
সূচিপত্র
বিবাহের ক্ষেত্রে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়
এক
বিবাহ মানব জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মানব প্রকৃতির জরুরি চাহিদা পূরণ করার একটি বিশেষ মাধ্যম। বিবাহের মাধ্যমে মানব জীবনে পারিবারিক বন্ধন সৃষ্টি হয়, ইজ্জতের হেফাজত হয় , চারিত্রিক পবিত্রতা নিশ্চত হয়।বৈধ বংশ বিস্তারসহ রয়েছে ইহকাল ও পরকালীন বহু খায়ের ও বরকত।তাই ইসলামী শরীয়তে এর গুরুত্ব অপরিসীম। অসংখ্য হাদিসে বিবাহের এসক ফায়েদার কথা উল্লেখ রয়েছে ।
দুই
সুষ্ঠু সামাজিক জীবনে যেহেতু বিবাহের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তাই ইসলাম একে সহজ করে দিয়েছে। কেননা মানব চাহিদা পূরণের এ বৈধ মাধ্যমকে যদি বিভিন্ন শর্ত আরোপ করা হয়, তাহলে তা জটিল ও কঠিন হয়ে যাবে ।ফলে সমাজে অবৈধ পন্থা তালাশের চাহিদা জন্মাবে। মানুষ বিপথগামী হয়ে যাবে ।সমাজে আশ্লীলতা ও বেহায়াপনা বৃদ্ধি পাবে।তার ভয়াবহ পরিণতি পুরৈ সমাজকে গ্রাস করে নিবে। এজন্য শরীয়তের দৃষ্টিতে বিবাহের জন্য কোন উৎসব করা , দাওয়াত ও পানাহারের ব্যবস্থা করা কোনটাই জরুরি নয়।
একটি হাদিসে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ
ِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم “ إِذَا خَطَبَ إِلَيْكُمْ مَنْ تَرْضَوْنَ دِينَهُ وَخُلُقَهُ فَزَوِّجُوهُ إِلاَّ تَفْعَلُوا تَكُنْ فِتْنَةٌ فِي الأَرْضِ وَفَسَادٌ عَرِيضٌ ”
আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা যে ব্যক্তির দীনদারী ও নৈতিক চরিত্রে সন্তুষ্ট আছ তোমাদের নিকট সে ব্যক্তি বিয়ের প্রস্তাব করলে তবে তার সাথে বিয়ে দাও। তা যদি না কর তাহলে পৃথিবীতে ফিতনা-ফ্যাসাদ ও চরম বিপর্যয় সৃষ্টি হবে।
(সুনানে তিরমিযি হাদিস নং ১০৮৪)
অপর এক বর্ণনায় এসেছে
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عَمْرٍو السَّوَّاقُ الْبَلْخِيُّ، حَدَّثَنَا حَاتِمُ بْنُ إِسْمَاعِيلَ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مُسْلِمِ بْنِ هُرْمُزَ، عَنْ مُحَمَّدٍ، وَسَعِيدٍ، ابْنَىْ عُبَيْدٍ عَنْ أَبِي حَاتِمٍ الْمُزَنِيِّ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ” إِذَا جَاءَكُمْ مَنْ تَرْضَوْنَ دِينَهُ وَخُلُقَهُ فَأَنْكِحُوهُ إِلاَّ تَفْعَلُوا تَكُنْ فِتْنَةٌ فِي الأَرْضِ وَفَسَادٌ ” . قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ وَإِنْ كَانَ فِيهِ قَالَ ” إِذَا جَاءَكُمْ مَنْ تَرْضَوْنَ دِينَهُ وَخُلُقَهُ فَأَنْكِحُوهُ ” . ثَلاَثَ مَرَّاتٍ . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ . وَأَبُو حَاتِمٍ الْمُزَنِيُّ لَهُ صُحْبَةٌ وَلاَ نَعْرِفُ لَهُ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم غَيْرَ هَذَا الْحَدِيثِ .
আবূ হাতিম আল-মুযানী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা যে লোকের দীনদারী ও নৈতিক চরিত্র দ্বারা সন্তুষ্ট আছ, তোমাদের নিকট যদি সে বিয়ের প্রস্তাব দেয়, তবে তার সাথে (তোমাদের পাত্রীর) বিয়ে দাও। তা না করলে পৃথিবীতে ফিতনা-ফ্যাসাদ ও বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়বে। সাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! কিছু (ক্রটি) তার মাঝে থাকলেও কি? তিনি বললেনঃ তোমাদের নিকটে যে লোকের দীনশীলতা ও নৈতিক চরিত্র পছন্দ হয় সে লোক তোমাদের নিকট বিয়ের প্রস্তাব করলে তবে তার সাথে বিয়ে দাও। (বর্ণনাকারী বলেন) একথা তিনি তিনবার বললেন।
(সুনানে তিরমিযি হাদিস নং ১০৮৫)
তিন
বিবাহ একদিকে যেমন ভাবে চাহিদা পূরণের বৈধ মাধ্যম তেমনিভাবে তার একটি বিশেষ ইবাদত।তাই অন্যান্য ইবাদাতের ন্যয় এক্ষেত্রে ও শরিয়তের পূর্ণ অনুসরণ করা উচিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরামদের জীবনী দেখলে এমনই পাওয়া যায়।একটি হাদিসে এসেছে
ّ عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ قَالَ قَفَلْنَا مَعَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم مِنْ غَزْوَةٍ فَتَعَجَّلْتُ عَلٰى بَعِيرٍ لِي قَطُوْفٍ فَلَحِقَنِي رَاكِبٌ مِنْ خَلْفِي فَنَخَسَ بَعِيرِي بِعَنَزَةٍ كَانَتْ مَعَه“ فَانْطَلَقَ بَعِيرِي كَأَجْوَدِ مَا أَنْتَ رَاءٍ مِنَ الإِبِلِ فَإِذَا النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ مَا يُعْجِلُكَ قُلْتُ كُنْتُ حَدِيثَ عَهْدٍ بِعُرُسٍ قَالَ أَبِكْرًا أَمْ ثَيِّبًا قُلْتُ ثَيِّبًا قَالَ فَهَلاَّ جَارِيَةً تُلاَعِبُهَا وَتُلاَعِبُكَ قَالَ فَلَمَّا ذَهَبْنَا لِنَدْخُلَ قَالَ أَمْهِلُوْا حَتّٰى تَدْخُلُوْا لَيْلاً أَيْ عِشَاءً لِكَيْ تَمْتَشِطَ الشَّعِثَةُ وَتَسْتَحِدَّ الْمُغِيبَةُ.
জাবির ইব্নু ‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:তিনি বলেন, আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – এর সঙ্গে জিহাদ থেকে ফিরছিলাম। আমি আমার দুর্বল উটটি দ্রুত চালাতে চেষ্টা করছিলাম। এমন সময় এক আরোহী আমার পিছন থেকে আমার উটটিকে ছড়ি দিয়ে খোঁচা দিলে উটটি দ্রুত চলতে লাগল যেমন ভাল ভাল উটকে তুমি চলতে দেখ। ফিরে দেখি নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। তিনি আমাকে প্রশ্ন করলেন, জাবির, তোমার এত তাড়াতাড়ি করার কারণ কী? আমি উত্তর দিলাম, আমি নতুন বিয়ে করেছি। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কুমারী, না বিধবা? আমি উত্তর দিলাম, বিধবা। তিনি বললেন, তুমি কুমারী মেয়ে বিয়ে করলে না? যার সঙ্গে খেলা-কৌতুক করতে আর সেও তোমার সঙ্গে খেলা-কৌতুক করত। বর্ণনাকারী বলেন, যখন আমরা মদীনাহ্য় প্রবেশ করব, এমন সময় নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে বললেন, তুমি অপেক্ষা কর এবং রাতে প্রবেশ কর, যেন অনুপস্থিত স্বামীর স্ত্রী নিজের অবিন্যস্ত কেশরাশি বিন্যাস করতে পারে এবং লোম পরিষ্কার করতে পারে।
(৪৪৩; মুসলিম ৩৩/৫৬, হাঃ ১৯২৮, আহমাদ ১৩১১৭, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৭০৬, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৪৭০৮, সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৫০৭৯)
তেমনিভাবে আশারায়ে মুবাসসারার (যে দশ সাহাবীকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জীবদ্দশায় জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছিলেন)অন্যতম সাহাবী হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আওফ রাযিআল্লাহু আনহুর বিবাহের বর্ণনায় এসেছে
، عَنْ أَنَسٍ ـ رضى الله عنه ـ قَالَ قَدِمَ عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ عَوْفٍ الْمَدِينَةَ فَآخَى النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم بَيْنَهُ وَبَيْنَ سَعْدِ بْنِ الرَّبِيعِ الأَنْصَارِيِّ، وَكَانَ سَعْدٌ ذَا غِنًى، فَقَالَ لِعَبْدِ الرَّحْمَنِ أُقَاسِمُكَ مَالِي نِصْفَيْنِ، وَأُزَوِّجُكَ. قَالَ بَارَكَ اللَّهُ لَكَ فِي أَهْلِكَ وَمَالِكَ، دُلُّونِي عَلَى السُّوقِ. فَمَا رَجَعَ حَتَّى اسْتَفْضَلَ أَقِطًا وَسَمْنًا، فَأَتَى بِهِ أَهْلَ مَنْزِلِهِ، فَمَكَثْنَا يَسِيرًا ـ أَوْ مَا شَاءَ اللَّهُ ـ فَجَاءَ وَعَلَيْهِ وَضَرٌ مِنْ صُفْرَةٍ، فَقَالَ لَهُ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم ” مَهْيَمْ ”. قَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ تَزَوَّجْتُ امْرَأَةً مِنَ الأَنْصَارِ. قَالَ ” مَا سُقْتَ إِلَيْهَا ”. قَالَ نَوَاةً مِنْ ذَهَبٍ، أَوْ وَزْنَ نَوَاةٍ مِنْ ذَهَبٍ. قَالَ ” أَوْلِمْ وَلَوْ بِشَاةٍ ”.
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:তিনি বলেন, ‘আবদুর রহমান ইবনু আওফ (রাঃ) মদীনায় আগমন করলে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর ও সা‘দ ইবনু রাবী’ আনসারীর মাঝে ভ্রাতৃত্ব বন্ধন করে দেন। সা‘দ (রাঃ) ধনী ব্যক্তি ছিলেন। তিনি ‘আবদুর রহমান (রাঃ)-কে বললেন, আমি তোমার উদ্দেশ্যে আমার সম্পত্তি অর্ধেক অর্ধেক ভাগ করে নিতে চাই এবং তোমাকে বিবাহ করিয়ে দিতে চাই। তিনি বলেন, আল্লাহ তা‘আলা তোমার পরিবার ও সম্পদে বরকত দান করুন। আমাকে বাজার দেখিয়ে দাও। তিনি বাজার হতে মুনাফা করে নিয়ে আসলেন পনীর ও ঘি। এভাবে কিছুকাল কাটালেন। একদিন তিনি এভাবে আসলেন যে, তাঁর গায়ে বিয়ের হলুদ রঙের চিহ্ন লেগে আছে। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, কী ব্যাপার? তিনি বললেন, হে আল্লাহর রসূল! আমি জনৈকা আনসারী মহিলাকে বিবাহ করেছি। তিনি [নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)] জিজ্ঞেস করলেন, তুমি তাকে কী দিয়েছ? তিনি বললেন, খেজুরের এক আঁটি পরিমাণ স্বর্ণ। তিনি [নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)] বললেন, একটি বকরী দিয়ে হলেও ওয়ালীমা কর।
(সহিহ বুখারী, হাদিস নং ২০৪৯)
তেমনিভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ঘনিষ্ঠ খাদেম হযরত রবীআ ইসলামী রাযিআল্লাহু আনহু কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক আনসারী গোত্রে বিবাহ করতে পাঠালেন আর তিনি একাই বিবাহ সম্পদন করে চলে আসলেন।
(মাজমাউয যাওয়ায়েদ ৪/৪৭০)
উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা রাযিয়াল্লাহু সহ অন্যান্য নবী পত্নীগনের বিবাহ ও সাদাসিধে ও অনাড়ম্বর ছিল ।
(সহীহ বুখারী ১/৫৫১ ফাতহুল বারী ২/২৫৭)
মোটকথা তাদের সকলেরই বিয়ে ছিল লৌকিকতামুক্ত,অনাড়ম্বর,সাদামাটা। এরা হলো ইসলামের বাস্তব নমুনা। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাদের অনুসরণ ও অনুকরণ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। আর সাহাবায়ে কেরামদের অনুসরণের আমাদের সার্বিক কল্যাণ নিহিত রয়েছে। কিন্তু আফসোসের বিষয় হল বর্তমানে বিবাহকে ঘিরে বিভিন্ন লৌককতাও আনুষ্ঠানিকতা ও রসমে আমাদের সমাজ মারাত্মক ভাবে আক্রান্ত হয়ে গেছে।
অপচয় -অপব্যয় পর্দাহীনতা বিবাহের নামে বেহায়াপনা, গান বাজনা ইত্যাদি আমাদের সমাজে বিবাহের অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিনতহয়ে গেছে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশ ও সাহাবায়ে কেরামের নমুনা ভুলে গেছি। তার ফলে দাম্পত্য জীবনের সূচনা লগ্ন থেকে তা বরকত শূন্য হয়ে যায় । এবং শরীয়তের বিধান অনুসরণ না করা দরুন অমিল অশান্তি শুরু হয়ে যায়।
চার
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিবাহের পর ওলীমা করার উৎসাহ প্রদান করে বলেন
سُلَيْمَانُ بْنُ حَرْبٍ حَدَّثَنَا حَمَّادٌ هُوَ ابْنُ زَيْدٍ عَنْ ثَابِتٍ عَنْ أَنَسٍ أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم رَأٰى عَلٰى عَبْدِ الرَّحْمٰنِ بْنِ عَوْفٍ أَثَرَ صُفْرَةٍ قَالَ مَا هٰذَا قَالَ إِنِّي تَزَوَّجْتُ امْرَأَةً عَلٰى وَزْنِ نَوَاةٍ مِنْ ذَهَبٍ قَالَ بَارَكَ اللهُ لَكَ أَوْلِمْ وَلَوْ بِشَاةٍ
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘আবদুর রহমান ইব্নু ‘আওফ (রাঃ) – এর দেহে সুফ্রার (হলুদ রঙ) চিহ্ন দেখতে পেয়ে বললেন, এ কী? ‘আবদুর রহমান (রাঃ) বললেন, আমি এক মহিলাকে একটি খেজুরের আঁটি পরিমাণ স্বর্ণের বিনিময়ে বিয়ে করেছি। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, আল্লাহ্ তা’আলা তোমার এ বিয়েতে বারাকাত দান করুন। তুমি একটি ছাগলের দ্বারা হলেও ওয়ালীমার ব্যবস্থা কর।
(আধুনিক প্রকাশনী- ৪৭৭৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৭৮, সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৫১৫৫)
তাই সামর্থ বান ব্যক্তিদের জন্য রাসূলের উক্ত বানী ও রাসূলের ওলিমার পালনের আমলের অনুসরণ করা উচিত। এটাকে ফুকাহায়ে কেরাম সুন্নাত হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন। আর এসুন্নাত পালনের জন্য মেহমানদের সংখ্যা বা খাদ্যের মান কি হবে তা না হলে এ সুন্নাত আদায় হবে এ মন কোন শর্তারোপ করা হয়নি। বরং প্রত্যেকে তার নিজ সমর্থ অনুযায়ী খাদ্য এ সুন্নাত পালন করতে পারবে। এজন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওলিমার ধরন ও সব সময় এক ছিল না।
একটি হাদিসে এসেছে
مُسَدَّدٌ حَدَّثَنَا حَمَّادُ بْنُ زَيْدٍ عَنْ ثَابِتٍ قَالَ ذُكِرَ تَزْوِيجُ زَيْنَبَ بِنْتِ جَحْشٍ عِنْدَ أَنَسٍ فَقَالَ مَا رَأَيْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم أَوْلَمَ عَلٰى أَحَدٍ مِنْ نِسَائِه„ مَا أَوْلَمَ عَلَيْهَا أَوْلَمَ بِشَاةٍ
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ যায়নাবের বিয়ের আলোচনায় আনাস (রাঃ) উপস্থিত হয়ে তিনি বললেন, যায়নাব বিনতে জাহাশের সঙ্গে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – এর বিয়ের সময় যে ওয়ালীমার ব্যবস্থা করা হয়েছিল, তার চেয়ে বড় ওয়ালীমার ব্যবস্থা তাঁর অন্য কোন স্ত্রীর বিয়েতে আমি দেখিনি। এতে তিনি একটি ছাগল দ্বারা ওয়ালীমা করেন।
(আধুনিক প্রকাশনী- ৪৭৯০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৯৩, সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৫১৭১)
অপর একটি হাদিসে এসেছে
عَنْ أُصَفِيَّةَ بِنْتِ شَيْبَةَ قَالَتْ أَوْلَمَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم عَلٰى بَعْضِ نِسَائِه„ بِمُدَّيْنِ مِنْ شَعِيرٍ
সফীয়্যাহ বিন্তে শাইবাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর কোন এক স্ত্রীর বিয়েতে দুই মুদ (চার সের) যব দ্বারা ওয়ালীমার ব্যবস্থা করেন।
(আধুনিক প্রকাশনী- ৪৭৯১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭৯৪) সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৫১৭২)
এসকল হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হলো যে ওলীমার জন্য বহুসংখ্যক লোক খাওয়াতে হবে,উন্নত মানের খাবার খাওয়ানো ছাড়া ওলিমা হবে না শরিয়ত কর্তৃক এমন কোন বিধিমালা নেই । কিন্তু আমাদের সমাজে ইসলামে এই সহজ বিধানটিতে বিভিন্ন বিষয় সম্পৃক্ত করার কারনে তা কঠিন করে ফেলা হয়েছে। তবে কারো সমর্থ না থাকলে ঋণ নিয়ে ওলিমা করার প্রয়োজন নেই।
পাঁচ
বিবাহকে কেন্দ্র করে অন্যান্য বিভিন্ন অনুষ্ঠান আমাদের সমাজে প্রচলিত তা শরীয়ত সম্মত নয়। বাগদান অনুষ্ঠান,পানচিনি অনুষ্ঠান,গায়ে হলুদ,ও বিশালাকারে বরযাত্রী যাওয়া প্রথা। এছাড়াও বিবাহকে উদ্দেশ্য করেগানবাজনা ওঅন্যান্য শরীয়ত নিষিদ্ধ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা। যেহেতু বিবাহ একটি ইবাদাত ও তাই তাতে সম্পূর্ণ শরীয়তের বিধান অনুসরণ করে তা বরকতময় করার চেষ্টা করা । শরীয়ত নিষিদ্ধ কাজে বাস্তব সুখ শান্তি অর্জন হতে পারে না যদিও কখনো মানুষের দৃষ্টিতে মনে হয়।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে দ্বীন ও শরীয়ত বোঝার তাওফিক দান করুন এবং সামাজিক রসম (শরীয়ত সমর্থিত নয় এমন)রেওয়াজ পরিহার করে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে শরীয়তের পূর্ণ অনুসরণ করার তাওফীক দান করুন।
এখানে মন্তব্য করুন
লেখক পরিচিতি
নামঃ মুহাম্মদ সালমান হুসাইন।
ইফতাঃ ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ, জামিয়া শারইয়্যাহ মালিবাগ।
উলুমুল হাদিসঃ ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষ, মাদ্রাসা বাইতুল উলুম ঢালকানগর।
তাকমীলঃ ২০১৫ শিক্ষাবর্ষ, মাদ্রাসা বাইতুল উলুম ঢালকানগর।
হিফজঃ ২০০৭ শিক্ষাবর্ষ, জামিয়া আরাবিয়া হাজী ইউনুস কওমী মাদ্রাসা।
সিনিয়র শিক্ষকঃ হাজিপাড়া কাশীপুর নারায়ণগঞ্জ