
সূচিপত্র
শরিকানা কুরবানী সংশ্লিষ্ট কিছু গুরুত্বপূর্ণ মাসয়ালা
একজন ব্যক্তি যেমনিভাবে একটি কুরবানীর উপযুক্ত উট ,গরু ,ও মহিষ এককভাবে কুরবানী করতে পারে তেমনিভাবে একধিক ব্যাক্তি মিলেও কুরবানী করতে পারে। তাই নিম্ন আমারা এ সংক্রান্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ মাসয়ালা উল্লেখ করব । ইনশাআল্লাহ।
মাসয়ালা ০১ ;
একটি ছাগল,ভেড়া ও ,দুম্বা দ্বারা শুধু একজনই কুরবানী করতে পারে। একাধিক ব্যক্তি এ ধরনের পশু কুরবানী করলে কুরবানীই সহীহ হবে না।
(ফাতাওয়া কাযীখান ৩/৩৪৯ হিদায়া ৪/৮২)
মাসয়ালা ০২ ;
একটি উট ,গরুও মহিষ সর্বোচ্চ সাত জন মিলে কুরবানী করা যাবে ।হাদিস শরীফে এসেছে.
حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ، حَدَّثَنَا مَالِكُ بْنُ أَنَسٍ، عَنْ أَبِي الزُّبَيْرِ، عَنْ جَابِرٍ، قَالَ نَحَرْنَا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بِالْحُدَيْبِيَةِ الْبَدَنَةَ عَنْ سَبْعَةٍ وَالْبَقَرَةَ عَنْ سَبْعَةٍ . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ . وَالْعَمَلُ عَلَى هَذَا عِنْدَ أَهْلِ الْعِلْمِ مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم وَغَيْرِهِمْ وَهُوَ قَوْلُ سُفْيَانَ الثَّوْرِيِّ وَابْنِ الْمُبَارَكِ وَالشَّافِعِيِّ وَأَحْمَدَ وَإِسْحَاقَ . وَقَالَ إِسْحَاقُ يُجْزِئُ أَيْضًا الْبَعِيرُ عَنْ عَشَرَةٍ . وَاحْتَجَّ بِحَدِيثِ ابْنِ عَبَّاسٍ .
জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত; তিনি বলেন; আমরা হুদাইবিয়া নামক জায়গাতে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সাথে একটি উটে সাতজন অংশীদার হয়ে এবং একটি গরুতেও সাতজন অংশীদার হয়ে কুরবানী সম্পন্ন করেছি।
(জামে’ আত-তিরমিজি, হাদিস নং ১৫০২, সুনানে ইবনু মাজাহ ৩১৩২)
নোটঃ
এ হাদীসটিকে আবূ ঈসা হাসান সহীহ্ বলেছেন। এ হাদীস অনুসারে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর অভিজ্ঞ সাহাবী ও অন্যান্য আলিমগণ আমল করেছেন। একই অভিমত সুফিয়ান সাওরী, ইবনুল মুবারাক, শাফিঈ, আহমাদ ও ইসহাকের (সাতজন পর্যন্ত উট-গরুতে অংশীদার হওয়া যায়)।
(ফাতাওয়া কাযিখান ৩/৩৪৯ বাদাডয়েউস সানায়ে ৪/২০৭,২০৮ হিদায়া ৪/৮২)
মাসয়ালা ০৩ ;
সাতজন মিলে কুরবানী করলে সবার অংশ সমান হতে হবে। কারো অংশ এক সপ্তমাংসের কম হতে পারবে না ।যেমন একজনের দেড় ভাগ অন্যজনের আধাভাগ।এমন হলে কোন শরীকেরই কুরবানী হবে না।
(বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৭ হিদায়া ৪/৮১)
মাসয়ালা ০৪ ;
উট ,গরু মহিষ সাতজন বা তার থেকে কমে যেকোন সংখ্যা যেমন দুই, তিন, চার, পাঁচ ও ছয় ভাগের কুরবানী করা জায়েয।
(বাদায়েউস সানায়ে৪/২০৭ হিদায়া ৪/৮১ আহসানুল ফাতাওয়া /৫০৬)
শরীক নির্বাচন;
একাধিক মানুষ একত্রে কুরবানী করতে চাইলে সবপ্রথম আসে শরীক নির্বাচন করা।এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারন কোন শরীকের উদ্দেশ্য খারাপ থাকলে যেমনিভাবে তার নিজের কুরবানী নষ্ট করে তেমনিভাবে অন্যদের কুরবানী ও নষ্ট করে ফেলে । তেমনিভাবে কুরবানী একটি গুরুত্বপূর্ণ ও আবশ্যকীয় ইবাদত ।তাই তা হালাল সম্পদ দ্বারা সম্পন্ন করতে হয়। আর শরীক তখন একাধিক হয় তখন এ বিষয়য়ে আরো যত্নবান হতে হয় ।তাই শরীকী কুরবানীতে আগে শরীকদের ব্যপারে ভালোভাবে খোজ খবর নেওয়া উচিত যাতে কুরবানী সহীহ শুদ্ধ ভাবে আদায় হয়।
মাসয়ালা ০৫ ;
কয়েকজন মিলে কোরবানি করতে চাইলে পশু ক্রয় করার আগেই শরিক নির্বাচন করে নেওয়া উত্তম।
(আল ইখতিয়ার ৫/১৮ মোবাইল শামেলা থেকে গৃহীত)
মাসয়ালা ০৬ ;
কোন কাফের বা অমুসলিমকে শরীক হিসাবে নেওয়া যাবে না।নিলে কারো কুরবানী ই আদায় হবে না ।
মাসয়ালা ০৭ ;
কোরবানির পশু ক্রয় করার সময় যদি শরীক নেওয়ার নিয়ম থাকে তাহলে পরবর্তীতে শরিক নেওয়া যাবে। কিন্তু যদি পশু ক্রয় করার সময় পুরোটাই নিজে কুরবানী করার নিয়ত থাকে তাহলে কুরবানি দাতা ধনী হলে পরবর্তীতে শরিক না নেওয়া উত্তম। তবে শরিক নিতে চাইলে তার জন্য এ সুযোগ রয়েছে। কিন্তু কোরবানি দাতা গরীব হলে এই অবস্থায় পরবর্তীতে সে শরীক নিতে পারবে না।
(ফাতাওয়া বায়্যিনাত ৪/৫৬০)
মাসয়ালা ০৮ ;
এক গরু মহিষ বা উটে নফল, ওয়াজিব,ও মান্নতের কুরবানী করা যাবে। তবে উত্তম হলো সকলের নিয়ত অভিন্ন হওয়া।
(বাদায়েউস সানায়ে৪/২০৯ ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩১৫ ফাতাওয়া কাসেমিয়া ২২/৩৪৯,৩৫৭)
মাসয়ালা ০৯ ;
কোরবানির গরুতে আকিকার নিয়তে কোন ভাগ নিলে কুরবানী ও আদায় হবে আকিকা ও আদায় হবে।
(বিদায়েউস সানায়ে ৫/৭২ আল বাহরুর রায়েক ৬/৮ রদ্দুল মুহতার ৬/৩২২ফাতাওয়া মাহমুদিয়া ১৭/৫১৮)
মাসয়ালা ১০ ;
কুরবানীর পশূতে ওলিমার উদ্দেশ্যে ও অংশ নেওয়া যাবে এতে কুরবানী ও আদায় হবে। তবে কুরবানীর পশুতে আকিকা বা ওলিমা অংশ না নেওয়া ভালো।
(মাবসূত ৪/১৪৪ আর ইনায়া ৮/৪৩৫-৪৩৬আল বাহরুর রায়েক ৬/৮ রদ্দুল মুহতার ৬/৩২২)
মাসায়ালা ১১ ;
কোরবানির পশুতে সুন্নাতে খাৎনা অনুষ্ঠানের জন্য কোন অংশিদার নেওয়া যাবে না । কেননা কোরবানির পশু তাই সকল শরিকের “কুরবাত”বা আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি উদ্দেশ্য হতে হয়। আর যেহেতু সুন্নতে খাতনা করা “কুরবাত” বা ইবাদত হিসেবে প্রমাণিত নয় তাই এ ধরনের ব্যক্তিকে কুরবানির বানানো যাবেনা।
(কিতাবুন নাওয়াঝেল ১৪/৫৩৯)
মাসয়ালা ১২ ;
ছয় শরীক বা এক গরুর সকল শরীক মিলে যদি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নামে কুরবানী করে তাহলে তা সহীহ হবে।
(ফাতাওয়া মাহমুদিয়া ১৭/৪০৫ফাতাওয়া কাসেমিয়া ২২/৩১১)
মাসয়ালা ১৩ ;
কোন গরুর মূল্য যদি তিনটি ভাগে ভাগ করা হয় ,অতঃপর দুই জন পূর্ণ একটি করে অংশ
করে নেয় । এবং বাকী ভাগে অন্য দুইজন অংশিদার হয় তাহলেও উক্ত কুরবানী সহীহ হবে।কারন এখানে মুলত ছয় শরীকে কুরবানী করা হয়েছে ।
(ফতোয়ায় হিন্দিয়া ৫/৩৪৫)
মাসয়ালা ১৪ ;
কুরবানীর পশু জবেহ করার পর নতুন শরীক নেওয়া যাবে না।
(আযিযুল ফতোয়া ৬৮৪)
মাসয়ালা ১৫ ;
গরুর একভাগ চলতি বছরের কুরবানীর নিয়ত করল আর বিগত বছরের কাযা কুরবানীর জন্য বাকী ছয়ভাগ নিজে দিল বা অন্য কোন শরীক দিল তাহলে চলতি বছরের কুরবানী আদায় হয়ে যাবে। আর তারা বিগত বছরের কাতার নিয়ত করেছে তাদের কাযা আদায় হবে না ।আর এ গরুর পুরো গোশত সদকা করে দেওয়া জরুরি। এমনকি চলতি বছরের কুরবানী দাতার ও নিজের অংশ ভক্ষন করতে পারবে না ।
(ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৩৪৯ রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৬)
মাসয়ালা ১৬ ;
শরিকানা কুরবানীতে ওযন করে গোশত বন্টন করতে হবে ।ওজন করা ব্যতীত শুধুমাত্র অনুমান ভিত্তিক বন্টন করা সহীহ নয়।
(আল ইখতিয়ার ৫/১৮ আল জাওহারাতুন নায়্যিরহ ২/৩২৮)
মাসয়ালা ১৭ ;
কুরবানীর পশু জবেহ করার সময় সকল শরীরের উপস্থিত থাকা বা নাম নেওয়া জরুরি নয় । বরং কুরবানীর উদ্দেশ্যে পশু ক্রয় করার দ্বারাই তাদের নিয়ত হয়ে গেছে।
(ফাতাওয়া বায়্যিনাত ৪/৫৫৯)
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে আমল করার তাওফীক দান করুন।
এখানে মন্তব্য করুন
লেখক পরিচিতি
নামঃ মুহাম্মদ সালমান হুসাইন।
ইফতাঃ ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ, জামিয়া শারইয়্যাহ মালিবাগ।
উলুমুল হাদিসঃ ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষ, মাদ্রাসা বাইতুল উলুম ঢালকানগর।
তাকমীলঃ ২০১৫ শিক্ষাবর্ষ, মাদ্রাসা বাইতুল উলুম ঢালকানগর।
হিফজঃ ২০০৭ শিক্ষাবর্ষ, জামিয়া আরাবিয়া হাজী ইউনুস কওমী মাদ্রাসা।
শিক্ষকঃ হাজিপাড়া কাশীপুর নারায়ণগঞ্জ