
সূচিপত্র
রমজান ও আমাদের করণীয়
রমজান মাস ও রোযার ফজীলত ও বরকত;
কুরআন ও সুন্নার প্রতিটি বিধান বিশ্ব মানবতার জন্য কল্যাণকর,যদিও আমরা আমাদের জ্ঞাণের সংকীর্ণতার কারণে যা ইচ্ছা তাই বলে থাকি,যা আমাদের জন্য অত্যন্ত বেদনাদায়ক।ইসলামের পাঁচটি মূল ভিত্তির মধ্যে অন্যতম একটি ভিত্তি হলো রমজানের রোযা, যা সয়ং আল্লাহ তা‘আলা নিজের জন্য খাস করে নিয়েছেন। এ ভিত্তিগুলার মধ্যে এ ভিত্তিটির উপর বিশেষভাবে নজর দিয়েছেন, বস্তুত অনেকে মনে করে রোযা হলো না খেয়ে থাকার নাম আর এটা নিজেকে কষ্ট দেওয়া বৈ আর কিছুই নয়। আসলে বাস্তবতাটা এমন নয়; কেননা আজ থেকে আরো ১৪ শত বছর আগে ইসলামে যে সমস্ত নীতিমালা প্রণয়ণ করা হয়েছে, বর্তমান সময়ের বিজ্ঞান তার প্রতিটাকে শারীরিক স্বাস্থ্যসম্মত ও যুগপযোগি বলতে বাধ্য হয়েছে। আর এটাই হলো ইসলামের অনণ্যতার বার্তাবাহক। তো আমরা দেখতে চাই যে, রোযা ইসলাম শিদ্ধ হওয়ার মধ্যে অল্লাহ তা‘লার কি নিগুড় তত্ব লুকাইত রয়েছে? বর্তমান সময়ের বিজ্ঞাণিরা এ কথা বলতে বাধ্য হয়েছে যে রোযার দ্বারা মানুষের শারীরিক ও আত্মিক কল্যণ সাধিত হয় পূর্নমার্তায় যা সচার আচার অন্য কোনো মেডিসিন বা ইবাদত দ্বারা হয় না। কেননা রোযার মধ্যে মানুষের শরীলে প্রচুর পরিমাণ রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা সৃষ্টি হয়। হ্যাঁ…. ইহলৌকিক কল্যাণের সাথে সাথে পরলৌকিক যবতীয় কল্যাণ ও চিরশান্তির মূলও আমরা রোযাকে ধরতে পারি, কেননা এ মাস আল্লাহ প্রদত্ব রহমত ও বরকত, মাগফিরাত ও নাজাতের দ্বারা পরিপূর্ণ । কুরআন ও হাদীসের একাধিক অধ্যায়ে এ মাসের অনেক ফজীলতরে বর্ণনা রয়েছে। আমরা নিচে কিছু ফজীলত ও বিজ্ঞাণের আলোচনা তুলে ধরব, ইনশাআল্লাহ্।
- সয়ং আল্লাহ তা‘আলা রমজানের ফজীলত বর্ণনা করে বেলেছেন যে, রমজানতো সেই মাস যাতে কুরআন নাযীল করা হয়েছে!যা মানুষের জন্য হেদায়েত স্বরূপ।
(আল-কুরআন ২/১৮৫) - সূরা আল-কদরের মধ্যে আল্লাহ তা‘আলা রমজানুল মুবারকের এক বিশেষ রাতের প্রশংসা করেছেন, যে রাতের নাম হলো লাইলাতুর কদর, এ রাত্র সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন যে, লাইলাতুল কদরের রাএ রমজানহীন অন্য এক হাজার রাতের থেকেও উত্তম।
(আল-কুরআন ৯৭/৩)
বস্তুত এ রাত্র রমজানে হওয়ার কারনে রমজান মাসেরও একটা ফজীলত বা বৈশিষ্ঠ বুঝা যায়। - মুত্তাকী হওয়ার সব চেয়ে বড় মাধ্যম হলো রমজানের রোযা। এ কারনেই পূর্ববর্তী উমম্মতের উপরেও আল্লাহ তা‘আলা রোযা ফরজ করেছিলেন, যেমনটি আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে হাকীমে জলদগম্ভীর কন্ঠে বলেছেন যে, হে ঈমানদারগনেরা তোমাদের উপর রোযাকে ফরজ করা হয়েছে যেমনটি তোমাদের পূর্ববির্তিদের উপর করা হিয়েছিল,যাতে করে তোমরা (রোযা রাখার মাধ্যমে) মুত্তাকী হতে পার।
(আল-কুরআন ২/১৮৩) - নিশচিই যারা ……..রোযাদার পুরুষ ও রোযাদার মহিলা… আল্লাহ তা‘আলা তাদের জন্য বিশেষ ক্ষমা ও মহা প্রতিদান প্রস্তুত রেখেছেন।
(সূরা আহযাব ৩৩/৩৫) - অন্যত্র বলা হয়েছে অর্থাৎ তোমরা যদি রোজা রাখো তবে তাতে রয়েছে তোমাদের জন্য কল্যাণ, তোমরা যদি সেটা উপলব্ধি করতে পারো।
(সূরা বাকারাহ-১৮৪)
হাদীস শরীফের মধ্যেও রাসূল সাঃ রমজানের অনেক ফজীলত বর্ণনা করেছেন।
- রাসূল সাঃ বলেছেন; যে ব্যক্তি রমজানের রোযা রাখল ঈমান ও ইহতেসাব(সওয়াব হাসিলের আসায়)এর সাথে তার জীবনের সকল (সগীরা) গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।
(তিরমিজী ৪/১৫৫) - হযরত সাহল রাঃ বলেন; যে রাসূল সাঃ বলেছেন জান্নাতের একটি দরজা আছে যার নাম হলো রাইয়ান,যার দ্বারা রোযাদারগন প্রবেশ করেবে,অন্য কেউ রয়। কেয়ামতের ময়দানে বলা হবে রোযাদাররা কোথায়?তখন রমজান মাসের রোযাআদাইকারীরা দাড়াবে এবং সে দরজা দ্বারা জান্নাতে প্রবেম করবে।এর পর ঐ দরজা বনন্দ করে দেওয়া হবে.সুতরাং আর কেউ ঐ দরজা দ্বারা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।
(সহীহ বুখারী ১৭৯৭) - আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসূল সাঃ বলেন; যখন রমজান মাস আসে তখন জান্নাতের দরজা খুরে দেওয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজাগুলোকে বন্ধ করে দেওয়া হয়।এবং বিতাড়িত শয়তানকে শৃংখলাবদ্ধ শৃংঙ্খলিত করা হয়।
(সহীহ বুখারী ১৮০০) - আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসূল সাঃ বলেন; আল্লাহ তা‘আলা বলেন আদম সন্তানের সকল আমল তার নিজের জন্যই,তবে শুধুমাএ রোযা ছাড়া!!কেননা তা আমার জন্য আর আমি আল্লাহ তার প্রতিদান দিব। মুহাম্মাদের জান যার হাতে সে আল্লাহর কসম! নিশ্চই রোযাদারের মুখের ঘ্রাণ মেশক-আম্বরের থেকে বেশি সুঘ্রাণযুক্ত।রোযাদারের দুইটি খুশি একটা খুশি তখন যখন সে ইফতার করে,আর দ্বিতীয়টা হলো তখন যখন সে তার রব আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করবে।
(সহীহ বুখারী ১৮০৫) - আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত তিনি বলেন রাসূল সাঃ বলেছেন; রোযা হলো ঢাল স্বরুপ।অর্থাৎ ঢাল যেরুপ ভাবে তরবাড়ি ও তির থেকে বাচায় রেযা ঠিক সে ভাবে মানুষকে গুনাহ ও গুনাহের কারণের আযাবের আগুন থেকে বাচায়।
(মুসলিম শরীফ ১৬২)
সিয়াম সাধনায় বিজ্ঞান কী বলে?
- জাপানি গবেষক ওশিনরি ওসুমি ২০১৬ সালে অটোফেজি সনামক একটি শারীরিক প্রক্রিয়ার আবিষ্কার করেন এবং নোবেল পুরুস্কার পান। তাঁর গবেষণায় এ কথা উঠে এসেছিল যে, রোযা রাখার দ্বারা মানুষের ভিতরে অবন্থানরত ক্যান্সারের জীবানু ধ্বংস হয়।
- প্রখ্যাত চিকিৎসা বিজ্ঞানী ডা. গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, শরীরের মেদ কমাতে রোজা আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের খাদ্যনিয়ন্ত্রণ অপেক্ষায় অধিক কার্যকর।
- পাকিস্তানের প্রখ্যাত প্রবীণ চিকিৎসক ডা. মুহাম্মদ হোসেন জানান, যারা নিয়মিত রোজা পালনে অভ্যস্ত, সাধারণত তারা বাতরোগ,বহুমূত্র, অজীর্ণ, হৃদরোগ ও রক্তচাপজনিত ব্যাধিতে আক্রান্ত কম হন।
- পাশ্চাত্যের চিকিৎসা বিজ্ঞানী ডা. ক্লাইভ বলেন; সিয়াম সাধনার বিধান স্বাস্থ্যসম্মত ও বিজ্ঞানসম্মত । সেহেতু ভারত,জাপান,ইংল্যান্ড,দক্ষিণ নাইজেরিয়াতে অন্যসব এলাকার তূলনায় মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় রোগ ব্যাধি অনেক কম দেখা যায়।
- চিকিৎসা বিজ্ঞানের পথিকৃত হিসেবে খ্যাত ডা. হিপেপাক্রেটিস অভিমত ব্যক্ত করেছিলেন যে, রোগাক্রন্ত দেহকে যতই পুষ্ট করার চেষ্টা করা হোক, তাতে স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটতে থাকবে।আর সাস্থ্য ভালো রাখার জেন্য রোযা উপকারি।
- চিন্তাবিদ ডক্টর ডিউই, উপবাস থাকা প্রসঙ্গে বলছেন, রোগজীর্ণ এবং রোগক্লিষ্ট মানুষটির পাকস্থলি হতে খাদ্যদ্রব্য সরিয়ে ফেল, দেখবে রুগণ মানুষটি উপবাস থাকছে না, সত্যিকাররূপে উপবাস থাকছে রোগটি।
- রাশিয়ার অধ্যাপক ডি এন নাকিটন বলেছেন, তিনটি নিয়ম পালন করলে শরীরের বিষাক্ত দ্রব্যাদি বের হয়ে যাবে এবং বার্ধক্য থামিয়ে দেবে।’ তার বর্ণিত নিয়ম তিনটি হলো অধিক পরিশ্রম, অধিক ব্যায়াম, এবং মাসে কমপক্ষে একদিন উপবাস।
- প্রখ্যাত মুসলিম বিজ্ঞানী ইবনে সিনা তার রোগীদের কখনো কখনো তিন সপ্তাহ ধরে উপবাস থাকতে নির্দেশ দিতেন।
- ডা. অ্যালেক্স হেইগ বলেন, রোজা হতে মানুষের মানসিক শক্তি এবং বিশেষ বিশেষ অনুভূতিগুলো উপকৃত হয়।
রমজানের শাব্দিক ও পারিভাষিক অর্থ;
রমজান(رمضان) একটা আরবী শব্দ,যার আভিধানিক অর্থ;
জ্বালিয়ে দেওয়া, পুড়িয়ে দেওয়া, দগ্ধ করা। রমজার কে এসব অর্থে এ জন্য ব্যবহার করা হয় যে, যেহুতু রমজানের রোযা পালান করার দ্বারা রোযাদারকে ধর্য্য ও সহিষ্ণুতার অগ্নির মাধ্যমে মানবাত্মার কুপ্রবিত্তিকে দহন করে গুনাহে আকৃষ্টকারী রিপুগুলোকে দগ্ধ করে একজন খারাপ মানুষকে পরিশোধিত মানুষ রুপে গড়ে তুলতে সহায়তা করে, বিধায় এ সিয়াম সাধনাকে রমজান বলা হয়। এ মাসটিকে রমজান মাস বলা হয়।
কুরআনুল কারীমের অন্য স্থানে রমজানকে সওম বা সিয়ামও বলা হয়েছে। সওম বা সিয়ামের শাব্দিক অর্থ হলো; বিরত থাকা,যেহুতু রমজানের রোযার মাধ্যমে বিশেষ কিছু কাজ থেকে বিরত থাকা হয় বিধায় রমজানকে সওম বা সিয়ামও বলা হয়। বাংলা উর্দূ হিন্দি ফারসী ও বেশ কিছু ভাষায় রমজান কে রোযা বলা হয়।মূলকথা হলো যে কোনো স্থানে যে কেউ তার স্থানের মাতৃভাষা অনুযায়ী রমজানের রোযাকে একটা নাম দিয়ে বুঝাতে পারে, এর জন্য শরীয়তে কোনো বিধি নিষেধ নেই।
পরিভাষায় রোযা বলা হয়ঃ-
- নিদির্ষ্ট সময়ে জ্ঞাণসম্পন্ন ব্যক্তির নিয়ত সহকারে প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য খাবার গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকাকে রোযা বলা হয়।
(ফতুওয়ায়ে শামী ৩/৩৮১) - সুবহে সাদেক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত নিয়ত সহকারে ইচ্ছাকৃত পানা-আহার সহ যৌন তৃপ্তি থেকে বিরত থাকার নামই হলো রোযা।
রোযার প্রকারভেদঃ
রোযা মোট চার প্রকার;
- ফরজ
- ওয়াজিব
- সুন্নাত/নফল
- মাকরুহ
ফরজ রোযার আলোচনা;
- আমরা সকলে জানি রমজানের রোযা ফরজ, যেমস আল্লাহ তা‘আলা বলেন হে ঈমানদারেরা! তোমাদের জন্য রমজানের রোযাকে ফরয করা হয়েছে……।
- রমজানের যে রোযা আমরা আদাই করতে পারি না তা পরবর্তী সময়ে কাযা আদায় করে নেওয়াও ফরজ, চাই সে পুরুষ হোক বা মহিলা, স্বাধারণত আমাদের মায়েরা মাসিক বা ঋতুর কারণে রমজান মাসে বেশ কিছু রোযা আদায় করতে পারে না যা পরবর্তীতে আদায় করা ফরজ।
(শামী ৩/৩৮৮) - কফ্ফারার রোযা রাখা ফরজ, যদি কোনো মুসলিম নর-নারী কোনো এক রমজান মাসের এক বা একাধিক রোযা না রাখে তাহলে তার জন্য কাফ্ফারা স্বরূপ ৬০ টি রোযা রাখতে হয় যা আমলগত দিক থেকে ফরজ।
(ফতোয়ায়ে শামী ৩/৩৮৮)
ওয়াজিব রোযার আলোচনা;
- কেউ যদি নিদির্ষ্ট দিনে রোযা রাখার মান্নত করে তাহলে তার জন্য সে মান্নত পূরণ করা ওয়াজিব, (কিছু কিছু কিতাবে এটাকে ফরজ ও বলা হয়েছে) وَلْيُوفُوا نُذُورَهُمْ আর তারা যেন তাদের মান্নতকে পূরণ করে।
(সূরা হজ্জ ২২/২৯) - কেউ যদি কখনো কোনো নফল রোযা রাখে তারপর তা ভেঙ্গে ফেলে তাহলে এমন রোযা পূণরায় রাখা ওয়াজিব।
(মেশকাত ২০২০)
সুন্নত ও নফল রোযার আলোচনা;
- যেমন আশূরার দুইটি রোযা।
(মুসলীম শরীফ, রোযার অধ্যায় ১২৭,২৮,২) - প্রতি আরবী মাসের ১৩,১৪ ও ১৫ এ তিন দিন রোযা রাখা।যাকে আইয়্যামে বীজ বলা হয়।
(মুসলীম শরীফ, রোযার অধ্যায় ১৯৪) - বৃঃবার বা শনিবার সহ শুক্রবারের দিন রোযা রাখা।
(মুসলিম শরীফ, রোযার অধ্যায় ১৪৭ নং হাদীস) - হাজীগণ আরাফায় অবস্থানরত দিনে রোযা রাখা। (আবার না রাখার অনুমতি ও আছে।)
(মুসলিম শরীফ, রোযার অধ্যায় ১১১নং হাদীস) - রমজানের পরের মাস তথা শাউওয়াল মাসে ৬ টি রোযা রাখা।
(মুসলিম শরীফ রোযার অধ্যায় ২০৪ নং হাদীস)
(ফতুওয়ায়ে শামী ৩/৩৮৯)
মাকরুহ রোযার আলোচনা;
মাকরুহ ২ প্রকার তানযিহী ও তাহরীমী
মাকরুহে তানযিহী হলো;
- আশূরার একটি রোযা রাখা।
- বিরামহিন লাগাতার রোযা রাখা।
(সহীহ মুসলিম রোযার অধ্যায় ৫৫ নং হাদীস) - ইসলামে নেই এমন কোনো বিশেষ দিনে রোযা রাখা।
(ফতুওয়ায়ে শামী ৩/৩৯১) - শুধুমাএ শুক্রবারের দিন রোযা রাখা।
(মসলিম শরীফ, রোযার অধ্যায় ১৪৬ নং হাদীস)
মাকরুহে তাহরীমী হলো;
- রমজান ও কুরবানী এ দুই ঈদের দিনে রোযা রাখা। আবু হরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত যে রাসূল সাঃ দুইদিন রোযা রাখতে ণিষেধ করেছেন।
(মুসলিম শরীফ রোযার অধ্যায় ১৩৮ নং হাদীস)
- কুরবানীর ঈদের পরের তিন দিনে রোযা রাখা।যাকে আইয়ামে তাশরীক বলা হয়। (মুসলিম শরীফ রোযার অধ্যায় ১৪৪ নং হাদীস )
রমজান মাসে আমাদের করণীয়;
- বেশির থেকে বেশি কুরআন তেলাওয়াত করা। কেয়ামতের দিন রোযা ও কুরআন মানুষের জন্য আল্লাহ তা‘আলার কাছে শুপারিশ করবে।
(মেশকাত ১৯৬৩ মাকতাবায়ে শামেলা ) - জিহ্বার হেফাজত করতে হবে, কোনো ক্রমেই ঝগড়া করা যাবে না গাল-মন্দ করা যাবে না,কেননা রাসূল সাঃ বলেছেন তোমাদের মধ্যে কেউ যদি রোযাবস্থায় সকাল করে তাহলে সে যেন ঝগড়া না করে, কোনো মূর্খ্তার কাজ না করে,এমনকি যদি কেউ তাকে গালি দেয় বা হত্য করতে অসে তাহলে সে যনে তাকে এটা বলে ফিরায় দেয় যে ভাই আমি রোযাদার।
(মুসলিম শরীফ ১৬০ মাকতাবায়ে শামেলা ) - সকল প্রকার আমলের অভ্যাস গড়া সাথে সাথে সমস্থ পাপ কাজ ছাড়ার সংকল্প করা।যেমনটি আল্লাহর রাসূল সাঃ বলেছেন যে বাক্তি মিথ্যা বলা এবং সে অনুযায়ী আমলকরা বর্জন করেনি তার এ পানাহার পরিত্যাগ করায় আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই।
(বুখারী ১৮০৪ মাকতাবায়ে শামেলা ) - যে কোনো মূল্যে রমজানের রোযা রাখা, কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেন
فَمَنْ شَهِدَ مِنْكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ অর্থ তোমাদের মধ্যে যে রমজান মাস পেল সে যেন রোযা রাখে।
(আল-কুরআন ২/১৮৫)
কুরআন ও হাদীসের একাধিক স্থানে ইসলামের এ তৃতীয় বিধান পালনের ব্যপারে বিভিন্ন ভাবে উৎসাহ দেওয়া হয়েছে দুনিয়াবী উপকার ও আখেরাতের নানাবিধ সাফল্য এই ইবাদতে রাখা হয়েছ, প্রতিটি জিনিসের যাকাত রয়েছে আার মানুয়ের শরীরের যাকাত হলো রমজানের রোযা।
(মেশকাত ২০৭২) - নামাযে মনোযগী হওয়া। উম্মতে মুহাম্মাদীর সকল আমলকে সাধারণত ১০ গুন বাড়িয়ে দেওয়া হয়,কুন্তু রমজান উপলক্ষ করে আমলের সুওয়াব ১০ থেকে ৭০,আর ৭০ থেকে ৭০০ বা আরো বেশি বাড়িয়ে দেওয়া হয়। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের উপর যতগুলো আমল ফরজ করেছেন তার মধ্যে নামায সবথেকে বেশি আদাই করা হয় আবার এটা কাযাও বেশি হয়। বিধায় ক্ষতিপূরণ স্বরুপ ফিদিয়া দেওয়া দরকার বা বেশি বেশি নফল নামায আদাই করা দরকার,আর রমজানে এক ফরজ ৭০ ফরজের সমান ও একটি নফল একটি ফরজের সমতুল্য সুওয়াবের স্থলভিশুক্ত হয়। বিধায় বেশী বেশী নামায আদায় করা।
- সেহরির প্রতি যত্নবান হওয়া, পূর্ববর্তী অনেক উম্মতের উপর রোযা ফরজ করা হয়েছিল ,কিন্তু তাদের রোযার জন্য সেহেরির ব্যবস্থা ছিল না।
(মুসলীম শরীফ ১০৯৬)
কিন্তু আমাদের নবীর বৈশিষ্ঠ হলো; রোযা রাখার জন্য সেহরি খাওয়া, অবশ্য সেহেরি খাওয়া ওয়াজিব নয়! তবে সেহেরী খাওয়া সুন্নত, কেনন রাসূল সাঃ সেহেরী খেয়েছেন ও উম্মতদের কে সেহেরি খেতে উৎবুদ্ধ করেছেন। আনাস ইবনে মালেক রাঃ বলেন; রাসূল সাঃ বলেছেন; তোমরা সেহেরি গ্রহণ করো, কেননা সেহেরিতে বরকত রয়েছে।
(বুখারী ১৮২৩ মাকতাবায়ে শামেলা) - ইফতার গ্রহন করা। রোযা রাখার পর যখন সূর্যস্থ হবে তখন কোনো খাবার গ্রহণ করে রোযা ভঙ্গ করাকে ইফতার বলা হয়।ইফতার গ্রহন করা সুন্নত,ইফতার গ্রহণ না করে লাগাতার রোযা রাখা মাকরুহ। কেননা রাসূল সাঃ তা থেকে বারণ করেছেন। অবশ্য আমরা যে ইফতার গ্রহণ করব তা খুব তাড়াতড়ি করতে হবে, সময় শেষ হেওয়ার সাথে সাথে। কেননা রাসূল সাঃ বলেন সে সকল মানুষ কখোনই কল্যাণ গ্রহণ করতে পারবে না যারা ইফতার তাড়তাড়ি করে করে না।
(বুখারী ১৮৫৬ মাকতাবায়ে শামেলা)
- অন্য মুসলিম ভাইকে ইফতার করানো। সালমান ফারসী রাঃ থেকে বর্ণিত যে রাসূল সাঃ বলেছেন; ….. যে ব্যক্তি কোনো রোযাদারকে ইফতার করাল তার সকল গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে, মেশকাত এবং তাকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি দেওয়া হবে।এবং তাকেও রোযাদারের সমতুল্ল্য সুওয়াব দেওয়া হবে রোযাদারের সুওয়াব কমান ব্যতিতই।
(মেশকাত ১৯৬৫)
যায়েদ ইবনে খালেদ রাঃ বলেন, রাসূল সাঃ বলেছেন; যে ব্যক্তি কোনো রোযাদারকে ইফতার করাল সে রোযাদারের সমান সুওয়াব পেল।
(মেশকাত ১৯৯২)
- দান সদকা করা। সকলের জন্য উচিত রমজান মাসে বেশিবেশি দান সদকা করা। ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সা.ধন সম্পদ ব্যয় করার ব্যাপারে সকলের চেয়ে দানশীল ছিলেন। রমজানে জিবরাঈল আ. যখন তাঁর সাথে দেখা করতেন, তখন তিনি আরো অধিক দান করতেন। রমজান শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রতি রাতেই জিবরাঈল তাঁর সাথে একবার সাক্ষাৎ করতেন। আর নবী সা. তাঁকে কুরআন শোনাতেন। জিবরাঈল যখন তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন তখন তিনি রহমত প্রেরিত বায়ূর চেয়ে অধিক ধন-সম্পদ দান করতেন।
(বুখারী শরীফ ১৮০৩) - মেসওয়াক করা। আমরা জানি যে সাধারণভাবেই মেসওয়াকের ৭০ টির মতো উপকার বর্ণিত রয়েছে,যা আমরা রমজানে আদাই করলে অবশ্যই এর ফায়দা আরো বেশি হবে,কেননা হাদীস শরীফের মধ্যে এসেছে যে রোযাদারের মুখের ঘ্রাণ আল্লাহ তা‘লার নিকট মেশকে আম্ববরের ঘ্রানের থেকেও বেশি প্রিয়। রমজান মাসে সারাদিন না খেয়ে থাকার কারণে মানুষের মুখের ভিতর একটা দুর্গন্ধ সৃষ্টি হয় যা আল্লাহ তা‘আলার কাছে খুব প্রিয়,তদুপরি তা দুর করার জন্য আমরা মেসওয়াক করব আমাদের দেশে সাধারণত দেখা যায় যে মানুষ রোযাবস্থায় বিকেলে বেপকহারে মেসওয়াক করে এটা জায়েয আছে(তবে প্রতিনিয়ত মেসওয়াক করা ভালো) আল্লাহর রাসূল সাঃ রমজানে মেসওয়াক করতেনে এ ধরনের অনেক হাদীসে বর্ণিত রয়েছে।
- প্রতিটি যুবকের উচিৎ রমজানের রোযাগুলো রাখা, পারলে রমজানের বাহিরেও রোযা রাখা।কেননা সাধারণত যুবক ভাইদের বয়সের কারণে কুদৃষ্টি ও মনের খেয়ারল জল্পনা কল্পনার মাধ্যমে নিজের শারীরিক ও মানশিক চরম দূরদশার শিকার হতে হয় কিন্তু রোযা দ্বারা এ চরম ক্ষতি ও গুনাহ মুক্ত জীবন ধারণ করা সম্ভব। যেমন রাসূর সাঃ বলেন তোমাদের মধ্যে যারা স্ত্রী পরিচালনায় সক্ষম হয় তারা যেন বিয়ে করেনেয়, কেননা বিয়ে চোখ নিচে রাখতে সাহায্য করে এবং নিজের লজ্জাস্খানকে হেফাজত করে.আর যারা দ্বারা স্বক্ষমতা রাখেনা তারা যেন রোযা রাখে কেননা রোযা তার জন্য গুনাহ ছিন্নকারী হবে।
(বুখারী ১৮০৬ মাকতাবায়ে শামেলা )
সেহেরীর মাস‘আলা;
সেহরি বা সাহরী আরবী سحور, প্রতিবর্ণী. সুহুর,
অনুবাদ ‘ঊষার পূর্বের খাবার’; সেহেরী হিসেবেও উচ্চারিত হয়ে থাকে) হল মুসলিমদের দ্বারা গৃহীত ধর্মীয় ও ঐতিহ্যবাহী নাশতা খাবার, যা রমযান মাসে অথবা যে কোন দিন সাওম পালনের উদ্দেশ্যে ফজরের নামাজ বা ঊষার পূর্বে গ্রহণ করা হয়। পূর্ববর্তী অনেক উম্মতের উপর রোযা ফরজ করা হয়েছিল, কিন্তু তাদের রোযার জন্য সেহেরির ব্যবস্থা ছিল না।
(মুসলীম শরীফ ১০৯৬)
কিন্তু আমাদের নবীরবৈশিষ্ট্য হলো; রোযা রাখার জন্য সেহরি খেতে হবে, অবশ্য সেহেরি খাওয়া ওয়াজিব নয়! তবে সেহেরী খাওয়া সুন্নত। কেননা রাসূল সাঃ সেহেরী খেয়েছেন ও উম্মতদের কে সেহেরি খেতে উৎবুদ্ধ করেছেন।
(বুখারী ১৮২৩)
- আনাস ইবনে মালেক রাঃ বলেন রাসূল সাঃ বলেছেন তোমরা সেহেরি গ্রহণ করো, কেননা সেহেরিতে বরকত রয়েছে।
(বুখারী ১৮২৩ মাকতাবায়ে শামেলা ) - কেউ যদি সেহরি খেতে না পারে এর মধ্যেই সুবহে সাদিক হয়ে যায় তা হলেও তার জন্য রোযা রাখা জরুরী!সেহেরি না খেয়েই রোযা রাখবে, কেননা সূন্নত আদাই করা হয়নি বলে ফরজ ছাড়া যাবে না।অনেকে মনে করে সেহরি না খেলে মনে হয় রোযা হয়না এটা ভুল ধারনা সেহরি না খেলেও রোযা হবে।তবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নিয়ত করে নিতে হবে।
(বুখারী ১৮২৪ মাকতাবায়ে শামেলা) - সেহরির সময় আছে ভেবে কেউ সেহরি খেল এরপর জানা গেল সেহরির সময় শেষ হয়ে গিয়েছিল তা হলে তার রোযা হবে না।কিন্তু সারাদিন তাকে রোযাদারের মতো সারা দিন না খেয়ে থাকতে হবে এবং পরবর্তি সময় এই রোযার কাযা আদায় করতে হবে,কাফ্ফারা না।
- আল্লাহর রাসূল সাঃ বলেছেন; সেহরি রাতের শেষাংশে করার জন্য সুতরাং আমরা রাতের শেষাংশে সেহরি করব, কেউ যদি যে কোনো করণ বশত অনেক আগেই সেহেরি খেয়ে নেয় তা হলে তার জন্য উচিত হলো সেহেরির বরকত পাওয়ার উদ্দেমে রাতের শেষাংষে আবারও কিছু খেয়ে নেওয়া।
(বুখারী ১৮২০ মাকতাবায়ে শামেলা ) - গবেষণাকারীরা বলেছেন যে মানুষের শারীরিক সুস্থ্যতার জন্য সেহরির কোনো বিকল্প নেই।
রমজান মাসে ফজরের নামায অগেই পড়তে হবে;
বর্তমান সময়ে আমাদের অনেক ভাইয়েরা হানাফী মাজহাবের উপর কাদা ছুড়ে মেরে হানাফী আলেমদেরকে কুলষিত করতে চায়। কারণ তারা বলে থাকে যে রমজান মাস আসলে হানাফীরা নিজেদের মাজহাব ছেড়ে আহলে হাদীস হয়ে যায় এবং ফজরের নামায গলসে তথা অন্ধকারে পরে। তো বাকি ১১ মাসেও যে গলসে পড়তে হবে তা মানে না কেন?
আসলে বিষয়টি এমন নয়। হানাফী মাজহাবে ফজরের নামায ইসফার তথা একটু আলো হলে পড়ার কথা বলা হয় এ বিষয়ে তাদের হাদীসের অনেক দলীল রয়েছে, তবে অন্য ১১ মাস ও রমজান মাস একই হুমুমে নয়, কেননা রমজান মাসে দীর্ঘ রাত পর্যন্ত মানুষ তারাবীহ এর নামায সহ অন্যান্য ইবাদতে মাশগুল থাকে, শেষ রাতে তাহাজ্জুদ ও সেহেরী খাওয়ার জন্য অনেক আগে উঠতে হয় এ কারণে মানুষের ঘুমে বিঘনতা ঘটে যার ফলে শারীরিক দুর্বলতা আসতে পারে, বিধায় ফজরের নামযের পর আমাদের ঘুমানোর দরকার হয়। আর এ কথা শীরধার্য যে বিশ্বের ৮৫% মানুষ সেহেরি শেষে বিশ্রাম নেয়, তো আমরা যদি ফজরের নামায আগে আদায় না করি তাহলে মানুষের বিশ্রামে ঘাটতি দেখা দেয়। কেননা কিছু সময় বিশ্রাম নেওয়ার পর মানুষ আবার কাজে লাগে যায়, বিধায় নামায আগে পড়াই শ্রেয়। এখনও যদি কেউ জোর করে বলে; যে না ইসফার হলেই নাময আদাই করবেন! তো এখানে একটি বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে যে সেহেরি খাওয়ার পর যদি আমরা দির্ঘ সময় পর্যন্ত আপেক্ষা করতে থাকি তা হলে আধিকাংশ মানুষ নিদ্রায় চলে যাবে যাতে মাসজিদে জামাতে মুসল্লীর সংখ্যা কমে যাবে যা কোনো ক্রমেই কাম্য নয়।
আর সবথেকে বড় কথা হলো রমজান মাসে যে আমরা ফজরের নামায তাড়াতাড়ি পড়ি এর কারণ হলো রাসূল সাঃ থেকে সাহাবী রাঃ অনেক হাদীস যা আমরা নিচে তুলে ধরছি,
حدثنا هشام حدثنا قتادة عن أنس عن زيد بن ثابت رضي الله عنه قال : تسحرنا مع النبي صلى الله عليه و سلم ثم قام إلى الصلاة قلت كم كان بين الأذان والسحور ؟ . قال قدر خمسين آية
যায়েদ ইবনে সাবেত রাঃ থেকে বর্ণিত যে আমরা রাসূল সাঃ এর সাথে সেহেরি খাই অতপর রাসূল সাঃ নামযের জন্য দাড়িয়ে গেলেন আনাস রাঃ বলেন আমি জিঙ্গেসা করলাম অযান ও সামাযের মধ্যে কতটুকু ব্যবধান ছিল? তিনি বল্লেন ৫০ আয়াত পাঠকরা পারিমাণ।
(বুখারী ১৮২১ মাকতাবায়ে শামেলা )
حدثنا أبو بكر بن أبي شيبة حدثنا وكيع عن هشام عن قتادة عن أنس عن زيد بن ثابت رضي الله عنه قال تسحرنا مع رسول الله صلى الله عليه و سلم ثم قمنا إلى الصلاة قلت كم كان قدر ما بينهما ؟ قال خمسين آية
একই হাদীস একই অর্থ (মুসলীম শরীফ ৪৭ মাকতাবায়ে শামেলা) বুখারী ও মুসলিম শরীফের একাধিক সনদে এ একটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে।
ইফতারের মাস‘আলা;
রোযা রাখার পর যখন সূর্যস্থ হবে তখন কোনো খাবার গ্রহণ করে রোযা ভঙ্গ করাকে ইফতার বলা হয়।ইফতার গ্রহন করা সুন্নত, কিছু কিছু ধর্মে রোযার বিধান তো আছে কিন্তু তাদের ইফতারের নিয়মটা ভিন্ন,কেননা তারা সেহেরি থেকে সেহেরি পর্যন্ত রোযা রাখে মাঝে ইফতার করে না,আবার অনেক ধর্মে ইফতার করা হয় অনেক দেরিতে।(মেশকাত ১৯৯৫ নং হাদীস) কিন্তু আল্লাহর রাসূল সাঃ এরকম করতে নিষেধ করেছেন।
- ইসলাম ধর্মে সময় হওয়ার সাথে সাথে তাড়াতাড়ি ইফতার করা সুন্নত। যেমনটি হাদীস শরীফে এসেছে যে আল্লাহর রাসূল সাঃ বলেন সে সকল মানুষ কখোনই কল্যান গ্রহণ করতে পারবে না যারা ইফতার তাড়তাড়ি করে করে না।
(বুখারী ১৮৫৬ মাকতাবায়ে শামেলা) - ইফতারের সবচেয়ে উত্তম পন্থা হলো; খুরমা খেজুর দ্বারা ইফতার করা অতঃপর কোনো মিষ্টি জিনিস দ্বারা।
- মেঘের দিনে ইফতার একটু দেরিতে করা সুন্নত। শুধু ঘড়ি বা আযানের উপর ভরসা না করে মুমিরেন অন্তরের সাক্ষ্য না দেওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা ভালো।
(বুখারী ১৮৫৮ মাকতাবায়ে শামেলা) - দিন শেষ হওয়ার পূর্বে যদি কেউ প্লেনে সফর করে এবং এমন কোনো এলাকায় পৌছে যেখানে এখনো সূর্যস্থ হয়নি,তবে সময় অনুযায়ি বাংলাদেশে হয়ে গেছে.তারপরেও সে দেশে সুর্যস্ত হলে ইফতার করবে আগে নয়।
- গ্রাম্য এলাকায় সাধারণত অনেক মহিলারা এটা মনে করেন যে, ইফতার করার পূর্বে চাউল খেতে হয়,আবার অনেকে মনে করেন যে ইফতার লবণ দ্বারা করা সুন্নত! আসলে এ আকিদা ভূল। মানুষের জন্য সহজলভ্য বিষয় দ্বরাই ইফতার করা ভালো।
- ইফতারের সময় দু‘আ কবূল হয় বিধায় ইফতারের অগমুহুর্তে নিম্নউক্ত দু‘আ সহ অন্যান্য দু‘আ পড়া মুস্তহাব। মুআ‘জ ইবনে যাহরা রাঃ বলেন আমার নিকট এ কথা পৌছেছে যে আলল্লাহর নবী সাঃ যখন ইফতার করতেন তখন এ দু‘আ পড়তেন
اللهم لك صمت وعلى رزقك أفطرت ।
(আবু দাঊদ শরীফ ২৩৫৮) - আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাঃ থেকে বর্ণিত যে রাসূল সাঃ ইফতারের সময় এ দু‘আ পড়তেন “ذهب الظمأ وابتلت العروق وثبت الأجر إن شاء الله “
(আবু দাঊদ শরীফ ২৩৫৭ মাকতাবায়ে শামেলা )
যেসব কারণে রোযা মাকরুহ হয়ে যায়;
- বিনা প্রয়োজনে কোনো জিনিস চিবান।
(ফতুওয়ায়ে শামী ২/৪১৬) - গসল ফরজ অবস্হায় সারাদিন অতিবাহিত করা।
- গিবত করা,চোগলখোরী করা,মিথ্যা বলা,বাজে কথা বলা।
(বুখারী ১৮০৪) - খুধা বা পিপাসার কারণে মানুষের কাছে অস্হিরতা প্রকাশ করা।
- রোজা অবস্হায় মুখের ভিতরে দাতে লেগে থাকা কোনো জিনিস বের করে তা গিলে ফেলা।
(ফতুওয়ায়ে শামী ২/৪১৬) - রোযাদারের মুখে কোনো জিনিস নিয়ে চিবিয়ে তা বাচ্চার মুখে দেওয়।
- বিনা কারনে তরকারীর লবণ বা স্বধ চেক করা।
(ফতুওয়ায়ে শামী ২/৪১৬) - দাত পরিস্কার করার জন্য মাজন,কয়লা,পেষ্ট ইত্যাদি ব্যবহার করা।
- মুখের থুথু একসাথে অনেক জমিয়ে তারপর গিলে ফেলা।
যে সব কারণে রোযা ভঙ্গে যায়;
- (Oxygen) রোজা অবস্থায় অক্সিজেন ব্যবহার করলে। অবশ্য অক্সিজেন দুই ভাবে ব্যবহার করা হয়, ঔষধ সহ বা ঔষধ ছাড়া, যদি ঔষধ সহ অক্সিজেন ব্যবহার করা হয় তাহলেই রোযা নষ্ট হবে,অন্যথায় নয়্ ।(জাদীদ ফিকহী মাসায়েল)
- (Nitro glycetin) নাইট্রো গ্লিসারিন ব্যবহার করার দ্বারা রোযা নষ্ট হয়ে যাবে ।
- (Coper –T) কপার টি দ্বারাও রোযা নষ্ট হয়ে যায়। কপার টি হলো যোনিদ্বারে প্লাস্টিক লাগান যাতে সহবাসের সময় বীর্য জরায়ুতে প্রবেশ না করতে পারে। এর দ্বারা রোযার কাযা কাফ্ফারা উভয়টি ওয়াজিব।
- এটা এরোসল জাতীয় ঔষধ যা হার্টের জন্য জিহ্বার নিচে ব্যবহার করা হয় যা রক্তের সাথে মিশে যায় এবং এর কিছু অংশ গলায় চলে যাওয়ার সম্ভানা থাকে।
(জাদীদ ফেকহী মাসায়েল) - (Laparos copy) লেপারোস কাপি করার মাধ্যমে রোযা নষ্ট হয়ে যাবে যদি তাতে কোনো ঔষধ লাগানো থাকে অন্যথায় নয়। পেটের কোনো অংশ বা গোশত পরীক্ষ করা জন্য যে শিক ব্যবহার করে পেট ছিদ্র করা হয় এবংগোশত বের করে আনা হয় তাকে লেপারোস কপি বলা হয়।
(আল মাকালাতুল ফিকহীয়া) - ইচ্ছা করে কান নাক বা মুক দিয়ে কোনো কিছু প্রবেশ করালে।
- বিড়ি,সিগারেট,হুক্কা,গাজা ইত্যদি সেবন করলে।
- নেশ জনিত কারণে আগরবাতি এবং এ ধরনের যে কোনো ধুয়া জাতিয় জিনিস ইচ্ছা করে নিজর ভিতরে নিলে।
- নিজেকে কন্টল করতে পারবেনা জেনে ও যদি স্ত্রী বা অন্য কোনো মহিলাকে স্পর্শ করে, যার দ্বারা বীর্যপাত হয় যায়।
- রাত্র এখনো শেষ হয়নি মনে করে সেহরি খেলে।
- ইফতারির সময় হয়নি অথচ সময় হয়ে গেছে মনে করে ইফতার করলে।
- সকাল থেকে রোযার নিয়ত করে নি এরপর দুপর গড়িয়ে যাওয়ার পর রোযার নিয়ত করলে।
- হস্ত মৌথন করলে, যদি বীর্য বের হয়।
- স্বামী রোযা রাখেনি কিন্তু স্ত্রী রেখেছে এখন স্বামী যদি স্ত্রীকে জোর করে কিংবা স্ত্রী ঘমন্ত থাকাবস্থায় সহবাস করে তাহলে স্ত্রীর রোযাও ভাঙ্গে যাবে ।
- সেচ্ছায় মুখ ভরে বমি করলে।
(মেশকাত ২০০৭ নং হাদীস) - বমি করার পর তার কিছু অংশ আবার ভিতরে টেনে নিলে।
যে সব কারণে রোযা ভাঙ্গে না;
- (Injection) ইনজেকশন নিলে রোযা ভাঙ্গবে না।
(জাওয়াহিরুল ফতোওয়া) - (Angio gram) এনজিওগ্রম করলে রোযা নষ্ট হবে না।
(জাওয়াহিরুল ফতোওয়া) - (Endos copy) এন্ডোসকপি করার দ্বারা রোযা ভাঙ্গেবে না। যদি নলেন মাধ্যমে কোনো ঔষধ বা পানি ভিতরে না যায়।
(জাদিদ ফেকহি মসায়েল ) - (Saline) সেলাইন নিলে রোযা নষ্ট হবে না। কেননা সেলাইন নেওয়া হয় রগে আরে রগ রোযা নষ্ট হওয়ার রাস্তা নয়।তবে যদি সেলাইন রোযার কষ্ট দূর করার জন্য নেওয়া হয় তাহলে রোযা মকিরুহ হয়ে যাবে।
(ফতোওয়ায়ে দারুল উলূম ) - (Vaccine) টিকা নেওয়ার দ্বারা রোযা নষ্ট হবে না। কেননা টিকা মাংস পেশিতে নেওয়া হয়,যা ইনজেকশনের একটি প্রকার, আর আমরা জানি যে গোশত রোযা নষ্ট হওযার কোনো রাস্তা নয়।
(আপকা মাসায়েল ) - ( Douche) ঢিুস নিলে রোযা নষ্ট হয়ে যাবে। ঢুস হরো যা জ্বর বা এই ধরণের সমস্যায় মলদ্বার প্রবেশ করান হয়।
(ফতোওয়ায়ে শামী ) - কোনো ধরণের ঔষধ ব্যবহার করা ছাড়া যদি অক্সিজেন নেওয়া হয়।
- (Insulin) ইনসুলিন নিলে রোযা নষ্ট হয় না।
(জাদীদ ফেকহী মাসায়েল ) - রোযা অব্থায় যদি কারো মস্তিষ্ক অপারেশন করা হয় তা হলেও রোযা নষ্ট হবে না।
(আল মাকালাতুল ফিকহীয়া ) - (Cystoscopy) সিস্টোসকপি করার দ্বারাও রোযা নষ্ট হয় না। অর্থাৎ পেশাবের রাস্তায় বিশেষ যন্ত্র প্রবেশ করিয়ে যে পরীক্ষা করা হয়।
(হেদায়া) - রেযা অবস্হায় স্ত্রীকে স্পর্শ করলে বা চুমু দিলে,(যদি সহবাসে লিপ্ত হওয়ার আশঙ্কা বা বীর্যপাত হওয়ার আশঙ্কা না থাকে)তাহলে রোযা ভাঙ্গে না।
(মুসলিম শরীফ, রোযা অধ্যায় ৬২) - সেহেরি খাওয়ার অগে বা পরে যদি কারো গোসলের প্রয়োজন দেখা দেয়, কিন্তু গোসল করার আগেই আযান হয়ে যায় তাহলে সে আজানের পরই গোসল করে নামায আদাই করে নিবে এতে তার রোযা ভাঙ্গে না।
(মুসলিম শরীফ, রোযা অধ্যায়, হাদীস নং ৬৫) - যে ব্যক্তি এ কথা ভুলেগেল যে সে রোযাদার আতপর সে খাবার খেল বা পানাহার করল। বা স্ত্রী সহবাস করল তার রোযা ভাঙ্গবে না।
(মুসলিম শরীফ, রোযা অধ্যায়, হাদীস নং ১৭১) - শিরীলে রক্ত নিলে বা রক্ত দিলে ও রোযা ভাঙ্গবে না।
(আহসানুল ফতওয়া) - অনেক গরম বা পিপাসার কারনে বারবার গোসল করলে বা কুলি করলে রোযা ভাঙ্গবে না।
(মেশকাত ২০১১ নং হাদীস ) - রোযা অবস্থ্য় দাত উঠালে,যদিও রক্ত বের হয় তাও রোযা ভাঙ্গবে না।
- মেসওয়াক করার দ্বারা রোযা ভাঙ্গে না,চাই তা একবার হোক বা একাধিকবার হোক। কাঁচা হোক বা শুকনা হোক।
(মেশকাত ২০০৯ নং হাদীস) - শরীর,মাথা,দাড়িবা গোঁপে তেল লাগালে।
(ফতুওয়ায়ে শামী ২/৪১৬) - রোযা আছি এটা মনে নাথাকাবস্থায় খাবার খেলে বা পান করল। আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত যে রাসুল সাঃ বলেন যে ব্যক্তি রোযা আছে এ কথা ভূলে গেল অতপর খাবার খেল বা কিছু পান করল সে যেন তার রোযা ভঙ্গ না করে, কেননা আল্লাহ তাআ‘লা তাকে খাইয়েছেন।
(বুখারী ১৭১ মাকতাবায়ে শামেলা ) - দিনর বেলা ঘুমানর পর স্বপ্ন দোষ হলে রোযা ভাঙ্গবে না।
(মেশকাত ২০১৫ নং হাদীস ) - রোযা অবস্থায় বোমি হলে রোযা ভাঙ্গবে না।
(মেশকাত ২০০৭ নং হাদীস ) - চোখে সুরমা লাগালে বা চোখে কোনো ড্রপ দিলে রোযা ভাঙ্গবে না।
(মেশকাত ২০১০ নং হাদীস ) - অনেকে মনেকরে মুখের থুথু তো পানির থেকে সৃষ্টি হয়!বিধায় মুখের থুথু গিলে ফেল্লে রোযা ভেঙ্গে যাবে।কিন্তু আসলে থুথু গিলার দ্বারা রোযা ভাঙ্গবে না।
- সাপ, বিচ্ছিু ইদ্যাদিতে দংশন করলে রোযা ভাঙ্গবে না।
যে রোযা ভঙ্গের পর কাযা ও কাফ্ফারা আদায় করতে হয়;
- রোযার নিয়ত করার পর ইচ্ছাকৃতভাবে পানাহর করলে।
(ফতুওয়ায়ে শামী ২/৪১১) - রোযার নিয়ত করার পর ইচ্ছাকৃতভাবে স্ত্রী সম্ভোগ করলে স্বামী ও স্ত্রী উভয়ের উপর কাযা কাফ্ফারা করা ওয়াজিব।
(ফতুওয়ায়ে শামী ২/৪১১)
(মুসলিম শরীফ, রোযা অধ্যায় ৮১,৮২,৮৩,৮৪ ও ৮৫ নং হাদীস)
- রোযা রাখার পর কোনো বৈধ কাজ করার কারণে রোযা ভেঙ্গে গেছে মনে করে ইচ্ছাকরে পানা-হার করলে কাযা কাফ্ফারা করা ওয়াজিব।
(ফতুওয়ায়ে শামী ২/৪০২)
রোযার কাফ্ফারার মাস‘আলা;
কাফ্ফারার (كفارة) একটি আরবী শব্দ যার শাব্দিক অর্থ হলো;
প্রায়শ্চিত্ত করা,
পরিভাষায় কাফ্ফারা বলা হয়;
শরীয়ত প্রণিত কোনো ধর্মিয় আদেশ পালন করতে না পারলে তার জন্য যে বড় গুনাহ হয় যদি কেউ এ গুনাহ থেকে বাচতে চায় এবং এর বিকল্পতা অনুশন্ধান করে এবং ইসলাম তার জন্য কোনো পন্থা রেখে থাকে তাহলে গুনাহ মুক্তির আশায় সে পন্থা অবলম্বন করাকে কাফ্ফারা নামই হলো কাফ্ফারা।
কিন্তু মনে রাখতে হবে ! আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণতি যে রাসূল সাঃ বলেছেন; যে ব্যক্তি অসুস্থতা বা কোনো কারন ছাড়া রমজানের একাটি রোযা ছেড়ে দিল সে যদি তার বিনিময়ে সারা জীবনও রোযা রাখে তাতেও তার রমজানের রোযার বিনিময় হতে পারে না।
যে বা যারা কারণহীন রমজানের রোযা রোখল না বা স্বামী সেচ্ছায় স্ত্রীর যে কোনো এক রাস্তায় সহবাস করল বা স্ত্রীর অনিচ্ছায় স্বামী স্ত্রীর সাথে সহবাস করল,তাহলে উভয়ের উপরই কাযা কাফ্ফারা ওয়াজিব হবে। অথবা কেউ সেচ্ছায় খাবার খেল বা পানি বা ঔষধ পান করল, উল্লিখিত যে কোনো এক বা একাধিক কাজ যে করবে তার জন্য তাকে কাফ্ফারা দিতে হবে যা আমরা নিচে আলোচনা করবো ইনশাআল্লাহ।
প্রতি বছর আমাদের নিকট যে রোযা আসে কেউ যদি এক রমজান মাসের এক বা একাধিক রোযায় উপরোল্লিখিত কাজগুলোর মধ্যে এক বা একাধিক বিষয়ে জড়িয়ে পরে তাহলে তার একবারই কাফ্ফারা দিতে হবে। রোযার কাফ্ফারা আর জেহারের কাফ্ফারা একই রকম,তবে রমজানের কাফ্ফারা হাদীস দ্বারা সাব্যস্ত যদি কেউ আমলগত দিক থেকে এ বিধানকে অশ্বিকার করে তাহলে তাকে কাফের বলা হবে।
(ফতোয়ায়ে শামী ৪১২ পৃঃ)
রমজানের কাফ্ফারার চারটি প্রকার রয়েছে;
গোলাম আযাদ করা;
ততকালিন সময় নিয়ম ছিল যে কেউ যদি কোনো কারণে রেযা নষ্ট করে ফেলে তা হলে তার কাফ্ফারা সরুপ একজন ক্রতদাশ আযাদ করতে হবে। هل تجد ما تعتق رقبة ؟
(মুসলিম শরীফ, রোযা অধ্যায় ৮১,৮২ ও ৮৩ মাকতাবায়ে শামেলা )
৬০ টি রোযা;
যে কোনো এক রমজানে এক বা একাধিক রোযা ছুটে গেলে কী পুরুষ কী মহিলা তার কাফ্ফারা হলো ৬০ টি রোযা। অর্থাৎ যে কয়টা রোযা রাখা হয়নি সে কয়টি রোযা কাজা করার সাথে সাথে আরো ৬০ টি রোজা রাখবে,قال فهل تستطيع أن تصوم شهريين متتابعين ؟
(মুসলিম শরীফ, রোযা অধ্যায় ৮১,৮২ ও ৮৩ মাকতাবায়ে শামেলা )
- এ ৬০ টি রোযা একাধারে রাখতে হবে,মাঝে কোনো একটা রোযা ছুটে গেলে আবার ও নতুন করে ৬০ টি রোযা রাখতে হবে,অবশ্য হ্যাঁ…. যদি মহিলা হয় এবং এ সময়েন মধ্যে তার মাসিক ঋতু দেখাদেয় তাহলে সে এ দিনগুরি বাদ দিয়ে বাকি দিনগুলো লাগাতার রোযা আদাই করবে।
- কাফ্ফারা রোযা এমন দিন দেখে শুরু করতে হবে যাতে তার মাঝে ঈদের দিন বা মহিলার বাচ্চা প্রশব করার পরবর্তি নেফাসের দিন না আসে।
- কাফ্ফারার রোযা এমন দিনে রাখা শুরু করবে যার পরবর্তি ৬০ দিনের মধ্যে শরীয়ত নিশিদ্ধ কোনো দিন চরে না আসে। যেমন দুই ইদ ও আইয়ামে তাশরীকের তিন দিন।
- কাফ্ফারার রোযাও রমজানের রোযার ন্যায় রাখতে হবে।অর্থাৎ নিয়ত,সেহেরি, ইফতার ইত্যাদি।
- এক রমজানে এক বা একাধিক রোযা ছুটলে একবার ককাফ্ফারা দিতে হবে। অন্য বছরের রোযার জন্য আবার আলাদা দিতে হবে।
৬০ জনকে খাবার খাওয়ান;
এমন দরিদ্র/ফকির-মিসকীন ব্যক্তি যারা পেট ভরে খেতে সক্ষম,এমন ৬০ জনকে দুই বেলা পেট ভরে খেতে দিতে হবে।অর্থাৎ কেউ যদি প্রথম প্রাকার তথা ৬০ দিন রোযা রাখতে না পারে তাহলে ৬০ জনকে খাবার খাওয়াবে। قال فهل تجد ماتطعم ستين مسكينا ؟
(মুসলিম শরীফ, রোযা অধ্যায় ৮১,৮২ ও ৮৩ মাকতাবায়ে শামেলা )
- শরীয়তের এই মূলনীতিটা পালন করার ক্ষেতেএ কিছু সহজতা অবলম্বন করার সুজগ রয়েছে।আর তা এভাবে যে কেউ চাইলে এ ৬০ জনকে খাওয়ানের ক্ষেতেএ লাগাতার না করে মাঝে মাঝে করতে পারে,বা একজনকেই ৬০ দিন দুই বেলা খাওয়াতে পারে।
ফিতরা প্রদান করা;
অর্থাৎ কেউ যদি উপরোল্লিখিত বিধানের যেকোনো একটি পালন করতে না পারে বা পালন করতে না চায় তাহলে সে ইচ্ছা করলে ৪র্থ্ একটি বিধানটি পা্লন করতে পারে। আর তা এভাবে যে গরিব আসহায় ৬০ জন মানুষকে সদকাতুল ফিতিরের হিসাব অনুযায়ি একটি করে সদকাতুল ফিতির প্রদান করবে।
(মুসলিম শরীফ, রোযা অধ্যায় ৮১,৮২ ও ৮৩ মাকতাবায়ে শামেলা )
রোযা না রাখতে পারলে তার ফিদিয়া কী?
ফিদিয়া আর্থ ক্ষতিপূরণ রোযা আদাই করতে না পারলে বা কাযা করতে না পারলে যে ক্ষতিপূরন দিতে হয় তাকে ফিদিয়া বলা হয়। প্রতিটি রোযার পরিবর্তে সদকায় ফিতির পরিমাণ পণ্য বা তার মূল্য দান করাই হলো এক রোযার ফিদিয়া।
অতিশয় বৃদ্ধ/বৃদ্ধা রোযা রাখতে না পরলে অথবা কারো এমন ধ্বংসকারী বা দীর্ঘ মেয়াদী রোগ হলে যার সুস্হ হওয়ার কোনো আশা করা যায় না। তো এমন সকল লোকের প্রত্যেক রোযার জন্য একটি করে ফিদিয়া দিতে হবে। অবশ্য যদি কখনো এমন লোকেরা সুস্হ হয়ে যায় তাহলে তাদের এ রোযা আবারো কাযা আদাই করে নিতে হব।
যদি কোনো মানুষ মারা যায়,যার জীবদ্দশায় কোনো রোযা আদাই না হয়ে থাকে এমতাবস্হায় যদি সে মারা যাওয়ার আগে ওছিয়ত করে থাকে তাহলে তার পরিত্যাক্ত সম্পদের এক তৃতীয়াংশ থেকে তার ওছিয়ত পুরন করবে। আর যদি সে ওছিয়ত না করে থাকে তাহলে তার সন্তানেরা চাইলে তার পক্ষ থেকে ফিদিয়া আদাই করে দিবে।
যে সব কারণে রোযা না রাখার অনুমতি আছে;
- যদি কেউ শরীয়তসম্মত সফরে থাকে তাহলে তার জন্য রোযা না রাখার অনুমতি রয়েছে,অবশ্য পরবর্তিতে তা কাযা আদাই করে নিতে হবে,কাফ্ফারা নয়।কিন্তু সফরে যদি কষ্ট না থাকে তাহলে রোযা রাখাই ভালো।
(মুসলিম শরীফ রোযা অধ্যায়, ৮৮,৮৯ ও ১০৩ মাকতাবায়ে শামেলা )
- গর্ভবতী বা দুগ্ধদায়িনী স্ত্রীর রোযা না রাখার অনুমতি আছে, যদি নিজের জীবন বা সন্তানের জীবনের ব্যাপারে আশংকা করে। অবশ্য পরবর্তিতে তা কাযা আদায় করে নিবে।
(মেশকাত ২০২৫) - হায়েয নেফাস অবস্হায় রোযা অবশ্যই ছেড়ে দিতে হবে।যা অবশ্যই পরবর্তিতে কাযা আদাই করে নিবে।
- যদি কোনো রোযাদার ব্যক্তি রোযা রাখার কারণে তার রোগ বেড়ে যাওয়ার অশংকা থাকে,অথবা অন্য কোনো নতুন রোগ দেখা দেওয়ার সম্ভবনা থাকে,অথবা তার অসুস্হতার সুস্হতার বিলম্বনার সম্ভবনা থাকে তাহলে রোযা না রাখার অনুমতি আছে। অবশ্য পরবর্তিতে তা কাযা আদাই করে নিবে।
এখানে মন্তব্য করুন
লেখক পরিচিতি
নামঃ মুহাম্মদ ইউনুছ আলী
ইফতাঃ দারুল আরকাম মাদরাসা, কামরাঙ্গীচর (২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষ)।
তাকমিলঃ জামিয়া শরইয়্যাহ মালিবাগ (২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষ)।
চলমান শিক্ষাঃ
বি,এ,অনার্সঃ তোলারাম কলেজ, নারায়ণগঞ্জ।
ফাজিলঃ ঢাকা আলিয়া, বখশি বাজার।
ইমামঃ নজরুল অয়েল মিলস্, কাঁচপুর।
সিনিয়ার শিক্ষকঃ জামিয়াতুশ শুহাদা দেওয়ানবাগ মাদরাসা, নারায়ণগঞ্জ।
মোবাইলঃ +৮৮০১৯৯৬-১০৩৪৩৫
ই-মেইলঃ mmyounusali@gmail.com