স্কাইভিউ পার্ক সিটি
শান্তিনগর, ঢাকা-১২১৭
+৮৮০২-৪১০৩২৩৫৩
২৪/৭ গ্রাহক সেবা
admin@islami-sharia.org
আমাদের কাছে বার্তা পাঠান
শান্তিনগর, ঢাকা-১২১৭
২৪/৭ গ্রাহক সেবা
আমাদের কাছে বার্তা পাঠান
মাওলানা রফিকুল ইসলাম (নওয়াপাড়া )
সম্প্রতি করোনা ভাইরাসের কারণে মানুষ নানাবিধ সমস্যার সম্মূখীন হচ্ছে। মানুষের দৈনন্দিন জীবনসহ ধর্মীয় অঙ্গনেও আসছে বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা। দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, জুমুআর নামাজ, জানাযার নামাজ, তারাবীহর নামাজে নিষেধাজ্ঞার কথা আমাদের সকলের জানা। আসন্ন ঈদের নামাজের ব্যাপারেও এসে গেছে নিষেধাজ্ঞা। বিভিন্ন দেশে বাড়িতেই ঈদের নামাজ পড়তে বলা হয়েছে। আমাদের বাংলাদেশে ধর্মমন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ঈদের নামাজ মসজিদে পড়তে বলা হয়েছে।
তাই বক্ষ্যমাণ প্রবন্ধে ঈদের নামাজ মসজিদ ও বাড়িতে আদায় করার শরয়ী সমাধান নিয়ে আলোচনা করা হবে। ইনশাআল্লাহ!
যুগে যগে ফুকাহায়ে কেরাম এ জাতীয় কিছু মাসআলা নিয়ে আলোচনা করেছেন। যেমন; ঈদের নামাজের কাযা আছে কি না ? শাফেয়ী মাযহাব ব্যতীত প্রায় সকল ফুকাহায়ে কেরামের মতে ঈদের নামাজের কাযা নেই। তাই ঈদের নামাজ ঈদের জামাতের সাথেই আদায় করতে হবে।
(উমদাতুল ক্বারী, ৬/২৮০ ও শরহুল মুহাযযাব ৬/৮৭)
তদ্রুপ ফুকাহায়ে কেরাম এ মাসআলাও আলোচনা করেছেন যে, অসুস্থ বা মাযুর ব্যক্তি ঈদের নামাজে শরীক হতে না পারলে সে কি করবে? এক্ষেত্রে হানাফী, মালেকি, শাফেয়ী মাযহাবসহ প্রায় সকল ফুকাহায়ে কেরামের মত হলো; এই মাযুর ব্যাক্তি ঈদের নামাজের পরিবর্তে কিছু নামাজ পড়ে নিবে। সেটা হতে পারে চার রাকাআত। এক সালামে বা দু’সালামে অথবা চাইলে দু রাকাআতও পড়তে পারে।
(ই’লাউস সুনান, ৮/১৪৭, মাওয়াহিবুল জালীল,২/৫৮১, মাজমাউয যাওয়ায়েদ, ১/২২৩)
এ সকল মাসআলা ফুকাহায়ে কেরাম ইতিপূর্বেই আলোচনা করে গিয়েছেন। কিন্ত বর্তমান পরিস্থিতি এ সকল মাসআলা থেকে অনেকাংশে ভিন্ন। তাই বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে স্বতন্ত্র গবেষণা জরুরী। তাই পাঠকের বোধগম্য করার লক্ষ্যে বিস্তারিত না করে সংক্ষেপে এ বিষয়ের শরয়ী বিধান নিয়ে আলোচনা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা স্বাভাবিকভাবে ঈদের নামাজ ঈদগাহেই পড়ে থাকে। তাই এহেন সিদ্ধান্তে স্বভাবতই তাদের মনে প্রশ্ন উঠছে যে,
এভাবে ঈদের নামাজ ঈদগাহের পরিবর্তে মসজিদে পড়া ঠিক হবে কি ?
এ প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে প্রথমে জানতে হবে যে,
ঈদের নামাজের জন্য ঈদগাহে যাওয়ার বিধান কি ?
ঈদের নামাজের জন্য ঈদগাহে যাওয়া সুন্নাত। আবু সাঈদ খুদরী রা. বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহায় (নামাজ পড়ার জন্য) ঈদগাহে যেতেন।
(সহীহ বুখারী, পৃষ্ঠা:১৯১, হাদীস নং: ৯০৬)
সুতরাং কোন ওযর ব্যতীত ঈদের নামাজ মসজিদে পড়া সুন্নাহ পরিপন্থী।
তবে বৃষ্টি বা অন্য কোন ওযর থাকলে মসজিদে নামাজ পড়া বৈধ আছে। এ ব্যাপারে ফুকাহায়ে কেরাম ও হাদীস বিশারদগণের কিছু বক্তব্য নিচে উল্লেখ করছি-
উপরোক্ত আলোচনা থেকে প্রতীয়মাণ হলো যে, ঈদের নামাজ ঈদগাহে পড়াই সুন্নাত। ওযর ব্যতীত তা মসজিদে আদায় করা সুন্নাহ পরিপন্থী। তবে ওযর থাকলে মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করা যাবে।
চলমান করোনা ভাইরাসের কারণে লোকসমাগম এড়িয়ে চলার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। ঈদগাহে নামাজ হলে কয়েক এলাকার মানুষ এসে জমা হবে। তাই প্রত্যেক এলাকাবাসী এতটুকু করতে পারে যে, তারা শুধু তাদের নিজের এলাকায় থাকবে এবং নিজের এলাকার মসজিদে নামাজ আদায় করবে। আর এ সকল দুর্যোগের সময় মানুষ নিজ এলাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকাটা ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক নয়। তাই এই উদ্দেশ্যে ঈদের নামাজ মসজিদে আদায় করা যেতে পারে। এতে কোন সমস্য নেই। এতে সাওয়াবও কম হবে না, ইনশাআল্লাহ্।
সুতরাং কোথাও যদি ঈদগাহে যেতে নিষেধাজ্ঞা না থাকে তাহলে তারা অবশ্যই ঈদগাহে গিয়ে নামাজ আদায় করবেন। আর কোথাও যদি ঈদগাহে যেতে নিষেধাজ্ঞা থাকে তাহলে তারা অবশ্যই মসজিদে গিয়ে ঈদের নামাজ আদায় করবেন। আর কোথাও যদি মসজিদেও যেতে নিষেধাজ্ঞা থাকে, কেবল বাড়িতে নামাজ আদায়ের অনুমতি দেয়া হয়, তাহলে তারা বাড়িতে জামাত করে ঈদের নামাজ আদায় করবেন এবং নামাজের পরে খুতবারও ব্যবস্থা করবেন।
বি.দ্র.
বাংলাদেশ ধর্মমন্ত্রলায়-এর পক্ষ থেকে যেহেতু মসজিদে ঈদের নামাজ আদায়ের অনুমতি দেয়া হয়েছে, সেহেতেু হাদীস ও ফিকহের আলোকে স্পষ্ট প্রমাণিত হয় যে, ঈদের নামাজ মসজিদে জামাতের আদায়ের সাথে আদায় করা জরুরী। স্বাভাবিকভাবে ঘর-বাড়িতে শরীয়তের শর্তসমূহ না পাওয়া যাওয়ার কারণে বাড়িতে ঈদের নামাজ আদায় করা সহীহ নয়। তদুপরি কেউ যদি বাড়িতে ইযনে আম দিয়ে রাখে এবং নিদর্শন স্বরূপ বাড়ির দরজা খোলা রাখে বা নামাজ ছাদে আদায় করে তাহলে জামাতের সাথে নামাজ আদায় করলে নামাজ হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে যথাসম্ভব খুৎবার ব্যবস্থা করবে।
নামঃ মো: রফিকুল ইসলাম।
হিফয বিভাগঃ (২০০৮ শিক্ষাবর্ষ) নওয়াপাড়া, যশোর, নূরবাগ জামে মসজিদ হেফযখানা।
মাদানী নেসাব ১-৩ বর্ষ ও কাফিয়া জামাতঃ (২০০৯-২০১২ শিক্ষাবর্ষ) জামিয়া ইসলামিয়া ভবানীপুর, গোপালগন্জ।
শরহে বেকায়া- তাকমীলঃ (২০১৩-২০১৬ শিক্ষাবর্ষ) বাইতুল উলুম, ঢালকানগর।
উলুমূল হাদীসঃ (২০১৭-২০১৮ শিক্ষাবর্ষ) বাইতুল উলুম ঢালকানগর ।
ইফতা বিভাগঃ (২০১৯-২০২০ শিক্ষাবর্ষ) জামিয়া শারইয়্যাহ , মালিবাগ।
শিক্ষকতাঃ প্রধান মূফতী, জামেয়া আনওয়ারুল উলুম আল-ইসলামিয়া, হাজারীবাগ, বটতলা।
মোবাইলঃ +৮৮০১৭৪১-২৬৪৮৯৭
ই-মেইলঃ rafiqulislamjnp@gmail.com
কপিরাইট © ২০২২ ইসলামী শরীয়াহ্ অর্গানাইজেশন. সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত. ব্যবহারবিধি ও স্বত্বাধিকার আইন.