স্কাইভিউ পার্ক সিটি
শান্তিনগর, ঢাকা-১২১৭
+৮৮০২-৪১০৩২৩৫৩
২৪/৭ গ্রাহক সেবা
admin@islami-sharia.org
আমাদের কাছে বার্তা পাঠান
শান্তিনগর, ঢাকা-১২১৭
২৪/৭ গ্রাহক সেবা
আমাদের কাছে বার্তা পাঠান
باسم الله الرحمن الرحيم
মাওলানা সালমান হুসাইন (গোপালগঞ্জ)
লাইলাতুল কদর বা ভাগ্য রজনী এ উম্মতের উপর আল্লাহ তায়ালার অনেক বড় একটি নেয়ামত । কেননা পূর্ববর্তী উম্মতগন দীর্ঘ হায়াত পাওয়ার ফলে অধিক ইবাদত করার সুযোগ পেত কিন্তু এ উম্মতের হায়াত কম হওয়ায় তারা পূর্ববর্তী উম্মতের মত পরিমানে অধিক আমল করতে পারে না। তাই আল্লাহ এ উম্মতের উপর অনুগ্রহ করে এমন বিশেষ সময়ে বিশেষ ইবাদত রেখেছেন যার কোনটি হাজারো মাস ইবাদত হতে উত্তম, কোনটি আবার এক বছর ইবাদত হতে উত্তম। লাইলাতুল কদর বা ভাগ্য রজনী এমনই একটি বরকতপূ ও ফযিলতপূর্ণ রজনী। কোরআন হাদিসে এ রাতের অসংখ্য ফজিলত বর্ণিত হয়েছে।
লাইলাতুল কদর অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ ও ফযিলতপূর্ণ। মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনুল কারীমে এ রাতকে বরকতপূর্ণ বলে আখ্যায়িত করে ইরশাদ করেছেন
إنا أنزلناه في ليلة مباركة
নিশ্চয়ই আমি তাকে (কোরআনকে) বরকতপূর্ণ রজনীতে অবতীর্ণ করেছি।
(সূরা দুখান আয়াত নং ০৩)
এবং উক্ত সূরায় এ রাতের পরিচয় বিস্তারিত আলোচনা করে ইরশাদ করেছেন-
إنا انزلناه في ليلة القدر
নিশ্চয় আমি তাকে (কোরআনকে) লাইলাতুল কদর বা ভাগ্য রজনীতে অবতীর্ণ করেছি।
وما ادراك ما ليلة القدر
(হে নবী) আপনি কি জানেন? লাইলাতুল কদর কত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়?
নোটঃ
আরবি ব্যকরন অনুযায়ী কোন বিষয়ের গুরুত্ব ও বড়ত্ব বোঝানোর জন্য এ ধরনের বাক্য ব্যবহার করা হয়। এখানে প্রশ্ন করা উদ্দেশ্য নয়।
পরবর্তী আয়াতে আল্লাহ তায়ালা নিজেই উক্ত রাতের রড়ত্ব বর্ণনা করে বলেনঃ
ليلة القدر خير من ألف شهر
লাইলাতুল কদর হাজার মাস থেকে ও উত্তম।
تنزل الملائكة و الروح فيها باذن ربهم من كل أمر سلام
জিবরীল আমীন ও অন্যান্য ফেরেশতাগণ আল্লাহ তায়ালার আদেশে প্রত্যেক পূন্য বস্তু নিয়ে অবতরণ করেন।
هي حتى مطلع الفجر
ফজর পর্যন্ত সেই রহমত বর্ষিত হতে থাকে।
অসংখ্য হাদিসে এরাতের ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। একটি হাদিসে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ مَنْ صَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ، وَمَنْ قَامَ لَيْلَةَ الْقَدْرِ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ ِ.
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি রমযানে ঈমানের সাথে ও সওয়াব লাভের আশায় সাওম পালন করে, তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ মাফ করে দেয়া হয় এবং যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে, সওয়াব লাভের আশায় লাইলাতুল ক্বদ্রে রাত জেগে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করে, তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ মাফ করে দেয়া হয়।
(সহিহ বুখারী, হাদিস নং ২০১৪)
অন্য এক হাদিসে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ
عَنْ أَبِي سَلَمَةَ، قَالَ انْطَلَقْتُ إِلَى أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ فَقُلْتُ أَلاَ تَخْرُجُ بِنَا إِلَى النَّخْلِ نَتَحَدَّثْ فَخَرَجَ. فَقَالَ قُلْتُ حَدِّثْنِي مَا، سَمِعْتَ مِنَ النَّبِيِّ، صلى الله عليه وسلم فِي لَيْلَةِ الْقَدْرِ قَالَ اعْتَكَفَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَشْرَ الأُوَلِ مِنْ رَمَضَانَ، وَاعْتَكَفْنَا مَعَهُ، فَأَتَاهُ جِبْرِيلُ فَقَالَ إِنَّ الَّذِي تَطْلُبُ أَمَامَكَ. فَاعْتَكَفَ الْعَشْرَ الأَوْسَطَ، فَاعْتَكَفْنَا مَعَهُ، فَأَتَاهُ جِبْرِيلُ فَقَالَ إِنَّ الَّذِي تَطْلُبُ أَمَامَكَ فَقَامَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم خَطِيبًا صَبِيحَةَ عِشْرِينَ مِنْ رَمَضَانَ فَقَالَ “ مَنْ كَانَ اعْتَكَفَ مَعَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَلْيَرْجِعْ، فَإِنِّي أُرِيتُ لَيْلَةَ الْقَدْرِ، وَإِنِّي نُسِّيتُهَا، وَإِنَّهَا فِي الْعَشْرِ الأَوَاخِرِ فِي وِتْرٍ، وَإِنِّي رَأَيْتُ كَأَنِّي أَسْجُدُ فِي طِينٍ وَمَاءٍ وَكَانَ سَقْفُ الْمَسْجِدِ جَرِيدَ النَّخْلِ وَمَا نَرَى فِي السَّمَاءِ شَيْئًا، فَجَاءَتْ قَزْعَةٌ فَأُمْطِرْنَا، فَصَلَّى بِنَا النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم حَتَّى رَأَيْتُ أَثَرَ الطِّينِ وَالْمَاءِ عَلَى جَبْهَةِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَأَرْنَبَتِهِ تَصْدِيقَ رُؤْيَاهُ.
আবূ সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ: তিনি বলেন, আমি আবূ সা’ঈদ খুদ্রী (রাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললাম, আমার সঙ্গে খেজুর বাগানে চলুন, (হাদীস সংক্রান্ত) আলাপ আলোচনা করব। তিনি বেরিয়ে আসলেন। আবূ সালামা (রাঃ) বলেন, আমি তাকে বললাম, ‘লাইলাতুল কাদ্র’ সম্পর্কে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে যা শুনেছেন, তা আমার নিকট বর্ণনা করুন। তিনি বললেন, আল্লাহ্র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রমযানের প্রথম দশ দিন ‘ইতিকাফ করলেন। আমরাও তাঁর সঙ্গে ই’তিকাফ করলাম। জিবরীল (আঃ) এসে বললেন, আপনি যা তালাশ করছেন, তা আপনার সামনে রয়েছে। অতঃপর তিনি মধ্যবর্তী দশদিন ই’তিকাফ করলেন, আমরাও তাঁর সঙ্গে ই’তিকাফ করলাম। পুনরায় জিবরীল (আঃ) এসে বললেন, আপনি যা তালাশ করছেন, তা আপনার সামনে রয়েছে। অতঃপর রমযানের বিশ তারিখ সকালে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খুত্বা দিতে দাঁড়িয়ে বললেন, যারা আল্লাহ্র নবীর সঙ্গে ই’তিকাফ করেছেন, তারা যেন ফিরে আসেন (আবার ই’তিকাফ করেন) কেননা, আমাকে স্বপ্নে ‘লাইলাতুল কাদ্র’ অবগত করানো হয়েছে। তবে আমাকে তা (নির্ধারিত তারিখটি) ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। নিঃসন্দেহে তা শেষ দশ দিনের কোন এক বেজোড় তারিখে। স্বপ্নে দেখলাম যেন আমি কাদা ও পানির উপর সিজদা করছি। তখন মসজিদের ছাদ খেজুরের ডাল দ্বারা নির্মিত ছিল। আমরা আকাশে কোন কিছুই (মেঘ) দেখিনি, একখণ্ড হালকা মেঘ আসল এবং আমাদের উপর (বৃষ্টি) বর্ষিত হল। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের নিয়ে সালাত আদায় করলেন। এমন কি আমি আল্লাহ্র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কপাল ও নাকের অগ্রভাগে পানি ও কাদার চিহ্ন দেখতে পেলাম। এভাবেই তাঁর স্বপ্ন সত্যে রূপ লাভ করল।
(সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৮১৩)
পবিত্র কুরআন কারীমে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন-
تنزل الملائكة و الروح فيها
এ রাতে জিবরীল আমীন ও ফেরেশতাগণ অবতরণ করে।
(সূরা কদর আয়াত নং ৪)
এ সম্পর্কে একটি বর্ণনায় এসেছেঃ
وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ: «إِذَا كَانَ لَيْلَةُ الْقَدْرِ نَزَلَ جِبْرِيْلُ ؑ فِىْ كُبْكُبَةٍ مِنَ الْمَلَائِكَةِ يُصَلُّونَ عَلٰى كُلِّ عَبْدٍ قَائِمٍ أَوْ قَاعِدٍ يَذْكُرُ اللّٰهَ عَزَّ وَجَلَّ فَإِذَا كَانَ يَوْمُ عِيدِهِمْ يَعْنِىْ يَوْمَ فِطْرِهِمْ بَاهٰى بِهِمْ مَلَائِكَتَه فَقَالَ: يَا مَلَائِكَتِىْ مَا جَزَاءُ أَجِيرٍ وَفّٰى عَمَلَه؟ قَالُوا: رَبَّنَا جَزَاؤُه أَنْ يُوَفّٰى أَجْرُه. قَالَ: مَلَائِكَتِىْ عَبِيدِىْ وَإِمَائِي قَضَوْا فَرِيضَتِىْ عَلَيْهِمْ ثُمَّ خَرَجُوا يَعُجُّونَ إِلَى الدُّعَاءِ وَعِزَّتِىْ وَجَلَالِىْ وَكَرَمِىْ وَعُلُوِّىْ وَارْتِفَاعِ مَكَانِىْ لَأُجِيْبَنَّهُمْ. فَيَقُوْلُ: ارْجِعُوْا فَقَدْ غَفَرْتُ لَكُمْ وَبَدَّلْتُ سَيِّئَاتِكُمْ حَسَنَاتٍ. قَالَ: فَيَرْجِعُونَ مَغْفُورًا لَهُمْ». رَوَاهُ الْبَيْهَقِىُّ فِىْ شُعَبِ الْإِيمَانِ
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ‘লায়লাতুল কদর’ শুরু হলে জিবরীল আমীন মালায়িকাহ্’র (ফেরেশতাগণের) দলবলসহ (পৃথিবীতে) নেমে আসেন। তাঁরা দাঁড়িয়ে বা বসে থাকা আল্লাহর স্মরণকারী আল্লাহর প্রত্যেক বান্দার জন্য দু‘আ করতে থাকেন। এরপর ঈদুল ফিতরের দিন এলে আল্লাহ তা‘আলা মালায়িকার কাছে তাঁর বান্দাদের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করেন, হে আমার মালায়িকাহ্ (ফেরেশতা)! বলো দেখি সে প্রেমিকের কী পুরস্কার হতে পারে যে নিজ কাজ সম্পাদন করেছে? মালায়িকাহ্ (ফেরেশতা) বলেন, হে আমাদের রব! তার পারিশ্রমিক পরিপূর্ণভাবে দিয়ে দেয়াই হচ্ছে তার পুরস্কার। তখন আল্লাহ বলেন, আমার মালায়িকাহ্ (ফেরেশতা)! আমার বান্দা ও বান্দীগণ তাদের ওপর আমার অর্পিত দায়িত্ব পালন করেছে। আজ (ঈদের দিন) আমার নিকট দু‘আর ধ্বনি দিতে দিতে ঈদগাহের দিকে ধাবিত হচ্ছে। আমার ইজ্জতের, বড়ত্বের, উঁচু শানের কসম! জেনে রাখো তাদের দু‘আ আমি নিশ্চয়ই কবূল করব। এরপর আল্লাহ বলেন, আমার (বান্দাগণ)! আমি নিশ্চয়ই তোমাদের সকল অপরাধ মাফ করে দিলাম। তোমাদের গুনাহখাতাগুলোকে নেক কাজে পরিবর্তন করে দিলাম। তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, অতঃপর তারা ক্ষমাপ্রাপ্ত হয়ে বাড়ী ফিরে যায়।
(বায়হাকী শু‘আবূল ঈমান, মিশকাতুল মাসাবিহ, হাদীস নং ২০৯৬)
এ রাতে ইবাদত করা হাজারো মাস অপেক্ষা উত্তম; আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআন কারীমে ইরশাদ করেছেন-
ليلة القدر خير من ألف شهر
লাইলাতুল কদর হাজারো মাস অপেক্ষা উত্তম।
(সূরা কদর ০৩)
প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ
عن أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ دَخَلَ رَمَضَانُ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم إِنَّ هَذَا الشَّهْرَ قَدْ حَضَرَكُمْ وَفِيهِ لَيْلَةٌ خَيْرٌ مِنْ أَلْفِ شَهْرٍ مَنْ حُرِمَهَا فَقَدْ حُرِمَ الْخَيْرَ كُلَّهُ وَلَا يُحْرَمُ خَيْرَهَا إِلَّا مَحْرُومٌ
আনাস বিন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:রমজান মাস শুরু হলে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমাদের নিকট এ মাস সমুপস্থিত। এতে রয়েছে এমন এক রাত, যা হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। এ থেকে যে ব্যক্তি বঞ্চিত হলো সে সমস্ত কল্যাণ থেকেই বঞ্চিত হলো। কেবল বঞ্চিত ব্যক্তিরাই তা থেকে বঞ্চিত হয়।
(সুনানে ইবনে মাযাহ হাদিস নং১৬৪৪)
অপর এক হাদীসে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ
من قام ليلة القدر ايمانا و احتسابا غفر له ما تقدم من ذنبه
যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে প্রতিদান প্রাপ্তির আশায় লাইলাতুল কদরে ইবাদত করবে তার পূর্ববর্তী গোনাহসমূহ মাফ করে দেওয়া হবে।
(সহীহ মুসলিম হাদীস নং ৭৬০; সহীহ বুখারী হাদীস নং ১৯০১,২০১৪, মুসনাদে আহমদ হাদিস নং ৭২৮০,৯৪৪৫,১০১১৭, তিরমিযি হাদিস নং ৬৮৩, সুনানে নাসাঈ ২১৯৩, ২২০২, ৫০২৭, সহীহ ইবনে খুজাইমা হাদিস নং ১৮৯৪, সহীহ ইবনে হিব্বান হাদিস নং ২৫৪৩, ৩৬৮২, মুশকিলুল আছার হাদিস নং ২৩৫৬)
এ রাতে বেশি বেশী নিম্নোক্ত দোয়াটি পড়াঃ
وَعَنْ عائشة قَالَتْ : قُلْتُ : يَا رَسُولَ اللهِ أَرَأيْتَ إِنْ عَلِمْتُ أَيُّ لَيلَةٍ لَيْلَةُ القَدْرِ مَا أَقُوْلُ فِيهَا ؟ قَالَ قُولِي: اللَّهُمَّ إنَّكَ عَفُوٌ (كَرِيْمٌ) تُحِبُّ العَفْوَ فَاعْفُ عَنّي
হযরত আয়েশা রাযিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিতঃ:তিনি বলেন, একদা আমি নিবেদন করলাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! আপনি বলুন, যদি আমি (ভাগ্যক্রমে) শবেক্বদর জেনে নিই, তাহলে তাতে কোন (দুআ) পড়ব?’ তিনি বললেন, এই দুআ, “আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউবুন (কারীমুন) তুহিবুব্বুল আফওয়া ফা’ফু আন্নী।” অর্থাৎ, হে আল্লাহ! নিশ্চয় তুমি ক্ষমাশীল, (মহানুভব) ক্ষমা ভালবাস। সুতরাং তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও।
(আহমহদ ২৫৩৮৪, তিরমিযী ৩৫১৩, নাসাঈর কুবরা ৭৭১২, ইবনে মাজাহ ৩৮৫০, হাকেম ১৯৪২)
লাইলাতুল কদর বা ভাগ্য রজনী সম্পর্কে হাদীসে ইরশাদ হয়েছে
عَنِ ابْنِ عُمَرَ ـ رضى الله عنهما ـ أَنَّ رِجَالاً، مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم أُرُوا لَيْلَةَ الْقَدْرِ فِي الْمَنَامِ فِي السَّبْعِ الأَوَاخِرِ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم “ أَرَى رُؤْيَاكُمْ قَدْ تَوَاطَأَتْ فِي السَّبْعِ الأَوَاخِرِ، فَمَنْ كَانَ مُتَحَرِّيَهَا فَلْيَتَحَرَّهَا فِي السَّبْعِ الأوَاخِرِ ”.
ইব্নু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – এর কতিপয় সাহাবীকে স্বপ্নের মাধ্যমে রমযানের শেষের সাত রাত্রে লাইলাতুল কদর দেখানো হয়। (এ শুনে) আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আমাকেও তোমাদের স্বপ্নের অনুরূপ দেখানো হয়েছে। (তোমাদের দেখা ও আমার দেখা) শেষ সাত দিনের ক্ষেত্রে মিলে গেছে। অতএব যে ব্যক্তি এর সন্ধান প্রত্যাশী, সে যেন শেষ সাত রাতে সন্ধান করে।
(সহিহ বুখারী, হাদিস নং ২০১৫)
অপর এক হাদীসে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
عَنْ عَائِشَةَ، – رضى الله عنها – قَالَتْ قَالَ رَسُولُ – تَحَرَّوْا لَيْلَةَ الْقَدْرِ فِي الْعَشْرِ الأوَاخِرِ مِنْ رَمَضَانَ
হযরত আয়িশা(রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ রমাযান মাসের শেষ দশ দিনে তোমরা কদরের রাত অন্বষণ কর।
(সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ২৬৬৬)
রমজানের শেষ দশকে ইতেকাফ করাঃ
حَدَّثَنَا مُوسَى، قَالَ حَدَّثَنَا هَمَّامٌ، عَنْ يَحْيَى، عَنْ أَبِي سَلَمَةَ، قَالَ انْطَلَقْتُ إِلَى أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ فَقُلْتُ أَلاَ تَخْرُجُ بِنَا إِلَى النَّخْلِ نَتَحَدَّثْ فَخَرَجَ. فَقَالَ قُلْتُ حَدِّثْنِي مَا، سَمِعْتَ مِنَ النَّبِيِّ، صلى الله عليه وسلم فِي لَيْلَةِ الْقَدْرِ. قَالَ اعْتَكَفَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَشْرَ الأُوَلِ مِنْ رَمَضَانَ، وَاعْتَكَفْنَا مَعَهُ، فَأَتَاهُ جِبْرِيلُ فَقَالَ إِنَّ الَّذِي تَطْلُبُ أَمَامَكَ. فَاعْتَكَفَ الْعَشْرَ الأَوْسَطَ، فَاعْتَكَفْنَا مَعَهُ، فَأَتَاهُ جِبْرِيلُ فَقَالَ إِنَّ الَّذِي تَطْلُبُ أَمَامَكَ. فَقَامَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم خَطِيبًا صَبِيحَةَ عِشْرِينَ مِنْ رَمَضَانَ فَقَالَ “ مَنْ كَانَ اعْتَكَفَ مَعَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَلْيَرْجِعْ، فَإِنِّي أُرِيتُ لَيْلَةَ الْقَدْرِ، وَإِنِّي نُسِّيتُهَا، وَإِنَّهَا فِي الْعَشْرِ الأَوَاخِرِ فِي وِتْرٍ، وَإِنِّي رَأَيْتُ كَأَنِّي أَسْجُدُ فِي طِينٍ وَمَاءٍ ”. وَكَانَ سَقْفُ الْمَسْجِدِ جَرِيدَ النَّخْلِ وَمَا نَرَى فِي السَّمَاءِ شَيْئًا، فَجَاءَتْ قَزْعَةٌ فَأُمْطِرْنَا، فَصَلَّى بِنَا النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم حَتَّى رَأَيْتُ أَثَرَ الطِّينِ وَالْمَاءِ عَلَى جَبْهَةِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَأَرْنَبَتِهِ تَصْدِيقَ رُؤْيَاهُ.
আবূ সালামা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:তিনি বলেন, আমি আবূ সা’ঈদ খুদ্রী (রাঃ)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললাম, আমার সঙ্গে খেজুর বাগানে চলুন, (হাদীস সংক্রান্ত) আলাপ আলোচনা করব। তিনি বেরিয়ে আসলেন। আবূ সালামা (রাঃ) বলেন, আমি তাকে বললাম, ‘লাইলাতুল কাদ্র’ সম্পর্কে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে যা শুনেছেন, তা আমার নিকট বর্ণনা করুন। তিনি বললেন, আল্লাহ্র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রমযানের প্রথম দশ দিন ‘ইতিকাফ করলেন। আমরাও তাঁর সঙ্গে ই’তিকাফ করলাম। জিবরীল (আঃ) এসে বললেন, আপনি যা তালাশ করছেন, তা আপনার সামনে রয়েছে। অতঃপর তিনি মধ্যবর্তী দশদিন ই’তিকাফ করলেন, আমরাও তাঁর সঙ্গে ই’তিকাফ করলাম। পুনরায় জিবরীল (আঃ) এসে বললেন, আপনি যা তালাশ করছেন, তা আপনার সামনে রয়েছে। অতঃপর রমযানের বিশ তারিখ সকালে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খুত্বা দিতে দাঁড়িয়ে বললেন, যারা আল্লাহ্র নবীর সঙ্গে ই’তিকাফ করেছেন, তারা যেন ফিরে আসেন (আবার ই’তিকাফ করেন) কেননা, আমাকে স্বপ্নে ‘লাইলাতুল কাদ্র’ অবগত করানো হয়েছে। তবে আমাকে তা (নির্ধারিত তারিখটি) ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। নিঃসন্দেহে তা শেষ দশ দিনের কোন এক বেজোড় তারিখে। স্বপ্নে দেখলাম যেন আমি কাদা ও পানির উপর সিজদা করছি। তখন মসজিদের ছাদ খেজুরের ডাল দ্বারা নির্মিত ছিল। আমরা আকাশে কোন কিছুই (মেঘ) দেখিনি, একখণ্ড হালকা মেঘ আসল এবং আমাদের উপর (বৃষ্টি) বর্ষিত হল। নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের নিয়ে সালাত আদায় করলেন। এমন কি আমি আল্লাহ্র রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কপাল ও নাকের অগ্রভাগে পানি ও কাদার চিহ্ন দেখতে পেলাম। এভাবেই তাঁর স্বপ্ন সত্যে রূপ লাভ করল।
(সহিহ বুখারী, হাদিস নং-৮১৩)
রমজানের শেষ দশকে বেশি বেশি ইবাদত করার বিষয়টি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত এবং অসংখ্য হাদীসে পাওয়া যায়।একটি হাদিসে উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে বর্ণনা করে বলেনঃ
كَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم إِذَا دَخَلَ الْعَشْرُ شَدَّ مِئْزَرَهُ، وَأَحْيَا لَيْلَهُ، وَأَيْقَظَ أَهْلَهُ.
যখন রমযানের শেষ দশক আসত তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর লুঙ্গি কষে নিতেন (বেশী বেশী ইবাদতের প্রস্তুতি নিতেন) এবং রাত্র জেগে থাকতেন ও পরিবার-পরিজনকে জাগিয়ে দিতেন।
(সহিহ বুখারী, হাদিস নং ২০২৪ সুনানে আবু দাউদ হাদিস নং১৩৭৬,সুনানে নাসাঈ হাদিস নং ১৬৩৯)
এছাড়াও বিভিন্ন হাদিসের মধ্যে অসংখ্য ফজিলতের কথা উল্লেখ রয়েছে। তাই-
প্রতিটি মুমিনের জন্য কর্তব্য হলো রমজান মাসের শেষ দশকের সময়গুলো অযথা নষ্ট না করে এবাদত বন্দেগিতে আত্ম নিয়োগ করা। আল্লাহ তা’আলা সকলকে এ সময়ে বেশি বেশি নেক আমল করার তৌফিক দান করেন এবং সকলকে লাইলাতুল কদরের ফযিলত অর্জ ন করার তৈফিক দান করুন।
নামঃ মুহাম্মদ সালমান হুসাইন।
ইফতাঃ ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ, জামিয়া শারইয়্যাহ মালিবাগ।
উলুমুল হাদিসঃ ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষ, মাদ্রাসা বাইতুল উলুম ঢালকানগর।
তাকমীলঃ ২০১৫ শিক্ষাবর্ষ, মাদ্রাসা বাইতুল উলুম ঢালকানগর।
হিফজঃ ২০০৭ শিক্ষাবর্ষ, জামিয়া আরাবিয়া হাজী ইউনুস কওমী মাদ্রাসা।
সিনিয়র শিক্ষকঃ হাজিপাড়া কাশীপুর নারায়ণগঞ্জ
কপিরাইট © ২০২২ ইসলামী শরীয়াহ্ অর্গানাইজেশন. সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত. ব্যবহারবিধি ও স্বত্বাধিকার আইন.