কুরআন-সুন্নাহকে অবজ্ঞা করে মনগড়া ‘ইবাদাত করাকে বিদ‘আত বলা হয়। বিদ‘আত অর্থ নতুন সৃষ্টি, অভিনব, নতুন কোন প্রথা প্রবর্তন বা চর্চা করা, নজীরবিহীন; যার কোন পূর্ব দৃষ্টান্ত নেই। এর ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো- Novelty, Newly devised, New fashioned, Never having happened before, Unprecedented, Innovation, Innovated practice ইত্যাদি। এটি সুন্নাতের বিপরীত হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
বিদ‘আত পরিচয় ও কুফল

সূচিপত্র

বিদ‘আত : পরিচয় ও কুফল

কুরআন-সুন্নাহকে অবজ্ঞা করে মনগড়া ‘ইবাদাত করাকে বিদ‘আত বলা হয়। বিদ‘আত অর্থ নতুন সৃষ্টি, অভিনব, নতুন কোন প্রথা প্রবর্তন বা চর্চা করা, নজীরবিহীন; যার কোন পূর্ব দৃষ্টান্ত নেই। এর ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো- Novelty, Newly devised, New fashioned, Never having happened before, Unprecedented, Innovation, Innovated practice ইত্যাদি।
এটি সুন্নাতের বিপরীত হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আল্লাহ তা‘আলার একটি গুণবাচক নাম হচ্ছে বাদী‘। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, “আসমান ও যমীনের সম্পূর্ণ নবোদ্ভাবনকারী, নতুন সৃষ্টিকারী। তিনি যখন কোন কাজের ফয়সালা করেন, তখন তাকে শুধু বলেন হও। অমনি সেটি হয়ে যায়।”

(সূরাহ আল বাকারাহ: ১১৭)
এ আয়াতে আল্লাহ তা‘আলাকে পূর্ব দৃষ্টান্ত, পূর্ব উপাদান ও পূর্ব প্রস্তুতি ছাড়াই সৃষ্টিকারী বলা হয়েছে। ‘আকীদাহ ও ‘আমলের ক্ষেত্রে সে সকল আবিষ্কৃত পন্থাকে বিদ‘আত বলা হয়, যেগুলো রাসূলুল্লাহ সা. ও খুলাফায়ে রাশিদীনের যুগের পর অতিরিক্ত ছাওয়াব ও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে করা হয়ে থাকে। রাসূলুল্লাহ সা. ও সাহাবায়ে কিরামের পবিত্র যুগে মৌলিক কারণ বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও এ সকল কাজের কোন প্রমাণ তাদের কথায় বা কাজে সম্পূর্ণরূপে বা ইঙ্গিতে পাওয়া যায় না। বিদ‘আতের পরিচয় প্রদান করতে গিয়ে ইমাম শাতিবী রহ.বলেন, “প্রকৃত বিদ‘আত হচ্ছে সেটি, যার সমর্থনে শরী‘আতের কোন দলীল নেই। না আল্লাহর কিতাবে, না রাসূলের হাদীছে, না ইজমা‘ এর কোন দলীল, না এমন কোন দলীল পেশ করা যায় যেটি মুহাক্কিক ‘আলিমগণের নিকট গ্রহণযোগ্য, না মোটামুটিভাবে না বিস্তারিত ও খুঁটিনাটিভাবে। এজন্য এর নাম দেয়া হয়েছে বিদ‘আত। কেননা এটি মনগড়া, স্বকল্পিত, শরী‘আতে এর কোন পূর্ব দৃষ্টান্ত নেই।”

বিদ‘আত উদ্ভাবনের মূল কারণ হচ্ছে মূর্খতা। বিদ‘আত কর্মসমূহ বাহ্যত চাকচিক্যময় বলে মনে হয়। এজন্য শরী‘আত সম্পর্কে অনবহিত সাধারণ লোকেরা এর প্রতি দ্রুত আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। তারা এটিকে সুন্দর কাজ হিসেবে মনে করে। নিজেদের অজ্ঞতা ও বাহ্যিক পছন্দের মাপকাঠির ভিত্তিতে তারা সুন্নাতের তুলনায় বিদ‘আতের দিকে বেশি ঝুঁকে পড়ে। এটিকে স্বার্থান্বেষী মহল বিদ‘আত প্রচলনের মোক্ষম সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করে। বিদ‘আত সৃষ্টির অন্যতম কারণ হচ্ছে শয়তানের অপকৌশল ও প্রতারণা। কোন ‘আলিম শয়তানের ধোঁকায় পড়ে শরী‘আত বিরোধী কোন কাজ করেছেন। মূর্খ লোকেরা এটিকে শরী‘আতসম্মত কাজ মনে করে আমল করতে থাকে। এভাবে সমাজে বিদ‘আতের প্রচলন হয়ে থাকে। অনেকে সুনাম, সুখ্যাতি ও পদমর্যাদা বৃদ্ধির জন্য বিদ‘আত উদ্ভাবন করে থাকেন।
মানুষ স্বভাবতঃ নতুনকে ভালবাসে এবং সেদিকে দ্রুত ঝুঁকে পড়ে। এ কারণে স্বার্থান্বেষী ব্যক্তিরা ধর্মীয় ব্যাপারে নতুন বিষয় আবিষ্কার করে, যেন তার সুনাম ও সুখ্যাতি বৃদ্ধি পায়। বিজাতীয় সভ্যতার অন্ধ অনুকরণের মাধ্যমেও সমাজে বিদ‘আতের প্রচলন হয়ে থাকে। কোন জাতির মধ্যে যখন ভিন্ন সভ্যতার অনুপ্রবেশ ঘটে তখন সে জাতি স্বীয় সভ্যতার সংরক্ষণ করতে পারে না। সে জাতির আদর্শ বৈশিষ্ট্য ও উত্তম গুণাবলী ক্রমশ বিলুপ্ত হয়। ফলে তারা বিজাতীয় সভ্যতার বশ্যতা স্বীকার করে। মুসলিম জাতি যতদিন পর্যন্ত বিজয়ী শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ছিল এবং নিজেদের সভ্যতা ও সংস্কৃতির সংসক্ষণ করেছিল ততদিন পর্যন্ত দুনিয়ার অপরাপর সভ্যতা ছিল তাদের কাছে পদানত ও পরাভূত। কিন্তু যখন ঈমানী শক্তি দুর্বল হয় এবং সভ্যতা-সংস্কৃতি সংরক্ষণে অমনোযোগী হয়, তখনই বিজাতীয় সংস্কৃতির উদ্ভব হয় এবং নিজেরা ক্রমশ সে সভ্যতা-সংস্কৃতির দ্বারা প্রভাবিত হয়। বর্তমান মুসলিম বিশ্ব পাশ্চাত্যের অন্ধ অনুকরণের ফলে অমুসলিম সমাজের প্রথা ও কুসংস্কার মুসলিম সমাজে অনুপ্রবেশ করে। পরবর্তীতে এটি ধর্মীয় রূপ পরিগ্রহ করে এবং মুসলিম সমাজ এটি পালনকে ছাওয়াবের কাজ মনে করে। আমাদের উপমহাদেশে যারা হিন্দু বা অন্য ধর্ম থেকে ইসলাম গ্রহণ করেছে তাদের অধিকাংশই ইসলামের সঠিক প্রশিক্ষণ পায়নি। ফলে তাদের মধ্যে পূর্ববর্তী ধর্মের প্রথা ও রীতি বিদ্যমান রয়েছে। বিশেষ করে বিবাহ, জন্ম, মৃত্যু ইত্যাদিকে কেন্দ্র করে মুসলিম সমাজে যে কুসংস্কার প্রচলিত রয়েছে তার অধিকাংশই হিন্দু ধর্ম থেকে আগত।

বিদ‘আত একটি সামাজিক ব্যাধি। জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিদ‘আত পরিলক্ষিত হয়। কিছু কিছু বিদ‘আত এমন আছে যেগুলো আল্লাহর সাথে তাঁর কোন সৃষ্টিকে শরীক করার শামিল। যেমন- অনুপস্থিত কোন ব্যক্তির কাছে কিংবা মৃত ব্যক্তির নিকট দু‘আ করা, তাঁর নিকট সন্তান বা অন্য কোন কিছু প্রার্থনা করা। অথচ আল্লাহ ছাড়া কেউই এসব কিছু দেয়ার ক্ষমতা রাখেনা। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, “আল্লাহকে ছাড়া এমন কাউকে ডাকবে না, যা তোমাকে কোন উপকার দিতে পারে না, তোমার কোন ক্ষতি সাধনও করতে পারে না। যদি তুমি তাই কর, তাহলে তুমিও যালিমদের অন্তর্ভুক্ত হবে।”
(সূরাহ ইউনুস: ১০৬)
দরগাহ ও মাযারে বিভিন্ন সময় যে গান-বাজনা করা হয় এবং ঢোল-তবলা বাজানো হয়ে থাকে সেটি সম্পূর্ণরূপে হারাম। ইমাম শামী রহ. মাযারের উপর চাঁদর টানানোকে মাকরূহ বলে অভিহিত করেছেন। এছাড়া মাযারের নামে নযর ও মানত করা, বাচ্চাদের মাথার চুল কামানো, মাযারে শিরনী রান্না করে বিতরণ করা বিদ‘আত। এ সমস্ত কাজ যদি কররস্থ ওলীকে উদ্দেশ্য পূরণকারী মনে করে করা হয় তবে সেটি র্শিক হবে। “রাসূলুল্লাহ সা. কবর পাকা করতে, কবরের গায়ে কিছু লিখতে, কবরের উপর সৌধ নির্মাণ করতে এবং কবরের উপর দিয়ে চলাফেরা করতে নিষেধ করেছেন।”
(তিরমিযী)
মৃত ব্যক্তিদের কবরে ফুল দেয়াও বিদ‘আত। কোন পীর-দরবেশদের দরবারে গিয়ে তার নিকট সন্তান বা টাকা-পয়সা চাওয়া সুস্পষ্ট র্শিক। ছাওয়াবের নিয়তে কবরের চতুষ্পার্শে তাওয়াফ করা নিষিদ্ধ। কোন মৃত ব্যক্তির সম্মানে এক মিনিট নিরবতা পালন করা বিদ‘আত। মৃত ব্যক্তির প্রতি সম্মান প্রদর্শনের এমন রীতি রাসূলুল্লাহ সা., সাহাবায়ে কিরাম, তাবি‘ঈন, তাবি‘ তাবি‘ঈন এবং পরবর্তীকালের মুজতাহীদগণের যুগে পরিলক্ষিত হয়নি। কতিপয় ধর্মহীন লোক পাশ্চাত্যের অনুকরণে এটি মুসলিমদের মধ্যে চালু করেছে।

বর্তমান সমাজে প্রচলিত মিলাদ অনুষ্ঠান বিদ‘আতের অন্তর্ভুক্ত। সাধারণ মুসলিম জনগণ এটিকে ছাওয়াবের কাজ বলে মনে করে এবং অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে পালন করে থাকে। কিন্তু এটি সুন্নাতের পরিপন্থি। মিলাদ প্রথার প্রচলন রাসূলুল্লাহ সা. এর জীবনে হয়নি। এমনকি এটি সাহাবায়ে কিরাম, তাবি‘ঈন, তাবি‘ তাবি‘ঈন এবং পরবর্তীকালের মুজতাহীদগণের যুগেও প্রচলিত হয়নি। ইতিহাস থেকে জানা যায়, রাসূলুল্লাহ সা. এর ইন্তিকালের প্রায় দু’শ বছর পরে এমন এক বাদশাহ এর প্রচলন করেন, যাকে ইতিহাসে একজন ফাসিক ব্যক্তি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। জামি‘ আযহারের প্রফেসর ড. আহমাদ শারবাকী বলেন, চতুর্থ হিজরীতে ফাহিমীয় শাসকরা মিসরে এর প্রচলন করেন। তিনি আরও বলেন, শায়খ ‘উমার ইব্ন মুহাম্মাদ নামক এক ব্যক্তি ইরাকের মুসল শহরে এর প্রথম প্রচলন করেন। পরবর্তীতে আল মুজাফফর আবূ সা‘ঈদ বাদশাহ ইরাকের এরকেল শহরে এটি চালু করেন। ইব্ন দাহইয়া এ বিষয়ে একটি কিতাব লিখে তাকে দেন। এজন্য বাদশাহ তাকে এক হাজার দীনার পুরস্কার প্রদান করেন। ইমাম ইব্নুল হাজ্জ, ‘আবদুর রহমান আল মাগরিবী হানাফী, নাসির উদ্দীন আল আওদী শাফি‘ঈ, শায়খ শরফুদ্দীন হাম্বলী, কাযী শিহাবুদ্দীন, ফজলুল্লাহ জৌনপুর, মুজাদ্দিদে আলফেছানী শায়খ আহমাদ সরহিন্দীসহ অসংখ্য ‘আলিম ও ফকীহ মিলাদকে বিদ‘আত হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

শবে বরাত উপলক্ষ্যে হালুয়া-রুটি এবং আশুরার দিন খিচুড়ী-শরবতের ব্যবস্থা করা জরুরী মনে করা কুসংস্কার। শবে বরাতে বাড়ি-ঘর ও মসজিদ আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা, পটকা বা বোমা ফাটানো কুসংস্কারের অন্তর্ভুক্ত। এতে ‘ইবাদাতে বিঘ্ন সৃষ্টি হয় এবং অর্থ অপচয় ও অপব্যয় হয়। ‘আশুরা উপলক্ষ্যে তাযিয়া মিছিলের ব্যবস্থা করা এবং এতে ঢাক-ঢোল ও অন্যান্য বাদ্যযন্ত্র বাজানো নিষেধ। কোন প্রকার আহাজারী ও মাতম করা নিষেধ। কারো মৃত্যুর পর তার বাড়িতে উপস্থিত হয়ে পুরুষ-মহিলা মিলে উচ্চস্বরে কান্নাকাটি করা নিষেধ। খাৎনার অনুষ্ঠানে লোক পাঠিয়ে আমন্ত্রণ করে জনসমাবেশ ঘটানো সুন্নাতের পরিপন্থী কাজ। খাৎনার অনুষ্ঠানে উপহার প্রদান ও নাচ-গানের আয়োজন করা সম্পূর্ণ নিষেধ। বিয়ের অনুষ্ঠানে নাচ-গান করা হারাম। গোসল পর্বে বর-কনে এবং আত্মীয়-স্বজনের শরীরে হলুদ মাখামাখি, রং ছিটাছিটি এবং বেগানা পুরুষ-মহিলাদের পরস্পর হাতাহাতি করা সম্পূর্ণ নিষেধ। গোসলের অগ্রভাগে তেল দিয়ে প্রদীপ জালিয়ে গোসল করা, কনেকে দুলাভাই এবং বরকে ভাবী বা এ জাতীয় কেউ কোলে করে নিয়ে গোসলের চৌকিতে বসিয়ে গোসল দেয়াও কুসংস্কার। বিয়ের জন্য কোন দিন বা কোন মাসকে অশুভ মনে করা কুসংস্কার। এছাড়া বিয়ের মধ্যে যৌতুক আদায় করা হারাম। বর যাত্রার সময় আতশবাজী করা কুসংস্কারের অন্তর্ভুক্ত। কনের বাড়ির ফটকে গেইট তৈরি করে বরের নিকট থেকে টাকা পয়সা আদায় করা অন্যায়। খাওয়ার পর বরকে ঘরে নিয়ে মহিলাদের জড়ো হয়ে নির্লজ্জভাবে আলাপচারিতায় লিপ্ত হওয়া গুনাহের কাজ। বিয়েতে বরের পক্ষের লোকেরা কনেকে এবং কনের পক্ষের লোকেরা বরকে সালামির নামে যে টাকা পয়সা বা উপঢৌকন দেয়া হয় সেটি কুসংস্কার।

বিদ‘আত রাসূলুল্লাহ সা. এর আনুগত্যের পরিপন্থি। বিদ‘আত চর্চা করার অন্য অর্থ হলো রাসূলুল্লাহ সা. এর আনুগত্যের গন্ডি থেকে বেরিয়ে পড়া। কেননা রাসূলুল্লাহ সা. এর আনুগত্য করাকে ইসলামী শরী‘আতে সুন্নাত নামে অভিহিত করা হয়। আর বিদ‘আত যেহেতু সুন্নাতের বিপরীত, এজন্য বিদ‘আতের অনুসরণের অর্থই হলো সুন্নাতের বিরোধিতা করা। এ কারণেই আল্লাহ তা‘আলা রাসূলুল্লাহ সা. কে শরী‘য়াতের সুস্পষ্ট বিধান বলে দিয়ে কেবল ঐ বিধানেরই আনুগত্য করতে আদেশ করেছেন। এ সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, “অতঃপর আমি আপনাকে শরী‘আতের এক বিশেষ পন্থার উপর রেখেছি। অতএব আপনি এর অনুসরণ করুন এবং যারা জানে না তাদের খেয়াল খুশীর অনুসরণ করবেন না।” রাসূলুল্লাহ সা. নিজেও আমাদেরকে তাঁর সুন্নাতের অনুকরণের তাকীদ করেছেন, অপরদিকে বিদ‘আতকে পরিহার করার নির্দেশ দিয়েছেন। ‘উছমান ইবন হাযির আযাদী বলেন, একবার আমি ‘আব্দুল্লাহ ইব্ন ‘আববাস রা. এর সমীপে উপস্থিত হয়ে নিবেদন করলাম যে, ‘আপনি আমাকে একটি উপদেশ দান করুন। উত্তরে তিনি বলেন, “তোমার উচিত তাকওয়া বা আল্লাহ ভীতি অবলম্বন করা এবং এর উপর অটল ও অবিচল থাকা। (যার পন্থা হলো এই যে) আমার আদর্শের অনুসরণ কর, কিন্তু কিছুতেই বিদ‘আতের অনুকরণ করোনা।” এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, “যে ব্যক্তি এমন আমল করবে যার ব্যাপারে আমার শরী‘আতের কোন নির্দেশনা নেই, উহা প্রত্যাখ্যাত।”
(মুসলিম হা/৩২৪৩)
রাসূলুল্লাহ সা. আরও বলেন, “নিঃসন্দেহে সর্বোত্তম কথা হচ্ছে আল্লাহ্র কিতাব, সর্বোত্তম পদ্ধতি হচ্ছে রাসূলুল্লাহ সা. এর পদ্ধতি। আর নিকৃষ্ট কাজ হচ্ছে শরী‘আতে নতুন কিছু সৃষ্টি করা এবং প্রত্যেক বিদ‘আত হচ্ছে ভ্রষ্টতা।”
(মুসলিম হা/৭৬৮)
রাসূলুল্লাহ সা. আরও বলেন, “যে আমার সুন্নাহ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে সে আমার দলভুক্ত নয়।”
(বুখারী হা/ ৫০৬৩)

বিদ‘আত মানুষের মাঝে দুশমনী, ঘৃণা, বিভেদ ও বিভক্তি সৃষ্টি করে। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, “নিশ্চয় এটিই আমার সোজা সরল পথ তোমরা তারই অনুসরণ কর, তোমরা বহু পথের অনুসরণ কর না, কারণ এটি তোমাদেরকে তাঁর এক পথ হতে বিচ্ছিন্ন করে দিবে।”
(সূরাহ আল আন‘আম: ১৫৩)
যারা বিদ‘আত করে তারা আল্লাহ থেকে গাফিল থাকে এবং জান্নাতের জন্য সংক্ষিপ্ত পথ অন্বেষণ করে। যেমন, যারা সারা বছর ফরয ‘ইবাদাত করে না, তারা শবে বরাতে সারারাত ‘ইবাদাত করার মাধ্যমে জান্নাত পেতে চায়। সুন্নাহকে পরিত্যাগ করে বিদ‘আত করলে ফিতনার সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

বিদ‘আত আল্লাহর দ্বীনকে বিকৃত করে। বর্তমান খ্রিস্টান জাতি এর এক প্রকৃষ্ট উদাহরণ। তারা স্বীয় ধর্মে বিদ‘আতের প্রচলন করতে করতে তার মূল কাঠামো পরিবর্তন করে আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে পথভ্রষ্ট হিসেবে অভিহিত হয়েছে। তাদের বিদ‘আত প্রচলন সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, “আর সন্ন্যাসবাদ! এটিতো তারা নিজেরাই আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় প্রচলন করেছিল। আমি তাদের এ বিধান দেইনি।”
(সূরাহ আল হাদীদ: ২৭)
সন্ন্যাসবাদ তথা বৈরাগ্যবাদের বিদ‘আত খ্রিস্টনেরা তাদের ধর্মে প্রবর্তন করেছে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল আল্লাহর সন্তুষ্টি। কিন্তু এটি আল্লাহর সুন্নাত নয়। এভাবে যারা ধর্মে বিদ‘আতের প্রচলন করে তাদের অনেকেরই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ভাল থাকে। কিন্তু এতে নাজাত পাওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। এছাড়া বিদ‘আত ইসলামের উপর একটি চরম আঘাত। যে ব্যক্তি ইসলামে কোন বিদ‘আতের প্রচলন করলো সে মূলত অজ্ঞ লোকদের মত এ কথা স্বীকার করে নিল যে, ইসলাম পরিপূর্ণ জীবনবিধান নয়, এতে সংযোজনের প্রয়োজন আছে। অথচ আল্লাহ তা‘আলা বলেন, “আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম।”
(সূরাহ আল মায়িদাহ: ৩)

বিদ‘আতের পরিণাম অত্যন্ত ভয়াবহ। বিদ‘আত করলে ‘ইবাদাত কবুল হয় না। বিদ‘আতের শেষ পরিণাম জাহান্নাম। এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সা. বলেন, “সব বিদ‘আতই ভ্রষ্টতা, আর প্রত্যেক ভ্রষ্টতার পরিণাম হচ্ছে জাহান্নাম।”
(আবূ দাউদ) 
কিয়ামতের দিন সূর্য যখন মাথার অতি নিকটে থাকবে তখন সকলে তৃষ্ণায় পানি পান করতে চাইবে, রাসূলুল্লাহ সা. তখন তার উম্মতকে হাউযে কাউসার থেকে পানি পান করাবেন। কিন্তু বিদ‘আতিরা সে দিন পানি পান করতে পারবে না। আবূ হাসেম হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি সাহালকে বলতে শুনেছি তিনি রাসূলুল্লাহ সা. কে বলতে শুনেছেন, “আমি তোমাদের পূর্বেই হাউযে কাওসারের নিকট পৌঁছে যাব । যে ব্যক্তি সেখানে নামবে এবং তার পানি পান করবে সে আর কখনও পিপাসিত হবে না। কতিপয় লোক আমার নিকট আসতে চাইবে, আমি তাদেরকে চিনি আর তারাও আমাকে চেনে। অতঃপর আমার ও তাদের মধ্যে পর্দা পড়ে যাবে। রাসূলুল্লাহ সা. বলবেন, তারা তো আমার উম্মাতের অন্তর্ভুক্ত। তাকে বলা হবে আপনি জানেন না আপনার পরে তারা কি আমল করেছে। তখন যে ব্যক্তি আমার পরে (দ্বীনকে) পরিবর্তন করেছে তাকে আমি বলবো, দূর হয়ে যাও, দূর হয়ে যাও।”
(সহীহ মুসলিম হা/৪২৪৩)

বিদ‘আত অন্যতম সামাজিক ব্যাধি। এটি মুসলিম উম্মাহর মধ্যে শত্রুতা ও অনৈক্য সৃষ্টি করে তাদেরকে হানাহানিতে লিপ্ত করে। এটি আল্লাহর দ্বীনকে বিকৃত করে দেয়। বিদ‘আত রাসূলুল্লাহ সা. এর আনুগত্যের পরিপন্থি কাজ। বিদ‘আত নামক মারাত্মক ব্যাধিকে কঠোর হস্তে দমন করা উচিত। এটি যতই ক্ষুদ্র পরিসরে হোক, সেটিকে নিয়ন্ত্রন করা উচিত। আল্লাহর নিকট বিদ‘আতের ভয়াবহ অভিশাপ থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য প্রার্থনা করা উচিত। নিজের অজান্তে বিদ‘আত সংঘটিত হলে তার জন্য ক্ষমা চাওয়া উচিত। সর্বোপরি কুরআন-সুন্নাহর উপর অটল ও অবিচল থাকা বাঞ্ছনীয়। মহান আল্লাহ আমাদেরকে তাঁর দ্বীনের উপর অটল ও অবিচল থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন!!

এখানে মন্তব্য করুন

লেখক পরিচিতি

নামঃ ড. ফেরদৌস আলম ছিদ্দিকী।
শিক্ষাগত যোগ্যতাঃ
বি. এ (অনার্স), (১৯৯৮ শিক্ষাবর্ষ),
এম. এ, (১৯৯৯ শিক্ষাবর্ষ),
পিএইচ.ডি, (২০০৬ শিক্ষাবর্ষ),
ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
পেশাঃ সহকারী অধ্যাপক, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ।
মোবাইলঃ +৮৮০১৭১৮ -৫৭৭১২২
ই-মেইলঃ dfas122@gmail.com

আমাদের অনুসরণ করুন

সর্বশেষ ইউটিউব ভিডিও

Play Video

সাম্প্রতিক পোস্ট

সাম্প্রতিক পৃষ্ঠা