রোজা

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম

বিষয়ঃ রোজা
(নির্বাচিত গুরুত্বপূর্ণ আয়াত-এর তরজমা ও তাফসীর)

আয়াতে কারীমাহ্

يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ (183

[البقرة: 183]

সরল অনুবাদ

হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরয করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর, যাতে তোমরা সংযমশীল হতে পার। [১]

সূরার নাম ঃ আল বাকারা
অবর্তীণ ঃ মদীনায়
আয়াত নম্বরঃ ১৮৩

সংক্ষিপ্ত তাফসীর

[১] صوم صيام এর (মাসদার/ক্রিয়ামূল)। এর শরীয়তী অর্থ হল, আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে ফজর উদিত হওয়ার পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার এবং যৌনবাসনা পূরণ করা থেকে বিরত থাকা। এই ইবাদতটা যেহেতু আত্মাকে পবিত্র ও শুদ্ধি করণের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, তাই তা তোমাদের পূর্বের উম্মতের উপরেও ফরয করা হয়েছিল। এই রোযার সবচেয়ে বড় লক্ষ্য হল তাকওয়া, পরহেযগারী তথা আল্লাহভীরুতা অর্জন। আর আল্লাহভীরুতা মানুষের চরিত্র ও কর্মকে সুন্দর করার জন্য মৌলিক ভূমিকা পালন করে থাকে।

আয়াতে কারীমাহ্

 أَيَّامًا مَعْدُودَاتٍ فَمَنْ كَانَ مِنْكُمْ مَرِيضًا أَوْ عَلَى سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِنْ أَيَّامٍ أُخَرَ وَعَلَى الَّذِينَ يُطِيقُونَهُ فِدْيَةٌ طَعَامُ مِسْكِينٍ فَمَنْ تَطَوَّعَ خَيْرًا فَهُوَ خَيْرٌ لَهُ وَأَنْ تَصُومُوا خَيْرٌ لَكُمْ إِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُونَ (184

[البقرة: 184]

সরল অনুবাদ

(রোযা) নির্দিষ্ট কয়েক দিনের জন্য। তোমাদের মধ্যে কেউ অসুস্থ হলে বা সফর অবস্থায় থাকলে অন্য দিনে এ সংখ্যা পূরণ করে নেবে।[১] আর যারা রোযা রাখার সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও রোযা রাখতে চায় না [২] (যারা রোযা রাখতে অক্ষম), তারা এর পরিবর্তে একজন মিসকীনকে খাদ্য দান করবে। পরন্তু যে ব্যক্তি খুশীর সাথে সৎকর্ম করে, তা তার জন্য কল্যাণকর হয়।[৩] আর যদি তোমরা রোযা রাখ, তাহলে তা তোমাদের জন্য বিশেষ কল্যাণপ্রসূ; যদি তোমরা উপলব্ধি করতে পার।

সূরার নাম ঃ আল বাকারা
অবর্তীণ ঃ মদীনায়
আয়াত নম্বরঃ ১৮৪

সংক্ষিপ্ত তাফসীর

[১] রোগী ও মুসাফিরকে অনুমতি দেওয়া হয়েছে যে, তারা রোগ ও সফরের কারণে যে কয়েক দিন রোযা রাখতে পারেনি, পরে সে দিনগুলো রোযা রেখে (২৯/৩০) সংখ্যা পূরণ করে নেবে।
[২] ((يُطِيْقُوْنَهُ)) এর অর্থ নেওয়া হয়েছে ((يَتَجَشَّمُوْنَهُ)) অর্থাৎ, “অতীব কষ্ট করে রোযা রাখে”। (এটা ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণিত হয়েছে। ইমাম বুখারী এই তরজমাকে পছন্দ করেছেন।) অর্থাৎ, যে ব্যক্তি বেশী বার্ধক্যে পৌঁছে যাওয়ার কারণে অথবা আরোগ্য লাভের আশা নেই এমন রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ার কারণে রোযা রাখতে অত্যন্ত কষ্ট বোধ করে, সে এর পরিবর্তে একজন মিসকীনকে খাদ্য দান করবে। তবে অধিকাংশ মুফাসসিরগণ এর অর্থ ‘রোযা রাখার সামর্থ্য রাখে’ করেছেন। আর এ অর্থে এর ব্যাখ্যা হল, ইসলামের প্রথম পর্যায়ে রোযা রাখার অভ্যাস না থাকার ফলে সামর্থ্যবানদেরকেও অনুমতি দেওয়া হয়েছিল যে, তারা রোযা রাখতে না পারলে এর পরিবর্তে একজন মিসকীনকে খাদ্য দান করবে। পরে
{فَمَنْ شَهِدَ مِنْكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ} আয়াত অবতীর্ণ হলে আগের বিধান রহিত করে প্রত্যেক সামর্থ্যবানের উপর রোযা ফরয করা হয়। কেবল বৃদ্ধ ও চিররোগা ব্যক্তির জন্য এই বিধান অবশিষ্ট রাখা হয়েছে। তারা রোযার পরিবর্তে খাদ্য দান করবে। গর্ভিণী এবং দুগ্ধদাত্রী মহিলাদের রোযা রাখা কষ্টকর হলে, তারাও রোগীর বিধানের আওতায় পড়বে। অর্থাৎ, তারা রোযা না রেখে পরে তার কাযা করবে।
(তুহফাতুল আহওয়াযী)
[৩] যে সানন্দে একজন মিসকীনের স্থানে দু’ বা তিনজন মিসকীনকে খাদ্য দান করে, তার জন্য এটা খুবই ভাল।

আয়াতে কারীমাহ্

شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِي أُنْزِلَ فِيهِ الْقُرْآنُ هُدًى لِلنَّاسِ وَبَيِّنَاتٍ مِنَ الْهُدَى وَالْفُرْقَانِ فَمَنْ شَهِدَ مِنْكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ وَمَنْ كَانَ مَرِيضًا أَوْ عَلَى سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِنْ أَيَّامٍ أُخَرَ يُرِيدُ اللَّهُ بِكُمُ الْيُسْرَ وَلَا يُرِيدُ بِكُمُ الْعُسْرَ وَلِتُكْمِلُوا الْعِدَّةَ وَلِتُكَبِّرُوا اللَّهَ عَلَى مَا هَدَاكُمْ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ (185

[البقرة: 185]

সরল অনুবাদ

রমযান মাস, এতে মানুষের দিশারী এবং সৎপথের স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যাসত্যের পার্থক্যকারীরূপে কুরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে।[১] অতএব তোমাদের মধ্যে যে কেউ এ মাস পাবে সে যেন তাতে রোযা পালন করে। আর যে অসুস্থ অথবা মুসাফির থাকে, তাকে অন্য দিনে এ সংখ্যা পূরণ করতে হবে। আল্লাহ তোমাদের (জন্য যা) সহজ (তা) করতে চান, তিনি তোমাদের কষ্ট চান না। যেন তোমরা (রোযার) নির্ধারিত সংখ্যা পূরণ করে নিতে পার এবং তোমাদেরকে যে সুপথ দেখিয়েছেন, তার জন্য তোমরা আল্লাহর তকবীর পাঠ (মহিমা বর্ণনা) কর এবং যেন তোমরা কৃতজ্ঞ হতে পার।

সূরার নাম ঃ আল বাকারা
অবর্তীণ ঃ মদীনায়
আয়াত নম্বরঃ ১৮৫

সংক্ষিপ্ত তাফসীর

[১] রমযান মাসে কুরআন অবতীর্ণ হওয়ার অর্থ এই নয় যে, কোন এক রমযানে পূর্ণ কুরআনকে নাযিল করে দেওয়া হয়েছে; বরং এর অর্থ এই যে, রমযানের কদরের রাতে ‘লাওহে মাহফূয’ থেকে নিকটের আসমানে পূর্ণ কুরআন একই সাথে অবতীর্ণ করা হয় এবং সেখানে ‘বায়তুল ইয্যাহ’তে রেখে দেওয়া হয়। ওখান থেকে ২৩ বছরের নবুঅতী জীবনে প্রয়োজনের তাকীদে এবং অবস্থা অনুপাতে কিছু কিছু করে অবতীর্ণ হতে থাকে।
(ইবনে কাসীর )
সুতরাং এ রকম বলা যে, কুরআন রমযান মাসে অথবা কদরের রাতে কিংবা পবিত্র বা বরকতময় রাতে অবতীর্ণ হয়েছে, সবই সঠিক। কারণ, ‘লাউহে মাহফূয’ থেকে তো রমযান মাসেই নাযিল করা হয়েছে। আর ‘লাইলাতুল কদর’ (কদরের রাত) ও ‘লাইলাতুম মুবারাকাহ’ পবিত্র বা বরকতময় রাত একটাই রাত। অর্থাৎ, তা হল শবেকদর। আর শবেকদর রমযান মাসেই আসে। কারো কারো নিকট এর তাৎপর্য হল, রমযান মাসে কুরআন নাযিল আরম্ভ হয় এবং হিরা গুহায় প্রথম অহীও রমযান মাসেই আসে। তাই এইদিক দিয়ে কুরআন মাজীদ এবং রমযান মাসের পারস্পরিক সম্পর্ক অতি গভীর। আর এই জন্যই নবী করীম (সাঃ) এই পবিত্র মাসে জিবরীল (আঃ)-এর সাথে কুরআন পুনরাবৃত্তি করতেন এবং যে বছরে তাঁর মৃত্যু হয়, সে বছর তিনি (সাঃ) জিবরীলের সাথে দু’বার কুরআন পুনরাবৃত্তি করেন। রমযানের (২৩, ২৫, ২৭ এই) তিন রাত তিনি সাহাবাদেরকে নিয়ে জামাআতের সাথে নামাযও পড়েন। যাকে এখন তারাবীহর নামায বলা হয়।
(সহীহ তিরমিযী ও সহীহ ইবনে মাজা আলবানী)