒﺮ ﻳﻮﻡ ﻋﺮﻓﺔ ﺻﻼﺓ اﻟﻐﺪاﺓ ﺇﻟﻰ ﺻﻼﺓ اﻟﻌﺼﺮ ﺁﺧﺮ ﺃﻳﺎﻡ اﻟﺘﺸﺮﻳﻖ
হযরত জাবের রাযযি আল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত; নবী কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরাফার দিন তথা ৯ ইজিলহজ ফযর নামাযের থেকে ১৩ই জিলহজ আসরের নামাজের পর পর্যন্ত তাকবীরে তাশরীক পড়তেন।
(আস সুনানুল কুবরা লিল ইমাম বাইহাকী, হাদিস নং ৬২৭৮)
অপর একটি বর্ণনায় এসেছে ;
، ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﺇﺳﺤﺎﻕ ﻗﺎﻝ: اﺟﺘﻤﻊ ﻋﻤﺮ ﻭﻋﻠﻲ ﻭاﺑﻦ ﻣﺴﻌﻮﺩ ﺭﺿﻲ اﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﻢ ﻋﻠﻰ اﻟﺘﻜﺒﻴﺮ ﻓﻲ ﺩﺑﺮ ﺻﻼﺓ اﻟﻐﺪاﺓ ﻣﻦ ﻳﻮﻡ ﻋﺮﻓﺔ، ﻓﺄﻣﺎ ﺃﺻﺤﺎﺏ اﺑﻦ ﻣﺴﻌﻮﺩ ﻓﺈﻟﻰ ﺻﻼﺓ اﻟﻌﺼﺮ ﻣﻦ ﻳﻮﻡ اﻟﻨﺤﺮ ﻭﺃﻣﺎ ﻋﻤﺮ ﻭﻋﻠﻲ ﺭﺿﻲ اﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﻤﺎ ﻓﺈﻟﻰ ﺻﻼﺓ اﻟﻌﺼﺮ ﻣﻦ ﺁﺧﺮ ﺃﻳﺎﻡ اﻟﺘﺸﺮﻳﻖ
আবু ইসহাক রহমতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন আরাফার দিন ফজরের নামাজের পর থেকে তাকবিরে তাশরিক শুরু হওয়ার ব্যাপারে হযরত ওমর, হযরত আলী ও হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুম একমত হয়েছেন। হযরত ওমর ও হযরত আলী রাযিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুমা ১৩ তারিখ আসর নামাজের পর পর্যন্ত তাকবীরে তাশরীক পড়তেন।
(আসসুনানুল কুবরা লিল ইমাম বাইহাকী হাদিস নং ৬২৭৪, ফাতাওয়া খানিয়া ১/১১৫, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২১৩, ইমদাদুল ফাতাওয়া ১/৫৫৯, ফাতাওয়া উসমানী১/৫৪৮, ফতাওয়া দারুল উলুম দেওবন্দ ৫/১৬৬)
একটি ভ্রান্তির নিরাশন;
অনেক সময় সাধারণ মানুষকে একটি ধাঁধানো প্রশ্ন করা হয়। তা হলো;
হাদিসে তো আরাফার দিন ফযর থেকে থেকে তাকবীরে তাশরীক পড়ার কথা এসেছে। সৌদি আরবে যেদিন আরাফার দিন হয় আমাদের দেশে সেদিন জিলহজের ৮ তারিখ থাকে। এখন আমরা যদি আরাফার দিন ফযর থেকে তাকবীরে তাশরীক পড়তে চাই বা আরাফার দিনের অন্যান্য ইবাদত করতে চাই তাহলে আমাদের জন্য জিলহজ মাসের ৮ তারিখেই আরাফার দিনের আমল গুলো করতে হবে অন্যথায় আরাফার দিনের আমল হবে না।
এর এর সহজ উত্তর হল;
আরাফার দিন বা ইওমু আরাফা হলো; একটি শরয়ী পরিভাষা। উদ্দেশ্য হলো; জিলহজের ৯ তারিখ। তাই আমাদের দেশে ৯ই জিলহজ ফযর থেকে তাকবীরে তাশরীক বা আরাফার দিনের অন্যান্য আমল ৯তারিখে ই করতে হবে। আট তারিখে নয়। তাদের এ দাবি ভিত্তিহীন। কেননা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং পরবর্তীতে সালাফের কেউ বা কোন ফুকাহায়ে কেরাম তাদের এ মতের সমর্থন করেন নি বা তাদের মত এমন অপব্যখ্যা করেন নি । আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে সহীহ বুঝ দান করুন।
তাকবিরে তাশরিকের সংখ্যা;
উক্ত সময়ে প্রত্যেক ফরয নামাযের পর একবার করে তাকবিরে তাশরিক বলা ওয়াজিব। পূর্ণভাবে তাকবিরে তাশরিক তিনবার পড়ার বর্ণনা খুঁজে পাওয়া যায় না। ফুকাহায়ে কেরাম ও তিনবার বলার প্রতি গুরুত্ব দেন না। অবশ্য কেউ যদি সুন্নত মনে না করে এমনিতেই তিনবার বলে তবে সেটিকে বেদআ’ত বলা উচিত নয় ।
(আল আওসাত ইবনুল মুনজির ২১৯৮)
মাসয়ালা ০১;
উক্ত সময়ে প্রত্যেক ফরজ নামাজ জোরে কেরাত বিশিষ্ট হোক বা আস্তে কিরাত বিশিষ্ট হোক, একাকী আদায় করুক কিংবা জামাতের সাথে আদায় করুক সকল ফরয নামাজের পরেই তাকবিরে তাশরিক পড়তে হবে। আর জামাতে নামাজ আদায় করার ক্ষেত্রে সালামের পর ইমাম সাহেব পড়বেন অতঃপর মুসল্লিগণ পড়বেন। তবে কখনো ইমাম সাহেব বলতে ভুলে গেলে মুক্তাদীগণ চুপ না থেকে তাকবিরে তাশরিক পড়বে।
মাসয়ালা ০২;
তাকবিরে তাশরিক পুরুষের জন্য জোরে পড়া ওয়াজিব। আস্তে পড়লে তাকবীরে তাশরীক পড়ার হক আদায় হবে না। মহিলাগণ নিম্ন আওয়াজে অর্থাৎ নিজে শুনতে পায় এভাবে পড়বে।
(এলাউস সুনান ৮/১৫২,ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২১৩, রদ্দুল মুখতার ২/১৭৮)
তাকবিরে তাশরিক পড়ার নিয়ম;
উক্ত সময়ে প্রত্যেক ফরয নামাযের সালামের পর পরই কোন কথাবার্তা বা নামায পরিপন্থী কোন কাজ করার আগেই তাকবীরে তাশরীক পড়তে হবে।
(রদ্দূল মুহতার ২/১৭৮, এলাউস সুনান ৮/১৫২, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২১৩, ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ২/৬৩৯, আহসানুল ফাতাওয়া ৪/১৩৪)
মাসয়ালা ০৩;
কিবলার দিক থেকে ঘুরে বসার পর তাকবিরে তাশরীক বলার কথা স্বরণ হলে তাকবীরে তাশরীক পড়ে নেওয়া উচিত।
(ফাতাওয়া তাতারখনিয়া ২/৬৩৯ আহসানুল ফাতাওয়া ৪/১৩৪)
মাসায়ালা ০৪;
শুধু পাঁচ ওয়াক্ত ফরয নামাযের পর তাকবীরে তাশরীক পড়া ওয়াজিব। বিতরের নামায, এবং সুন্নাত ও নফল নামাযের পর তাকবিরে তাশরিক পড়তে হবে না।
(ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২১৩ ফাতাওয়া তারার খানিয়া ২/৬৩৯)
মাসয়ালা ০৫;
৯ই জিলহজ ফযর থেকে ১৩ই জিলহজ আসর পর্যন্ত কোন নামাজ কারা হয়ে গেলে এবং ঐ কাযা নামায এই দিনগুলোর ভিতরেই আদায় করলে সে কাযা নামাযের পরও তাকবিরে তাশরিক পড়বে। আর যদি আইয়ামে তাশরিক অতিবাহিত হয়ে যাওয়ার পর আদায় করে তাহলে তাকবীরে তাশরিক পড়তে হবে না।
(মাবসুত সারাখসি ,২/৯৩, আল মুহীতুল বুরহানি ২/৫১২, শরহুল মুনইয়া ৫৭৫, আল বাহরুর রায়েক ২/২৬৪-২৬৫, তাহতবি আলা মারাকিল ফালাহ ২৯৪, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/১৫২, রদ্দুল মুহতার ২/১৭৭-১৮০)
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে আমল করার তাওফীক দান করুন। এবং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইসলামের বিধান জেনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাত অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করার তাওফীক দান করুন।
এখানে মন্তব্য করুন
লেখক পরিচিতি
নামঃ মুহাম্মদ সালমান হুসাইন।
ইফতাঃ ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ, জামিয়া শারইয়্যাহ মালিবাগ।
উলুমুল হাদিসঃ ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষ, মাদ্রাসা বাইতুল উলুম ঢালকানগর।
তাকমীলঃ ২০১৫ শিক্ষাবর্ষ, মাদ্রাসা বাইতুল উলুম ঢালকানগর।
হিফজঃ ২০০৭ শিক্ষাবর্ষ, জামিয়া আরাবিয়া হাজী ইউনুস কওমী মাদ্রাসা।
শিক্ষকঃ হাজিপাড়া কাশীপুর নারায়ণগঞ্জ