স্কাইভিউ পার্ক সিটি

শান্তিনগর, ঢাকা-১২১৭

+৮৮০২-৪১০৩২৩৫৩

২৪/৭ গ্রাহক সেবা

admin@islami-sharia.org

আমাদের কাছে বার্তা পাঠান

বিপদাপদ ও বালা মুসিবত মানুষের নিত্যদিনের সঙ্গী। যেমনিভাবে তা অমুসলিমের জীবনে আসে তেমনি ভাবে কখনো কখনো তা মুমিনের জীবনে ও আসে কিন্তু একজন মুমিন যেহেতু আল্লাহ তায়ালাকে বিশ্বাস করে তাই অন্যান্যদের ন্যায় সে যা খুশি তাই করতে পারে না বরং এক্ষেত্রে সে আতঙ্কিত না হয়ে শরীয়ত নির্দেশিত পথেই নিজের মুক্তি ও সফলতার হিসাব গ্রহণ করে । কেননা, ইসলাম হলো একটি পূর্ণাঙ্গ ধর্ম ও পরিপূর্ণ জীবন বিধান, তাই অন্যান্য ক্ষেত্রের ন্যায় এ ক্ষেত্রেও রয়েছে পূর্ণাঙ্গ দিকনির্দেশনা।
বিপাদাপদ ও বালামসিবতের কারণ ও প্রতিকার

সূচিপত্র

বিপাদাপদ ও বালামসিবতের কারণ ও প্রতিকার

মাওলানা সালমান হুসাইন (গোপালগঞ্জ)
বিপদাপদ ও বালা মুসিবত মানুষের নিত্যদিনের সঙ্গী। যেমনিভাবে তা অমুসলিমের জীবনে আসে তেমনি ভাবে কখনো কখনো তা মুমিনের জীবনে ও আসে কিন্তু একজন মুমিন যেহেতু আল্লাহ তায়ালাকে বিশ্বাস করে তাই অন্যান্যদের ন্যায় সে যা খুশি তাই করতে পারে না বরং এক্ষেত্রে সে আতঙ্কিত না হয়ে শরীয়ত নির্দেশিত পথেই নিজের মুক্তি ও সফলতার হিসাব গ্রহণ করে । কেননা, ইসলাম হলো একটি পূর্ণাঙ্গ ধর্ম ও পরিপূর্ণ জীবন বিধান, তাই অন্যান্য ক্ষেত্রের ন্যায় এ ক্ষেত্রেও রয়েছে পূর্ণাঙ্গ দিকনির্দেশনা। যেমন হাদীস শরীফে এরশাদ হয়েছে

عجبا لأمر المؤمن إن أمره كله خير وليس ذاك لأحد إلأ المؤمن إن أصابته سراء شكر فكانت خيرا له وإن أصابته ضراء صبر فكانت خيرا له 

মুমিনের অবস্থা বড়ই বিস্ময়কর ! তার প্রতিটি বিষয়ই কল্যাণকর। এটি শুধু মুমিনেরই বৈশিষ্ট্য অন্য কারো জন্য নয়। যদি সে সুখ স্বচ্ছলতায় থাকে তাহলে সে তার শুকরিয়া আদায় করে, ফলে তা তার জন্য কল্যাণকর হয়ে যায়। আর যদি সে দুঃখ-কষ্ট ও বিপদাপদের সম্মুখীন হয় তাহলে সে ধৈর্য ধারণ করে, ফলে তা তার জন্য কল্যাণকর হয়।
(সহীহ ইবনে হিব্বানঃ হাদিস নং২৮৬৯)

যেহেতু আল্লাহ তায়ালা মুমিনদেরকে সবক্ষেত্রেই স্বতন্ত্র বিধি-বিধান দিয়েছেন, তাই বিপদাপদে মুমিনদের কর্মপন্থা স্বতন্ত্র কাম্য। অন্যান্য মানুষের ন্যায় হতাশায় না থেকে বরং শরীয়তের পূর্ণাঙ্গ নির্দেশনার মূল্যায়ন করা এবং সে অনুযায়ী আমল করা, হাদিসে উল্লেখিত সবরের উপরে আমলের অংশ। তাই এ সকল ক্ষেত্রে প্রকৃত মুমিন শরীয়তের পূর্ণ নির্দেশনা মেনে আমল করাকে নিজের সফলতা ও মুক্তির মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করবে।

কোরআন হাদিসের দৃষ্টিতে মহামারীর কারণঃ

মহামারী বা রোগ-ব্যাধি যেমনিভাবে আল্লাহ তাআ’লা কর্তৃক তার বান্দাকে পরীক্ষা করার মাধ্যম তেমনি ভাবে তা অনেক সময় খোদাপ্রদত্ত শাস্তিও বটে। যেমন আল্লাহ তায়ালা কোরআনুল কারীমে ইরশাদ করেছেন

ظهر الفساد في البر و البحر بما كسبت أيدي الناس ليذيقهم بعض الذي عملوا لعلهم يرجعون

মানুষের কৃতকর্মের দরুন স্থলে ও সমুদ্রে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে। যার ফলে তিনি তাদেরকে তাদের কোন কোন কর্মের শাস্তি আস্বাদন করান। যাতে তারা আল্লাহ তাআলার দিকে ফিরে আসে। (সূরা রুমঃ আয়াত নং৪১)

অন্য এক আয়াতে এরশাদ হয়েছে

وما أصابكم من مصيبة فبما كسبت أيدكم ويعفوا عن كثير

আর তোমাদেরকে যে বিপদ-আপদ পাকড়াও করে তাতো তোমাদেরই কৃতকর্মের ফল। আর তিনি তো তোমাদের অনেক অপরাধ ক্ষমা করে দেন।  (সূরা শুরাঃ আয়াত নংঃ৩০)

অন্য এক আয়াতে এরশাদ হয়েছে

ولنذيقنهم من العذاب الأدنى دون العذاب الأكبر لعلهم يرجعون

আমি তাদেরকে বড় আযাব আস্বাদন করানোর পূর্বে ছোট আযাব আস্বাদন করাই, যেন তারা ফিরে আসে।
(সূরা সাজদাঃআয়াত নং ২১)

আয়াতের তাফসীরে প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বলেন; العذاب الأدنى (ক্ষুদ্র আযাব) দ্বারা উদ্দেশ্য হল; আল্লাহ তা’আলা মানুষকে পরীক্ষাস্বরূপ দুনিয়াতে বিভিন্ন রোগ-ব্যাধি ও বিপদ-আপদ দিয়ে থাকেন, যেন তারা আল্লাহ তাআলার দিকে ফিরে আসে।
(তাফসীরে ইবনে কাসীর খন্ড ৩ পৃষ্ঠা ৫৬৬)

* হাদীস শরীফে এরশাদ হয়েছে

الطاعون رجز أو عذاب أرسل على بني إسراءيل أو على من كان قبلكم

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন; তাউন (মহামারী) বনী ইসরাইল বা পূর্ববর্তী সম্প্রদায়ের উপর প্রেরিত আজাব।
(সহি বুখারি হাদিস নং ৬৪১৯ সহীহ মুসলিম হাদিস নং ২২১৮ সুনানে তিরমিজি হাদিস নং ১০৬৫ মুসনাদে আহমাদ হাদীস নং ১৫৭৭)

* অন্য এক হাদীসে এসেছে

، ﻋﻦ ﻋﺒﺪ اﻟﻠﻪ ﺑﻦ ﻋﻤﺮ، ﻗﺎﻝ: ﺃﻗﺒﻞ ﻋﻠﻴﻨﺎ ﺭﺳﻮﻝ اﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ اﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ، ﻓﻘﺎﻝ:  ﻳﺎ ﻣﻌﺸﺮ اﻟﻤﻬﺎﺟﺮﻳﻦ ﺧﻤﺲ ﺇﺫا اﺑﺘﻠﻴﺘﻢ ﺑﻬﻦ، ﻭﺃﻋﻮﺫ ﺑﺎﻟﻠﻪ ﺃﻥ ﺗﺪﺭﻛﻮﻫﻦ: ﻟﻢ ﺗﻈﻬﺮ اﻟﻔﺎﺣﺸﺔ ﻓﻲ ﻗﻮﻡ ﻗﻂ، ﺣﺘﻰ ﻳﻌﻠﻨﻮا ﺑﻬﺎ، ﺇﻻ ﻓﺸﺎ ﻓﻴﻬﻢ اﻟﻄﺎﻋﻮﻥ، ﻭاﻷﻭﺟﺎﻉ اﻟﺘﻲ ﻟﻢ ﺗﻜﻦ ﻣﻀﺖ ﻓﻲ ﺃﺳﻼﻓﻬﻢ اﻟﺬﻳﻦ ﻣﻀﻮا، ﻭﻟﻢ ﻳﻨﻘﺼﻮا اﻟﻤﻜﻴﺎﻝ ﻭاﻟﻤﻴﺰاﻥ، ﺇﻻ ﺃﺧﺬﻭا ﺑﺎﻟﺴﻨﻴﻦ، ﻭﺷﺪﺓ اﻟﻤﺌﻮﻧﺔ، ﻭﺟﻮﺭ اﻟﺴﻠﻄﺎﻥ ﻋﻠﻴﻬﻢ، ﻭﻟﻢ ﻳﻤﻨﻌﻮا ﺯﻛﺎﺓ ﺃﻣﻮاﻟﻬﻢ، ﺇﻻ ﻣﻨﻌﻮا اﻟﻘﻄﺮ ﻣﻦ اﻟﺴﻤﺎء، ﻭﻟﻮﻻ اﻟﺒﻬﺎﺋﻢ ﻟﻢ ﻳﻤﻄﺮﻭا، ﻭﻟﻢ ﻳﻨﻘﻀﻮا ﻋﻬﺪ اﻟﻠﻪ، ﻭﻋﻬﺪ ﺭﺳﻮﻟﻪ، ﺇﻻ ﺳﻠﻂ اﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻬﻢ ﻋﺪﻭا ﻣﻦ ﻏﻴﺮﻫﻢ، ﻓﺄﺧﺬﻭا ﺑﻌﺾ ﻣﺎ ﻓﻲ ﺃﻳﺪﻳﻬﻢ، ﻭﻣﺎ ﻟﻢ ﺗﺤﻜﻢ ﺃﺋﻤﺘﻬﻢ ﺑﻜﺘﺎﺏ اﻟﻠﻪ، ﻭﻳﺘﺨﻴﺮﻭا ﻣﻤﺎ ﺃﻧﺰﻝ اﻟﻠﻪ، ﺇﻻ ﺟﻌﻞ اﻟﻠﻪ ﺑﺄﺳﻬﻢ ﺑﻴﻨﻬﻢ 
____

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বলেন; রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের নিকট এসে বললেন; হে মুহাজিরগন ! এমন পাঁচটি বিষয় রয়েছে- যা দিয়ে তোমাদেরকে পরীক্ষা করা হতে পারে, সেগুলো দিয়ে তোমাদেরকে পরীক্ষা করার থেকে আল্লাহর কাছে আমি পানাহ চাই।
যখন কোন সম্প্রদায়ের মাঝে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়বে এমনকি তা তারা মানুষের মাঝে প্রচার হতে থাকবে তখন তাদের মাঝে ”তাউন” (মহামারী) দেখা দিবে এবং এমন সব ব্যধি ও কষ্ট ছড়িয়ে পড়বে যা মানুষের মাঝে ইতিপূর্বে দেখা যায়নি ।

  • যখন কোন সম্প্রদায় ওজনে ও মাপে কম দিবে তখন তাদের উপর দুর্ভিক্ষ ও কঠিন অবস্থা এবং শাসকের জুলুম অত্যাচার নেমে আসবে।
  • যখন কোন সম্প্রদায় যাকাত আদায় করবে না তখন তাদের উপর আসমানের বৃষ্টি বন্ধ করে দেয়া হবে। যদি জন্তু-জানোয়ার না থাকতো তাহলে আর বৃষ্টিপাত হতো না।
  • আর যখন কোন জাতি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অঙ্গীকার ভঙ্গ করবে তখন তাদের উপর বহিঃশত্রু চাপিয়ে দেয়া হবে।
  • যখন কোন সম্প্রদায়ের শাসকবর্গ আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান সমূহের কিছু গ্রহণ করবে আর কিছু ত্যাগ করবে তখন আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে পরস্পর যুদ্ধ-বিগ্রহ ও বিবাদে জড়িয়ে দিবেন।

(মুস্তাদরাক হাকেম হাদিস নং ৮৬২৩ সুনানে ইবনে মাজাহ হাদীস নং ৪৮১৯)

* অন্য হাদিসে এসেছে

ﺇﻥ اﻟﻨﺎﺱ ﺇﺫا ﺭﺃﻭا ﻇﺎﻟﻤﺎ، ﻓﻠﻢ ﻳﺄﺧﺬﻭا ﻋﻠﻰ ﻳﺪﻳﻪ ﺃﻭﺷﻚ ﺃﻥ ﻳﻌﻤﻬﻢ اﻟﻠﻪ ﺑﻌﻘﺎﺏ ﻣﻨﻪ

যখন মানুষ কাউকে জুলুম করতে দেখবে কিন্তু জালিমকে তার জুলুম থেকে বাধা দিবেনা তখন আল্লাহ তায়ালা তাদের সকলকে আযাবে ফেলবেন।
(সুনানে আবু দাউদ হাদিস নং ৩৩৩৮ সুনানে তিরমিজি হাদিস নং ৩০৫৭ সুনানে ইবনে মাজাহ হাদীস নং ৪০০৫)

* অন্য এক হাদীসে এসেছে

ﺇﻥ اﻟﻨﺎﺱ ﺇﺫا ﺭﺃﻭا اﻟﻤﻨﻜﺮ ﻻ ﻳﻐﻴﺮﻭﻧﻪ ﺃﻭﺷﻚ اﻟﻠﻪ ﺃﻥ ﻳﻌﻤﻬﻢ ﺑﻌﻘﺎﺑﻪ

যখন কোন অন্যায় দেখবে কিন্তু তা  বন্ধ করবে না তখন আল্লাহ তায়ালা তাদের সকলকে আযাবে ফেলবেন।
(মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা হাদীস নং ৩৭৫৮৩)

** ইসলামী খেলাফতের সময়ে সংঘটিত মহামারী ও সাহাবায়ে কেরাম রাযি আল্লাহু  আনহুম-দের অবস্থানঃ

খেলাফাতে রাশেদার দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রাযিআল্লাহু আনহুর শাসনামলে ১৮ হিজরি মোতাবেক ৬৩৯ খিস্টাব্দে এক ভয়াবহ মাহামারী দেখা দেয়। বাইতুল মাকদিসের নিকটবর্তী আমওয়াস নামক স্থান থেকে এই মহামারীর সূচনা হয়। অতঃপর সেখান থেকে তত্কালীন শামের অন্তর্ভুক্ত সকল এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। হযরত আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহ্ রাযিআল্লাহু আনহু পূর্ব থেকেই শামে ছিলেন। হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রাযি. ইতিপূর্বে তাকে মদিনায় আসার প্রস্তাব দেন কিন্তু মহামারী শুরু হয়ে যাওয়ায় তিনি আর মদিনায় যাননি। পক্ষান্তরে খলীফাতুল মুসলিমীন হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রাযি শামে যাওয়ার ইচ্ছায় মদিনা থেকে রওয়ানা করলেন। কিন্তু পথিমধ্যে শামে সংঘটিত মহামারীর বিষয়ে জানতে পারলেন। তখন করনীয় কি হবে…? এ বিষয়ে সাহাবায়ে কেরামকে নিয়ে পরামর্শে বসলে হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আউফ রাদিয়াল্লাহু আনহু এ বিষয়ে রাসূলের বানী শুনালেন। হদিসটি হলো

إذا سمعتم به بأرض فلا تدخلوا عليه وإذا وقع بأرض وأنتم بها فلا تخرجوا فرارا منه

যখন কোন এলাকায় মহামারীর কথা শুনবে তখন উক্ত এলাকায় প্রবেশ করবে না। আর তোমাদের অবস্থানরত এলাকায় মহামারী দেখা দিলে তার থেকে বাঁচার উদ্দেশ্যে বের হবে না বরং নিজ এলাকায় অবস্থান করবে।
(সহি বুখারি হাদিস নং ৩৪৭৪, ৬৯৬৩, মুসনাদে আহমাদ ১৪৯১, ১৫০৪,১৬১৫ সুনানে তিরমিজি হাদীস নং ১৫৬৫ মুয়াত্তা ইমাম মুহাম্মদ হাদিস নং ৯৫৫)

উক্ত হাদীসটি শুনে হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রাযিআল্লাহু আনহু শামের সফর বাতিল করত মদিনায় ফিরে আসেন। শামের এই মহামারী ত্রিশ দিন স্থায়ী হয় এবং তাতে ২৫০০০ মতান্তরে ৩০০০০ মুসলমান শাহাদাত বরণ করেন। হযরত উবাইদা ইবনুল জাররাহহযরত মুয়াজ ইবনুল জাবাল, স্বীয় পুত্র আব্দুর রহমান, ইয়াজিদ ইবনে আবু সুফিয়ান, শুরাহবিল ইবনে হাসানাহ, ফযল ইবনে আব্বাস, আবু জানদাল ইবনে সুহাইল রিযওয়ানুল্লহু আজমাঈন শাহাদাত বরণ করেন।

মাহামারী চলাকালীন অবস্থায় নিজস্থানেই অবস্থান করুনঃ

মুসলমান মাত্রই বিশ্বাস করে কাউকে সুস্থ রাখা বা কাউকে কোন রোগব্যাধি দিয়ে পরীক্ষা করা একমাত্র আল্লাহ তায়ালার হুকুমেই হয়। কোন স্থানে অবস্থান করা বা কোন স্থান থেকে পালিয়ে যাওয়া কোন রোগ থেকে মুক্তির কারণ হতে পারে না। তাই কোন এলাকায় মহামারী দেখা দিলে মহামারী গ্রস্থ-এলাকার লোকদের আপন এলাকা ত্যাগ করা ঠিক হবে না। হাদীসে এসেছে

اذا سمعتم به بارض ثلاثه دخلوا عليه واذا وقع بارض وانتم بها فلا تخرجوا فرار منه

যখন কোন এলাকায় মহামারীর কথা শুনবে তখন উক্ত এলাকায় প্রবেশ করবে না আর তোমাদের অবস্থানরত এলাকায় মহামারী দেখা দিলে তার থেকে বাঁচার উদ্দেশ্যে বের হবে না বরং নিজ এলাকায় অবস্থান করবে।
(সহি বুখারী, হাদিস নং ৩৪৭৪ ৬৯৬৩, মুসনাদে আহমাদ ১৪৯১, ১৫০৪,১৬১৫, সুনানে তিরমিজি, হাদীস নং১৫৬৫, মুয়াত্তা ইমাম মুহাম্মদ, হাদিস নং৯৫৫)

অন্য এক হাদীসে আছে

وإن الله تعالى جعله رحمه الله للمؤمنين ليس من أحد يقع بالطاعون فيمكثه في بلده صابرا محتسبا يعلم أنه لايصيبه إلا ماكتب له إلا كان له مثل أجر شهيد

মহামারী আল্লাহতালা মুমিনের জন্য রহমতের মাধ্যম বানিয়েছেন । যখন কোন ব্যক্তির অবস্থান কৃত এলাকায় মহামারী দেখা দেয় অতঃপর সে ধৈর্য ধারণ করত সওয়াবের আশায় উক্ত এলাকায় অবস্থান করে এবং এ বিষয়টি স্থির করে নেয় যে, আল্লাহ তা’আলা যার জন্য অসুস্থতা লিখে রেখেছেন শুধুমাত্র সেই অসুস্থ হবে তাহলে উক্ত ব্যক্তির জন্য রয়েছে একজন শহীদের প্রতিদান-এর সমপ্রতিদান।
(সহি বুখারী, হাদিস নং ৩৪৭৪, সুনানে কুবরা, হাদিস নং ৭৪৮৫, মুসনাদে আহমদ, হাদিস নং ২৪৩৫৮)

এ সকল হাদিসে মহামারী গ্রস্থ-এলাকার লোকদের আপন এলাকায় অবস্থানের ফজিলত বর্ণিত হয়েছে তাই আক্রান্ত এলাকার লোকজনের উচিত হল; আতঙ্কিত না হয়ে উক্ত ফজিলত এর দিকে খেয়াল করে আপনস্থানে অবস্থান করা
আর যে সকল ব্যক্তি মহামারী থেকে বাচার উদ্দেশ্যে মহামারী গ্রস্থ এলাকা থেকে বের হয়ে যায় তাদের ব্যাপারে হাদীসে এসেছেঃ

اﻟﻔﺎﺭ ﻣﻦ اﻟﻄﺎﻋﻮﻥ، ﻛاﻟﻔﺎﺭ ﻣﻦ اﻟﺰﺣﻒ، ﻭاﻟﺼﺎﺑﺮ ﻓﻴﻪ ﻟﻪ ﺃﺟﺮ ﺷﻬﻴﺪ

  • ”যে ব্যক্তি মহামারী থেকে পালনের উদ্দেশ্যে স্বীয় এলাকা অর্থাৎ আক্রান্ত এলাকা ত্যাগ করবে গুনাহের দিক দিয়ে সে যুদ্ধ থেকে পালনকারী ব্যক্তির গুনাহের সমপরিমাণ গুনাহগার হবে।
  • যে ব্যক্তি ধৈর্য ধারণ করে স্বীয় এলাকায় অবস্থান করবে তার জন্য রয়েছে একজন শহীদের সমপরিমাণ প্রতিদান।”
    (মুসনাদে আহমাদ হাদিস নং ১৪৩৯৩,১৪৪৭৪)

এ সময়ের সাধারণ মুসলমানদের জন্য করণীয় হলোঃ

  • (১) পূর্ববর্তী আয়াত ও হাদীস দ্বারা প্রতীয়মান হলো; যেহেতু বিপদাপদ ও বালা-মুসিবত দিয়ে মহান আল্লাহ তায়ালা পরীক্ষা করেন তাই এ সকল অবস্থায় নিজের আকীদা-বিশ্বাস ঠিক রাখা এবং নিজের ঈমানকে মজবুত রাখা একজন মুমিনের অপরিহার্য দায়িত্ব এবং মনে মনে এই বিশ্বাস করে নেওয়া যে, যা কিছু সংগঠিত হচ্ছে তা একমাত্র আল্লাহ তাআলার হুকুমেই হচ্ছে।
    পবিত্র কুরআনে কারীমে আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন

لن يصيبنا بنا الا ماكتب الله لنا هو مولانا وعلى الله فليتوكل المؤمنون

আল্লাহ তাআলা আমাদের জন্য যা কিছু নির্দিষ্ট করেছেন তা ব্যতীত আর কিছুই হবেনা। তিনি আমাদের অভিভাবক আর আল্লাহর উপরই মুমিনগণ যেন ভরসা করে।
(সূরা তাওবা আয়াত নং ৫১)

  • (২) এ সকল বালা-মুসিবত যেহেতু মানুষের গুনাহের কারণে আসে তাই সকলের উচিত নিজের কৃত গোনাহের জন্য লজ্জিত হয়ে খাঁটি মনে তাওবা ও ইস্তেগফার করা। কেননা বান্দার তাওবা আল্লাহ তাআলার রাগকে প্রশমিত করে এবং আল্লাহ তাআলা বান্দার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যান, তাই এ সময় বেশি বেশি তওবা ইস্তেগফার করা। আল্লাহ তাআলা সূরা তাওবার ১২৬ নং আয়াতে মুনাফিকদের আজাব প্রাপ্ত হওয়ার পর তাওবা না করা এবং উপদেশ গ্রহণ না করা কে ভৎসনার কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন, তাই মুসলমানের জন্য করনীয় হল; কোন বিপদ-আপদ বালা মুসিবত আসলে আল্লাহ তাআলার কাছে তওবা ও ইস্তেগফার করা।
  • (৩) রাত্রি জাগরণ করে বেশি বেশি ইবাদত করা কেননা হাদীস শরীফে এসেছে

عليكم بقيام الليل فإنه دأب الصالحين فيكم وإن قيام الليل قربه إلى الله ومنهاه عن الإثم وتكفير للسيئات و مطردة الداء عن الجسد

তোমাদের ( ইবাদাতে) রাত্রি জাগরন করা বা রাতের সালাত (তাহাজ্জুদ) পড়া উচিত। কেননা, এ হল তোমাদের পূর্ববর্তী নেককারদের রীতি। এ হল তোমাদের রব্বের নৈকট্য লাভের উপায়, মন্দ কাজ সমুহের কাফফারা ও পাপসমূহের জন্য প্রতিরোধক এবং শরীর থেকে রোগ প্রতিরোধর মাধ্যম।
(সুনানে তিরমিজি হাদিস নং ৩৫৪৯)

  • (৪)দোয়া ও যিকিরের প্রতি মনোযোগী হওয়া। বিশেষত যে সকল দোয়া কোরআন হাদিসে বর্ণিত হয়েছে এবং সেসকল দোয়ার মাধ্যমে মানুষ আল্লাহ তায়ালার রহমতে বিপদ আপদ থেকে মুক্ত থাকে সেগুলো আমল করা । উদাহরণস্বরূপ
  • ১)সুরা ফাতেহা একবার বা সাতবার পাঠ করে নিজের উপর দম করা।
  • ২)প্রতি নামাজের পর এক বার সুরা ইখলাস একবার সূরা ফালাক  ও সূরা নাস পাঠ করা। 
  • ৩) সকাল সন্ধ্যায়   উল্লেখিত সূরাগুলি  (সুরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস) তিনবার পাঠ করা।
  • ৪) ঘুমানোর আগে উক্ত সূরা তিনটি অনুরুপভাবে পড়ে মোনাজাতের সময় হাত উঠানোর ন্যায় দুই হাত চেহারার সামনে‌ রেখে একবার সূরা ইখলাস, একবার সূরা ফালাক, একবার সূরা নাছ পাঠ করত হাতে দম করে উভয় হাত দিয়ে সারা শরীর যতটুকু সম্ভব মুছে  নেওয়া। এভাবে মোট তিনবার।
  • ৫)প্রতি নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পাঠ করা।
  • ৬)কতিপয় সংক্ষিপ্ত দোয়াঃ

بِسْمِ اللَّهِ الَّذِي لَا يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ فِي الْأَرْضِ وَلَا فِي السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ

আল্লাহ তায়ালার নামে যার নাম সঙ্গে থাকলে যমীন ও আসমানের কোন বস্তু ক্ষতিসাধন করতে পারে না আর তিনি সবকিছু শোনেন ও জানেন।
(সুনানে তিরমিজি হাদিস নং ৩৩৮৮ সুনানে আবু দাউদ হাদিস নং ৫০৮৮)

**সকাল সন্ধ্যায়  নিম্নোক্ত দোয়াটি পড়ুনঃ

اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْعَفْوَ وَالْعَافِيَةَ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ، اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْعَفْوَ وَالْعَافِيَةَ فِي دِينِي وَدُنْيَايَ وَأَهْلِي، وَمَالِي

  • ”হে আল্লাহ ! আমি আপনার কাছে দুনিয়া ও আখেরাতের ক্ষমা ও নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি।
  • হে আল্লাহ আমি আপনার নিকট আমার দ্বীন-দুনিয়া ও পরিবার-পরিজন-এর প্রয়োজন এবং ধন-সম্পদের ব্যাপারে ক্ষমা ও নিরাপত্তা কামনা করছি।”
    (সুনানে ইবনে মাজাহ হাদিস নং ৩৮৭১)

*সকাল সন্ধ্যায় তিনবার পড়ুনঃ

اللَّهمَّ عافِني في بدَني اللَّهمَّ عافِني في سمعي اللَّهمَّ عافِني في بصري لا إلهَ إلَّا أنت اللَّهمَّ إنِّي أعوذُ بِكَ منَ الكُفْرِ والفقرِ اللَّهمَّ إنِّي أعوذُ بكَ من عذابِ القبرِ لا إلهَ إلَّا أنت

হে আল্লাহ! আমার দেহ সুস্থ রাখুন। হে আল্লাহ! আমাকে সুস্থ রাখুন আমার শ্রবণ ইন্দ্রিয়ে। হে আল্লাহ! আমাকে সুস্থ রাখুন আমার দৃষ্টিশক্তিতে। আপনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই। হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট কুফরী ও দরিদ্রতা থেকে আশ্রয় চাইছি। হে আল্লাহ! আমি কবরের আযাব থেকে আপনার নিকট আশ্রয় চাইছি, আপনি ছাড়া অন্য কোনো ইলাহ নেই।
(সুনানে আবু দাউদ হাদিস নং৫০৯০, মুসনাদে আহমদ হাদিস নং ২০৪৩০)

**সকাল সন্ধ্যা নিম্নোক্ত আয়াতটি সাতবার পাঠ করুনঃ

  حَسْبِيَ اللَّهُ لا إِلَـهَ إِلاَّ هُوَ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَهُوَ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ

আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট । তিনি ছাড়া কোন মাবুদ নেই আর আমি তার উপরেই ভরসা করি আর তিনিই মহান আরশের প্রতিপালক।
(সুনানে আবু দাউদ হাদিস নং ৫০৮১)

**নিম্নোক্ত আয়াতটি বেশি বেশি পাঠ করুন**

لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِينَ

আপনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই আমি আপনার পবিত্রতা বর্ণনা করছি, নিশ্চয়ই আমি অপরাধীদের অন্তর্ভুক্ত।
(সূরা আম্বিয়া আয়াত নং ৮৭)

اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْبَرَصِ، وَالْجُنُونِ، وَالْجُذَامِ، وَمِنْ سَيِّئِ الأَسْقَامِ

“হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই শ্বেত, উন্মাদনা, কুষ্ঠ এবং সমস্ত দুরারোগ্য ব্যাধি হতে।”
(সুনানে আবু দাউদ হাদিস নং ১৫৫৪,মুসনাদে আহমদ হাদীস নং ১৩০০৪)

 لاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللَّهِ وَلاَ مَنْجَى مِنَ اللهِ إِلاَّ إِلَيْهِ

আল্লাহ ছাড়া কোনো ভরসা নেই; কোনো ক্ষমতা বা শক্তি নেইএবং তাঁর আশ্রয় ব্যতিত তাঁর পাকড়াও থেকে বাচার কোন উপায় নেই।
(মুসনাদে বাযযার হাদিস নং ৯৬৩৫)

*অসুস্থ ব্যক্তিদের দেখাশোনা করাঃ

রোগীর সেবা করা আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য এবং তাতে রয়েছে অনেক ফযিলত । তাই পরিবারের কেউ অসুস্থ হলে আতংকিত না হয়ে তার চিকিৎসা করার ব্যবস্থা করা এবং সাথে সাথে যথাযথভাবে তার দেখাশোনা করা। এ অবস্থায় যদি তাকে একাকী রেখে সকলে দূরে সরে যায় তাহলে অসুস্থ ব্যক্তি রোগের দরুন সুস্থ হওয়ার পূর্বেই মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়বে। তাই এ অবস্থায় তার পাশে থেকে তার চিকিৎসা ও তার প্রয়োজনীয় জিনিস পত্রের ব্যবস্থা করা এবং রোগীর শুশ্রূষা করার সময় নিম্নোক্ত দোয়া পাঠ করা:

أَسْـأَلُ اللهَ العَـظيـم، رَبَّ العَـرْشِ العَـظيـم أَنْ يَشْفـيك

আমি সুমহান আল্লাহ, মহা আরশের প্রভুর নিকট তোমার আরোগ্য প্রার্থনা করছি
মৃত্যুর নিকটবর্তী নয়, এমন কোন রোগীর শুশ্রূষার সময় কোন মুসলমান যদি উক্ত দোয়াটি সাতবার পড়ে তাহলে আল্লাহ তায়ালা অসুস্থ ব্যক্তিকে সুস্থ করে দিবেন।
(সহীহ ইবনে হিব্বান ২৯৭৫, ২৯৭৮, মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নং ২১৩৭ , ২১৮২, সুনানে তিরমিজি, হাদিস নং ২০৮৩, মুস্তাদরাক হাকেম হাদিস নং ১২৬৯)

অন্য এক হাদীসে এসেছে, যে ব্যক্তি কোন অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখে নিম্নোক্ত দোয়াটি পাঠ করবে আল্লাহ তায়ালা তাকে উক্তরোগ থেকে হেফাজত করবেন।

الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي عَافَانِي مِمَّا ابْتَلاَكَ بِهِ وَفَضَّلَنِي عَلَى كَثِيرٍ مِمَّنْ خَلَقَ تَفْضِيلاً

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তাআলার যিনি আমাকে রোগ থেকে নিরাপদ রেখেছেন এবং আমাকে সৃষ্টি করে অনেকের উপরে প্রাধান্য দিয়েছেন।
(সুনানে তিরমিজি হাদিস নং ৩৪৩১,৩৪৩২ সুনানে ইবনে মাজাহ হাদিস নং ৩৮৯২ মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা হাদিস নং ২৯৭৩৬)

মহামারীতে নিহত ব্যক্তির ফজীলতঃ

কোন মুমিন-এর জন্য সমীচীন নয় যে, সে কোন বিপদ-আপদ বা মহামারীতে আক্রান্ত হওয়ার জন্য আল্লাহ তাআলার কাছে প্রার্থনা করবে বরংএ সময় সকলের জন্যই উচিত হল; নিজের জন্য এবং অন্যান্যদের জন্য আল্লাহ তাআলার নিকট সুস্থতা ও নিরাপত্তার দোয়া করা, তা সত্ত্বেও যদি কোন ব্যক্তি মহামারীতে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তাহলে তাকে অন্যান্য মানুষের ন্যায় গোসল, কাফন ও দাফন করাতে হবে। আর যে ব্যক্তি মহামারীতে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তার জন্য রয়েছে একজন শহীদের সমপরিমাণ প্রতিদান।  হাদীসে ইরশাদ হয়েছে

ما تعدون الشهيد فيكم قالوا يا رسول الله من قتل في سبيل الله فهو شهيد قال ان شهداء امتي اذا لقليل
قالوا فمن هم يا رسول الله قال من مات في سبيل الله من فهو الشهيد ومن مات في الطاعون فهو شهيد ومن مات في البطن فهو شهيد

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে লক্ষ্য করে বললেনঃ তোমরা তোমাদের মধ্যে কাদেরকে শহীদ হিসাবে গণ্য করো ? তখন সাহাবীগণ বললেন: যারা কাফেরদের সাথে যুদ্ধ করে নিহত হয় তাদেরকে শহীদ মনে করি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেনঃ যদি শুধুমাত্র এদেরকেই শহীদ মনে করো তাহলে তো আমার উম্মতের মধ্যে শহীদের সংখ্যা অনেক কম হয়ে যাবে তখন সাহাবীগণ বললেন: হে আল্লাহর রাসুল !
তাহলে কারা কারা শহীদ ? উত্তরে বললেনঃ

  • যারা আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ করতে গিয়ে নিহত হয় তারা শহীদ,
  • যারা মহামারীতে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় তারাও শহীদ,
  • যারা পেটের পীড়ায় মারা যায় তারাও শহীদ।

(সহীহ মুসলিম হাদীস নং ১৯১৫, সহীহ ইবনে হিব্বান:৩১৮৬, মুসনাদে আহমদ, হাদিস১৭৭৯৭)

অন্য এক হাদীসে আছে

الطاعون شهاده لكل مسلم

মহামারী হলো প্রতিটি মুসলমানের জন্য শাহাদাত প্রাপ্তির মাধ্যম।
(সহীহ বুখারী হাদিস নং ২৮৩০,৫৭৩২, সহীহ মুসলিম হাদীস নং১৯১৬. মুসনাদে আহমাদ হাদীস নং ১২৫১৯,১৩৭০৯,১৫৩০৭)

এছাড়াও অসংখ্য হাদীসে মহামারীতে নিহত ব্যক্তিকে শহীদ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
দেখুন,

  • সহি বুখারী, হাদিস নং ২৮২৯,২৮৩০,
  • সহীহ ইবনে হিব্বান হাদিস নং ৩১৮৬,
  • মুসনাদে আহমাদ হাদীস নং ৮২৮৮,
  • মুয়াত্তায়ে ইমাম মালেক হাদিস নং ৬৬৯,
  • মুয়াত্তায়ে ইমাম মুহাম্মদ হাদিস নং ৯৫৫,
  • মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা হাদিস নং ১৯৪৭৬,
  • মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক হাদিস ৯৫৭৪)

এখানে মন্তব্য করুন

লেখক পরিচিতি

নামঃ মুহাম্মদ সালমান হুসাইন।
ইফতাঃ ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ, জামিয়া শারইয়্যাহ মালিবাগ।
উলুমুল হাদিসঃ ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষ, মাদ্রাসা বাইতুল উলুম ঢালকানগর।
তাকমীলঃ ২০১৫ শিক্ষাবর্ষ, মাদ্রাসা বাইতুল উলুম ঢালকানগর।
হিফজঃ ২০০৭ শিক্ষাবর্ষ, জামিয়া আরাবিয়া হাজী ইউনুস কওমী মাদ্রাসা।
সিনিয়র শিক্ষকঃ হাজিপাড়া কাশীপুর নারায়ণগঞ্জ

আমাদের অনুসরণ করুন

সর্বশেষ ইউটিউব ভিডিও

Play Video

সাম্প্রতিক পোস্ট

সাম্প্রতিক পৃষ্ঠা