ইসলাম একমাত্র পূর্ণাঙ্গ দ্বীন ও জীবনবিধান। তাই প্রতিটি ক্ষেত্রেই রয়েছে ইসলামের সঠিক ও সুন্দর দিক নির্দেশনা। একজন মানুষ যখন পরিপূর্ণ ভাবে ইসলামের অনুসরণ করবে তখন যেমনিভাবে সে নিজে এর সুফলতা পায় তেমনিভাবে অন্যান্যরাও এর সুফল পেতে থাকে ।তাই একজন প্রকৃত মুসলমান-এর কর্তব্য হলো; জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইসলামের বিধান বা নির্দেশনা মেনে চলা।
পশু জবেহ করা সংক্রান্ত কিছু মৌলিক মাসয়ালা

সূচিপত্র

পশু জবেহ করা সংক্রান্ত কিছু মৌলিক মাসয়ালা

ভূমিকা;

ইসলাম একমাত্র পূর্ণাঙ্গ দ্বীন ও জীবনবিধান। তাই প্রতিটি ক্ষেত্রেই রয়েছে ইসলামের সঠিক ও সুন্দর দিক নির্দেশনা। একজন মানুষ যখন পরিপূর্ণ ভাবে ইসলামের অনুসরণ করবে তখন যেমনিভাবে সে নিজে এর সুফলতা পায় তেমনিভাবে অন্যান্যরাও এর সুফল পেতে থাকে ।তাই একজন প্রকৃত মুসলমান-এর কর্তব্য হলো; জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইসলামের বিধান বা নির্দেশনা মেনে চলা। আল্লাহ তায়ালা কারো প্রতি জুলুম করেন না এবং জুলুমকে পছন্দ করেন না। তাই তো হাদিসে কুদসীতে ইরশাদ হয়েছে

ِ، عَنْ أَبِي ذَرٍّ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فِيمَا رَوَى عَنِ اللَّهِ، تَبَارَكَ وَتَعَالَى أَنَّهُ قَالَ ‏ “‏ يَا عِبَادِي إِنِّي حَرَّمْتُ الظُّلْمَ عَلَى نَفْسِي وَجَعَلْتُهُ بَيْنَكُمْ مُحَرَّمًا فَلاَ تَظَالَمُوا ‏

আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত; নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেন; আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ওহে আমার বান্দারা! আমি আমার নিজ সত্তার উপর অত্যাচারকে হারাম করে নিয়েছি এবং তোমাদের মধ্যেও তা হারাম বলে ঘোষণা করছি। অতএব তোমরা একে অপরের উপর অত্যাচার করো না।
(ই.ফা. ৬৩৩৮, ই.সে. ৬৩৮৭, সহীহ মুসলিম হাদীস নং ৬৪৬৬)

আল্লাহ তাআলার এ বিধান শুধুমাত্র মানুষের মাঝেই সীমাবদ্ধ নয় বরং তা দ্বারা উপকৃত হয় অন্যান্য জিনিস ও। তাইতো প্রয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুস্পষ্টভাবে ইরশাদ করেছেন

ِ، عَنْ شَدَّادِ بْنِ أَوْسٍ، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ “‏ إِنَّ اللَّهَ كَتَبَ الإِحْسَانَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ فَإِذَا قَتَلْتُمْ فَأَحْسِنُوا الْقِتْلَةَ وَإِذَا ذَبَحْتُمْ فَأَحْسِنُوا الذِّبْحَةَ وَلْيُحِدَّ أَحَدُكُمْ شَفْرَتَهُ وَلْيُرِحْ ذَبِيحَتَهُ ‏”‏ ‏.‏ قَالَ هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيح.

শাদ্দাদ ইবনু আওস (রাঃ) থেকে বর্ণিত; রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন; নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা প্রতিটি জিনিসের প্রতি দয়া-অনুগ্রহ প্রদর্শনের আবশ্যকতা গণ্য করেছেন। অতএব তোমরা (কিসাসে অথবা জিহাদে) কোন লোককে হত্যা করলে উত্তম পন্থায় হত্যা করবে এবং কোন কিছু যবেহ করার সময় উত্তম পন্থায় যবেহ করবে। তোমাদের মধ্যে যে কেউ যেন তার ছুরি ভালভাবে ধারালো করে নেয় এবং যবেহ করার পশুটিকে আরাম দেয়।
(সহীহ ইবনু মাজাহ ৩১৭০, জামে’ আত-তিরমিজি, হাদিস নং ১৪০৯)

যবেহ করার যন্ত্রের বর্ণনা;

যেসকল যন্ত্রের ধারের দরুন (ভারে নয়)পশুর থেকে রক্ত প্রবাহিত করা (স্বাভাবিকভাবে পশুর নির্দিষ্ট চারটি রগ রগ কাটা (পরে এর আলোচনা আসবে ইনশাআল্লাহ))সম্ভব সেসকল যন্ত্রের দ্বারা পশু জবেহ করা যাবে । হাদিসে এসেছে;

، عَنْ ، رَافِعِ بْنِ خَدِيجٍ ـ رضى الله عنه ـ قَالَ كُنَّا مَعَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم بِذِي الْحُلَيْفَةِ مِنْ تِهَامَةَ، ‏ قَالَ قَالَ جَدِّي يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّا نَرْجُو ـ أَوْ نَخَافُ ـ أَنْ نَلْقَى الْعَدُوَّ غَدًا وَلَيْسَ مَعَنَا مُدًى، فَنَذْبَحُ بِالْقَصَبِ فَقَالَ ‏”‏ اعْجَلْ أَوْ أَرْنِي، مَا أَنْهَرَ الدَّمَ وَذُكِرَ اسْمُ اللَّهِ عَلَيْهِ فَكُلُوا، لَيْسَ السِّنَّ وَالظُّفُرَ، وَسَأُحَدِّثُكُمْ عَنْ ذَلِكَ، أَمَّا السِّنُّ فَعَظْمٌ، وَأَمَّا الظُّفُرُ فَمُدَى الْحَبَشَةِ ‏”‏‏.‏

রাফি‘ ইবনু খাদীজ (রাঃ) থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন; তিহামার অন্তর্গত যুলহুলায়ফা নামক স্থানে আমারা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে অবস্থান করছিলাম। [রাবী আবায়াহ (রহঃ)] বলেন, আমার দাদা বললেন, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আমরা আশংকা করি; আগামীকাল হয়ত আমরা শক্রর মুখোমুখী হব। আমাদের সাথে তো কোন ছুরি নেই। এমতাবস্থায় আমরা কি বাঁশের ধারালো কঞ্চি দিয়ে যবেহ করতে পারি? তিনি বললেন, যে রক্ত বের করে দেয় তা দিয়ে দ্রুত কর। যা আল্লাহ্‌র নাম নিয়ে যবেহ হয়, তা তোমরা খেতে পার। তবে তা যেন দাঁত বা নখ না হয়। তোমাদের আমি এর কারণ বলছি, দাঁততো হাড় আর নখ হল হাবশীদের ছুরি।
(সহীহ বুখারী, হাদিস নং ২৪৮৮,২৫০৭,৫৪৯৮,৫৫০৯,সহীহ মুসলিম হাদিস নং ৪৯৯৬, সুনানে নাসায়ী হাদিস নং ৪৪১০, হিদায়া ৪/৭০)

যবেহ করার পূর্বেই ছুরি ধার করে নেওয়া ও দ্রুত যবেহ করা;

পশু জবেহ করার পূর্বেই ছুরি বা যবেহের যন্ত্র ধারালো করার প্রয়োজন হলে ধার করে নেওয়া উচিত। রাতে করে পশুর অতিরিক্ত কষ্ট না হয় এবং দ্রুত যবেহ করা সম্ভব হয় । একটি রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে

، عَنْ سَالِمِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ، عَنْ أَبِيهِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ، قَالَ أَمَرَ رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ بِحَدِّ الشِّفَارِ وَأَنْ تُوَارَى عَنِ الْبَهَائِمِ وَقَالَ إِذَا ذَبَحَ أَحَدُكُمْ فَلْيُجْهِزْ ‏”‏ ‏.‏

আবদুল্লাহ বিন উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত; রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ছুরি ধারালো করতে এবং তা পশুর দৃষ্টির অগোচরে রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি আরও বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যবেহ করার সময় যেন দ্রুত যবেহ করে। আবদুল্লাহ বিন উমার (রাঃ), নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সূত্রে উপরোক্ত হাদীসের অনুরূপ বর্ণিত আছে।
(সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৩১৭২)

এছাড়া মুসতাদরাকে হাকেম নামক হাদিস গ্রন্থে ও এ বিষয়ে একটি হাদিস বর্ণনা করার পর উক্ত কিতাবের মুসান্নেফ (লেখক)প্রখ্যাত হাদীস বিশারদ ইমাম হাকেম আবু আবদুল্লাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি (মৃত্যু ৪০৫) লিখেছেন;
: حديث صحيح على شرط البخاري ، ولم يخرجاه  . হাদিসটি ইমাম বুখারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর শর্তানুযায়ী সহীহ। কিন্তু ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলীম রহমাতুল্লাহি আলাইহি হাদিসটি উল্লেখ করেন নি।

**এছাড়া ও মুয়াত্তা মালেক গ্রন্থে এ এবিষয়ে এসেছে;

وفي ” الموطإ ” مالك عن هشام عن عاصم بن عبيد الله بن عاصم بن عمر بن الخطاب أن رجلا أحد شفرة ، وقد أخذ شاة ليذبحها ، فضربه عمر بن الخطاب بالدرة ، وقال : أتعذب الروح هلا فعلت هذا قبل أن تأخذها ؟ ، انتهى .

একটি লোক যবেহ করার জন্য একটি ছাগল নেওয়ার পর ছুরি ধারালো করছিল ।তখন হযরত উমর ইবনে খাত্তাব রাযিআল্লাহু আনহু বিষয়টি দেখে লোকটিকে দুররা দিয়ে আঘাত করে বললেন,তুমি পূবেই কেন এ কাজ সেরে নিলেন না ? তুমি তুমি কি পশুকে কষ্ট দেওয়ার জন্য এমনটি করছ?

পশু ক্বিবলামুখী করে রাখা;

যবেহ করার সময় পশু কিবলামুখী করে যবেহ করা মুস্তাহাব।তাই তা পালন করা কাম্য ।তবে কিবলামুখী করা ব্যতীত যবেহ করা হলেও তা খাওয়া বৈধ।
(আস সুনানুল কুবরা লিল ইমাম বাইহাকী হাদিস নং ১৭৯৫৫, মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক হাদিস নং ৭৫৮৬-৮৫৮৭, আর মাবসূত লিল সারাখসি ১৩/৫ ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৭/৩৯৭ ,মাজমাউল আনহুর ৪/১৫৯ আল বাহলুর রায়েক ৮/৩১১.ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩২১)

নিজ হাতে কুরবানী করা;

** কুরবানী দাতার যবেহ করতে পারলে নিজ হাতেই পশু জবেহ করা উত্তম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ হাতে কুরবানী করেছেন। হাদিসে এসেছে

قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ حَدَّثَنَا عَبْدُ الْوَهَّابِ حَدَّثَنَا أَيُّوبُ عَنْ أَبِي قِلاَبَةَ عَنْ أَنَسٍ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم انْكَفَأَ إِلٰى كَبْشَيْنِ أَقْرَنَيْنِ أَمْلَحَيْنِ فَذَبَحَهُمَا بِيَدِه„ تَابَعَه“ وُهَيْبٌ عَنْ أَيُّوبَ وَقَالَ إِسْمَاعِيلُ وَحَاتِمُ بْنُ وَرْدَانَ عَنْ أَيُّوبَ عَنْ ابْنِ سِيرِينَ عَنْ أَنَسٍ.

আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত; রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দু’টি সাদা কালো রং এর শিংওয়ালা ভেড়ার দিকে এগিয়ে গেলেন এবং নিজ হাত দিয়ে সে দু’টিকে যবহ্‌ করলেন।
ইসমাঈল ও হাতিম ইবনু ওয়ারদান এ হাদীসটি আইউব, ইবনু সীরীন, আনাস (রাঃ) সূত্রে বর্ননা করেছেন। আইয়্যূব থেকেও এরকমই বর্ননা করেছেন।
(মুসলিম ৩৫/৩, হাঃ ১৯৬৬, আহমাদ ১২১৪৮] আধুনিক প্রকাশনী- ৫১৪৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫০৪৩,
সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৫৫৫৪)

আর যদি নিজ হাতে যবেহ করতে সক্ষম না হন তাহলে অন্তত কুরবানীর কাছে উপস্থিত থাকা উচিত।একটি বর্ণনায় এসেছে ;

عن عمران بن حصين أن النبي صلى الله عليه وسلم قال لفاطمة قومي الى اضحيتك فاشهديها فانه يغفر لك عند أول قطرة من دمها كل ذنب عملته

হযরত ইমরান ইবনে হাসিন রাযিআল্লাহু থেকে বর্ণিত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত ফাতেমা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহা উদ্দেশ্য করে বললেন , ফাতেমা আমি তোমার কোরবানির নিকট( যবেহ করার সময় )উপস্থিত থাকো। কেননা কুরবানির প্রথম ফোটারক্তের (প্রবাহিত হওয়ার) মাধ্যমেই তিনি তোমাকে ক্ষমা করে দিবেন।
(আস সুনানুন কুবরা লিল ইমাম বাইহাকী (মৃত্যু৪৫৮)৯/২৮৩, আল মুযামুল কাবীর হাদিস নং ১৫০০২,
আল মুযামুল আওসাত লিত তবরানী হাদিস নং ২৫০৯)

ইমাম বাইহাকী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উক্ত হাদিসের একাধিক বর্ণনা করেছেন এবং এই বর্ণনাটি সহীহ হওয়ার মত পেশ করে বলেছেন كذا رواه ابن لهيية موصملا جيدا
এছাড়াও হোকেম আবু আবদুল্লাহ রহমাতুল্লাহি আলাইহি (মৃত্যু ৪০৫) হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন।

ফুকাহায়ে কেরাম লিখেছেন যবেহ করতে পারলে নিজ হাত আপন কুরবানী করা অন্যথায় কুরবানীর পশু জবেহ করার সময় উপস্থিত থাকা উত্তম।
(আন নুতাফু ফিল ফতোয়া ২৩৮,আল ইখতিয়ার ৫/৮০, বাদায়েউস সানায়ে ৪/৭৫ফাতাওয়া বায়্যিনাত ৪/৫৫৯)

মহিলা যদি যবেহ করতে সক্ষম হন এবং পর্দার বিধান মেনে কুরবানী করা সম্ভব হয় তাহলে তার জন্য ও নিজ হাতে কুরবানী করা উত্তম।
(ফাতাওয়া কাসেমিয়া ২২/১৬৯, কিতাবুল ফাতাওয়া ৪/১৯২)

যবেহ করার সময় বিসমিল্লাহ পড়া;

পশু জবেহ করার সময় বিসমিল্লাহ পড়া। তাই যবেহ করার সময় এ বিষয়ে যত্নবান হওয়া ।তবে ভুলে ছুটে গেলে পশুর গোশত খাওয়া যাবে,হারাম হবে না।
(হিদায়া ৪/৬৫)

একসাথে একাধিক ব্যক্তি যবেহ কাজে শরীক হলে বা ধারাবাহিক ভাবে শরীক হলে সকলেই বিসমিল্লাহ পড়বে ।একজন পড়া যথেষ্ট হবে না ।
(ইমদাদুল ফাতাওয়া ৩/৫৪৭)

এছাড়াও আরো কিছু বিষয় পশু জবেহ করার সময় লক্ষনীয়;

পশু কুরবানীর স্থানে আনার সময় আস্তে আস্তে আনা। পশুর বাম কাঁধে শোয়ানো। ডান হাতে যবেহ করা এবং গরু,ছাগল,মহিষের হলকে যবেহ করা ইত্যাদি ।

পশু জবেহ করার সময় কিছু কাজ থেকে বিরত থাকা উচিত;

১) পশু জমীনে ফেলার পর জবেহের স্থানে টেনে হিচড়ে নেওয়া।
২) পশুর সামনে ছুরি ধার দেওয়া। সুনানে ইবনে মাযাহ এর ৩১৭১ নংহাদিসে ও এ কাজ করতে নিষেধ করা হয়েছে। হাদিসটি পূর্বে উল্লেখ করেছি। তাই পূনরায় উল্লেখ করা থেকে বিরত রইলাম।
৩) পশুর প্রান যাওয়ার আগেই গলা মটকিয়ে দেওয়া, গলার বিশেষ রগে ছুরি দিয়ে খোচানো, পশুর হাত-পায়ের রগ কেটে দেওয়া ।
(আন নুতাফু ফিল ফাতাওয়া ২২৯, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩৩১)

গুরুত্বপূর্ণ একটি মাসয়ালা;

কুরবানীর পশু বা অন্যান্য পশুর চামড়া পশু থেকে আলাদা করার পূর্বে বিক্রি করা বৈধ নয়।তবে এক্ষেত্রে এমনটি করা যেতে পারে ,চামড়া পশু থেকে আলাদা করার পূর্বে ক্রেতা বিক্রেতার সাথে সরাসরি ক্রয় চুক্তি না করে মালিক থেকে ক্রয়ের ওয়াদা চুক্তি করবে। অতঃপর চামড়া পশু থেকে আলাদা করার পর স্বতন্ত্রভাবে ক্রয় চুক্তি করবে।
(কিতাবুল আছল ৩/৪৩৮ আল মাবসুত লিল সারাখছি ১২/২৩৫আল জাওহারাতুন নায়্যিরাহ ১/৪৬৪ আল বাহলুল রায়েক ৬/১২৪আদ দুররুল মুহতার ৭/৩৫১ ইমদাদুল আহকাম ৩/৪১৯)

গরু, ছাগল বা অন্যান্য হালাল পশুর সাতটি জিনিস খাওয়া যাবে না;

  • ১. প্রবাহিত রক্ত
  • ২. অন্ডকোষ
  • ৩. চামড়া ও গোশতের মাঝে সৃষ্ট জমাট মাংস গ্রন্থি
  • ৪. মুত্রথলি
  • ৫. পিত্ত
  • ৬-৭. নর ও মাদার গুপ্তাঙ্গ

এ ব্যাপারে একটি বর্ণনায় এসেছে ;

كره رسول الله صلى الله عليه وسلم من الشاة سبعة المرارة والمثانة والغدة و الحياة والذكر والانثيين و الدم

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বকরীর সাতটি জিনিস অপছন্দ করেছেন; পিত্ত, মুত্রথলি, মাংসগ্রন্থি, নর ও মাদার গুপ্তাঙ্গ, অন্ডকোষ, প্রবাহিত রক্ত।
(কিতাবুল আছার (ইমাম মুহাম্মদ ইবনুল হাসান আসসায়বানী) হাদিস নং ৮০৮)

এখানে كره শব্দটি নিষিদ্ধ অর্থে এসেছে। কেননা কোরআনের অসংখ্য আয়াতে প্রবাহিত রক্ত হারাম হওয়ার কথা এসেছে। সুতরাং পশুর এ সকল অঙ্গ খাওয়া যাবে না।

والله أعلم بالصواب

আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে মাসয়ালা গুলো বুঝার তাওফিক দান করুন এবং সকলকে আমল করার তৌফিক দান করুন। লেখক ,পাঠক ও সকলকে ইলমী, আমলী ও আখলাকী জিন্দেগী দান করুন। এবং নেক হায়াত দান করুন। আমীন

এখানে মন্তব্য করুন

লেখক পরিচিতি

নামঃ মুহাম্মদ সালমান হুসাইন।
ইফতাঃ ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ, জামিয়া শারইয়্যাহ মালিবাগ।
উলুমুল হাদিসঃ ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষ, মাদ্রাসা বাইতুল উলুম ঢালকানগর।
তাকমীলঃ ২০১৫ শিক্ষাবর্ষ, মাদ্রাসা বাইতুল উলুম ঢালকানগর।
হিফজঃ ২০০৭ শিক্ষাবর্ষ, জামিয়া আরাবিয়া হাজী ইউনুস কওমী মাদ্রাসা।
শিক্ষকঃ হাজিপাড়া কাশীপুর নারায়ণগঞ্জ

আমাদের অনুসরণ করুন

সর্বশেষ ইউটিউব ভিডিও

Play Video

সাম্প্রতিক পোস্ট

সাম্প্রতিক পৃষ্ঠা