স্কাইভিউ পার্ক সিটি

শান্তিনগর, ঢাকা-১২১৭

+৮৮০২-৪১০৩২৩৫৩

২৪/৭ গ্রাহক সেবা

admin@islami-sharia.org

আমাদের কাছে বার্তা পাঠান

অধিকাংশ মানুষেরই চিন্তা ভাবনা থাকে যে সে দুনিয়াতে আস্তে আস্তে উন্নতি লাভ করবে  এবং সম্পদ বৃদ্ধি করতে থাকবে যাতে করে সে এবং তার পরবর্তী উত্তরসূরীরা সর্বোত্তম অবস্থায় পৃথিবীতে বসবাস করতে পারে । মৌলিক ভাবে এ চিন্তা করা কিন্তু অপরাধ না কিন্তু সমস্যা হল এই চিন্তাধারা লালন করার কারণে অর্থাৎ "সম্পদ বৃদ্ধির চিন্তা" মানুষ সম্পদ উপার্জনের জন্য অন্যায় ও শরীয়ত সমর্থিত নয় এমন পথ ও পন্থা অবলম্বন করে।
দুনিয়ার জীবনের হাকিকত

সূচিপত্র

দুনিয়ার জীবনের হাকীকত

{وما هذه الحياة الدنيا إلا لهو ولعب وإن الدار الآخرة لهي الحيوان لو كانوا يعلمون}

এই পার্থিব জীবন তো ক্রীড়া -কৌতুক ব্যতীত কিছুই নয়। আর আখেরাতের জীবনই প্রকৃত জীবন। যদি তারা জানত (বুঝত)।   
(সুরা আল আনকাবুত ৬৫)

উক্ত আয়াতের তাফসীরে প্রখ্যাত মুফাস্সির ইমাদুদ্দীন ইবনে কাসীর তার সুপ্রসিদ্ধ তাফসীর গ্রন্থ “তাফসীরে ইবনে কাসীরে লিখেছেন

يقول تعالى: مخبرا عن حقارة الدنيا وزوالها وانقضائها، وأنها لا دوام لها، وغاية ما فيها لهو ولعب

উক্ত আয়াতে আল্লাহ তায়ালা দুনিয়ার তুচ্ছতা ও ক্ষণস্থায়ীত্বতা বুঝিয়েছেন। দুনিয়ার হাকিকত হলো গেল তামাশার মত । খেল-তামাশার যেমনিভাবেকোন স্থিতি নেই তেমনিভাবে দুনিয়ার কোনস্থিতি নেই। কিছু সময়ের জন্য। অল্পক্ষণ পরেই সব তামাশা খতম হয়ে যায় তেমনিভাবে দুনিয়ার জীবনের অবস্থা ও তদ্রুপ।

{وإن الدار الآخرة لهي الحيوان}
أي: الحياة الدائمة الحق الذي لا زوال لها ولا انقضاء، بل هي مستمرة أبد الآباد

আর বাস্তব ওপ্রকৃত জীবন হলো আখেরাতের জীবন।যার কোন শেষ বা সমাপ্তি নেই । বরং তা চিরদিন চলতে  থাকবে।

{وقوله: {لو كانوا يعلمون}
.أي: لآثروا ما يبقى على ما يفنى

যদি মানুষ ভালো বিষয়টি বুঝত তাহলে অবশ্যই সে ক্ষণস্থায়ী (ধ্বংসশীল দুনিয়ার উপর) চিরস্থায়ী (যার শুরু আছে কিন্তু কোন শেষ নেই সেই আখেরাতকে প্রধান্য দিতে ।
(তাফসীরে ইবনে কাসীর ৩/৫১৫, তাফসীরে মা’আরিফুল কুরআন ১০৩৫)

অপর এক আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেনঃ

ما عندكم ينفد وما عند الله باق

তোমাদের কাছে যা আছে তা নিঃশেষ হয়ে যাবে আর আল্লাহর কাছে তা আছে তা কখনোই শেষ হযবে না।
(সূরা নাহল-৯৭)

উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় মুফতি শফী আলাইহির রহমাহ তার সুপ্রসিদ্ধ তাফসীরে মাআরিফুল কোরআনে লিখেছেন উক্ত আয়াতে পার্থিব ধন-সম্পদ তো অন্তর্ভুক্ত আছেই এছাড়া দুনিয়াতে মানুষের আনন্দ-বিষাদ, সুখ-দুঃখ, সুস্থতা -অসুস্থতা, লাভ -লোকসান, বন্ধুত্ব-শত্রুতা ইত্যাদি যেসব অবস্থার সম্মুখীন হয়, সেগুলো ও এই আয়াতে শামিল। এগুলো সবই ধ্বংসশীল তবে কিয়ামতের দিন যেগুলোর কারনে সাওয়াব বা আযাব হবে সেগুলো সব অক্ষয় হয়ে থাকবে।অতএব ধ্বংসশীল অবস্থা ও কাজ-কারবাবে মগ্ন হয়ে থাকা এবং জীবন ও জীবনের কর্মক্ষমতা এতেই নিয়োজিত করে চিরস্থায়ী আযাব ও সওয়াবের প্রতি উদাসীনতা প্রদর্শন করা কোন বুদ্ধিমানের কাজ নয় ।   
(তাফসীরে মাআরিফুল কুরআন ৭৫৭)

হাদিস শরীফে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم لَا عَيْشَ إِلَّا عَيْشُ الْآخِرَةِ فَأَصْلِحْ الأَنْصَارَ وَالْمُهَاجِرَةَ وَعَنْ قَتَادَةَ
عَنْ أَنَسٍ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم مِثْلَهُ وَقَالَ فَاغْفِرْ لِلأَنْصَارِ

আনাস ইব্‌নু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, হে আল্লাহ্‌! আখিরাতের জীবনই প্রকৃত জীবন। হে আল্লাহ্‌! আনসার ও মুহাজিরগণের কল্যান করুন । 
(
সহিহ বুখারী, হাদিস নং৬১)

দুনিয়া একটি নিয়ামতঃ

عَنْ عِيَاضِ بْنِ، عَبْدِ اللَّهِ بْنِ سَعْدٍ أَنَّهُ سَمِعَ أَبَا سَعِيدٍ الْخُدْرِيَّ، يَقُولُ قَامَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَخَطَبَ النَّاسَ فَقَالَ ‏”‏ لاَ وَاللَّهِ مَا أَخْشَى عَلَيْكُمْ أَيُّهَا النَّاسُ إِلاَّ مَا يُخْرِجُ اللَّهُ لَكُمْ مِنْ زَهْرَةِ الدُّنْيَا ‏”‏ ‏.‏ فَقَالَ رَجُلٌ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَيَأْتِي الْخَيْرُ بِالشَّرِّ فَصَمَتَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم سَاعَةً ثُمَّ قَالَ ‏”‏ كَيْفَ قُلْتَ ‏”‏ ‏.‏ قَالَ قُلْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ أَيَأْتِي الْخَيْرُ بِالشَّرِّ فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏”‏ إِنَّ الْخَيْرَ لاَ يَأْتِي إِلاَّ بِخَيْرٍ أَوَ خَيْرٌ هُوَ إِنَّ كُلَّ مَا يُنْبِتُ الرَّبِيعُ يَقْتُلُ حَبَطًا أَوْ يُلِمُّ إِلاَّ آكِلَةَ الْخَضِرِ أَكَلَتْ حَتَّى إِذَا امْتَلأَتْ خَاصِرَتَاهَا اسْتَقْبَلَتِ الشَّمْسَ ثَلَطَتْ أَوْ بَالَتْ ثُمَّ اجْتَرَّتْ فَعَادَتْ فَأَكَلَتْ فَمَنْ يَأْخُذْ مَالاً بِحَقِّهِ يُبَارَكْ لَهُ فِيهِ وَمَنْ يَأْخُذْ مَالاً بِغَيْرِ حَقِّهِ فَمَثَلُهُ كَمَثَلِ الَّذِي يَأْكُلُ وَلاَ يَشْبَعُ ‏”‏

আবূ সা’ইদ আল খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দাঁড়ালেন, অতঃপর লোকদের উদ্দেশে ভাষন দিলেন। তিনি বললেনঃ হে লোক সকল! না, আল্লাহ্‌র শপথ! তোমাদের ব্যাপারে আমার কোন কিছুর আশঙ্কা নেই। তবে আল্লাহ্‌ তোমাদের জন্য যে পার্থিব সৌন্দর্য ও চাকচিক্যের ব্যবস্থা করে রেখেছেন, এ সম্পর্কে তোমাদের ব্যাপারে আমার আশঙ্কা রয়েছে। এক ব্যক্তি বললেন, ‘হে আল্লাহ্‌র রসূল! কল্যাণের পরিণামে কি অকল্যাণও হয়ে থাকে? রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর জিজ্ঞেস করলেনঃ তুমি কি বলেছিলে? সে বলল, আমি বলেছিলাম, “হে আল্লাহ্‌র রসূল! কল্যাণের সাথে কি অকল্যাণ আসবে?” রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে লক্ষ্য করে বললেন, কল্যাণ তো অকল্যাণ বয়ে আনে না। তবে কথা হলো, বসন্তকালে যেসব তৃণলতা ও সবুজ ঘাস উৎপন্ন হয় এটা কোন পশুকে ডায়রিয়ার প্রকোপে ফেলে না বা মৃত্যুর কাছাকাছিও নিয়ে যায় না। কিন্তু চারণভূমিতে বিচরণকারী পশুরা এগুলো খেয়ে পেট ফুলিয়ে ফেলে। অতঃপর সূর্যের দিকে তাকিয়ে পেশাব-পায়খানা করতে থাকে, অতঃপর জাবর কাটতে থাকে। এগুলো পুনরায় চারণভূমি তে যায় এবং এভাবে অত্যধিক খেতে খেতে একদিন মৃত্যুর শিকার হয়। অনুরূপভাবে যে ব্যক্তি সৎ পন্থায় সম্পদ উপার্জন করে তাকে এর মধ্যে বারাকাত দেয়া হয়। আর যে ব্যক্তি অসৎ পন্থায় সম্পদ উপার্জন করে তার দৃষ্টান্ত হচ্ছে – সে অনেক খাচ্ছে কিন্তু পরিতৃপ্ত হতে পারছে না।
(ই. ফা. ২২৮৯, ই. ফা. ২২৯০,
সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ২৩১১)

অপর এক হাদীসে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ

وَعَنهُ: أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم، قَالَ: إنَّ الدُّنْيَا حُلْوَةٌ خَضِرَةٌ وَإنَّ الله تَعَالَى مُسْتَخْلِفُكُمْ فِيهَا، فَيَنْظُرُ كَيْفَ تَعْمَلُونَ، فَاتَّقُوا الدُّنْيَا وَاتَّقُوا النِّسَاءَ . رواه مسلم

উক্ত রাবী রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘দুনিয়া হচ্ছে সুমিষ্ট ও সবুজ শ্যামল এবং আল্লাহ তা‘আলা তোমাদেরকে তাতে প্রতিনিধি করেছেন। অতঃপর তিনি দেখবেন যে, তোমরা কিভাবে কাজ কর। অতএব তোমরা দুনিয়ার ব্যাপারে সাবধান হও এবং সাবধান হও নারীজাতির ব্যাপারে।’’
(মুসলিম হাদিস নং ২৭৪২, সুনানে তিরমিযী হাদিস নং ২১৯১ সুনানে, ইবনু মাজাহ হাদিস নং ৪০০০, মুসনাদে আহমাদ হাদিস নং ১০৭৫৯, ১০৭৮৫, ১১০৩৪, ১১১৯৩, রিয়াদুস সলেহিন, হাদিস নং ৪৬৩)

উল্লেখিত হাদিসগুলোর মাধ্যমে প্রতিয়মান হয়ে গেল যে দুনিয়া একটি নিয়ামত। সুতরাং এই নিয়েমতের সৎ ব্যবহার করে আল্লাহ তায়ালাকে রাযি খুশি করে যাওয়া প্রকৃত জ্ঞানী কর্তব্য।

দুনিয়ার সম্পদের ব্যপারে মানুষের দৃষ্টি ভঙ্গিঃ

অধিকাংশ মানুষেরই চিন্তা ভাবনা থাকে যে সে দুনিয়াতে আস্তে আস্তে উন্নতি লাভ করবে  এবং সম্পদ বৃদ্ধি করতে থাকবে যাতে করে সে এবং তার পরবর্তী উত্তরসূরীরা সর্বোত্তম অবস্থায় পৃথিবীতে বসবাস করতে পারে । মৌলিক ভাবে এ চিন্তা করা কিন্তু অপরাধ না কিন্তু সমস্যা হল এই চিন্তাধারা লালন করার কারণে অর্থাৎ “সম্পদ বৃদ্ধির চিন্তা” মানুষ সম্পদ উপার্জনের জন্য অন্যায় ও শরীয়ত সমর্থিত নয় এমন পথ ও পন্থা অবলম্বন করে। এবং সম্পদের ব্যাপারে আল্লাহ তায়ালার আরোপিত বিধান (হজ, রাকাত, কোরবানী) পালনে উদাসীনতা প্রদর্শন করে। ফলে উক্ত সম্পদে আল্লাহ যাতে তাকে‌ প্রতিনিধি বানিয়েছেন আল্লাহ রাস্তায় ও ভালো কাজে খরচ করতে সেই সম্পদকে নিজের সম্পদ মনে করতে শুরু করে এবং সম্পদের ব্যপারে আল্লাহ তাআলার বিধান পালন না করার কারনে উক্ত সম্পদকে তার আযাবের উপকরণ বানায়ে ফেলে। আল্লাহ তায়ালা সকলকে সহীহ বুঝ দান করুন। আর এসকল কারনেই কোরআন হাদীস সম্পদ বৃদ্ধির লোভ লালসাকরী ব্যক্তিকে ভৎষনা করা হয়েছে।

পবিত্র কুরআনুল কারীমে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন

ان الانسان لربه لكنود وانه على ذلك لشهيد و انه لحب الخير لشديد

নিশ্চয়ই মানুষ তার প্রতিপালকের প্রতি অকৃতজ্ঞ। এবং সে অবশ্যই এ বিষয়ে অবগত।আর সে অবশ্যই ধন-সম্পদের আসক্তিতে মত্ত।
(সূরা আদিয়াত ৬-৮)

দুনিয়ার সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য ও লাভ- ক্ষতি উপস্থিতআর আখেরাতের নেয়ামত ও সুখ_স্বাচ্ছন্দ্য অনুপস্থিত এবং চোখের থেকে অদৃশ্যমান।তাই অপরিণামদর্শী লোকেরা উপস্থিতকে অনুপস্থিতের উপর প্রাধান্য দিয়ে বসে যা তাদের চিরস্থায়ী ক্ষতির কারণ হয়ে যায় ।

এ সকল লোকদেরকে আল্লাহ তায়ালা সম্ভোধন করে বলেন

بل تؤثرون الحيواة الدنيا و الاخرة خير و ابقى

বস্তুত তোমরা পার্থিব জীবনকে অগ্রাধিকার দাও অথচ পরকালের জীবন উৎকৃষ্ট ও স্থায়ী।
(সূরা আলা আয়াত নং ১৬-১৭)

নোটঃ
মানুষের এমন চিন্তাধারার কারনে এর ক্ষতির থেকে মানুষকে উদ্ধার করার জন্য আল্লাহ তায়ালা আসমানী কিতাব ও রাসূলগনের মাধ্যমে পরকালের নেয়ামত ও সুখ স্বচ্ছন্দ্যকে এমন দৃড়ভাবে উপস্থাপন করেছেন যেন তা উপস্থিত এবং তাদের মাধ্যমে একথাও জানিয়ে দিয়েছেন তোমরা আজ যাকে নগদ মনে করে অর্জনের জন্য উঠেপড়ে লেগেছো তা আসলে কৃত্রিম, অসম্পূর্ণ ও দ্রুত ধ্বংসশীল । আর আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগন যে সকল নেয়ামতের কথা বলছেন তা উত্তম ,স্থায়ী। সুতরাং প্রকৃত বুদ্ধিমান হলো ঐব্যক্তি যে তার মূল্যবান সময়কে স্থায়ী সুখ শান্তি অর্জনের জন্য ব্যয় করে।

একটি হাদিসে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ

عَنْ عَطَاءٍ قَالَ سَمِعْتُ ابْنَ عَبَّاسٍ يَقُولُ سَمِعْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ لَوْ كَانَ لِابْنِ آدَمَ وَادِيَانِ مِنْ مَالٍ لاَبْتَغَى ثَالِثًا وَلايَمْلاجَوْفَ ابْنِ آدَمَ إِلاَّ التُّرَابُ وَيَتُوبُ اللهُ عَلَى مَنْ تَابَ.

ইব্‌নু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন যে, আমি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি, যদি আদাম সন্তানের দু’ উপত্যকা ভরা মালধন থাকে তবুও সে তৃতীয়টার আকাঙ্খা করবে। আর মাটি ভিন্ন বানী আদামের পেট কিছুতেই ভরবে না। [১১] আর যে তাওবাহ করবে, আল্লাহ্‌ তার তাওবাহ কবূল করবেন।
(৬৪৩৭; মুসলিম ১২/৩৯, হাঃ ১০৪৯, আহমাদ ৩৪০১] (আধুনিক প্রকাশনী- ৫৯৮৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৯৯৩)

নোটঃ
[১১] এখানে বাস্তব মাটি উদ্দেশ্য নয়, বরং এর দ্বারা পরোক্ষভাবে মৃত্যু উদ্দেশ্য । অর্থ্যাৎ আদম সন্তানের চাহিদার সমাপ্তি ঘটাবে একমাত্র তার মৃত্যু । মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত তাদের চাহিদার কোন শেষ নেই । (ফাতহুল বারী) 
(
বুখারি হাদিস নং ৬৪৩৬)

বিঃদ্রঃ-
[১২] অত্র তিনটি হাদীসে পরস্পর চোখ, মুখ ও পেটের কথা বলা হয়েছে; আর এ তিনটি হচ্ছে পৃথিবী ভোগ করতে ধোঁকায় পড়ার মাধ্যম । কাজেই আদম সন্তানকে এ তিনটি অঙ্গের ব্যাপারে খুব সতর্ক থাকতে হবে ।
(
সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৬৪৩৯,৬৪৩৬)

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ “‏ بَادِرُوا بِالأَعْمَالِ سَبْعًا هَلْ تَنْظُرُونَ إِلاَّ فَقْرًا مُنْسِيًا أَوْ غِنًى مُطْغِيًا أَوْ مَرَضًا مُفْسِدًا أَوْ هَرَمًا مُفَنِّدًا أَوْ مَوْتًا مُجْهِزًا أَوِ الدَّجَّالَ فَشَرُّ غَائِبٍ يُنْتَظَرُ أَوِ السَّاعَةَ فَالسَّاعَةُ أَدْهَى وَأَمَرُّ ‏”‏ ‏.‏ قَالَ هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ لاَ نَعْرِفُهُ مِنْ حَدِيثِ الأَعْرَجِ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ إِلاَّ مِنْ حَدِيثِ مُحَرَّرِ بْنِ هَارُونَ وَقَدْ رَوَى بِشْرُ بْنُ عُمَرَ وَغَيْرُهُ عَنْ مُحَرَّرِ بْنِ هَارُونَ هَذَا ‏.‏ وَقَدْ رَوَى مَعْمَرٌ هَذَا الْحَدِيثَ عَمَّنْ سَمِعَ سَعِيدًا الْمَقْبُرِيَّ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم نَحْوَهُ ‏.‏ وَقَالَ تَنْتَظِرُونَ ‏.‏

আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: তোমরা কার্য সম্পাদনে সাতটি বিষয়ের অগ্রগামী হও। তোমরা কি এমন দারিদ্র্যের অপেক্ষায় আছ যা আল্লাহ্‌ তা‘আলাকে ভুলিয়ে দেয় অথবা এরূপ ধনবান হওয়ার যা আল্লাহ্‌ তা‘আলার অবাধ্যাচারে লিপ্ত করে অথবা এমন রোগের যা স্বাস্থ্যকে ধ্বংস করে দেয় অথবা নির্বোধে পরিণতকারী বার্ধক্যের অথবা এমন মৃত্যুর যা হঠাৎ করেই এসে যায় অথবা অপেক্ষা করছো দাজ্জালের অপেক্ষমাণ অদৃশ্য অমঙ্গলের অথবা কিয়ামাতের? আর কিয়ামাত তো আরো বিভিষিকাময়, আরো তিক্ত।
(
জামে’ আত-তিরমিজি, হাদিস নং ২৩০৬)

দুনিয়া হলো মুসাফির খানাঃ

মুসাফির চলার পথে যেমনিভাবে বিভিন্ন স্থানে বিশ্রামের জন্য অবস্থান করে কিন্তু সে ঐ জায়গাকে তার স্থায়ী বসবাসের স্থান বা গন্তব্য মনে করে না ঠিক দুনিয়া ও মানুষের মূল গন্তব্য নয় বরং মূল গন্তব্য হলো জান্নাত।প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ

حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمٰنِ أَبُو المُنْذِرِ الطُّفَاوِيُّ عَنْ سُلَيْمَانَ  الأَعْمَشِ قَالَ حَدَّثَنِي مُجَاهِدٌ عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عُمَرَ قَالَ أَخَذَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم بِمَنْكِبِي فَقَالَ كُنْ فِي الدُّنْيَا كَأَنَّكَ غَرِيبٌ أَوْ عَابِرُ سَبِيلٍ وَكَانَ ابْنُ عُمَرَ يَقُولُ إِذَا أَمْسَيْتَ فَلاَ تَنْتَظِرْ الصَّبَاحَ وَإِذَا أَصْبَحْتَ فَلاَ تَنْتَظِرْ الْمَسَاءَ وَخُذْ مِنْ صِحَّتِكَ لِمَرَضِكَ وَمِنْ حَيَاتِكَ لِمَوْتِكَ

আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌নু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একবার আমার দু’ কাঁধ ধরে বললেনঃ তুমি দুনিয়াতে থাক যেন তুমি একজন প্রবাসী অথবা পথচারী।আর ইব্‌নু ‘উমার (রাঃ) বলতেন, তুমি সন্ধ্যায় উপনীত হলে সকালের আর অপেক্ষা করো না এবং সকালে উপনীত হলে সন্ধ্যার আর অপেক্ষা করো না। তোমার সুস্থতার সময় তোমার পীড়িত অবস্থার জন্য প্রস্তুতি লও। আর তোমার জীবিত অবস্থায় তোমার মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি লও। [২]
(আধুনিক প্রকাশনী- ৫৯৬৮, ই.ফা ৫৯৭৪)

নোটঃ
[২] (৬৪১৬) অর্থাৎ সুস্থ থাকা অবস্থায় তুমি মহৎ কাজে ব্যস্ত থাক । কারন রোগ ব্যধির সময় যদি তুমি তা পালনে অক্ষম হও তখন যেন তা পালন করতে বাধ্য করা না হয় ।
(সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৬৪১৬)

দুনিয়াতে মানুষের প্রকৃত বন্ধুঃ

আমরা সকলেই বুঝি বন্ধু হবে সে যে সুখে দুঃখে সবসময়ই পাশে থাকবে । যদি এমন হয় যে শুধু মাত্র সুখের সময় পাওয়া যায় কিন্তু দুঃখের সময় হারিয়ে যায় তাহলে দুনিয়াতে ও আমরা কিন্তু তাকে প্রকৃত বন্ধু বলে স্বীকৃতি দেই না ।ঠিক এই কথাটাই যদি আমরা দুনিয়ার সকল জিনিসের সাথে আমাদের সম্পর্কের ব্যপারে মিলিয়ে দেখি তাহলে দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট হয়ে যাবে যে দুনিয়ার ধন সম্পদ সন্তান সন্তানাদী বা অন্যান্য আত্মীয় স্বজন প্রকৃত বন্ধু নয়। কেননা মানুষ যদি একাকী থাকে তখন ই সে নিজেকে বেশী অসহয় মনে করে। আর এ সময় তাকে সাথে পাবে দুনিয়ার দৃষ্টিতে ও তাকে বড় ও ঘনিষ্ট বন্ধু বলবে। ঠিক এ বিষয়টিই কবরে তখন মানুষ একাকী থাকবে তখন সাথী হিসাবে নিজের নেক আমল কে পাবে । তাই প্রকৃত বুদ্ধমান হলো ঐ ব্যক্তি যিনি এই বাস্তবতা বুঝে দুনিয়াতে থেকে ই বেশী নেক আমল করছেন ।

আর নেক আমল ই মানুষের প্রকৃত বন্ধু প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিম্নোক্ত হাদিসে এসেছে

  سُفْيَانُ حَدَّثَنَا عَبْدُ اللهِ بْنُ أَبِي بَكْرِ بْنِ عَمْرِو بْنِ حَزْمٍ سَمِعَ أَنَسَ بْنَ مَالِكٍ يَقُولُ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَتْبَعُ الْمَيِّتَ ثَلاَثَةٌ فَيَرْجِعُ اثْنَانِ وَيَبْقَى مَعَهُ وَاحِدٌ يَتْبَعُهُ أَهْلُهُ وَمَالُهُ وَعَمَلُهُ فَيَرْجِعُ أَهْلُهُ وَمَالُهُ وَيَبْقَى عَمَلُهُ

আনাস ইব্‌নু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তিনটি বস্তু মৃত ব্যক্তির অনুসরণ করে। দু’টি ফিরে আসে, আর একটি তার সঙ্গে থেকে যায়। তার পরিবারবর্গ, তার মাল ও তার ‘আমাল তার অনুসরণ করে। তার পরিবারবর্গ ও তার মাল ফিরে আসে, এবং তার ‘আমাল তার সঙ্গে থেকে যায়।
(মুসলিম পর্ব ৫৩/হাঃ ২৯৬০, আহমাদ ১২০৮১, আধুনিক প্রকাশনী- ৬০৬৪, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৬০৭০,
সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৬৫১৪)

আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে দুনিয়ার নিয়ামতকে নিয়মত হিসাবে ব্যবহার করার তাওফীক দান করুন। এবং মূল গন্তব্য আখেরাতের সফলতা দান করুন আমিন।

এখানে মন্তব্য করুন

লেখক পরিচিতি

নামঃ মুহাম্মদ সালমান হুসাইন।
ইফতাঃ ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ, জামিয়া শারইয়্যাহ মালিবাগ।
উলুমুল হাদিসঃ ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষ, মাদ্রাসা বাইতুল উলুম ঢালকানগর।
তাকমীলঃ ২০১৫ শিক্ষাবর্ষ, মাদ্রাসা বাইতুল উলুম ঢালকানগর।
হিফজঃ ২০০৭ শিক্ষাবর্ষ, জামিয়া আরাবিয়া হাজী ইউনুস কওমী মাদ্রাসা।
সিনিয়র শিক্ষকঃ হাজিপাড়া কাশীপুর নারায়ণগঞ্জ

আমাদের অনুসরণ করুন

সর্বশেষ ইউটিউব ভিডিও

Play Video

সাম্প্রতিক পোস্ট