
যাদের রোযা রাখা নিষেধ
যাদের রোযা রাখা নিষেধঃ
- ১) হায়েজ (ঋতুস্রাব বা মাসিক চলাকালীন অবস্থায়)
- ২) নিফাস ( বাচ্চা প্রসবের পর রক্ত বন্ধ হওয়ায় আগ পর্যন্ত) চলাবস্থায়।
(আন নুতাফু ফিল ফতোয়া-১৪৭)
যাদের জন্য রোযা না রাখার অনুমতি রয়েছে ঃ
- ১) অসুস্থ ব্যক্তি
রোযার কারণে যে রোগ বৃদ্ধি পায় বা রোগ দীর্ঘ হওয়ার প্রবল আশঙ্কা থাকে সে রোগে রোযা ভাঙ্গার অবকাশ আছে। উল্লেখ্য, আশঙ্কা যদি সুস্পষ্ট হয় তাহলে তো কথা নেই। নতুবা একজন অভিজ্ঞ ও দ্বীনদার চিকিৎসকের মতামতের প্রয়োজন হবে।
[আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৫৯; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪২২]আন নুতাফু ফিল ফতোয়া ১৪৭]
- ২) গর্ভবতী
রোযা রাখার কারণে গর্ভবতী মহিলা নিজের কিংবা সন্তানের প্রাণহানী বা মারাত্মক স্বাস্থ্যহানীর প্রবল আশঙ্কা করলে তার জন্য রোযা ভঙ্গ করা জায়েয। পরে এ রোযা কাযা করে নিবে।
[আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৫৯; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪২২]আন নুতাফু ফিল ফতোয়া ১৪৭]
- ৩) দুগ্ধদানকারিনী
দুগ্ধদানকারিনী মা রোযা রাখলে যদি সন্তান দুধ না পায় আর ঐ সন্তান অন্য কোনো খাবারেও অভ্যস্ত না হয়, ফলে দুধ না পাওয়ার কারণে সন্তানের মৃত্যুর বা মারাত্মক স্বাস্থ্যহানীর আশঙ্কা হয়, তাহলে তিনি রোযা ভাঙ্গতে পারবেন এবং পরে কাযা করে নিবেন।
হাদীস শরীফে ইরশাদ হয়েছে-
অর্থ:- আল্লাহ্ তা’আলা মুসাফিরের জন্য রোযার হুকুম শিথিল করেছেন এবং আংশিক নামায কমিয়ে দিয়েছেন। আর গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারিনীর জন্যও রোযার হুকুম শিথিল করেছেন।
[জামে তিরমিযী ১/১৫২; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৫৯; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪২২]
- ৪) মুসাফির ব্যক্তি
- ৫)দুর্বল বৃদ্ধ ব্যক্তি
বার্ধক্যজনিত কারণে রোমা রাখতে সক্ষম না হলে রোযা না রাখার অনুমতি রয়েছে। এক্ষেত্রে প্রত্যেক রোযার পরিবর্তে একজন গরীবকে দুবেলা খাবার খাওয়াবে অথবা পৌনে দু কেজি গমের মূল্য সদকা করবে।
আল্লাহ তাআলা বলেন-
وَعَلَى الَّذِينَ يُطِيقُونَهُ فِدْيَةٌ طَعَامُ مِسْكِينٍ
অর্থ:- আর যাদের রোযা রাখা অত্যন্ত কষ্টকর তারা ফিদয়া-একজন মিসকীনকে খাবার প্রদান করবে।
[সূরা বাকারা : ১৮৪; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৬১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২০৭]
ফিদিয়া
উপরোক্ত দুই শ্রেণীর মানুষ ছাড়া (অর্থাৎ দুর্বল বৃদ্ধ ও এমন অসুস্থ ব্যক্তি যার ভবিষ্যতে রোযার শক্তি ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা নেই।) আরো যাদের জন্যে রোযা ভাঙ্গা জায়েয আছে, (যেমন-মুসাফির, গর্ভবতী ও শিশুকে স্তন্যদানকারিনী) তারা রোযা না রাখলে রোযার ফিদয়া দিবে না; বরং পরে কাযা করবে। আর ওযরের হালতে মৃত্যুবরণ করলে কাযা ও ফিদয়া কিছুই ওয়াজিব হবে না। অবশ্য ওযরের হালত শেষ হওয়ার পর, অর্থাৎ মুসাফির মুকীম হওয়ার পর, গর্ভবতী নারীর সন্তান ভূমিষ্ট হওয়া ও স্রাব বন্ধ হওয়ার পর এবং স্তন্যদানকারিনী স্তন্যদান বন্ধ করার পর যদি মৃত্যুবরণ করে তাহলে ওযর শেষে যে কয়দিন সময় পেয়েছে সে কয়দিনের কাযা যিম্মায় আসবে। কাযা না করলে উক্ত দিনগুলির ফিদয়া প্রদানের অসিয়ত করে যেতে হবে।
[আদ্দুররুল মুখতার ২/৪২৩-৪২৪; কিতাবুল হুজ্জাহ আলা আহলিল মাদীনাহ ১/২৫৫] (আন নুতাফু ফিল ফতোয়া-১৪৭]
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাযি:) বলেন, ‘গর্ভবতী নারী ও শিশুকে স্তন্যদানকারিনীর জন্যে রমযানে রোযা না রাখার অবকাশ রয়েছে। তারা ফিদয়া আদায় করবে না; বরং রোযাগুলো কাযা করে নিবে।’
[মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস : ৭০৬৪]
ছুটে যাওয়া রোযার কাযা সম্ভব না হলে মৃত্যুর পূর্বে ফিদয়া দেওয়ার অসিয়ত করে যাওয়া জরুরি। অসিয়ত না করে গেলে ওয়ারিশরা যদি মৃতের পক্ষ থেকে ফিদয়া দেয় তবে আশা করা যায় যে, আল্লাহ তাআলা তা কবুল করবেন। তবে মৃতব্যক্তি অসিয়ত না করে গেলে সেক্ষেত্রে মিরাসের ইজমালী সম্পদ থেকে ফিদয়া দেওয়া হবে না। একান্ত দিতে চাইলে বালেগ ওয়ারিশগণ তাদের অংশ থেকে দিতে পারবে।
[রদ্দুল মুহতার ২/৪২৪-৪২৫; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২০৭]
এক রোযার ফিদয়া একজন মিসকীনকে দেওয়া উত্তম। তবে একাধিক ব্যক্তিকে দিলেও ফিদয়া আদায় হয়ে যাবে। আর একাধিক ফিদয়া এক মিসকীনকে দেওয়া জায়েয।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাযি,:/ বলেন, ‘যে বৃদ্ধ রোযা রাখতে সক্ষম নন তিনি রোযা না রেখে প্রতি দিনের পরিবর্তে একজন মিসকীনকে আধা সা’ (অর্থাৎ প্রায় পৌনে দুই কেজি) গম দিয়ে দেবেন।
[মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদীস : ৭৫৭৪; আলবাহরুর রায়েক ২/৮৭]
এখানে মন্তব্য করুন
লেখক পরিচিতি
নামঃ মুহাম্মদ সালমান হুসাইন।
ইফতাঃ ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ, জামিয়া শারইয়্যাহ মালিবাগ।
উলুমুল হাদিসঃ ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষ, মাদ্রাসা বাইতুল উলুম ঢালকানগর।
তাকমীলঃ ২০১৫ শিক্ষাবর্ষ, মাদ্রাসা বাইতুল উলুম ঢালকানগর।
হিফজঃ ২০০৭ শিক্ষাবর্ষ, জামিয়া আরাবিয়া হাজী ইউনুস কওমী মাদ্রাসা।
সিনিয়র শিক্ষকঃ হাজিপাড়া কাশীপুর নারায়ণগঞ্জ