রমজান মাস একটি বরকতপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ মাস। এ মাসে মহান রব্বে কারীম মুমিনের প্রতিটি আমলের প্রতিদান বহু গুণে বাড়িয়ে দেন। তাই অন্যান্য মাসের তুলনায় এই মাসে বেশি বেশি নেক আমল করা প্রতিটি মুমিনের কর্তব্য।
রমজান মাসের বিশেষ আমল সমূহ

সূচিপত্র

রমজান মাসের বিশেষ আমল সমূহ

باسم الله الرحمن الرحيم

মাওলানা সালমান হুসাইন (গোপালগঞ্জ)
রমজান মাস একটি বরকতপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ মাস। এ মাসে মহান রব্বে কারীম মুমিনের প্রতিটি আমলের প্রতিদান বহু গুণে বাড়িয়ে দেন। তাই অন্যান্য মাসের তুলনায় এই মাসে বেশি বেশি নেক আমল করা প্রতিটি মুমিনের কর্তব্য। এ মাসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বিশেষ কিছু আমলের কথা হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে এবং সেগুলির ফজিলত এর কথার-ও উল্লেখ রয়েছে। নিম্নে আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত কিছু আমল সম্পর্কে আলোচনা করব, ইনশাআল্লাহ্‌।

১) রোযা রাখাঃ

রমজান মাসে একজন মুমিন যে সকল ইবাদত করে তার মধ্যে অন্যতম ইবাদত হলো রমজানের রোজা রাখা। এর মাধ্যমে সে যেমনিভাবে তার উপর ফরজ বিধান পালন করে তেমনিভাবে আল্লাহ তাআলার নিকট তার জন্য রয়েছে অসংখ্য প্রতিদান। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রতিদান হলো; রোজাদারের প্রতিদান আল্লাহ তায়ালা নিজেই দেন এবং তার জন্য রয়েছে জান্নাতের বিশেষ স্থান এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি প্রাপ্তির ঘোষণা। “রমজানের ফজিলত” নামক একটি স্বতন্ত্র প্রবন্ধে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করেছি।

২) বেশি বেশি কুরআন তেলাওয়াত করাঃ

রমজান মাসের একটি বিশেষ আমল হলো; কোরআন তেলাওয়াত করা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অন্যান্য সময়ের তুলনায় এ মাসে অধিক পরিমাণ কোরআন  তেলাওয়াত করতেন । একটি হাদীস শরীফে এসেছে

كَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم أَجْوَدَ النَّاسِ بِالْخَيْرِ وَكَانَ أَجْوَدُ مَا يَكُونُ فِي رَمَضَانَ حِينَ يَلْقَاهُ جِبْرِيلُ وَكَانَ جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلام يَلْقَاهُ كُلَّ لَيْلَةٍ فِي رَمَضَانَ حَتَّى يَنْسَلِخَ يَعْرِضُ عَلَيْهِ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم الْقُرْآنَ فَإِذَا لَقِيَهُ جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلام كَانَ أَجْوَدَ بِالْخَيْرِ مِنْ الرِّيحِ الْمُرْسَلَةِ

ইব্‌নু আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
তিনি বলেন, নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ধন-সম্পদ ব্যয় করার ব্যাপারে সকলের চেয়ে দানশীল ছিলেন। রমযানে জিবরাঈল (আঃ) যখন তাঁর সঙ্গে সাক্ষাত করতেন, তখন তিনি আরো অধিক দান করতেন। রমযান শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রতি রাতেই জিবরাঈল (আঃ) তাঁর সঙ্গে একবার সাক্ষাত করতেন। আর নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁকে কুরাআন শোনাতেন। জিবরাঈল যখন তাঁর সঙ্গে সাক্ষাত করতেন তখন তিনি রহমতসহ প্রেরিত বায়ুর চেয়ে অধিক ধন-সম্পদ দান করতেন।
(সহীহ বুখারী, হাদিস নং-১৯০২)

 ৩) বেশি বেশি দান-সদকা করাঃ

মানুষকে সম্পদ দান করা বা সম্পদ সদকা করা আল্লাহ তায়ালার নিকট একটি বিশেষ আমল। উপরল্লেখিত হাদিস এবং অন্যান্য হাদিসের মাধ্যমে জানা যায় যে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজান মাসে বেশি বেশি দান করতেন।
এছাড়াও সদকার ফজিলতের বিষয়ে অসংখ্য হাদীস বর্ণিত হয়েছে। একটি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর সর্বপ্রথম কুরআন অবতীর্ণ হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রী খাদীজা বিন্‌তু খুওয়ায়লিদের নিকট এসে বললেন, ‘আমাকে চাদর দ্বারা আবৃত কর; ‘আমাকে চাদর দ্বারা আবৃত কর’। তিঁনি তাঁকে চাদর দ্বারা আবৃত করলেন। এমনকি তাঁর শংকা দূর হলো। তখন তিনি খাদীজা (রাঃ) এর নিকট ঘটনাবৃত্তান্ত জানিয়ে তাঁকে বললেন, আমি আমার নিজেকে নিয়ে শংকা বোধ করছি। খাদীজা (রাঃ) বললেন, আল্লাহর কসম, কখনই নয়। আল্লাহ আপনাকে কখনো লাঞ্ছিত করবেন না। কেনোনা

 ّ وَاللَّهِ مَا يُخْزِيكَ اللَّهُ أَبَدًا، إِنَّكَ لَتَصِلُ الرَّحِمَ، وَتَحْمِلُ الْكَلَّ، وَتَكْسِبُ الْمَعْدُومَ، وَتَقْرِي الضَّيْفَ، وَتُعِينُ عَلَى نَوَائِبِ الْحَقِّ‏.‏

আপনি তো আত্মীয়–স্বজনের সঙ্গে সদাচরণ করেন, অসহায় দুস্থদের দায়িত্ব বহন করেন, নিঃস্বকে সহযোগিতা করেন, মেহমানের আপ্যায়ন করেন এবং হক পথের দুর্দশাগ্রস্থকে সাহায্য করেন।
(সহিহ বুখারী হাদিস নং ৩)

অপর এক হাদীসে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ

 ‏ الطُّهُورُ شَطْرُ الإيمَانِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ تَمْلأ الْمِيزَانَ وَسُبْحَانَ اللَّهِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ تَمْلآنِ – أَوْ تَمْلأ – مَا بَيْنَ السَّمَوَاتِ وَالأرضِ وَالصَّلاةُ نُورٌ وَالصَّدَقَةُ بُرْهَانٌ وَالصَّبْرُ ضِيَاءٌ وَالْقُرْآنُ حُجَّةٌ لَكَ أَوْ عَلَيْكَ كُلُّ النَّاسِ يَغْدُو فَبَائِعٌ نَفْسَهُ فَمُعْتِقُهَا أَوْ مُوبِقُهَا  ‏

 আবূ মালিক আল আশ’আরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন: পবিত্রতা হল ঈমানের অর্ধেক অংশ। ‘আলহাম্‌দু লিল্লা-হ’ মিযানের পরিমাপকে পরিপূর্ণ করে দিবে এবং “সুবহানাল্লা-হ ওয়াল হাম্‌দুলিল্লা-হ” আসমান ও জমিনের মধ্যবর্তী স্থানকে পরিপূর্ণ করে দিবে। ‘সলাত’ হচ্ছে একটি উজ্জ্বল জ্যোতি। ‘সদাকাহ্’ হচ্ছে দলীল। ‘ধৈর্য’ হচ্ছে জ্যোতির্ময়। আর ‘আল কুরআন’ হবে তোমার পক্ষে অথবা বিপক্ষে প্রমাণ স্বরূপ। বস্তুতঃ সকল মানুষই প্রত্যেক ভোরে নিজেকে ‘আমালের বিনিময়ে বিক্রি করে। তার ‘আমাল দ্বারা সে নিজেকে (আল্লাহর ‘আযাব থেকে) মুক্ত করে অথবা সে তার নিজের ধ্বংস সাধন করে।
(সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৪২২)

৪)চারটি কাজ বেশি বেশি করাঃ

  •  ১)কালিমা পড়া।
  • ২) ইসতেগফার করা
  • ৩) জান্নাত প্রাপ্তির দোয়া করা
  • ৪) জাহান্নাম থেকে মুক্তির প্রার্থনা করা।

একটা হাদিসে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ

 استكثروا فيه أربعة خصال خصلتين ترضون بهما ربكم وخصلتين لا عناء بكم عنهما فأنا الخصلتان اللتان ترضون بهما ربكم فشهادة ان لا الهم الا الله و تستغفرونه فأما الخصلتان اللتان لا غناء بكم عنهما فتسئلون الجنة و تعوذون به من النار

 তোমারা রমজান মাসে চারটি কাজ বেশি বেশি করো।তন্মধ্যে দুটি কাজ এমন যা করলে তোমাদের প্রতিপালক সন্ত্তুষ্ট হন ।আর অপর দুটি কাজ হলো এমন যা না করে উপায় নেই।যে দুটি কাজে তোমাদের প্রতিপালক খুশি হন তাহলো কালিমা তাইয়্যেবা পাঠ করা ও ইসতেগফার করা ।আর যে দুটি কাজ না করে উপায় নেই তাহলো তোমারা আল্লাহর নিকট জান্নাত প্রার্থনা কর এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি কামনা কর।
(সহীহ ইবনে খুজাইমা হাদিস নং ১৮৮৭)

৫) তারাবীহ নামায পড়া ও রাত্রি জাগরণ করাঃ

এক হাদীসে এসেছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন

من صامه وقامه ايمانا واحتسابا خرج من الذنوب كيوم ولدته امه

যে ব্যক্তি ঈমানের সহিত প্রতিদান প্রাপ্তির আশায় রমজানের রোজা রাখবে এবং (ইবাদাতে) রাত্রি জাগরন করবে সে ভূমিষ্ঠ শিশুর নয় যাবতীয় গুনাহ থেকে নিষ্পাপ হয়ে যাবে।
(সহিহ ইবনে খুযাইমা হাদিস ২২০১, মুসনাদে আবু ইয়ালা হাদিস নং ৮৬৩)

৬) সেহেরি খাওয়াঃ

যদিও বাহ্যিক দৃষ্টিতে সেহেরির খানা অন্যান্য খানার মতই মনে কিন্তু তা সত্ত্বেও তাতে রয়েছে বিশেষ বরকত। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন

تسحروا فإن في السحور بركة

তোমারা সেহেরী খাও কেনোনা তাতে বরকত রয়েছে।
(সহি বুখারি হাদিস নং ১৯২৩ সহিঃ মুসলিম হাদিস নং ১০৯৫)

অপর হাদিছে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ

فصل ما بين صيامنا وصيام أهل الكتاب اكلة السحور

আমাদের এবং আহলে-কিতাবের রোজার মধ্যে পার্থক্য হল সেহরি খাওয়া। অর্থাৎ আমরা রোজা রাখার জন্য সেহরি খাই আর আহলে-কিতাবিরা রোজা রাখার জন্য সেহরি খায় না।
(সহিঃ মুসলিম হাদিস নং ১০৯৬)

অপর হাদিছে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেনঃ

إن الله و ملائكته يصلون على المسحرين

নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা এবং ফেরেশতাগণ যারা সেহরী খায় তাদের জন্য রহমত বর্ষণ করেন।
(সহীহ ইবনে হিব্বান হাদিস নং ৩৪৬৭)

যেহেতু সেহরি খাওয়াতে বরকত রয়েছে এবং আহলে কিতাব তথা ইহুদী-খ্রিস্টানদের রোজার থেকে মুসলমানের রোজা পার্থক্য সৃষ্টি হয় এবং সর্বোপরি যেহেতু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীসের উপর আমল হয়ে যায় এজন্য ওলামা একরামের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হলো সেহরি খাওয়া মুস্তাহাব। এ ব্যাপারে প্রত্যেক রোজাদারের যত্নবান হওয়া কাম্য।
(আল মিনহাজ খন্ড ৭পৃষ্ঠা ১৫৫‌ ফাতহুল বারী খন্ড ৪পৃষ্ঠা ১৬৭)

৭) রোজাদারকে ইফতারী করানোঃ

ক্ষুধার্ত মানুষকে খাবারের ব্যবস্থা করা আল্লাহ তায়ালার নিকট একটি প্রিয় ইবাদত।প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন

ان في الجنه غرفه يرى ظاهرها من باطنها و باطنها من ظاهرها أعدها الله تعالى من اطعمة الطعام و الان الكلام

নিশ্চয়ই জান্নাতে এমন একটি আবাসস্থল রয়েছে (তাই এতই স্বচ্ছ যে) বাহির থেকে ভিতরে এবং ভিতর থেকে বাহিরে দেখা যাবে ।আল্লাহ তায়ালা উত্তর জান্নাত তৈরি করেছেন এমন মানুষের জন্য যারা মানুষকে খাবার খাওয়ায় এবং নরম ভাষায় কথা বলে।
(মুসনাদে আহমদ হাদিস নং ৬৬১৫,২২৯০৫)

যদি তা হয় কোন রোজাদারের ইফতারি করানো তাহলে তার সাওয়াব ও ফযিলত আরো বহুগুণ বেড়ে যায়। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ

من فطر صائما كتب له مثل أجرة لا ينقض من أجرة شيئ

যে ব্যক্তি কোন রোজাদারকে ইফতারী করবে সে ঐ রোজাদারের সমপ্রতিদান প্রাপ্ত হবে।তবে একারনে রোজাদারের প্রতিদান কমোনো হবে না।
(সহীহ ইবনে হিব্বান হাদিস নং ৩৪২৯,সহিহ ইবনে খুজাইমা হাদিস নং ৪৬৩২,সুনানে নাসাঈ হাদিস নং ৩৩১৭,৩৩১৮, সুনানে তিরমিযি হাদিস নং ৮০৭,মুসনাদে আহমাদ হাদীস নং ১৭০৪৪,মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা হাদিস নং ১৯৫৫৫,মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক হাদিস নং ৭৯০৫-৭৯০৬)

অন্য একটি হাদিসে এসেছে

من فطر صائما كان مغفرة لذنوبه و عتق رقبته من النار وكان له مثل أجره من غير أن ينقض من أجره شيئ قالوا ليس كلنا نجد ما يفطر الصائم فقال يعطي الله هذا الثواب من فطر صائما على تمرة او شربة ماء او مذقة لبن

যে ব্যক্তি কোন রোজাদারকে ইফতারী করাবে তা তার জন্য গোনাহ আমাফ ও জাহান্নাম থেকে মুক্তির মাধ্যম হবে। এবং রোজাদারের সমপরিমাণ সওয়াব হবে। তবে এ কারণে রোজাদারের প্রতিদান সামান্য পরিমাণ কমানো হবে না । সাহাবায়ে কেরাম বললেন হে নবী আমাদের অনেকেই তো রোজাদারকে পেট ভরে ইফতার করানোর সামর্থ্য রাখে না। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন (এ প্রতিদান পাওয়ার জন্য রোজাদারকে পেট ভরে ইফতার করানো জরুরি নয়)। বরং যে ব্যক্তি একটু খেজুর বা একটু পানি বা সামান্য দুধ পান করাবে আল্লাহ তায়ালা তাকে এই বিরাট প্রতিদান প্রাপ্ত হবে।
(সহীহ ইবনে খুজাইমা হাদিস নং ১৮৮৭)

উক্ত হাদীসের শেষ অংশে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ

من سقى صائما سقاه الله من حوضي شربة لا يظمأ حتى يدخل الجنة

যে ব্যক্তি কোন রোজাদারকে পানি পান করাবে আল্লাহ তাকে হাউজে কাউসার থেকে পান করাবেন প্রবেশ করার পূর্বে তার আর পিপাসা লাগবেনা।
(সহীহ ইবনে খুযাইমা হাদিস নং ১৮৮৭)

৮) রমজানের শেষ দশকে ইতেকাফ করাঃ

প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-যে সকল আমল নিয়মিত করতেন সাধারনত ছাড়তেন না এর মধ্যে অন্যতম একটি আমল হলো রমজানের শেষ দশকে এতেকাফ করা ।উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহা বর্ণনা করেন

 أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم كَانَ يَعْتَكِفُ الْعَشْرَ الأَوَاخِرَ مِنْ رَمَضَانَ حَتَّى تَوَفَّاهُ اللَّهُ
عَزَّ وَجَلَّ ثُمَّ اعْتَكَفَ أَزْوَاجُهُ مِنْ بَعْدِهِ ‏

(নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইন্তিকালের পূর্ব পর্যন্ত রমাযানের শেষ দশকেই ই‘তিকাফ করতেন। তাঁর ইন্তিকালের পর তাঁর সমধর্মিনীগণও ই‘তিকাফ করতেন।
(সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ২৬৭৪ সহি বুখারী হাদিস ২০৪১)

অপর এক হাদীসে এসেছ

 أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم كَانَ يَعْتَكِفُ الْعَشْرَ الأوَاخِرَ مِنْ رَمَضَانَ ‏.‏ قَالَ نَافِعٌ وَقَدْ أَرَانِي عَبْدُ اللَّهِ – رضى الله عنه  الْمَكَانَ الَّذِي كَانَ يَعْتَكِفُ فِيهِ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مِنَ الْمَسْجِدِ ‏

‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
রসূলূল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রমাযান মাসের শেষ দশকে ই‘তিকাফ করতেন। হাদিসের বর্ণনাকারী নাফি’ (রহঃ) বলেন, মাসজিদের যে স্থানে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ই‘তিকাফ করতেন, ‘আবদুল্লাহ ইবনু ‘উমার (রাঃ) তা আমাকে দেখিয়েছেন।
(সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ২৬৭১)

এছাড়াও আরও বহু হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানের শেষ দশকে এতেকাফ করার বিষয়টি উল্লেখ হয়েছে।

৯) রমজানের শেষ দশকে বেশি বেশি ইবাদত করাঃ

রমজানের শেষ দশকে বেশি বেশি ইবাদত করার বিষয়টি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত এবং অসংখ্য হাদীসে পাওয়া যায়।একটি হাদিসে উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে বর্ণনা করে বলেনঃ

كَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم إِذَا دَخَلَ الْعَشْرُ شَدَّ مِئْزَرَهُ، وَأَحْيَا لَيْلَهُ، وَأَيْقَظَ أَهْلَهُ‏.‏

, যখন রমযানের শেষ দশক আসত তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর লুঙ্গি কষে নিতেন (বেশী বেশী ইবাদতের প্রস্তুতি নিতেন) এবং রাত্র জেগে থাকতেন ও পরিবার-পরিজনকে জাগিয়ে দিতেন।
(সহিহ বুখারী, হাদিস নং ২০২৪ সুনানে আবু দাউদ হাদিস নং-১৩৭৬,সুনানে নাসাঈ হাদিস নং ১৬৩৯)

এছাড়াও বিভিন্ন হাদিসের মধ্যে অসংখ্য ফজিলতের কথা উল্লেখ রয়েছে।তাই প্রতিটি মুমিনের জন্য কর্তব্য হলো রমজান মাসের সময়গুলো অযথা নষ্ট না করে এবাদত বন্দেগিতে আত্ম নিয়োজিত করা।

আল্লাহ তা’আলা সকলকে রমজানের মাসের সময় গুলো নেক আমলে ব্যয় করার তৌফিক দান করেন।

এখানে মন্তব্য করুন

লেখক পরিচিতি

নামঃ মুহাম্মদ সালমান হুসাইন।
ইফতাঃ ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ, জামিয়া শারইয়্যাহ মালিবাগ।
উলুমুল হাদিসঃ ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষ, মাদ্রাসা বাইতুল উলুম ঢালকানগর।
তাকমীলঃ ২০১৫ শিক্ষাবর্ষ, মাদ্রাসা বাইতুল উলুম ঢালকানগর।
হিফজঃ ২০০৭ শিক্ষাবর্ষ, জামিয়া আরাবিয়া হাজী ইউনুস কওমী মাদ্রাসা।
সিনিয়র শিক্ষকঃ হাজিপাড়া কাশীপুর নারায়ণগঞ্জ

আমাদের অনুসরণ করুন

সর্বশেষ ইউটিউব ভিডিও

Play Video

সাম্প্রতিক পোস্ট

সাম্প্রতিক পৃষ্ঠা