স্কাইভিউ পার্ক সিটি

শান্তিনগর, ঢাকা-১২১৭

+৮৮০২-৪১০৩২৩৫৩

২৪/৭ গ্রাহক সেবা

admin@islami-sharia.org

আমাদের কাছে বার্তা পাঠান

বিবাহ মানব জীবনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। বিবাহ যেমনিভাবে শরীয়তের দৃষ্টিতে ইবাদত তেমনিভাবে মানব জরুরি চাহিদা বৈধ পন্থায় পুরণ করার মাধ্যম।
বিবাহের শরয়ী দৃষ্টি ভঙ্গি

সূচিপত্র

বিবাহের শরয়ী দৃষ্টি ভঙ্গি

বিবাহ মানব জীবনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। বিবাহ যেমনিভাবে শরীয়তের দৃষ্টিতে ইবাদত তেমনিভাবে মানব জরুরি চাহিদা বৈধ পন্থায় পুরণ করার মাধ্যম।

একটি হাদিসে প্রীয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ

عن حُمَيْدُ بْنُ أَبِي حُمَيْدٍ الطَّوِيلُ أَنَّه“ سَمِعَ أَنَسَ بْنَ مَالِكٍ يَقُوْلُ جَاءَ ثَلاَثَةُ رَهْطٍ إِلٰى بُيُوْتِ أَزْوَاجِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم يَسْأَلُوْنَ عَنْ عِبَادَةِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَلَمَّا أُخْبِرُوْا كَأَنَّهُمْ تَقَالُّوْهَا فَقَالُوْا وَأَيْنَ نَحْنُ مِنَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَدْ غُفِرَ لَه“ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِه„ وَمَا تَأَخَّرَ قَالَ أَحَدُهُمْ أَمَّا أَنَا فَإِنِّي أُصَلِّي اللَّيْلَ أَبَدًا وَقَالَ آخَرُ أَنَا أَصُوْمُ الدَّهْرَ وَلاَ أُفْطِرُ وَقَالَ آخَرُ أَنَا أَعْتَزِلُ النِّسَاءَ فَلاَ أَتَزَوَّجُ أَبَدًا فَجَاءَ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِلَيْهِمْ فَقَالَ أَنْتُمْ الَّذِينَ قُلْتُمْ كَذَا وَكَذَا أَمَا وَاللهِ إِنِّي لأخْشَاكُمْ للهِ÷ وَأَتْقَاكُمْ لَه“ لَكِنِّي أَصُوْمُ وَأُفْطِرُ وَأُصَلِّي وَأَرْقُدُ وَأَتَزَوَّجُ النِّسَاءَ فَمَنْ رَغِبَ عَنْ سُنَّتِي فَلَيْسَ مِنِّي

আনাস ইব্‌নু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃতিনি বলেন, তিন জনের একটি দল নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ‘ইবাদাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করার জন্য নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – এর স্ত্রীদের বাড়িতে আসল। যখন তাঁদেরকে এ সম্পর্কে জানানো হলো, তখন তারা ‘ইবাদাতের পরিমাণ কম মনে করল এবং বলল, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – এর সঙ্গে আমাদের তুলনা হতে পারে না। কারণ, তাঁর আগের ও পরের সকল গুনাহ্‌ ক্ষমা ক’রে দেয়া হয়েছে। এমন সময় তাদের মধ্য হতে একজন বলল, আমি সারা জীবন রাতভর সলাত আদায় করতে থাকব। অপর একজন বলল, আমি সবসময় সওম পালন করব এবং কক্ষনো বাদ দিব না। অপরজন বলল, আমি নারী সংসর্গ ত্যাগ করব, কখনও বিয়ে করব না। এরপর রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাদের নিকট এলেন এবং বললেন, “তোমরা কি ঐ সব লোক যারা এমন এমন কথাবার্তা বলেছ? আল্লাহ্‌র কসম! আমি আল্লাহ্‌কে তোমাদের চেয়ে বেশি ভয় করি এবং তোমাদের চেয়ে তাঁর প্রতি বেশি অনুগত; অথচ আমি সওম পালন করি, আবার তা থেকে বিরতও থাকি। সলাত আদায় করি এবং নিদ্রা যাই ও মেয়েদেরকে বিয়েও করি। [১] সুতরাং যারা আমার সুন্নাতের প্রতি বিরাগ পোষণ করবে, তারা আমার দলভুক্ত নয়। [২]
[মুসলিম ১৬/১, হাঃ ১৪০১, আহমাদ ১৩৫৩৪] (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৬৯০, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৪৬৯৩)

নোটঃ
[১] যে কোন ‘ইবাদাতের ক্ষেত্রে ‘ইবাদাতের সময়, পরিমাণ, স্থান, অবস্থা ইত্যাদির দিকে খেয়াল রাখতে হবে। আবেগ তাড়িত হয়ে ফারযের মধ্যে যেমন কম বেশি করা যাবে না; তেমনি সুন্নাতের ক্ষেত্রেও রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নির্দেশ বা তার ‘আমালের পরিবর্তন করা যাবে না। নফল ‘ইবাদাতেও কারো সময় থাকলে বা নিজের খেয়াল খুশি মত করা ইসলাম সমর্থিত নয়। ইসলামে সলাত, সওমের পাশাপাশি ঘুমানো, বিয়ে করা, বাণিজ্য করা ইত্যাদিও ‘ইবাদাতের মধ্যে গণ্য যদি তা সাওয়াবের আশায় এবং সঠিক নিয়মানুসারে পালন করা হয়। কিন্তু যদি কেউ সার্বিক দিক থেকে সমর্থ হওয়া সত্ত্বেও রসূলের সুন্নাতের প্রতি অনীহা ও অবিশ্বাসের কারণে বিয়ে পরিত্যাগ করে, তাহলে সে রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – এর তরীকা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে।
[২] আল্লাহ তা’আলা মানুষকে যে প্রকৃতি, বৈশিষ্ট্য ও চাহিদা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন সেগুলোকে উপেক্ষা করে আল্লাহর প্রিয়পাত্র হওয়া তো দূরের কথা, মানুষ মানুষের স্তরেই থাকতে পারবে না। মানুষ অতিরিক্ত খাদ্য খেলে বা একেবারেই খাদ্য পরিত্যাগ করলে তার বেঁচে থাকা নিয়েই আশঙ্কা দেখা দিবে। একাধারে সওম পালন করলেও একই অবস্থা দেখা দিবে। তাই আল্লাহর রসূল আমাদেরকে এমন শিক্ষা দিয়েছেন যাতে আমরা মানুষ হিসেবে স্বাভাবিক জীবন যাপন করেও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারি। জীবনের যে কোন ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক পন্থা অবলম্বন করলে দুর্ভোগ ও বিপর্যয় আসবে। খ্রীস্টান পাদ্রীদের অনুসৃত বৈরাগ্যবাদ ও দাম্পত্য জীবনের প্রতি লোক-দেখানো অনীহা তাদের অনেককেই যৌনাচারের ক্ষেত্রে পশুর স্তরে নামিয়ে দিয়েছে। কিন্তু যদি কেউ সার্বিক দিক থেকে সমর্থ হওয়া সত্ত্বেও রসূলের সুন্নাতের প্রতি অনীহা ও অবিশ্বাসের কারণে বিয়ে পরিত্যাগ করে, তাহলে সে রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – এর তরীকা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে।
(সহীহ বুখারী, হাদিস নং ৫০৬৩)

অপর একটি হাদিসে এসেছে

أَحْمَدُ بْنُ يُوْنُسَ حَدَّثَنَا إِبْرَاهِيمُ بْنُ سَعْدٍ أَخْبَرَنَا ابْنُ شِهَابٍ سَمِعَ سَعِيدَ بْنَ الْمُسَيَّبِ يَقُوْلُ سَمِعْتُ سَعْدَ بْنَ أَبِي وَقَّاصٍ يَقُوْلُ رَدَّ رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم عَلٰى عُثْمَانَ بْنِ مَظْعُوْنٍ التَّبَتُّلَ وَلَوْ أَذِنَ لَه“ لاَخْتَصَيْنَا

সা’দ ইব্‌নু আবী ওয়াক্কাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ‘উসমান ইব্‌নু মাজ’উনকে বিয়ে করা থেকে বিরত থাকতে নিষেধ করেছেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে যদি অনুমতি দিতেন, তাহলে আমরাও খাসি হয়ে যেতাম।,(অর্থাৎ বিবাহ না করার অনুমতি দিতেন তাহলে আমরা বিবাহ থেকে বিরত থাকতে উক্ত পন্থা গ্রহন করতাম ,যেন বিবাহের চাহিদা ই না হয়)
[৫০৭৪; মুসলিম ১৬/১, হাঃ ১৪০২, আহমাদ ১৫১৬]  (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৭০০, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৪৭০৩, সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৫০৭৩)

বিবাহের মাধ্যমে মানব জীবনে পারিবারিক বন্ধন সৃষ্টি হয়,

ইজ্জত আব্রুর হেফাজত হয় , চারিত্রিক পবিত্রতা নিশ্চিত হয়। তাইতো প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ

عُمَرُ بْنُ حَفْصِ بْنِ غِيَاثٍ حَدَّثَنَا أَبِي حَدَّثَنَا الأَعْمَشُ قَالَ حَدَّثَنِي عُمَارَةُ عَنْ عَبْدِ الرَّحْمٰنِ بْنِ يَزِيدَ قَالَ دَخَلْتُ مَعَ عَلْقَمَةَ وَالأَسْوَدِ عَلٰى عَبْدِ اللهِ فَقَالَ عَبْدُ اللهِ كُنَّا مَعَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم شَبَابًا لاَ نَجِدُ شَيْئًا فَقَالَ لَنَا رَسُوْلُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَا مَعْشَرَ الشَّبَابِ مَنِ اسْتَطَاعَ الْبَاءَةَ فَلْيَتَزَوَّجْ فَإِنَّه“ أَغَضُّ لِلْبَصَرِ وَأَحْصَنُ لِلْفَرْجِ وَمَنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَعَلَيْهِ بِالصَّوْمِ فَإِنَّه“ لَه“ وِجَاءٌ

‘আবদুল্লাহ্‌ ইব্‌নু মাস’উদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – এর সঙ্গে আমরা কতক যুবক ছিলাম; আর আমাদের কোন কিছু ছিল না। এই হালতে আমাদেরকে রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন। হে যুবক সম্প্রদায় [৩]! তোমাদের মধ্যে যারা বিয়ে করার সামর্থ্য রাখে, তারা যেন বিয়ে করে। কেননা বিয়ে তার দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং লজ্জাস্থান হিফাযত করে এবং যার বিয়ে করার সামর্থ্য নেই, সে যেন সাওম পালন করে। কেননা, সাওম তার যৌনতাকে দমন করবে।
(আধুনিক প্রকাশনীঃ ৪৬৯৩, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৪৬৯৬)

নোটঃ
[৩] হাদীসে ‘যুব সম্প্রদায়’ কাদের বলা হয়েছে, এ সম্পর্কে ইমাম নাবাবী লিখেছেন-আমাদের লোকদের মতে যুবক-যুবতী বলতে তাদেরকে বোঝানো হয়েছে যারা বালেগ [পূর্ণ বয়স্ক] হয়েছে এবং ত্রিশ বছর বয়স পার হয়ে যায়নি। আর এ যুবক-যুবতীদের বিয়ের জন্য রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকীদ করলেন কেন, তার কারণ সম্পর্কে আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী তার বিশ্ববিখ্যাত বুখারীর ভাষ্যগ্রন্থ “উমদাতুল ক্বারী” গ্রন্থে লিখেছেনঃ “হাদীসে কেবলমাত্র যুবক-যুবতীদের বিয়ে করতে বলার কারণ এই যে, বুড়োদের অপেক্ষা এ বয়সের লোকদের মধ্যেই বিয়ে করার প্রবণতা ও দাবী অনেক বেশী বর্তমান দেখা যায়।।
(সহীহ বুখারী, হাদিস নং ৫০৬৬)

নেক সন্তান প্রাপ্তির এক মাত্র পথই হলো বিবাহ।

আর নেক সন্তান পিতা মাতার জন্য দুনিয়াও আখেরাতের উত্তম নিয়ামত । যেমনিভাবে সে দুনিয়াতে পিতা-মাতার জন্য কল্যানকর হয় তেমনি ভাবে আখেরাতে ও সে পিতা-মাতার জন্য কল্যানকর হয় ।একটি হাদিসে প্রীয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ “‏ إِذَا مَاتَ الإِنْسَانُ انْقَطَعَ عَنْهُ عَمَلُهُ إِلاَّ مِنْ ثَلاَثَةِ أَشْيَاءَ مِنْ صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ أَوْ عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ أَوْ وَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُو لَهُ ‏”.‏ ‏

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ মানুষ যখন মৃত্যু বরণ করে তখন তার আমলের সুযোগও বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু তিনটি আমলের সওয়াব বন্ধ হয় না। এক. সদাক্বাহ জারিয়া। দুই. এমন জ্ঞান যা দ্বারা মানুষ উপকৃত হয় এবং নেক সন্তান, যে তার জন্য দু’আ করে।
(সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ২৮৮০)

বিবাহের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা আর্থিক সচ্ছলতা দান করেন।

পবিত্র কুরআনুল কারীমে সূরা নুরের ৩২ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা এ মর্মে ইরশাদ করেছেন

وأنكحوا الأيامى منكم والصالحين من عبادكم وإمائكم إن يكونوا فقراء يغنهم الله من فضله والله واسع عليم (32

তোমাদের মধ্যে যারা(বিবাহের উপযুক্ত কিন্তু বিবাহহীন তাদেরকে বিবাহ সম্পাদন করে দাও, এবং তোমাদের দাস-দাসীদের মধ্যে যারা সৎ তাদেরকেও।তারা অভাবগ্রস্ত হইলে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাব মুক্ত করে দিবেন। আল্লাহ তো প্রাচুর্যময়,সব বিষয়ে অবগত।

নবী কারীম (সা.) বিবাহকে ঈমান ও দ্বীনের অর্ধেক বলে আখ্যায়িত করে ইরশাদ করেন

إذا تزوج العبد فقد كمل نصف الايمان فليتق الله في النصف الباقي

বান্দা যখন বিবাহ করে তখন তার দ্বীন অর্ধেক পূর্ণ হয়ে যায়। অতএব সে যেন অবশিষ্ট অর্ধেকের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করে । (শুয়াবুল ঈমান হাদিস নং ৫৪৮৮)

এছাড়াও বিবাহের মাঝে রয়েছে অসংখ্য ফায়েদা ।তাই বিবাহকে শুধুমাত্র চাহিদা পূরণের মাধ্যমে মনে করা অনুচিত । বরং বিবাহ যেহেতু একটি শরয়ী বিষয় এবং ইবাদাত তাই অন্যান্য ইবাদাতের ন্যয় এ ইবাদাতের জন্য ও যাবতীয় বিধি বিধান জানা ও তার বাস্তবিক প্রয়োগ সমাজে শান্তি নিয়ে আসবে। কিন্তু আফসোসের বিষয় হল বর্তমানে বিবাহের ক্ষেত্রে অধিকাংশ মানুষের অগ্ঙতার কারনে মানুষ শরীয়তের অনুসরণ করা হয় না ।তার ফলে ঊক্ত ইবাদাতের মধ্যে অনিসলামিক অবিচ্ছিন্ন অনেক রুসূমাত বা প্রচলোন সংযুক্ত হয়ে গেছে।তাই ইসলামী শরিয়াহ নির্দেষিত পন্থায় বিবাহ করা কষ্ট সাধ্য ও বিরল হয়ে গেছে। অনেকে তা নিয়ে হাসিঠাট্টা ও বিদ্রুপের খোরাক জোগাচ্ছে । আল্লাহ তায়ালা সকলকে দ্বীনের সহীহ বুঝ দান করুন।

পাত্রী নির্বাচন

বিবাহ যেহেতু একটি স্থায়ী সম্পর্ক গড়ে উঠার মাধ্যমে এবং বিভিন্ন শরয়ী উদ্দেশ্যে অর্জিত হয় তাই তা যেন অর্জিত হয় এবং উভয়ের জীবন সুখময় হয় এজন্য উভয়ের মাঝে কিছু গুন থাকা আবশ্যক। তো বিবাহের ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত গুনগুলোর ভিত্তিতে পাত্রী নির্বাচন করা উচিত।

দ্বীনদার হওয়া

একটি হাদিসে প্রীয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ

حَدَّثَنَا هِشَامُ بْنُ عَمَّارٍ حَدَّثَنَا عِيسَى بْنُ يُونُسَ حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ زِيَادِ بْنِ أَنْعُمَ عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ يَزِيدَ عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ إِنَّمَا الدُّنْيَا مَتَاعٌ وَلَيْسَ مِنْ مَتَاعِ الدُّنْيَا شَيْءٌ أَفْضَلَ مِنْ الْمَرْأَةِ الصَّالِحَةِ

আবদুল্লাহ বিন আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, গোটা দুনিয়াই হলো সম্পদ। আর দুনিয়ার মধ্যে পুণ্যবতী স্ত্রীলোকের চেয়ে অধিক উত্তম কোন সম্পদ নাই।
(সহীহ মুসলিম হাদিস নং ১৪৬৭, নাসায়ী হাদিস নং ৩২৩২, আহমাদ হাদিস নং ৬৫৩১,/১০২ সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ১৮৫৫)

অপর এক হাদিসে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ

 حَدَّثَنَا يَحْيٰى عَنْ عُبَيْدِ اللهِ قَالَ حَدَّثَنِي سَعِيدُ بْنُ أَبِي سَعِيدٍ عَنْ أَبِيهِ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ تُنْكَحُ الْمَرْأَةُ لأرْبَعٍ لِمَالِهَا وَلِحَسَبِهَا وَجَمَالِهَا وَلِدِينِهَا فَاظْفَرْ بِذَاتِ الدِّينِ تَرِبَتْ يَدَاكَ

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, সাধারণ চারটি বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রেখে মেয়েদেরকে বিয়ে করা হয়ঃ তার সম্পদ, তার বংশমর্যাদা, তার সৌন্দর্য ও তার দীনদারী। সুতরাং তুমি দীনদারীকেই প্রাধান্য দেবে নতুবা তুমি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। (সহীহ বুখারী, হাদিস নং ৫০৯০, মুসলিম ১৭/১৫, হাঃ ১৪৬৬, আহমাদ ৯৫২৬, আধুনিক প্রকাশনী- ৪৭১৭, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৪৭১৯)

নোটঃ
[১০] যে সব কারণে একজন পুরুষ বিশেষ একটি মেয়েকে স্ত্রীরূপে বরণ করার জন্য উৎসাহিত ও আগ্রহান্বিত হতে পারে তা হচ্ছে চারটি। (১) সৌন্দর্য (২) সম্পদ (৩) বংশ (৪) দীনদারী। এ গুণ চতুষ্টয়ের মধ্যে সর্বশেষে উল্লেখ করা হয়েছে দীনদারী ও আদর্শবাদিতার গুণ। আর এ গুণটিই ইসলামের দৃষ্টিতে সর্বাগ্রগণ্য ও সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – এর আলোচ্য নির্দেশের সার কথা হল- দীনদারীর গুণসম্পন্না কনে পাওয়া গেলে তাকেই যেন স্ত্রীরূপে বরণ করা হয়, তাকে বাদ দিয়ে অপর কোন গুণসম্পন্না মহিলাকে বিয়ে করতে আগ্রহী হওয়া উচিত নয় – । চারটি গুণের মধ্যে দ্বীনদার হওয়ার গুণটি কেবল যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ তা-ই নয়, এ গুণ যার নেই তার মধ্যে অন্যান্য গুণ যতই থাক না কেন, ইসলামের দৃষ্টিতে সে অগ্রাধিকার যোগ্য কনে নয়।  উপরের উদ্ধৃত হাদীসগুলো থেকে যে কথাটি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে তা এই যে, ইসলামের দৃষ্টিতে তাকওয়া, পরহেযগারী, দীনদারী ও উন্নত চরিত্রই হচ্ছে জীবন সঙ্গিনী পছন্দ করার ক্ষেত্রে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য বিষয়।
দ্বিতীয় গুন রুপসী হওয়া কোন পাত্রীর সম্পর্কে জানা যাবে যে সে দ্বীনদার ও পরহেজগার তখন দ্বিতীয় যে গুনটা লক্ষ্যনীয় তাহলোপাত্রী রুপসীও সুন্দরী হওয়া । কেননা পুরুষের চরিত্র রক্ষায় স্ত্রীর রুপের অনেক বড় ভুমিকা রয়েছে।সাধারনত মানুষের মন এসকল নারীদের প্রতি ধাবিত থাকে। তাই স্ত্রী এমন না হয়ে কুৎসিত বা অপচ্ছন্দনীয় হলে হলে তা নিয়ে সে তৃপ্ত ও সন্তুষ্ট থাকে না ।ফলে সে শরীয়ত নিষিদ্ধ কোন পন্থা অবলম্বন করে দুনিয়া ও আখেরাত বরবাদ করে দেয়।
তাই তো নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ

أَخْبَرَنَا قُتَيْبَةُ، قَالَ: حَدَّثَنَا اللَّيْثُ، عَنْ ابْنِ عَجْلَانَ، عَنْ سَعِيدٍ الْمَقْبُرِيِّ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قِيلَ لِرَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَيُّ النِّسَاءِ خَيْرٌ؟ قَالَ: الَّتِي تَسُرُّهُ إِذَا نَظَرَ، وَتُطِيعُهُ إِذَا أَمَرَ، وَلَا تُخَالِفُهُ فِي نَفْسِهَا وَمَالِهَا بِمَا يَكْرَهُ

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:তিনি বলেনঃ (একদা) রাসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে প্রশ্ন করা হলো, কোন্‌ নারী উত্তম ? তিনি বললেনঃ সে (স্বামী) যার প্রতি দৃষ্টিপাত স্বামীকে সন্তুষ্ট করে। সে আদেশ করলে তার আনুগত্য করে, এবং (স্ত্রী) নিজের ব্যাপারে ও তার ধন-সম্পদের ব্যাপারে যা অপছন্দ করে এমন কাজ করে তার বিরোধিতা করে না।
(সুনানে-নাসায়ী, হাদিস নং ৩২৩১)

বংশগত মর্যাদাবান হওয়া

পাত্রীর বংশগত দিকটি ও লক্ষনীয়। অর্থাৎ পাত্রী ভালো বংশের ও ধর্মীয় পরিবারের সদস্য হওয়া চাই।কেননা শীঘ্রই তার উপর আপন সন্তানের লালন পালন ও শিক্ষা দীক্ষার দায়িত্ব অর্পিত হবে ।আর যদি সে নিজেই শিষ্টাচারসম্পনা ও মার্জিত চরিত্রের অধিকারী না হয় তাহলে সে সন্তান কে সঠিকভাবে লালন পালন করতে ও শিক্ষাদীক্ষা দিতে ব্যর্থ হবে। তেমনিভাবে অভিজাত ও ধর্মীয় পরিবারের মেয়েদের থেকে অনাকাঙ্ক্ষিত ও খারাপ কাজ প্রকাশ পাওয়া অন্যান্যদের থেকে কঠিন। কেননা তার পারিবারিক সম্ভান্ততা তাকে খারাপ কাজ থেকে বাধা দিবে।

আখলাক তথা চরিত্রর মাধুর্য ও সুসভাবের হওয়া

উপরোক্ত বিষয়গুলো ছাড়াও চারিত্রিক মাধুর্য ও সুসভাবের হওয়ার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও লক্ষনীয়।স্বামীস্ত্রীর দিক থেকে তৃপ্ত ও সন্তুষ্ট হয়ে দ্বীনের উপর চলার জন্য স্ত্রী উত্তম ও সুন্দর গুনাবলীর অধিকারীনি হওয়া অত্যন্ত জরুরি। কেননা স্ত্রী যদি কটু সংলাপি হয় এবং তার জবান অসংযত ওবেপরোয়া হয় ,স্বামীর অনুগ্র‌হে অকৃতজ্ঞ হয় তাহলে এমন নারীর সাথে জীবন যাপন করা অত্যন্ত কঠিন ও দুষ্কর হয়ে যায়। এমনকি স্বামীর আত্মসম্মান ও দ্বীনদারিতা ধ্বংস করে দেয় এজন্য বিবাহের পূর্বে ই সৎস্বভাবের বিষয়টি অত্যাধিক লক্ষ্য রাখা উচিত এবং বিবাহের পূর্বে ই কোন বিচক্ষণ, নির্ভরযোগ্য,সত্যবাদী, পাত্রীর বাহ্যিক ওঅভ্যন্তরীন গুনাবলী তথা শিক্ষা-দীক্ষা আচার আচরণ ও স্বভাব চরিত্র সম্পর্কে জানে এবং পাত্রীর প্রতি তার কোন দূর্বলতা নেই মেসে অতিরঞ্জত করবে বা কোন প্রকার বিদ্বেষ নেই তার কারনে সে সত্য গোপন করবে এমন কারো থেকে পাত্রীর খোজে খবর নেওয়া উচিত।

বুদ্ধিমতী হওয়া

মেধাবী ও বুদ্ধমতি নারীকে বিয়ে করা উচিত। কেননা বিবাহের উদ্দেশ্য হলো প্রিতিও ভালোবাসার মাধ্যমে উত্তম জীবন যাপন করা । তাছাড়া মহিলা তার স্বামীকে খুশি রাখা অন্যতম উপায় হলো স্বামীর তবিয়ত বা অভ্যাস বুঝে সে অনুযায়ী স্বামীকে খুশি রাখা ।আর মেধাবী ও বুদ্ধিমতি না হলে এলক্ষ্য অর্জন করা যায় না।

নোটঃ
কোন মহিলার মাঝে যদি দ্বীনদারিতা না থাকে কিন্তু অন্যান্ত গুন যতই থাকুক না কেন তাকে পাত্রী হিসাবে নির্বাচন করা ঠিক নয় । কেননা তা বৈবাহিক জীবনের শান্তিকে নষ্ট করে দেয় ।দ্বীনদারিতা না থাকার অর্থ হলো সে আল্লাহকে ভয় পায় না এবং তার‌ থেকে লজ্জা বোধ ও করেনা ।আর মহিলা আল্লাহ কে ভয় পায় না এবং তার নিকট লজ্জাবোধ ও করে না সে কি স্বামী বা অন্যান্য মানুষকে ভয় পাবে বা লজ্জাবোধ করবে !কখনো তা আশা করা যায় না ।আর এমন একজন‌ নারী ই একটি পরিবার, একটি সমাজ , একটি সম্প্রদায়ের শান্তি দূর করার জন্য যথেষ্ট। আল্লাহ তায়ালা সকলকে হেফাজত করুন।
একটি হাদিসে প্রীয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ

حَدَّثَنَا أَبُو كُرَيْبٍ حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّحْمَنِ الْمُحَارِبيُّ وَجَعْفَرُ بْنُ عَوْنٍ عَنْ الْإِفْرِيقِيِّ عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ يَزِيدَ عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍو قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم لَا تَزَوَّجُوا النِّسَاءَ لِحُسْنِهِنَّ فَعَسَى حُسْنُهُنَّ أَنْ يُرْدِيَهُنَّ وَلَا تَزَوَّجُوهُنَّ لِأَمْوَالِهِنَّ فَعَسَى أَمْوَالُهُنَّ أَنْ تُطْغِيَهُنَّ وَلَكِنْ تَزَوَّجُوهُنَّ عَلَى الدِّينِ وَلَأَمَةٌ خَرْمَاءُ سَوْدَاءُ ذَاتُ دِينٍ أَفْضَلُ

আব্দুল্লাহ্‌ বিন আম্‌র (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “তোমরা শুধু রুপ-সৌন্দর্য্যে মুগ্ধ হয়ে মহিলাদের বিবাহ করো না। এ রুপ-সৌন্দর্য্য হয়তো তাদের ধ্বংসের কারণও হতে পারে। হয়তো এই সম্পদই তাদের অপকর্মে লিপ্ত হওয়ার কারণ হতে পারে। অতএব ধর্মপরায়ণতা বিবেচনায় তোমরা তাদের বিবাহ করো। চেপ্টা নাকবিশিষ্ট কুৎসিৎ দাসীও অধিক উত্তম যদি সে হয় ধর্ম-পরায়ণা।
(সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ১৮৫৯)

পাত্র নির্বাচনঃ

কোন মেয়ের বিয়ের জন্য তখন পাত্র নির্বাচন করতে হবে তখন মুত্তাকী পরহেজগার ছেলে নির্বাচন করা উচিত। কেননা বিবাহের মাধ্যমে স্ত্রী অসংখ্য হক স্বামীর উপর এসে যায় এক্ষেত্রে স্বামী যদি মুত্তাকী হন তাহলে ঐ স্ত্রী এবং আগত সন্তানগনের জন্যআল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে সহজ হয়ে যায় । পক্ষান্তরে মুত্তাকী না হলে শরিয়ত সমর্থিত এমন অনেক কাজ তার থেকে প্রকাশ‌পায় মা তার ও তার পরিবারের সদস্যদের সুখ শান্তি নষ্ট করে দেয়।মেয়েদেরকে বিবাহের ক্ষেত্রে আর্থিক ও সামাজিকভাবে তার সমকক্ষ ও তার থেকে উন্নত পরিবারে বিবাহ দেওয়া উচিত।

পাত্রী দেখা

বিবাহ শাদীতে সর্ব প্রথম যে ধাপ আসে তা হলে পাত্রী দেখা এবং পাত্রীর সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়া । যেহেতু‌ বিবাহ সামাজিক জীবনের এক সুদৃঢ় বন্ধন ।এ বন্ধন কেবল দু একদিনের জন্য নয় বরং সারা জীবনের। এ বন্ধন স্বামী স্ত্রীর জীবনে তেমনি উত্থান আনতে পারে তেমনি পতন ও ঘটাতে পারে।তেমন আনন্দ বয়ে আনতে পারে,তেমনি নিরানন্দের মহা অভিশাপে ও নিক্ষেপ করতে পারে।তাই এ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পূর্বে অনেক কিছু যাচাই-বাছাই ও বিবেচনা করে নেওয়া আবশ্যক।

খোঁজ খবর নিতে গিয়ে অতিরিক্ত বিষয় ও অপ্রয়োজনী বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। এক্ষেত্রে পূর্বে উল্লেখিত গুনাবলী গুলো সম্পর্কে খোঁজ খবর নেওয়া। পাত্রীর খোজে খবর বা দেখার জন্য যাওয়ায় শরীয়তের দৃষ্টিতে বৈধ।যদি কোন‌ বিশস্ত মহিলা পাওয়া যায় তার মাধ্যমে উক্ত কাজ সম্পাদন করা যেতে পারে ।
হাদিস শরীফে এসেছে

عن انس ان النبي صلى الله عليه وسلم اراد ان يتزوج امرأة فبعث بامرأة لتنظر إليها

হযরত আনাস রযিআল্লাহ থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজন মহিলাকে বিবাহের ইচ্ছা করলে,তাকে দেখে আসার জন্য একজন মহিলাকে প্রেরন করলেন।(সুনানে বাইহাকী ৭/১৩৩)

পাত্র পাত্রীকে দেখা

বিবাহের পূর্বে পাত্রী দেখা বৈধ । অনেক ক্ষেত্রে তা বিবাহ সম্পাদনা ও স্থায়ীত্বের ক্ষেত্রে সহায়ক হয় ।তাই তো প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত মুগীরা রাযিআল্লাহু আনহু কে বললেনঃ

عَنِ الْمُغِيرَةِ بْنِ شُعْبَةَ، أَنَّهُ خَطَبَ امْرَأَةً فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم ‏”‏ انْظُرْ إِلَيْهَا فَإِنَّهُ أَحْرَى أَنْ يُؤْدَمَ بَيْنَكُمَا ‏”‏ ‏.‏ وَفِي الْبَابِ عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ مَسْلَمَةَ وَجَابِرٍ وَأَنَسٍ وَأَبِي حُمَيْدٍ وَأَبِي هُرَيْرَةَ ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ ‏.‏ وَقَدْ ذَهَبَ بَعْضُ أَهْلِ الْعِلْمِ إِلَى هَذَا الْحَدِيثِ وَقَالُوا لاَ بَأْسَ أَنْ يَنْظُرَ إِلَيْهَا مَا لَمْ يَرَ مِنْهَا مُحَرَّمًا ‏.‏ وَهُوَ قَوْلُ أَحْمَدَ وَإِسْحَاقَ ‏.‏ وَمَعْنَى قَوْلِهِ ‏”‏ أَحْرَى أَنْ يُؤْدَمَ بَيْنَكُمَا ‏”‏ قَالَ أَحْرَى أَنْ تَدُومَ الْمَوَدَّةُ بَيْنَكُمَا ‏.‏

মুগীরা ইবনু শুবা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:তিনি এক মহিলার নিকট বিয়ের প্রস্তাব প্রেরণ করেন। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তাকে দেখে নাও, তোমাদের মধ্যে এটা ভালবাসার সৃষ্টি করবে।
(সুনানে-তিরমিজি, হাদিস নং ১০৮৭, সুনানে ইবনু মা-জাহ-১৮৬৫)

নোটঃ
এ হাদীস অনুযায়ী একদল আলিম আমল করেছেন। তারা বলেছেন, বিয়ে করার পূর্বে নিষিদ্ধ অঙ্গের প্রতি না তাকিয়ে পাত্রী দেখাতে কোন সমস্যা নেই। এই মত ইমাম আহমাদ ও ইসহাকেরও। ‘তোমাদের উভয়ের মধ্যে ভালবাসার সৃষ্টি হবে’ এ কথার অর্থ পাত্রীকে দেখে পছন্দ করার পর বিয়ে করলে দাম্পত্য জীবনের ভালোবাসা স্থায়ী হয়।

عن سهل بن أبي حثمة ققال: إني سمعت رسول الله صلى الله عليه وسلم يقول: إذا ألقى الله في قلب امرئ خطبة امرأة فلا بأس بأن ينظر إليها 

হযরত সাহল ইবনে আবি হাসমা রাযিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে একথা বলতে শুনেছি,তখন আল্লাহ তায়ালা কোনো ব্যক্তির অন্তরে কোনো নারীর প্রতি বিবাহের প্রস্তাব দেয়ার কল্পনা জাগিয়ে দেন, তখন তার জন্য সে নারীকে দেখে নেওয়া দোষনীয় নয়।
(মুসান্নেফে আব্দুর রাজ্জাক হাদিস নং ১০৩৩৮)

অপর এক হাদিসে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ

: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: ” إذا خطب أحدكم امرأة، فلا جناح عليه أن ينظر إليها إذا كان إنما ينظر إليها لخطبة وإن كانت لا تعلم

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ যখন তোমাদের কোন পুরুষ কোন মহিলাকে বিবাহের প্রস্তাব দেয় তখন তার জন্য বিবাহের উদ্দেশ্যে এ মহিলাকে দেখায় কোন সমস্যা নেই।যদি ও তা মহিলা সে বিষয়ে অবগত না হন।
(মুসনাদে আহমদ হাদিস নং ২৩৬০৩)

পাত্র-পাত্রী‌ পরস্পরকে সরাসরি দেখার ক্ষেত্রে অবশ্য পালনীয় শরয়ী নির্দেশনা

  • ১) বিয়ের উদ্দেশ্যে পাত্র পাত্রীকে দেখতে পারেন।
    তবে পাত্র পক্ষের অন্য কোন পুরুষ (যাদের সাথে মহিলার দেখা করা বৈধ নয়) পাত্রীকে দেখতে পারবে না। তেমন পাত্রের পিতা,চাচা,মামা, অন্য কোন বন্ধু বান্ধব কেউই পাত্রী দেখতে পারবে না। পাত্রীর দেখার সময় তাদের কেউ পাত্রের সাথে থাকতে পারবে না । তাদের জন্য পাত্রী দেখা শরিয়তের দৃষ্টিতে অবৈধ।
  • ২) পাত্র পাত্রীর শুধু হাত কব্জি পর্যন্ত,পা টাকনু পর্যন্ত, এবং মুখমন্ডল দেখতে পারবে।
    এছাড়া অন্য কোন অংশ সে আবরন ছাড়া দেখতে পারবে না ‌। আমাদের সমাজে কনের মাথার কাপড় ফেলে দিয়ে চুল দেখানোর যে প্রচলোন রয়েছে তা নিতান্তই ভুল ও শরীয়ত নিষিদ্ধ। (শরহে নববী ১/৪৫৬.বাযলুল মাজহুদ ৩/২২৮)
  • ৩)পাত্র পাত্রী পরস্পরে কথা বলতে পারবে।
    একে অপরের সম্পর্কে জানতে পারবে, কোন কিছু প্রশ্ন ও করতে পারবে , কিন্তু কোন অঙ্গ স্পর্শ করতে পারবে না। কোন কোন এলাকায় কনের হাত স্পর্শ করা বা হাতে আংটি পরিয়ে দেওয়ার যে প্রথা চালু আছে তা বৈধ নয় ।
  • ৪) পাত্রীকে দেখার সময় তার কোন মাহরাম পুরুষের উপস্থিত থাকতে হবে।
    পাত্রীর মাহরাম পুরুষের উপস্থিত ব্যতীত শুধু মাত্র পাত্র পাত্রী একত্রিত হতে পারবে পারবে না ।
  • ৫) পাত্র পাত্রী উভয়েই স্বাভাবিক সাজসজ্জা করতে পারবে তা শ্রী বর্ধনে সাহায্য করে।
    তবে এমন কোন সাজসজ্জা করতে পারবে না, যাতে শরীরের প্রকৃত রুপ ও আকৃতি পরিবর্তন হয়ে যায় এবং অপর পক্ষ প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তেমন বর্তমানে মেকআপ বা প্রসাধনী সামগ্রী দ্বারা এমনভাবে সজ্জিত যে চেহারার প্রকৃত অবস্থা জানা বা বোঝা সম্ভব হয় না ।
  • ৬) কনে দেখে তাকে কোন তোহফা দেওয়া যেতে পারে।
    তেমন বই-পুস্তক, নগদ টাকা,গহনা ইত্যাদি ।তবে তা জরুরি নয়। কিন্তু এক্ষেত্রে কোনভাবেই তার শরীরের কোন অংশ স্পর্শ করা যাবে না।
  • ৭) পাত্রী দেখার পর মোবাইলে বিভিন্ন মাধ্যমে কথা বলা থেকে বিরত থাকতে হবে।
    একে অপরের ছবি আদান প্রদান থেকে বিরত থাকতে হবে। কেননা যেমনিভাবে এতে গোনাহের দরবার খুলে যায় তেমনি ভাবে অনেক সময় তা সামাজিকভাবে ফেতনা ফ্যাসাদের কারণ হয়ে উঠে।

আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে উক্ত মাসয়ালা গুলো বোঝার তাওফিক দান করুন। এবং সকল ক্ষেত্রে শরীয়তের বিধান মানার সদ ইচ্ছা ও মানষিকতা দান করুন।

এখানে মন্তব্য করুন

লেখক পরিচিতি

নামঃ মুহাম্মদ সালমান হুসাইন।
ইফতাঃ ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ, জামিয়া শারইয়্যাহ মালিবাগ।
উলুমুল হাদিসঃ ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষ, মাদ্রাসা বাইতুল উলুম ঢালকানগর।
তাকমীলঃ ২০১৫ শিক্ষাবর্ষ, মাদ্রাসা বাইতুল উলুম ঢালকানগর।
হিফজঃ ২০০৭ শিক্ষাবর্ষ, জামিয়া আরাবিয়া হাজী ইউনুস কওমী মাদ্রাসা।
সিনিয়র শিক্ষকঃ হাজিপাড়া কাশীপুর নারায়ণগঞ্জ

আমাদের অনুসরণ করুন

সর্বশেষ ইউটিউব ভিডিও

Play Video

সাম্প্রতিক পোস্ট

সাম্প্রতিক পৃষ্ঠা