ইসলামী শরীয়তের কিছু ইবাদাত আছে ঐচ্ছিক করলে সাওয়াব আছে না করলে গোনাহ নেই।এসকল ক্ষেত্রে একজন‌ মুমিনের জন্য কর্তব্য হল উক্ত ইবাদত গুলো সম্পন্ন করে আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য অর্জন করা। আর কিছু ইবাদত রয়েছে যেগুলো কোন ঐছিক ইবাদত নয় বরং আবশ্যকীয় বিধান যা পালন না করার কোন সুযোগ বা অবকাশ নেই। যেমন নামাজ, রোজা হজ যাকাত,(ফরজ অংশ).
হজ্জের গুরুত্ব ও ফজিলত

সূচিপত্র

হজ্জের গুরুত্ব ও ফজিলত

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

মাওলানা সালমান হুসাইন (গোপালগঞ্জ)
ইসলামী শরীয়তের কিছু ইবাদাত আছে ঐচ্ছিক করলে সাওয়াব আছে না করলে গোনাহ নেই।এসকল ক্ষেত্রে একজন‌ মুমিনের জন্য কর্তব্য হল উক্ত ইবাদত গুলো সম্পন্ন করে আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য অর্জন করা। আর কিছু ইবাদত রয়েছে যেগুলো কোন ঐছিক ইবাদত নয় বরং আবশ্যকীয় বিধান যা পালন না করার কোন সুযোগ বা অবকাশ নেই। যেমন নামাজ, রোজা হজ যাকাত,(ফরজ অংশ).
কিন্তু বর্তমানে কিছু কিছু মানুষের আচারন বিধি খেয়াল করলে দেখা যায় যেন তারা উভয় প্রকারের ইবাদতকে সমান মনে করে অর্থাৎ সবকিছুই ঐচ্ছিক মনে করে। যার দরুন ফরজ ইবাদতের ও নিজের ইচ্ছার উপর ছেড়ে দেয় । আস্তে আস্তে তার দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে করতে ত্রুটি করার বিষয়টি অনুভূতি থেকে ও হারিয়ে ফেলে। এমনকি এই অনুভুতি ও থাকে না। তাই সর্বপ্রথম একজন সচেতন মুসলমানের জন্য করনীয় হলো যখন কোন ইবাদাত সামনে আসে প্রথমেই নির্ণয় করে নেওয়া যে এটা কোন‌ প্রকারের ইবাদাত ।যদি আবশ্যকীয় বিধান হয় তাহলে নিজেকে প্রথম থেকেই এভাবে প্রস্তুত করে নেওয়া যেন ইবাদতে কোন প্রকার ত্রুটি না হয়। কোন ভাবেই ইবাদত যেন ছুটে না যায়।আর যদি ঐচ্ছিক অংশ হয় তাহলে তা পালনে যত্নবান হওয়া উচিত। আমাদের মূল আলোচ্য বিষয় হজের বিধান অকাট্য ও ফরযকৃত বিধানের অন্তর্ভুক্ত। কুরআন, হাদীস দ্বারা হজ্জের অকাট্যতা ও আবশ্যকীয়তা প্রমানিত এবং উম্মতের ইজমা দ্বারা ও এর আবশ্যকীয়া সমর্থিত। নিম্নে আমরা সেসকল আয়াত ও হাদীস উল্লেখ করছি;

হজ্জ ইসলামের মৌলিক পাঁচ স্তম্ভ বা রকোনের অন্যতম রোকন।

বান্দার উপর ফরয বা আবশ্যকীয় বিধান।(ঐছিক নয়) ।পবিত্র কুরআনুল কারীমে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেনঃ

و لله على الناس حج البيت من استطاع اليه سبيلا ومن كفر فإن الله غني حميد

আর যারা এই ঘরে(বাইতুল্লাহে)যাওয়ার সমর্থ রাখে তাদের জন্য অবশ্যকীয় হলো বা ফরজ হলো এ ঘরের হজ আদায় করা
(সূরা আল-ইমরান, আয়াত নং-৯৭)

প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ

عَنِ ابْنِ عُمَرَ ـ رضى الله عنهما ـ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بُنِيَ الإسْلامُ عَلَى خَمْسٍ شَهَادَةِ أَنْ لاإِلَهَ إِلا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ، وَإِقَامِ الصَّلاةِ، وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ، وَالْحَجِّ، وَصَوْمِ رَمَضَانَ ‏

ইবন ‘উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেন,
ইসলামের স্তম্ভ হচ্ছে পাঁচটি।

  • . আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোন উপাস্য নেই এবং নিশ্চয়ই মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর রসূল-এ কথার সাক্ষ্য প্রদান করা।
  • ২. সলাত কায়িম করা।
  • ৩. যাকাত আদায় করা।
  • ৪. হাজ্জ সম্পাদন করা এবং
  • ৫. রমযানের সিয়ামব্রত পালন করা (রোজা রাখা)।
    (৪৫১৪; মুসলিম ১/৫ হাঃ ১৬, আহমাদ ৬০২২, ৬৩০৯, আধুনিক প্রকাশনীঃ ৭, ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ৭, সহিহ বুখারী, হাদিস নং-৮)

عَنْ عَلِيٍّ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم “مَنْ مَلَكَ زَادًا وَرَاحِلَةً تُبَلِّغُهُ إِلَى بَيْتِ اللَّهِ وَلَمْ يَحُجَّ فَلا عَلَيْهِ أَنْ يَمُوتَ يَهُودِيًّا أَوْ نَصْرَانِيًّا وَذَلِكَ أَنَّ اللَّهَ يَقُولُ فِي كِتَابِهِ‏وَلِلَّهِ عَلَى النَّاسِ حِجُّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيلا قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ غَرِيبٌ ‏.‏

আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন ব্যক্তি আল্লাহ্ তা’আলার ঘর পর্যন্ত পৌছার মত সম্বল ও বাহনের অধিকারী হওয়ার পরও যদি হাজ্জ না করে তবে সে ইয়াহুদী হয়ে মারা যাক বা নাসারা হয়ে মারা যাক তাতে (আল্লাহ তা’আলার) কোন ভাবনা নেই। কারণ আল্লাহ তা’আলা তার কিতাবে বলেনঃ “মানুষের মধ্যে যার সেখানে যাবার সামর্থ্য আছে, আল্লাহ তা’আলার উদ্দেশে ঐ ঘরের হাজ্জ করা তার অবশ্য কর্তব্য”।
(সূরাঃ আল-ইমরান – ৯৭) জামে’ আত-তিরমিজি, হাদিস নং ৮১২ মিশকাত (২৫২১), তা’লীকুর রাগীব, ২/১৩৪)

নোট;
উক্ত হাদিস টিকে আল্লামা শাওকানী রহমাতুল্লাহি হাসান বলেছেন।

হজ্জের ফজিলত

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ سُئِلَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم أَيُّ الأَعْمَالِ أَفْضَلُ قَالَ إِيمَانٌ بِاللهِ وَرَسُولِهِ قِيلَ ثُمَّ مَاذَا قَالَ جِهَادٌ فِي سَبِيلِ اللهِ قِيلَ ثُمَّ مَاذَا قَالَ حَجٌّ مَبْرُورٌ

আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- কে জিজ্ঞেস করা হলো, সর্বোত্তম আমল কোনটি? তিনি বললেনঃ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আনা। জিজ্ঞেস করা হল , অতঃপর কোনটি? তিনি বললেনঃ আল্লাহর পথে জিহাদ করা। জিজ্ঞেস করা হল, অতঃপর কোনটি? তিনি বলেনঃ হজ্জ-ই-মাবরূর (মাকবূল হজ্জ)।
(সহিহ বুখারী, হাদিস নং ১৫১৯)

অপর এক হাদিসে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ

حَدَّثَنَا آدَمُ حَدَّثَنَا شُعْبَةُ حَدَّثَنَا سَيَّارٌ أَبُو الْحَكَمِ قَالَ سَمِعْتُ أَبَا حَازِمٍ قَالَ سَمِعْتُ أَبَا هُرَيْرَةَ قَالَ سَمِعْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ مَنْ حَجَّ للهِ÷ فَلَمْ يَرْفُثْ وَلَمْ يَفْسُقْ رَجَعَ كَيَوْمِ وَلَدَتْهُ أُمُّهُ

আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)- কে বলতে শুনেছিঃ যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ্জ করলো এবং অশালীন কথাবার্তা ও গুনাহ হতে বিরত রইল, সে ঐ দিনের মত নিষ্পাপ হয়ে হজ্জ হতে ফিরে আসবে যেদিন তার মা জন্ম দিয়েছিল।
(সহিহ বুখারী, হাদিস নং ১৫২১)

অন্য এক হাদিসে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ

، عَنْ عُمَرَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ تَابِعُوا بَيْنَ الْحَجِّ وَالْعُمْرَةِ فَإِنَّ الْمُتَابَعَةَ بَيْنَهُمَا تَنْفِي الْفَقْرَ وَالذُّنُوبَ كَمَا يَنْفِي الْكِيرُ خَبَثَ الْحَدِيدِ ‏”‏ ‏.‏

হযরত উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:মহানবী (সাল্লালাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ তোমরা ধারাবাহিকভাবে হজ্জ ও উমরাহ আদায় করো। কেননা এ দু’টি ধারাবাহিকভাবে আদায় করলে তা দারিদ্র ও গুনাহ দূরীভুত করে, যেমন হাপর লোহার মরিচা দূর করে।
(সুনানে নাসাঈ, হাদিস নং-২৮৮৩)

অপর এক হাদিসে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ

، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” الْحَجَّةُ الْمَبْرُورَةُ: لَيْسَ لَهَا جَزَاءٌ إِلَّا الْجَنَّةُ، وَالْعُمْرَةُ إِلَى الْعُمْرَةِ كَفَّارَةٌ لِمَا بَيْنَهُمَا “

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ ‘মাবরূর’ (কবুল হওয়া) হজ্জের জন্য জান্নাত ব্যতীত কোন প্রতিদান নেই। আর এক উমরা অন্য উমরার মধ্যবর্তী সময়ের জন্য গুনাহর কাফফারা হয়।
(সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ২৬২২)

হজ্জ জীবনে একবার ফরজ হয়;

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: خَطَبَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ النَّاسَ، فَقَالَ: إِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ، قَدْ فَرَضَ عَلَيْكُمُ الْحَجَّ» فَقَالَ رَجُلٌ: فِي كُلِّ عَامٍ؟ فَسَكَتَ عَنْهُ حَتَّى أَعَادَهُ ثَلَاثًا، فَقَالَ: «لَوْ قُلْتُ نَعَمْ، لَوَجَبَتْ، وَلَوْ وَجَبَتْ، مَا قُمْتُمْ بِهَا، ذَرُونِي مَا تَرَكْتُكُمْ، فَإِنَّمَا هَلَكَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ بِكَثْرَةِ سُؤَالِهِمْ، وَاخْتِلَافِهِمْ عَلَى أَنْبِيَائِهِمْ، فَإِذَا أَمَرْتُكُمْ بِالشَّيْءِ فَخُذُوا بِهِ مَا اسْتَطَعْتُمْ، وَإِذَا نَهَيْتُكُمْ عَنْ شَيْءٍ، فَاجْتَنِبُوهُ

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত; তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একবার লোকদের সামনে খুতবা দিলেন। তিনি বললেনঃ মহান মহিয়ান আল্লাহ্ তা’আলা তোমাদের ওপর হজ্জ ফরয করেছেন, তখন এক ব্যক্তি বললোঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ্! (তা কি) প্রতি বছরে? তিনি (রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)) তার উত্তর দেয়া থেকে নীরব রইলেন। লোকটি তিনবার এর পুনরাবৃত্তি করলো। পরে তিনি (রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)) বললেনঃ যদি আমি বলতাম, হ্যাঁ, তা হলে অবশ্যই তা (প্রতি বছরের জন্য) ফরয হয়ে যেতো। আর যদি ফরয হয়েই যেতো, তাহলে তোমরা তা আদায় করতে পারতে না। আমি যা বলি তা বলতে দাও, (প্রশ্ন করে সহজ কাজকে জটিল করো না।) কেননা তোমাদের পূর্বে যারা ছিল তারা অধিক প্রশ্ন করা এবং তাদের নবীদের সাথে মতবিরোধের কারণে ধ্বংস হয়েছে। আমি যখন তোমাদেরকে কোন কাজের আদেশ দেই তখন তা তোমরা সাধ্যানুযায়ী পালন করো। আর যখন কোন কাজ করতে নিষেধ করি, তখন তা পরিত্যাগ করো।
(সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ২৬১৯)

অপর এক হাদীসে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পূর্ববর্তী গোনাহ মাফের মাধ্যম হিসেবে আখ্যায়িত করে ইরশাদ করেছেন

، عَنِ ابْنِ شَمَاسَةَ الْمَهْرِيِّ، قَالَ حَضَرْنَا عَمْرَو بْنَ الْعَاصِ وَهُوَ فِي سِيَاقَةِ الْمَوْتِ ‏.‏ فَبَكَى طَوِيلاً وَحَوَّلَ وَجْهَهُ إِلَى الْجِدَارِ فَجَعَلَ ابْنُهُ يَقُولُ يَا أَبَتَاهُ أَمَا بَشَّرَكَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بِكَذَا أَمَا بَشَّرَكَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بِكَذَا قَالَ فَأَقْبَلَ بِوَجْهِهِ ‏.‏ فَقَالَ إِنَّ أَفْضَلَ مَا نُعِدُّ شَهَادَةُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ إِنِّي قَدْ كُنْتُ عَلَى أَطْبَاقٍ ثَلاَثٍ لَقَدْ رَأَيْتُنِي وَمَا أَحَدٌ أَشَدَّ بُغْضًا لِرَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم مِنِّي وَلاَ أَحَبَّ إِلَىَّ أَنْ أَكُونَ قَدِ اسْتَمْكَنْتُ مِنْهُ فَقَتَلْتُهُ فَلَوْ مُتُّ عَلَى تِلْكَ الْحَالِ لَكُنْتُ مِنْ أَهْلِ النَّارِ فَلَمَّا جَعَلَ اللَّهُ الإِسْلاَمَ فِي قَلْبِي أَتَيْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم فَقُلْتُ ابْسُطْ يَمِينَكَ فَلأُبَايِعْكَ ‏.‏ فَبَسَطَ يَمِينَهُ – قَالَ – فَقَبَضْتُ يَدِي ‏.‏ قَالَ ‏”‏ مَا لَكَ يَا عَمْرُو ‏” قَالَ قُلْتُ أَرَدْتُ أَنْ أَشْتَرِطَ ‏.‏ قَالَ ‏”‏ تَشْتَرِطُ بِمَاذَا ‏”‏ ‏.‏ قُلْتُ أَنْ يُغْفَرَ لِي ‏ قَالَ “أَمَا عَلِمْتَ أَنَّ الإِسْلاَمَ يَهْدِمُ مَا كَانَ قَبْلَهُ وَأَنَّ الْهِجْرَةَ تَهْدِمُ مَا كَانَ قَبْلَهَا وَأَنَّ الْحَجَّ يَهْدِمُ مَا كَانَ قَبْلَهُ ‏ وَمَا كَانَ أَحَدٌ أَحَبَّ إِلَىَّ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَلاَ أَجَلَّ فِي عَيْنِي مِنْهُ وَمَا كُنْتُ أُطِيقُ أَنْ أَمْلأَ عَيْنَىَّ مِنْهُ إِجْلاَلاً لَهُ وَلَوْ سُئِلْتُ أَنْ أَصِفَهُ مَا أَطَقْتُ لأَنِّي لَمْ أَكُنْ أَمْلأُ عَيْنَىَّ مِنْهُ وَلَوْ مُتُّ عَلَى تِلْكَ الْحَالِ لَرَجَوْتُ أَنْ أَكُونَ مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ ثُمَّ وَلِينَا أَشْيَاءَ مَا أَدْرِي مَا حَالِي فِيهَا فَإِذَا أَنَا مُتُّ فَلاَ تَصْحَبْنِي نَائِحَةٌ وَلاَ نَارٌ فَإِذَا دَفَنْتُمُونِي فَشُنُّوا عَلَىَّ التُّرَابَ شَنًّا ثُمَّ أَقِيمُوا حَوْلَ قَبْرِي قَدْرَ مَا تُنْحَرُ جَزُورٌ وَيُقْسَمُ لَحْمُهَا حَتَّى أَسْتَأْنِسَ بِكُمْ وَأَنْظُرَ مَاذَا أُرَاجِعُ بِهِ رُسُلَ رَبِّي ‏.‏

ইবনু শামাসাহ্‌ আল মাহ্‌রী (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ আমরা ‘আমর ইবনু ‘আস (রাঃ)-কে মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে দেখতে উপস্থিত হলাম। তখন তিনি দেয়ালের দিকে মুখ করে অনেকক্ষণ কাঁদছিলেন। তাঁর পুত্র তাঁকে তাঁর সম্পর্কে রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রদত্ত বিভিন্ন সুসংবাদের উল্লেখ পূর্বক সান্ত্বনা দিচ্ছে যে, আব্বা! রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি আপনাকে অমুক সুসংবাদ দেননি? রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি আপনাকে অমুক সুসংবাদ দেননি? রাবী বলেন, তখন তিনি পুত্রের দিকে মুখ ফিরালেন এবং বললেন, আমার সর্বোৎকৃষ্ট পাথেয় হচ্ছে “লা-ইলা-হা ইল্লাল্ল-হু মুহাম্মাদুর রসূলুল্ল-হ” এ কালিমার সাক্ষ্য দেয়া। আর আমি অতিক্রম করেছি আমার জীবনের তিনটি পর্যায়। এক সময় তো আমি এমন ছিলাম যে, রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর বিরুদ্ধাচরণে আমার চেয়ে কঠোরতর আর কেউই ছিল না। সে সময়ে রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে কব্জায় পেয়ে হত্যা করা ছিল আমার সবচাইতে প্রিয় ভাবনা। যদি সে অবস্থায় আমার মৃত্যু হত তবে নিশ্চিত আমাকে জাহান্নামে যেতে হত। এরপর আল্লাহ যখন আমার অন্তরে ইসলামের অনুরাগ সৃষ্টি করে দিলেন, তখন আমি রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দরবারে উপস্থিত হয়ে অনুরোধ জানালাম যে, আপনার ডান হাত বাড়িয়ে দিন, আমি বাই’আত করতে চাই। রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর ডান হাত বাড়িয়ে দিলেন, তখন আমি আমার হাত টেনে নিলাম। রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘আমর, কী ব্যাপার? বললাম, পূর্বে আমি শর্ত করে নিতে চাই। রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিজ্ঞেস করলেন, কী শর্ত করবে? আমি উত্তর করলাম, আল্লাহ যেন আমার সব গুনাহ মাফ করে দেন। রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘আম্‌র! তুমি কি জান না যে, ইসলাম পূর্ববর্তী সকল অন্যায় মিটিয়ে দেয়। আর হিজরত পূর্ববর্তী সকল অন্যায় মিটিয়ে দেয়? আর হাজ্জ পূর্ববর্তী সকল অন্যায় মিটিয়ে দেয়? ‘আমর বলেন, এ পর্যায়ে আমার অন্তরে রসূলুল্লাহ্‌ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অপেক্ষা বেশি প্রিয় আর কেউ ছিল না। আমার চোখে তিনি অপেক্ষা মহান আর কেউ নেই। অপরিসীম শ্রদ্ধার কারণে আমি তাঁর প্রতি চোখভরে তাকাতেও পারতাম না। আজ যদি আমাকে তাঁর দৈহিক আকৃতির বর্ণনা করতে বলা হয় তবে আমার পক্ষে তা সম্ভব নয়। কারণ চোখ ভরে আমি কখনই তাঁর প্রতি তাকাতে পারিনি। ঐ অবস্থায় যদি আমার মৃত্যু হত তবে অবশ্যই আমি জান্নাতী হওয়ার আশাবাদী থাকতাম। পরবর্তীকালে আমরা নানা বিষয়ের সাথে জড়িয়ে পড়েছি, তাই জানি না, এতে আমার অবস্থান কোথায়? সুতরাং আমি যখন মারা যাব, তখন যেন কোন বিলাপকারিণী অথবা আগুন সে জানাযার সাথে না থাকে। আমাকে যখন দাফন করবে তখন আমার উপর আস্তে আস্তে মাটি ফেলবে এবং দাফন সেরে একটি উট যাবাহ করে তার গোশ্‌ত বণ্টন করতে যে সময় লাগে ততক্ষণ আমার ক্ববরের পাশে অবস্থান করবে। যেন তোমাদের উপস্থিতির কারণে আমি আতঙ্ক মুক্ত অবস্থায় থাকি ও চিন্তা করতে পারি যে, আমার প্রতিপালকের দূতের কি জবাব দিব।
(সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ২২০)

অপর এক হাদীসে এসেছে

عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَامَ، فَقَالَ: إِنَّ اللَّهَ تَعَالَى كَتَبَ عَلَيْكُمُ
الْحَجَّ فَقَالَ الْأَقْرَعُ بْنُ حَابِسٍ التَّمِيمِيُّ كُلُّ عَامٍ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ فَسَكَتَ، فَقَالَ: لَوْ قُلْتُ نَعَمْ، لَوَجَبَتْ، ثُمَّ إِذًا لَا تَسْمَعُونَ، وَلَا تُطِيعُونَ، وَلَكِنَّهُ حَجَّةٌ وَاحِدَةٌ

ইবন আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ (একবার) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (ভাষণ দিতে) দাঁড়িয়ে বললেনঃ আল্লাহ্ তা’আলা তোমাদের ওপর হজ্জ ফরয করেছেন। তখন আকরা ইবন হাবিস তামীমী (রাঃ) বললেনঃ ইয়া রাসূলুল্লাহ্! (তা কি) প্রতি বছরের জন্য? (তিনি) রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নীরব রইলেন। তারপর বললেনঃ আমি যদি বলতাম, হ্যাঁ, তবে তা ফরয হয়ে যেতো। তখন তোমরা তা শুনতেও না এবং মানতেও না। কিন্তু (তোমরা জেনে রাখ) হজ্জ তা একটিই, হজ্জ একবারই ফরয।
(সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ২৬২০)

কোন ব্যক্তি যদি অসুস্থতার কারণে তিনি তার ফরয হজ আদায় করতে অক্ষম হলে অন্য কাউকে দিয়ে নিজের ফরয হজ আদায় করাতে হবে। আর তাতে ও সখখম না হলে কাউকে হজের ওসিয়ত করে যেতে হবে। এবং এভাবে ও তার ফরয হজের বিধানটি আদায় হয়ে যাবে । তবে এখেত্রে হজ আদায়কারী নিয়ত করার সময় তার বদলী হজ করছেন তার পক্ষ থেকে নিয়ত করবেন।

একটি হাদীসে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ

، عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ، أَنَّ امْرَأَةً مِنْ خَثْعَمَ سَأَلَتِ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ غَدَاةَ جَمْعٍ، فَقَالَتْ: يَا رَسُولَ اللَّهِ فَرِيضَةُ اللَّهِ فِي الْحَجِّ عَلَى عِبَادِهِ، أَدْرَكَتْ أَبِي شَيْخًا كَبِيرًا، لَا يَسْتَمْسِكُ عَلَى الرَّحْلِ، أَفَأَحُجُّ عَنْهُ؟ قَالَ: نَعَمْ

ইবন আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:খাছআম গোত্রের একজন মহিলা মুযদালিফায় (১০ যিলহজ্জ) সকালে রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –কে জিজ্ঞাসা করলোঃ সে বলল, ইয়া রাসূলুল্লাহ্! আমার পিতার অতি বৃদ্ধাবস্থায় তাঁর উপর হজ্জ ফরয হয়েছে, কিন্তু তিনি বাহনের উপর স্থির থাকতে পারেন না, এমতাবস্থায় আমি কি তার পক্ষ থেকে হজ্জ করবো? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ।
(সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ২৬৩৫)

মৃত পিতা মাতা বা অন্য যে কোন মুসলমানের পক্ষ থেকে ও বদলী হজ আদায় করানো যাবেঃ

، عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ، أَنَّ امْرَأَةً سَأَلَتِ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنْ أَبِيهَا، مَاتَ وَلَمْ يَحُجَّ؟ قَالَ: حُجِّي عَنْ أَبِيكِ

ইবন আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:তিনি বলেনঃ এক মহিলা রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –কে তাঁর পিতা সম্পর্কে প্রশ্ন করলো যে, তিনি হজ্জ না করে ইনতিকাল করেছেন। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তুমি তোমার পিতার পক্ষ হতে হজ্জ আদায় কর।
(সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ২৬৩৪)

অপর এক হাদিসে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ

أَخْبَرَنَا عِمْرَانُ بْنُ مُوسَى، قَالَ: حَدَّثَنَا عَبْدُ الْوَارِثِ، قَالَ: حَدَّثَنَا أَبُو التَّيَّاحِ، قَالَ: حَدَّثَنِي مُوسَى بْنُ سَلَمَةَ الْهُذَلِيُّ، أَنَّ ابْنَ عَبَّاسٍ، قَالَ: أَمَرَتِ امْرَأَةٌ سِنَانَ بْنَ سَلَمَةَ الْجُهَنِيَّ أَنْ يَسْأَلَ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، أَنَّ أُمَّهَا مَاتَتْ وَلَمْ تَحُجَّ، أَفَيُجْزِئُ عَنْ أُمِّهَا أَنْ تَحُجَّ عَنْهَا؟ قَالَ: نَعَمْ، لَوْ كَانَ عَلَى أُمِّهَا دَيْنٌ فَقَضَتْهُ عَنْهَا، أَلَمْ يَكُنْ يُجْزِئُ عَنْهَا فَلْتَحُجَّ عَنْ أُمِّهَا

মূসা ইবন সালামা হুযালী (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ:ইবন আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, সিনান ইবন সালামা জুহানী (রাঃ)-এর স্ত্রী তাকে বললেন, যেন তিনি রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) –কে জিজ্ঞাসা করেন যে, তার মা হজ্জ না করেই ইনতিকাল করেছেন। তার মায়ের পক্ষ থেকে সে হজ্জ করলে তা যথেষ্ট হবে কি? তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, যদি তার মায়ের কোন দেনা থাকতো আর তার পক্ষ হতে সে আদায় করতো, তা হলে কি তার মায়ের পক্ষ থেকে তা আদায় হতো না? অতএব সে যেন তার মায়ের পক্ষ থেকে হজ্জ আদায় করে।
(সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ২৬৩৩)

অপর এক হাদিসে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ

عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ، أَنَّ امْرَأَةً نَذَرَتْ أَنْ تَحُجَّ، فَمَاتَتْ، فَأَتَى أَخُوهَا النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَسَأَلَهُ عَنْ ذَلِكَ؟ فَقَالَ: أَرَأَيْتَ لَوْ كَانَ عَلَى أُخْتِكَ دَيْنٌ أَكُنْتَ قَاضِيَهُ؟» قَالَ: نَعَمْ، قَالَ: فَاقْضُوا اللَّهَ، فَهُوَ أَحَقُّ بِالْوَفَاءِ

ইবন আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃএকজন মহিলা হজ্জ মান্নত করেছিল। সে মৃত্যুবরণ করলো (হজ্জ করতে পারলো না)। এরপর তার ভাই রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)–এর নিকট এসে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলো। তিনি বললেনঃ তুমি কি মনে কর, যদি তোমার বোনের দেনা থাকতো তুমি কি তা আদায় করতে? সে বললঃ হ্যাঁ। রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তাহলে আল্লাহ্‌র হকও আদায় কর কেননা তা আদায় করার অধিক উপযোগী।
(সুনানে আন-নাসায়ী)

আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকে বুঝে আমল করার তৌফিক দান করুন।

হজ্জ বিষয়ক কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মাসয়ালাঃ

হজ্জ ফরয হওয়ার‌টি অন্যতম শর্ত হলো;

القدرة على الزاد و الراحلة فضلا عما لا بد منه

(রদ্দুল মুহতার ৩/৫২৭)

অর্থাৎ পরিবার পরিজনের জন্য তার অনুপস্থিতকালের ভরণ-পোষনের পর হজ সম্পাদন করার জন্য যাবতীয় পাথেয় ও খরচের মালিক থাকা।বা মৌলিক প্রয়োজনের অতিরিক্ত হজ সম্পাদনার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থের মালিক হওয়া। হজ্জ বা যাকাতের ক্ষেত্রে- 
فضلا عما لا بد منه বা মৌলিক প্রয়োজন বলতে বোঝা়য় যা মানুষের বেঁচে থাকার জন্য একান্ত প্রয়োজন। ফুকাহায়ে কেরাম এর ব্যাখ্যায় লিখেছেন

وهي ما يدفع الهلاك عن الإنسان تحقيقا كالنفقة ودور السكنى وآلات الحرب والثياب المحتاج إليها لدفع الحر أو البرد أو تقديرا كالدين، فإن المديون محتاج إلى قضائه بما في يده من النصاب دفعا عن نفسه الحبس الذي هو كالهلاك وكآلات الحرفة وأثاث المنزل ودواب الركوب وكتب العلم لأهلها فإن الجهل عندهم كالهلاك،

(রদ্দুল মুহতার ৩/২১৩ ,৫২৭)

وتفسير ملك الزاد والراحلة أن يكون له مال فاضل عن حاجته، وهو ما سوى مسكنه ولبسه وخدمه، وأثاث بيته قدر ما يبلغه إلى مكة ذاهبا وجائيا راكبا لا ماشيا وسوى ما يقضي به ديونه ويمسك لنفقة عياله، ومرمة مسكنه ونحوه إلى وقت انصرافه كذا في محيط السرخسي ويعتبر في نفقته ونفقة عياله الوسط من غير تبذير، ولا تقتير كذا في التبيين

(ফতোয়ায় হিন্দিয়া১/২১৭)

০১ মাসয়ালাঃ
শুধু মাত্র তার অনুপস্থিতির দিনগুলোতে পরিবার পরিজনের মৌলিক প্রয়োজন পূরণের অর্থের পর যদি হজ্জ সম্পাদন করার প্রয়োজীন অর্থ থাকে তাহলে তার উপর হজ ফরয হয়ে যাবে । এক্ষেত্রে তার ফিরে আসার পরে খরচ বা সারা বছরের খরচ হিসাব করা যাবে না।

لا يترك نفقة لما بعد إيابه في ظاهر الرواية كذا في التبيين

(ফতোয়ায় হিন্দিয়া ১/২১৭)

لا يشترط بقاء نفقة لما بعد عوده وهذا ظاهر الرواية

(রদ্দুল মুহতার ৩/৫৩০)

০২ মাসয়ালাঃ
কোন ব্যক্তি যদি বিবাহের জন্য(হজ করা যায় এই পরিমাণ বা তার বেশী) টাকা জমাকরে কিন্তু বিবাহের কোন কাজে( যেমন পাত্রীর জন্য কাপড় চোপড় ক্রয় করা,বা নিজের জন্য ক্রয় করা,)ব্যয় করে নি এমনত অবস্থায় হজের সময় হয়ে যায় তাহলে তার উপর হজ করা আবশ্যক।

إذا وجد ما يحج به وقد قصد التزوج يحج به، ولا يتزوج؛ لأن الحج فريضة أوجبها الله تعالى – على عبده كذا في التبيين

(ফতোয়ায় হিন্দিয়া ১/২১৭, রদ্দূল মুহতার ৩/৫২৯)

কোন ব্যক্তি যদি ঘর বানানোর জন্য(হজ করা যায় এই পরিমাণ বা তার বেশী) টাকা জমা করে কিন্তু কোন মালামাল ক্রয় না করে নগদ টাকা রাখে এমতাবস্থায় যদি হজের সময় হয়ে যায় তাহলে তার উপর হজ ফরয হয়ে যাবে।

وإن لم يكن له مسكن، ولا شيء من ذلك وعنده دراهم يبلغ بها الحج أو يبلغ ثمن مسكن وخادم وطعام وقوت فعليه الحج فإن جعلها في غير الحج أثم كذا في الخلاصة

(ফতোয়ায় হিন্দিয়া ১/২১৭)

وإذا صرف ماله ثم خرج أهل بلده لا يجب عليه الحج فأما إذا جاء، وقت الخروج، والمال في يده فليس له أن يصرفه إلى غيره على قول من يقول بالوجوب على الفور؛ لأنه إذا جاء وقت خروج أهل بلده فقد وجب عليه الحج لوجود الاستطاعة فيلزمه التأهب للحج، فلا يجوز له صرفه إلى غيره كالمسافر إذا كان معه ماء للطهارة

(বাদায়িয়ুস সানায়েহ২/২২৮)

০৩ মাসয়ালাঃ
হজ্জের মাস হলো শাওয়াল জিলকদ ও জিলহজের পৃরথম দশদিন।তবে কোন ব্যক্তি যদি এই সময় ব্যতীত অন্য সময়ে হজ আদায় করা সক্ষমতা অর্জন করে তাহলে সে উক্ত মাসগুলো আসার পূর্বে যদি ঐটাকা অন্য খাতে ব্যয় করতে চায় তাহলে তা অন্য খাতে ব্যয় করা যাবে। এবং এর কারনে কোন‌ গোনাহ হবে না।(কেননা হজের সময় না আসায় এখনো তার উপর হজ ফরজ হয় নি)। তবে হজের সময় এসে গেলে তার উপর হজ ফরয হবে । এবং তা আদায় করতে হবে।

ثم ما ذكرنا من الشرائط لوجوب الحج من الزاد، والراحلة، وغير ذلك يعتبر، وجودها، وقت خروج أهل بلده حتى لو ملك الزاد، والراحلة في أول السنة قبل أشهر الحج، وقبل أن يخرج أهل بلده إلى مكة فهو في سعة من صرف ذلك إلى حيث أحب؛ لأنه لا يلزمه التأهب للحج قبل خروج أهل بلده؛ لأنه لم يجب عليه الحج قبله، ومن لا حج عليه لا يلزمه التأهب للحج

(বাদায়িয়ুস সানায়েহ ২/২১৭)

০৪ মাসায়ালাঃ
কোন ব্যাক্তির যদি অতিরিক্ত পতীত(যা চাষাবাদ না করে অনাবাদি রেখে দেয়) জমি থাকে বা মৌলিক প্রয়োজন পূরণে র ফসল থেকে অতিরিক্ত ফসলের জন্য আবাদকৃত জমি থাকে ।আর ঐ জমির মূল্য দিয়ে হজ করা যায় তাহলে তার উপর হজ ফরজ ।তাকে উক্ত জমি বিক্রি করে বা অন্য কোনভাবে হজ আদায় করতে হবে.

ولو ان غلة بعض الضيعة تكفيه وعياله وقيمة بعض الباقي يكفيه عن الزاد والراحلة فان عليه ان يحج وان فضل شيء من ذلك وكانت قيمته زادا وراحلة فان عليه الحج

(আন নুতাফু ফিল ফতোয়া-২০৪)

وإن كان صاحب ضيعة إن كان له من الضياع ما لو باع مقدار ما يكفي الزاد والراحلة ذاهبا وجائيا ونفقة عياله، وأولاده ويبقى له من الضيعة قدر ما يعيش بغلة الباقي يفترض عليه الحج، وإلا فلا

(ফতোয়ায় হিন্দিয়া ১/২১৭)

০৫ মাসয়ালাঃ
কোন ব্যক্তির যদি অতিরিক্ত বাড়ি (যা সে ব্যবহার করে না বা তার ভাড়া তার মৌলিক প্রয়োজন পূরণে ব্যয় করা হয় না,অথবা অতিরিক্ত দামী পোশাক ,যা ব্যবহার করে না তবে এগুলো বিক্রি করা হজ করার টাকা পরমান টাকা বা তার বেশি টাকা হয় তাহলে তার উপর হজ ফরয হবে।

وفي التجريد إن كان له دار لا يسكنها وعبد لا يستخدمه فعليه أن يبيعه ويحج به، وإن لم يكن له مسكن، ولا شيء من ذلك وعنده دراهم يبلغ بها الحج أو يبلغ ثمن مسكن وخادم وطعام وقوت فعليه الحج فإن جعلها في غير الحج أثم كذا في الخلاصة. وكذا من كان له ثياب لا يمتهنها كان عليه أن يبيع ويحج بثمنها إن كان بثمنها، وفاء بالحج

(ফতোয়ায় হিন্দিয়া ১/২১৭)

إذا كانت له دار لا يسكنها، ولا يؤاجرها، ومتاع لا يمتهنه، وعبد لا يستخدمه، وجب عليه أن يبيعه، ويحج به وحرم عليه أخذ الزكاة إذا بلغ نصابا؛ لأنه إذا كان كذلك كان فاضلا عن حاجته كسائر الأموال وكان مستطيعا فيلزمه فرض الحج فإن أمكنه بيع منزله وأن يشتري بثمنه منزلا دونه

(বাদায়িয়ুস সানায়েহ ২/১২৭)

অনেক সময় চাষীরা একবছর বা একাধিক বছেরের খাদ্য হিসাবে ধান বা অন্যান্য শস্য জমা রাখে। তেমনিভাবে কোরবানীর সময় বিক্রির উদ্দেশ্যে গরুর খামার করে।যদি এগুলোর মূল্য তার ঝণ ও হজ থেকে আসার পযন্ত যে খরচ তারথেকে এতটুকু বেশি হয় যা দিয়ে সে হজ করতে পারে তাহলে তার উপর ও হজ ফরয ।তাকে হজ করতে হবে।

ولو كان عنده طعام سنة، ولو أكثر لزمه بيع الزائد إن كان فيه وفاء كما في اللباب وشرحه

(রদ্দূল মুহতার ৩)

(و الله أعلم بالصواب)

আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে মাসয়ালা গুলো বোঝার তাওফিক দান করুন। এবং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে শরীয়তের অনুসরন করার তাওফীক দান করুন। আমীন

এখানে মন্তব্য করুন

লেখক পরিচিতি

নামঃ মুহাম্মদ সালমান হুসাইন।
ইফতাঃ ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ, জামিয়া শারইয়্যাহ মালিবাগ।
উলুমুল হাদিসঃ ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষ, মাদ্রাসা বাইতুল উলুম ঢালকানগর।
তাকমীলঃ ২০১৫ শিক্ষাবর্ষ, মাদ্রাসা বাইতুল উলুম ঢালকানগর।
হিফজঃ ২০০৭ শিক্ষাবর্ষ, জামিয়া আরাবিয়া হাজী ইউনুস কওমী মাদ্রাসা।
সিনিয়র শিক্ষকঃ হাজিপাড়া কাশীপুর নারায়ণগঞ্জ

আমাদের অনুসরণ করুন

সর্বশেষ ইউটিউব ভিডিও

Play Video

সাম্প্রতিক পোস্ট

সাম্প্রতিক পৃষ্ঠা