স্কাইভিউ পার্ক সিটি
শান্তিনগর, ঢাকা-১২১৭
+৮৮০২-৪১০৩২৩৫৩
২৪/৭ গ্রাহক সেবা
admin@islami-sharia.org
আমাদের কাছে বার্তা পাঠান
শান্তিনগর, ঢাকা-১২১৭
২৪/৭ গ্রাহক সেবা
আমাদের কাছে বার্তা পাঠান
সদকাতুল ফিতর আদায় করা ওয়াজিব। একটি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে-
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ فَرَضَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم زَكَاةَ الْفِطْرِ طُهْرَةً لِلصَّائِمِ مِنَ اللَّغْوِ وَالرَّفَثِ وَطُعْمَةً لِلْمَسَاكِينِ مَنْ أَدَّاهَا قَبْلَ الصَّلاةِ فَهِيَ زَكَاةٌ مَقْبُولَةٌ وَمَنْ أَدَّاهَا بَعْدَ الصَّلاةِ فَهِيَ صَدَقَةٌ مِنَ الصَّدَقَاتِ .
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সদাক্বাতুল ফিতর ফরয করেছেন- অশ্লীল কথা ও বেহুদা কাজ হতে (রমাযানের) সওমকে পবিত্র করতে এবং মিসকীনদের খাদ্যের ব্যবস্থার জন্য। যে ব্যক্তি (ঈদের) সলাতের পূর্বে তা আদায় করে সেটা কবুল সদাক্বাহ গণ্য হবে। আর যে ব্যক্তি সলাতের পরে আদায় করে, তা সাধারণ দান হিসেবে গৃহীত হবে।
(সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ১৬০৯)
সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব হওয়ার কয়েকটি শর্ত রয়েছে।যথা
ﺃﻭ ﺻﺎﻋﺎ ﻣﻦ ﺗﻤﺮ ﺃﻭ ﺻﺎﻋﺎ ﻣﻦ ﺷﻌﻴر
নোটঃ
যাকাতের নিসাব ও সদকাতুল ফিতরের নিসাবের পরিমাণ এক হলেও উভয়ের মাঝে কিছু পার্থক্য রয়েছে। যাকাত শুধুমাত্র স্বর্ণ, রুপা, টাকা-পয়সা ও ব্যবসায়ীক পণ্যের হিসাব করতে হয় কিন্তু সদকাতুল ফিতরের ক্ষেত্রে ঐ তিন প্রকার সীমাবদ্ধ নয় বরং অন্যান্য সম্পদ ও গন্য করা হয়।
যাকাত ফরয হওয়ার জন্য নিসাবের মালিক হওয়ার পর চন্দ্রবছর অতিবাহিত হতে হয় কিন্তু সদকাতুল ফিতরের ক্ষেত্রে এক বছর অতিবাহিত হওয়া শর্ত নয় বরং কোন ব্যক্তি যদি ঈদুল ফিতরের দিন সুবহে সাদিকের সময় ঐ পরিমান সম্পদের মালিক হয় তাহলে তার উপর ও সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব হয়ে যায়।
ِ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ ـ رضى الله عنهما ـ قَالَ فَرَضَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم زَكَاةَ الْفِطْرِ صَاعًا مِنْ تَمْرٍ، أَوْ صَاعًا مِنْ شَعِيرٍ عَلَى الْعَبْدِ وَالْحُرِّ، وَالذَّكَرِ وَالأُنْثَى، وَالصَّغِيرِ وَالْكَبِيرِ مِنَ الْمُسْلِمِينَ، وَأَمَرَ بِهَا أَنْ تُؤَدَّى قَبْلَ خُرُوجِ النَّاسِ إِلَى الصَّلاةِ.
ইব্নু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, প্রত্যক গোলাম, আযাদ, পুরুষ, নারী, প্রাপ্ত বয়স্ক, অপ্রাপ্ত বয়স্ক মুসলিমের উপর আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সদকাতুল ফিতর হিসেবে খেজুর হোক অথবা যব হোক, এক সা’ পরিমাণ আদায় করা ফরয করেছেন এবং লোকজনের ঈদের সালাতে বের হবার পূর্বেই তা আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন।
(সহিহ বুখারী, হাদিস নং ১৫০৩)
খেজুর ,জব ও কিসমিস দিয়ে আদায় করলে এক “সা” বা ৩ কেজী ১৮৪.২৭২ গ্রাম আর গম বা আটা দিয়ে আদায় করলে ১ কেজি ৫৯২.১৩৬ গ্রাম বা তার মূল্য আদায় করতে হবে।
নোটঃ
উক্ত হিসাবের ভিত্তি হলো এক সা ১০৪০ দিরহাম, একদিরহাম ২৫.২ রতি।
অতঃএব ১০৪০ দিরহাম ১০৪০ গুন ২৫.২
২৬২০৮ রতি, এক ৯৬ রতিতে হয় একভরি বা তোলা অতঃএব ২৬২০৮ রতিতে হয় ২৬২০৮/৯৬২৭৩ ভরি বা তোলা ১ ভরিতে সমান১১.৬৬৪গ্রাম অতঃএব ২৭৩ ভরি সমান ২৭৩ এবং ১১.৬৬৪, ৩ কেজি ১৮৪.২৭২ গ্রাম। সুতরাং ১সা সমান ৩১৮৪.২৭২ গ্রাম অআর নিসফে সা (এক সা এর অর্ধেক)হলো ১কেজি ৫৯২.১৩৬ গ্রাম।
আমাদের দেশের কিছু কিছু ভাইদেরকে বলতে শোনা যাচ্ছে যে “সদকাতুল ফিতর টাকা দিয়ে আদায় করলে আদায় হবে না,” কিন্তু এসকল ভায়েরা এ মাসয়ালা বলার পূর্বে যদি সালাফের আমল ও কিতাবাদি একটু মুতালা করে নিতেন তাহলে এই বাস্তব বিরোধী দাবী হয়ত করতেন না। (আল্লাহ মাফ করুন) শরীয়তের কোনমাসয়ালা বলার ক্ষেত্রে পূর্ণ সতর্কতা গ্রহন করা ব্যতীত এবং নিজের মুতালা কম থাকা সত্ত্বেও কিভাবে তারা সালাফ থেকে বর্ণিত ও ফুকাহায়ে কেরামের সমর্থিত মতকে অস্বীকার করতে পারেন।যেহেতু এ বিষয়টি তাদের কাছে অস্পষ্ট তাই উক্ত মাসয়ালাটা একটু বিস্তারিত আলোচনা করা ইচ্ছা পোষন করছি। আল্লাহ সহায় হোন।
হাদিস ও সালাফের আমল সন্নেবেশীত গ্রন্থ
مصنف ابن ابي شيبة
ﻓﻲ ﺇﻋﻄﺎء اﻟﺪﺭاﻫﻢ ﻓﻲ ﺯﻛﺎﺓ اﻟﻔﻄﺮ
(সদকাতুল ফিতরে টাকা দেওয়া)নামে সতন্ত একটি পরিচ্ছেদ উল্লেখ করেছেন।
ﺣﺪﺛﻨﺎ ﺃﺑﻮ ﺃﺳﺎﻣﺔ، ﻋﻦ ﺯﻫﻴﺮ، ﻗﺎﻝ: ﺳﻤﻌﺖ ﺃﺑﺎ ﺇﺳﺤﺎﻕ، ﻳﻘﻮﻝ: ﺃﺩﺭﻛﺘﻬﻢ ﻭﻫﻢ ﻳﻌﻄﻮﻥ ﻓﻲ ﺻﺪﻗﺔ ﺭﻣﻀﺎﻥ اﻟﺪﺭاﻫﻢ ﺑﻘﻴﻤﺔ اﻟﻄﻌﺎﻡ
হযরত যুহাইর রহমাতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণিত তিনি বলেন আমি আবু ইসহাক রহমাতুল্লাহ আলাইহি থেকে শুনেছি,আমি সাহাবায়ে কেরাম রাযিআল্লাহু আনহুমদেরকে এই অবস্থায় পেয়েছিযে, তারা রমজান মাসে সদকাতুল ফিতরে খাবারের পরিবর্তে টাকা আদায় করেছেন।
(মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা হাদিস নং ১০৩৭১)
প্রখ্যাত তাবেয়ি হযরত হাসান বসরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন
ﻋﻦ اﻟﺤﺴﻦ، ﻗﺎﻝ: ﻻ ﺑﺄﺱ ﺃﻥ ﺗﻌﻄﻲ اﻟﺪﺭاﻫﻢ ﻓﻲ ﺻﺪﻗﺔ اﻟﻔﻄﺮ
টাকা দিয়ে সদকাতুল ফিতর আদায় করায় কোনসমস্যা নেই ।
(মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা হাদিস নং ১০৩৭০)
হযরত উমর ইবনে আব্দুল আজিজ রহমাতুল্লাহি আলাইহি তার চিঠিতে লিখেছেন
ﺣﺪﺛﻨﺎ ﻭﻛﻴﻊ، ﻋﻦ ﻗﺮﺓ، ﻗﺎﻝ: ﺟﺎءﻧﺎ ﻛﺘﺎﺏ ﻋﻤﺮ ﺑﻦ ﻋﺒﺪ اﻟﻌﺰﻳﺰ ﻓﻲ ﺻﺪﻗﺔ اﻟﻔﻄﺮ ﻧﺼﻒ ﺻﺎﻉ ﻋﻦ ﻛﻞ ﺇﻧﺴﺎﻥ ﺃﻭ ﻗﻴﻤﺘﻪ
কুররা রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন আমাদের নিকট ওমর ইবনে আব্দুল আজিজ রহমাতুল্লাহি আলাইহি ওয়াসাল্লামের চিঠি এসেছে ।তাতে লেখা ছিল সদকাতুল ফিতর হলো নিসফে সা বা তার মূল্য আদায় করা।
(মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা হাদীস নং ১০৩৬৯)
আর ইমাম বায়হাকী (রহ.) তার রচিত কিতাব সুনানুল কুবরা-৪/১৮৯ এর মাঝে এই ভাবে অনুচ্ছেদ স্থাপন করেন যে–
بَابُ مَنْ أَجَازَ أَخْذَ الْقِيَمِ فِي الزَّكَوَاتِ
অথাৎ এই অনুচ্ছেদ হলো টাকা দ্বারা যাকাত আদায় করা অনুমোদিত।
তাছাড়াও রাসূল (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম) এর যুগেও زَكَاةَ الفِطْرِ ও زكوة ইত্যাদি টাকা দ্বারা আদায় করা হতো। তার কিছু প্রমাণ নিম্মে পেশ করা হলো-
وَقَالَ طَاوُسٌ: قَالَ مُعَاذٌ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ لِأَهْلِ اليَمَنِ: «ائْتُونِي بِعَرْضٍ ثِيَابٍ خَمِيصٍ – أَوْ لَبِيسٍ – فِي الصَّدَقَةِ مَكَانَ الشَّعِيرِ وَالذُّرَةِ أَهْوَنُ عَلَيْكُمْ وَخَيْرٌ لِأَصْحَابِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالْمَدِينَةِ» وَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: وَأَمَّا خَالِدٌ فَقَدِ احْتَبَسَ أَدْرَاعَهُ وَأَعْتُدَهُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ ” وَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «تَصَدَّقْنَ وَلَوْ مِنْ حُلِيِّكُنَّ» فَلَمْ يَسْتَثْنِ صَدَقَةَ الفَرْضِ مِنْ غَيْرِهَا، فَجَعَلَتِ المَرْأَةُ تُلْقِي خُرْصَهَا وَسِخَابَهَا، وَلَمْ يَخُصَّ الذَّهَبَ وَالفِضَّةَ مِنَ العُرُوضِ
[সহীহ বুখারী-২/১১৬]
উল্লেখ্য যে, সাদাকায়ে ফিতর টাকা দ্বারা আদায় করা যাবে এটি ইমাম বুখারী (রহ.) এরও উক্তি-
أَيْ جَوَازُ أَخْذِ الْعَرْضِ وَهُوَ بِفَتْحِ الْمُهْمَلَةِ وَسُكُونِ الرَّاءِ بَعْدَهَا مُعْجَمَةٌ وَالْمُرَادُ بِهِ مَا عَدَا النَّقْدَيْنِ قَالَ بن رَشِيدٍ وَافَقَ الْبُخَارِيُّ فِي هَذِهِ الْمَسْأَلَةِ الْحَنَفِيَّةَ مَعَ كَثْرَةِ مُخَالَفَتِهِ لَهُمْ لَكِنْ قَادَهُ إِلَى ذَلِكَ الدَّلِيلُ ……الخ
আল্লামা ইবনু রাশীদ (রহ.) বলেন, উক্ত মাসয়ালাটির মাঝে ইমাম বুখারী (রহ.) হানাফীদের সহমত পোষন করেছেন….।
[ফাতহুল বারী লি ইবনে হাজার-৩/৩১২]
এ বিষয়ে আহমদ আল গুমারী (রহ.) এর আরবী ভাষায় ১৫০ পৃষ্ঠায়
‘‘تحقيق الامال فى فى اخراج زكوة الفطر بالمال’’
নামে একটি গুরুত্বপূর্ণ পুস্তিকা রচনা করেছেন। যা সকলকে পড়ে রাখা আবশ্যক। (আমার কাছে পুস্তিকাটি রয়েছে কারো প্রয়োজন হলে বলবেন)।
এ বিষয়ে আরো দেখুন-
[বাদায়েউস সানায়ে-২/৯৬৯, আল মাবসুত লিসসারাখসী-৩/১১৩ ইত্যাদি]
রমযান মাস শুরু হওয়ার যেকোন সময়েই তা আদায় করা যায়। তবে উত্তম হলো ঈদুল ফিতরের নামাজের পূর্বেই তা আদায় করা । হাদিসে এসেছেঃ
عَنِ ابْنِ عُمَرَ ـ رضى الله عنهما ـ أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم أَمَرَ بِزَكَاةِ الْفِطْرِ قَبْلَ خُرُوجِ النَّاسِ إِلَى الصَّلاةِ.
(আবদুল্লাহ্) ইব্নু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লোকদেরকে ঈদের সালাতের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার পূর্বেই ফিতর আদায় করার নির্দেশ দেন।
নোটঃ
ঈদুল ফিতরের সালাতের জন্য বের হবার পূর্বেই ফিতরা বন্টন শেষ করা উচিত । ইব্নু আব্বাস হতে বর্ণিত, যাকাতুল ফিতর যে সালাতের পূর্বে আদায় করবে সেটা মকবুল বা গ্রহণযোগ্য। আর যে সালাতের পরে আদায় করবে সেটি সাধারণ সদকার মত।
(আবু দাউদ হাঃ ১৬০৯, ইব্নু মাজাহ হাঃ ১৮২৭, দারাকুতনী, হাকিম, বাইহাকী, বুলূগুল মারাম- সদকাতুল ফিতর অধ্যায়, সহিহ বুখারী, হাদিস নং ১৫০৯)
যেসকল মানুষ যাকাত গ্রহনের যোগ্য তাদের কে দেওয়া যাবে।
আল্লাহ্ তা’আলা আমাদেরকে সকল প্রকার ফেৎনা থেকে বেঁচে থাকার তাওফীক দান করেন। দ্বীন পরিপূর্ণ রুপে বুঝে আমল করার তাওফীক দান করুন। আমীন…!
নামঃ মুহাম্মদ সালমান হুসাইন।
ইফতাঃ ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ, জামিয়া শারইয়্যাহ মালিবাগ।
উলুমুল হাদিসঃ ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষ, মাদ্রাসা বাইতুল উলুম ঢালকানগর।
তাকমীলঃ ২০১৫ শিক্ষাবর্ষ, মাদ্রাসা বাইতুল উলুম ঢালকানগর।
হিফজঃ ২০০৭ শিক্ষাবর্ষ, জামিয়া আরাবিয়া হাজী ইউনুস কওমী মাদ্রাসা।
সিনিয়র শিক্ষকঃ হাজিপাড়া কাশীপুর নারায়ণগঞ্জ
কপিরাইট © ২০২২ ইসলামী শরীয়াহ্ অর্গানাইজেশন. সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত. ব্যবহারবিধি ও স্বত্বাধিকার আইন.