হজ্জ একটা আরবি শব্দ, এটা মুসলমানদের ধর্মিয় একটি উপাসনার নাম, আমরা জানি ইনলামের মূলস্তম্ভ ৫ টি জিনিসের উপর, তন্মধ্যে হজ্জ হলো ৪র্থ তম অবশ্য-পালনীয় একটি ধর্মিয় বিধান। যা হিজরী সনের আরবি ১২ মাসের মধ্যে সর্বশেষ মাস তথা জিলহজ্জ মাসের ৮ তারিখ থেকে ১৩ তারিখের মধ্যে পালন করতে হয়। ভৌগলিক মানচিত্র হিসাবে বাংলাদেশের দক্ষিন পাশ্চিম কোনে অবস্থিত সৌদি আরব।
হজ্জের পূর্ণঙ্গ বিধিবিধান

সূচিপত্র

হজ্জের পূর্ণঙ্গ বিধিবিধান

হজ্জ ;

হজ্জ একটা আরবি শব্দ, এটা মুসলমানদের ধর্মিয় একটি উপাসনার নাম, আমরা জানি ইনলামের মূলস্তম্ভ ৫ টি জিনিসের উপর, তন্মধ্যে হজ্জ হলো ৪র্থ তম অবশ্য-পালনীয় একটি ধর্মিয় বিধান। যা হিজরী সনের আরবি ১২ মাসের মধ্যে সর্বশেষ মাস তথা জিলহজ্জ মাসের ৮ তারিখ থেকে ১৩ তারিখের মধ্যে পালন করতে হয়। ভৌগলিক মানচিত্র হিসাবে বাংলাদেশের দক্ষিন পাশ্চিম কোনে অবস্থিত সৌদি আরব। হজ্জ করার জন্য সৌদি আরবের মক্কা নগরি ও তার আশেপাশের আরাফাত, মুযদালিফা ও মিনা প্রভৃতি স্থানে গমন ও বিশেষ বিশেষ সময় অবস্থান করত কিছু কার্য সম্পাদনা করতে  হয়। হজ্জের সমস্থ নিয়ম কানূন শেষ করার পর এ লোকটিকে বলা হয় আলহাজ্জ বা হাজী।হজ্জ সমগ্র বিশ্বের মুসলমানদের জন্য একটি বার্ষিক তীর্থযাত্রা যা প্রতি বছরান্তে একবার হয়।মুসলমানেরা এটাকে সারা বিশ্বের সমস্থ মুসলমানদের ভাতৃত্বের এক উত্তম নিদর্ষণ বলে মনে করেন,গোটা পৃথিবীতে একই সময়ে এতো বড় মিলনায়তন ও এত লোক সমাগম এক অদ্বিতীয় নিদর্ষণ।  

হজ্বের ঐতিহাসিক পটভূমি;

পৃথিবীর আদি ও প্রথম মানব হযরত আদম আঃ এর এ ধরায় পদার্পণের মাধ্যমেই শুরু হয়েছিল এ ধরিত্রীর শুভযাত্রা কিন্ত আক্ষেপের বিষয় হল; দুনিয়ায় আসার পর তারা উভয়ে একে অপর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন, দীর্ঘ  সময় আতিবাহিত হওয়ার পর একপর্যায়ে তারা উভয়ে মক্কার আরাফাত ময়দানে মিলিত হন এর কৃতজ্ঞতা সরুপ হাজ্জিরা আরাফাত ময়দানে উপস্থিত হয়ে দু‘আ ও কান্নাকাটি করে ইবাদতে মগ্ন হয়।বর্তমান সময়ে হ্জ্জের আবশ্যকীয় বিষয়াবলির একটি হলো আরাফার ময়দানে উপস্থিত হওয়া।

পৃথিবীর বুকে সে সময় হযরত আদম নামে যে মানুষ ছিলেন তিনি একজন নবী ছিলেন তিনারও একটি ধর্ম ছিল,একদা আল্লাহর নির্দেশে হযরত আদম আঃ মক্কা নগরিতে কাবার ভিত্তি স্থাপন করেন যে স্থানটি ছিল আল্লাহ কর্তৃক পূর্ব নির্ধারিত। সে সময় হযরত আদম আঃ এর সন্তানরাই তিনার উম্মত ছিলেন তাদের কে এ কাবার তওয়াফ করার নির্দেশ দেওয়া হয়।হযরত আদম আঃ পৃথিবীর প্রথম মানব ‍যিনি সর্বপ্রথম কাবা শরীফে হজ্জ পালন করেন।তিনার পর হযরত নুহ আঃ পর্যন্ত এ বিধান অন্যান্য নবী রাসূলগন পালন করেন।কিন্তু নূহ আঃ এর সময়ের প্লাবনের কারণে কা‘বা ও তার চারপাশ পূর্ণরুপে বিলিন হয়ে পরে।যার ফলে কাবার নির্দিষ্ট ন্থান নির্ণয় করা কঠিন হয়ে পরে,বিধায় কাবা পূনঃস্থাপন করা অসম্ভব হয়ে ওঠে।

উষার আলোহীন এমনি এক সময় মুসলিম উম্মাহের জাতির পিতা হযরত ইবরাহিম আঃ আল্লাহ তা‘লার নির্দেশে তিনার স্ত্রী হাজেরা ও শিশু বাচ্চা ইসমাঈল আঃকে মক্কার নির্জন মরূভূমিতে রেখে এসেছিলেন,পাথেওহীন মরু প্রন্তরে একদা পিপাসার্ত বাচ্চার হলকুম ভিজানর জন্য জনমানবহীন মরুর সফা ও মারওয়ার মরীচিকাকে পানি মনে করে মাতা হাজেরা সফা ও মারওয়ায় একাধিকবার সজোরে পদচারণ করেছিলেন!তাইতো আজো হাজিদের জন্য এ পাহাড়দ্বয়ের সায়ী করাকে জরুরে করে রাখা হয়েছে।পিপাশিত বাচ্চা ও ভগ্নহৃদয় মায়ের আহাজারি ও দোয়ার ফেলেই আল্লাহ তা‘আলা শিশু ইসমাঈলের নাজুক পর্দাঘাতে আল্লাহ তা‘আলা বরকতময় জমজম পানির শুভারাম্ভ করেছিলেন যা অদ্যাবধি পর্যন্ত গোটা মক্কা নগরিতে বহমান।ঘটনাকাল চলমান অবস্থায় হযরত ইবরাহীম আঃ আল্লাহর নির্দেশে আদম আঃ কর্তৃক নির্মিত কাবা ঘরের পূর্ব ভিতের উপর পূনরায় কাবার নির্মাণ কাজ চালু করেন।আর এটাইছিল কাবার দিত্বীয় নির্মাণ।

হয়রত ইবরাহিম আঃ এর জামানা থেকেই হজ্জ ফরজ ঘোষনা করা হয়,যেমনটি এক বর্ণনায় এসেছে যে কাবা ঘর বানানর পর অল্লাহ তা‘আলা হযরত ইবরাহীমকে নির্দেশ দেন যে তুমি হজ্জ ফরজ হওয়ার ঘোষনা দেও। আল্লহর নির্দেশে তিনি মক্কার কোবাইস পাহাড়ে আরোহণ করেন ও দুই কানে আঙ্গুল রেখে এ ঘোষনা দেন যে হে মানুষ সকল তোমাদের পালনকর্তা নিজ গৃহ নির্মান করেছেন তোমাদেরে উপর এ গৃহের হজ্জ ফরজ করা হয়েছ। বর্নিত আছে যে আল্লাহ তা‘আলা এ ঘোষনা সারা দুনিয়ার মানুষের কান পর্যন্ত পৌছে দিয়েছিলেন এবং সকলেই এ কথা শুনতে পেরেছিল।তাইতো আজো হজ্জের বিভিন্ন নিয়ম কানূন ও আচার আচরণ হযরত ইবরাহীম আঃ এর সাথে সম্পর্কযুক্ত।ইবরাহীম আঃ কাবার যে ভিত্তিস্থাপন করেছিলেন তার স্থায়িত্ব ছিল ৪ হাজার বছর।

রাসূল সাঃ বয়স যখন ৩৫ বছর তখন এক মহিলা কাবার গ্লাফে আগুন লাগিয়ে দেয়,এর পরপরই এক প্লাবনের কারনে কাবার দেওয়াল ভেঙ্গে যায়,তখন সবার সম্মতিক্রমে কাবার কাজ ৩য় বারের মতো শুরু করা হয় ও উন্নতি সাধন করা হয়।৪০ বছর বয়সে অল্লাহর নবী নবুয়াতী পান ও ইসলাম ধর্মের সুচনা হয়।

মুহাম্মাদ সাঃ এর উম্মত তথা ইসলামে হজ্জ ফরজ করা হয়েছে হিজরীর ৯ম বা ১০ম সালে তখন থেকে কেয়ামত পর্যন্ত সকল বিত্ববান মানুষের উপর জীবনে একবার হজ্জ করা ফরজ। আর বিত্ববান না হলেও হজ্জ করা যাবে তখন এ হজ্জ নফল হজ্জ হবে।

হজ্জ ফরজ হওয়ার ঘোষনা;

  • পবিত্র কুরআনে কারিমের সূরায় আল ইমরানের ৯৭ নং আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা হজ্জ ফরজ হওয়ার ঘোষনা দেন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন وَلِلَّهِ عَلَى النَّاسِ حِجُّ الْبَيْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ إِلَيْهِ سَبِيلًا وَمَنْ كَفَرَ فَإِنَّ اللَّهَ غَنِيٌّ عَنِ الْعَالَمِينَ   অর্থাৎ আল্লাহর জন্য মানুষের উপর বাইতুল্লার হজ্জ ফরজ করা হলো,তাদের মধ্যে যারা সেখানে যাওয়ার সমর্থ রাখে।এবং যে কেউ উহা উপেক্ষা করল সে জানেরাখুক যে আল্লাহ তা‘আলা ‍বিশ্ববাসীর মুখাপেক্ষী নন।
  • হযরত আবু হুরায়রা রাঃ বলেন একদা রাসূল সাঃ আমাদের উদ্দেশ্যে খুতবা দিয়ে বলেন হে লোক সকলেরা আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের জন্য হজ্জ ফরজ করেছেন বিধায় তোমরা হজ্জ করো।জনৈক ব্যক্তি বল্লেন ইয়া রাসূলাল্লাহ আমরাকি প্রতি বছর হজ্জ করবো? এতদা শ্রবণে আল্লাহর নবী চুপ থাকলেন, সে এ কথা তিন বার জিঙ্গেসা করল!অতপর রাসূল সাঃ বলেন যদি আমি হ্যা বলি তাহলে তোমাদের জন্য বারম্বার হজ্জ করাই ফরজ হয়ে যাবে,কিন্তু এতে তোমরা সক্ষম হবে না।…. মুসলিম শরীফ ৪১২ নং হাদীস মাঃ শাঃ

হজ্জের ফযীলত;

  • আল্লাহ তা‘আলা বলেন وَأَتِمُّوا الْحَجَّ وَالْعُمْرَةَ لِلَّه তোমরা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হজ্জ ও ওমরাহ ক রো। বাকারাহ ২/১৯৬
  • আল্লাহ তা‘আলার আদেশ বিধায় হজ্জ করার দ্বারা আল্লাহ তা‘আলা খুশি হন,
  • আবু হুরায়রা রাঃ বলেন রাসূল সাঃ বলেছেন যে ব্যক্তি হজ্জ করে এবং সে হজ্জের সময়ের মধ্যে কোনো অন্যায় ও পাপাচার না করে থাকে তাহলে সে তার হজ্জ শেষে একজন নবজাতক শিশুর মতো গুনাহীন হয়ে ফিরল। বুখারী ২৫০৭ মাঃ শাঃ
  • আবু হুরায়রা রাঃ বলেন রাসূল সাঃ বলেছেন হজ্জে মাবরুরের প্রতিদান শুধুমাত্র জান্নাতই।বুখারী ২৫০৮ মাঃ শাঃ
  • আয়েশা রাঃ বলেন আমি আল্লাহর নবীর নিকট জিহাদ করার অনুমতি চাইলে আল্লাহর নবী বলেন মহিলাদের জিহাদ হলো হজ্জ করা। মেশকাত ২৫১৪ মাঃ শাঃ
  • ইবনে মাসউদ রাঃ বলেন রাসূল সাঃ বলেছেন তোমরা হজ্জ ও ওমরার মাঝে অনুগামী হও; কেননা এই দুইটা দারিদ্রতা ও গুনাহ এমনভাবে মিটিয়ে দেয় যেমনভাবে হাপর লোহা,স্বর্ণ ও রুপার ময়লা দূর করে দেয়্।মেশকাত ২৫২৪মাঃ শাঃ
  • ইবনে ওমর রাঃ বলেন আল্লাহর প্রতিনিধি দল তিনটি.গাজি,হাজী ও ওমরাকারী। মেশকাত ২৫৩৭ মাঃ শাঃ

হজ্জ এর আবিধানিক পারিভাষিক অর্থ;

হজ্জের শাব্দিক অর্থ হলো ইচ্ছা করা,দৃঢ় সংকল্প করা.মহত ও সম্মানিত জিনিসের ইচ্ছাপোষণ করা।

পরিভাষায় হজ্জ বলা হয়ঃ-

  • বিশেষ সময়ে নির্দিষ্ট কিছু স্থানকে সুনির্দিষ্ট নিয়মের সাথে দর্শন করা ও বিশেষ কাজগুলি সম্পন্ন করাকে হজ্জ বলা হয়। শামী
  • জিলহজ্জ মাসের ৮ থেকে ১২ তারিখের মধ্যে হজ্জের জন্য বিশেষ স্থানগুলো ‍যিয়ারত করা ও তার কাজগুলা সমাপ্ত করার নামই হলো হজ্জ।

হজ্জ ফরজ হওয়ার জন্য বেশ কিছু শর্ত রয়েছে;

  • মুসলমান হওয়া।
  • স্বাধিন হওয়া,
  • জ্ঞান সম্পন্ন হওয়া,
  • প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া,
  • অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ভালো ও সুস্থ থাকা,
  • আসা ও যাওয়ার পূর্ণ অর্থ-সম্পদ থাকা,
  • আসা যাওয়ার মধ্যকার রাস্তার নিরাপত্তা থাকা,
  • যাওয়া থেকে নিয়ে আসা পর্যন্ত সময়ের পরিবারস্থ সকলের খাবার-দাবার ও যাবতীয় আসবাবের ব্যবস্থা থাকা,
  • মহিলাদের জন্য তাদের মাহরাম থাকা।

হজ্জ কার উপর ফরজ;

যার ‍নিকট মক্কা শরীফ  যাওয়া ও হজ্জ করে ফিরে আসা পর্যন্ত পরিবারের সাভাবিক খরচ-খরচা ও নিজের মক্কায় আসা যাওয়ার মোটামুটি খরচ পরিমাণ সম্পদ আছে এমন ব্যক্তির উপর হজ্জ করা ফরজ।

হজ্জ বিলম্ব করে করার সুজগ আছে কি?

হজ্জের সমর্থ হলেই হজ্জ করা ফরজ হয়,তবে সাথেসাথে ফরজ নয়!! (বরং সমর্থবান হওয়ার পর সাথেসাথে হজ্জ করা ওয়াজিব,বিধায় বিলম্ব করা ঠিক নয়। কিন্তু আফসোসের বিষয় হলো বর্তমান সময়ের মানুষ বিত্তবান হওয়ার সাথেসাথে হজ্জ করেনা বরং একটা সময়ের অপেক্ষা করে!! যেমন অনেকে মনে করে যে মাত্র কিছু টাকা হলো তো তা এখনই হজ্জ করে শেষ করলে বাকি জীবন চলবো কি করে?? বিধায় আরো কিছু কামিয়ে নেই!! অনেকে ভাবে আরে এখনো বিয়েই করিনি তো অমি হজ্জ করলে হজ্জ হবে নাকি? আমার ছেলে মেয়ের এখনো বিয়ে হয়নি তো বিয়ে দিয়ে নেই তারপর হজ্জ করবো,অনেকে ভাবে একটু বয়স হোক তারপর হজ্জ করবো ও একবারে নামায কালাম শুরু করবো।

অবশ্য হজ্জ কিছু বিলম্ব করে করার অবকাশ রয়েছে তবে বিনা কারণে বিলম্ব করা পাপ!! হজ্জ ফরজ হওয়ার পর যদি কেউ করতে বিলম্ব করে আর এর মধ্য সে দরিদ্র হয়ে যায় বা তার টাকা পয়সা হাত থেকে বের হয়ে যায়,তার পরেও তার উপর ঐ হজ্জ ফরজই থাকবে,যেখান থেকেই হোক টাকা যোগার করে হজ্জ সম্পন্ন করতে হবে। এমতাবস্থায় মারা গেলে তার উত্তরসূরিদের তার পক্ষ থেকে বদলি হজ্জ করতে হবে। যদি সে অসিয়ত করে থাকে।

হজ্জের ফরজ সমূহ;

হজ্জের ফরজ তিনটি

ইহরাম বাধা;

ইহরাম দ্বারা উদ্দেশ্য হলো হজ্জের পরিপূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে হজ্জের নিয়ত করা ও সেলাইবিহীন দুই টুকরা সাদা কাপড় পরিধার করা,অতপর তালবিয়া পাঠ করা। যে স্থানে ইহরাম বাধতে হয় তাকে মিকাত বলা হয়।মিকাত থেকে শুরু করে বাইতুল্লাহর তওয়াফ ও সফা মারওয়া সায়ী থেকে নিয়ে মাথা মুন্ডান হজ্জের শেষ কাজ করা পর্যন্ত এ নিয়ত অবস্থায় থাকার নামই হলো ইহরাম.আর যে এই নিয়ত করে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সমস্থ বিধিবিধান পালন করে তাকে বলা হয় মুহরিম।

আরফাত ময়দানে অবস্থান করা;

জিলহজ্জ মাসেন ৯ তারিখ সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলে যাওয়ার পর থেকে ১০ তারিখ সকাল পযর্ন্ত পূর্ণ রাত আরাফার খালি ময়দানে অবস্থান করা।

তওয়াফে যিয়ারত করা;

প্রথমবার কাবার নিকটবর্তী হলে কাবার দক্ষিন পূর্ব কোনা থেকে শুরু করে কাবার চারপাশ লাগাতার ৭ বার প্রদক্ষিন করাকে তওয়াফে যিয়ারত বলা হয়।

ইহরাম বাধার নিয়ম;

হাজ্জ করার জন্য গমনিচ্ছুকদের ইহরাম বাধার আগেই কিছু কাজ করে নিতে হবে আমরা তা যথাসাদ্ধ্য নিম্নে তুলে ধরছি।

  • ইহরাম বাধার আগে হাজি সাহেবদের প্রথমে হাতের নোখ থেকে নিয়ে সকল প্রকার ক্ষৌরাকার্য শেষ করে নিতে হবে।
  • চাহিদা থাকলে স্ত্রী সম্ভোগও সেরে নিতে হবে।
  • পবিত্র হওয়ার জন্য অযু বা গোসল করে শরীরের সাভাবিক ও অসাভাবিক বর্জ পরিস্কার করে নিতে হবে।
  • সেলাই বিহীন কাপড় পরিধান করতে হবে চাই তা লুঙ্গি হোক বা চাদর। অবশ্য সাদা কাপড় পরা উত্তম।
  • মহিলারা যে কোনো ধরণের কাপড় পরতে পারে,সেলাই করাও পরতে পারে।
  • কাপড় নতুন হওয়া অবশ্যক নয়!তবে নতুন বা পরিস্কার নেওয়াই ভালো।
  • সুগন্ধি লাগান।
  • আতপর ইহরামের নিয়তে দুই রাকাত নামায পড়া সুন্নত।
  • নামাযের পর মাথার টুপি খুলে কেবলা মুখি থাকাবস্থায় ইহরামের নিয়ত করা উত্তম।
  • নিয়ত করার সময় হজ্জ বা উমরার নিয়ত বা হজ্জ ও উমরাহ উভয়টির নিয়ত করবে।আর এ নিয়ত আরবিতেও হতে পারে আবার বংলায়ও করা যেতে পারে।
  • নিয়তের সাথে সাথে একটি দোয়া বা জিকির থাকা ভালো তো সে ক্ষেত্রে তালবিয়া পড়া ভালো।
  • তালবিয়া হলো।

   لَبَّيْكَ ا للّهُمَّ لَبَّيْكَ – لَبَّيْكَ لاَ شَرِيْكَ لَكَ لَبَّيْكَ – اِنَّ الْحَمدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ – لاَ شَرِيْكَ لَكَ

তালবিয়ার উচ্চারণ;

  • লাব্বাইক আল্লা-হুম্মা লাব্বাইক,
  • লাব্বাইক, লা-শারী-কা লাকা লাব্বাইক,
  • ইন্নাল হামদা ওয়ান্ নি`মাতা লাকা ওয়াল-মুল্‌ক,
  • লা শারি-কা লাক।”

তালবিয়ার অর্থ;

  • হে আল্লাহ!আমি হাজির, আমি উপস্থিত!
  • আপনার ডাকে সাড়াদিয়ে আমি হাজির।আপনার কোনো অংশীদার নেই।
  • নিঃসন্দেহে সমস্ত প্রশংসা,সম্পদরাজি আপনার এবং একচ্ছত্র আধিপত্য আপনার।
  • আপনার কোনো অংশীদার নেই।

ইহরাম অবস্থায় যা যা করা নিষেধ;

  • পুরুষের জন্য সেলাই করা পোশাক পরা নিষিদ্ধ যেমন জামা,পায়জামা,জাঙ্গিয়া,টুপি,গেঞ্জি,মোজা সোয়াটার,কোট ইত্যাদি।
  • মহিলাদের জন্য হাত মোজা পা মোজা অলংকার পরিধান করা জায়েয তবে না পরা ভালো।
  • পুরুষের জন্য মাথা ও চেহারা ঢাকা নিষেধ।
  • মহিলাদের শুধু চেহারা ঢাকা নিষেধ।
  • সকল প্রকার সুগন্ধি ব্যবহার করা নিষেধ।
  • নখ.চুল ও যে কোনো পশম কাটা ও কাটানো নিষেধ।
  • স্থলভাগের প্রাণী শিকার করা ও তার দিকে ইশারা করে দেখিয়ে দেওয় নিষেধ।
  • স্ত্রী সহবাস বা এতদাসংশ্লিষ্ট আলোচনা যা সহবাস করার দিকে অকর্ষণ করে এমন কিছু করা নিষেধ্।
  • ঝগড়া বিবাদ করা বা কোনো গুনাহের কাজ করা নিষেধ।
  • উকুন মরা নিষিদ্ধ।

বিঃদ্রঃ মহিলদের জন্য চেহারা ঢাকা নিষেধ তার মানে এই নয় যে পর্দা ছেড়ে খোলামেলা ঘুরাফেরা করবে বরং এমন ব্যবস্থার আশ্রয় গ্রহন করবে যাতে করে মোটামূটি পর্দার বিধান ও পালন হযে যায়! আর এর একটা উত্তম মাধ্যম হলো কপালের উপর এমন কিছু বাধবে যার সাথে নেকাব লটকানো যায় যা চেহারা সাথে সাধরণ ভাবে মিলবে না। কিন্তু বর্তমান সময়ে এ বিষয়ে আমাদের মা বোনদের খুব বেশি উদাসিনতা দেখা যায়।

ইহরাম অবস্থায় যা যা করা মাকরুহ;

  • ইহরামের কাপড় সেলাই করা,গিরা দেওয়া বা পিনদিয়ে আটকানো মাকরুহ।
  • সেচ্ছায় কোনো সুগন্ধির ঘ্রাণ নেয়া মাকরুহ।
  • স্বেচ্ছায় কোনো সুগন্ধিযুক্ত খাবার পাকিয়ে খাওয়া মাকরুহ।
  • কাম উত্তেজনার সাথে স্ত্রীর লজ্জাস্থানের দিকে তাকানো মাকরুহ।
  • চুল,দাড়ী বা শরীরে সাবান লাগানো মাকরুহ।
  • চুল বা দাড়ী আচঁড়ানো মাকরুহ।

হজ্জের ওয়াজিব সমূহ;

  • মিকাত পার হওয়ার আগেই ইহরাম বাধা।
  • সতর ঢেকে রাখা।
  • মুযদালিফায় অবস্থান করা,
  • সফা ও মারওয়ার মাঝে সায়ী করা.
  • ওজর না থাকলে পায়ে হাটা।
  • পাথর নিক্ষেপ করা,
  • বিদায় লগ্নে তওয়াফ করা,
  • কুরবানী করা,
  • মাথা মুন্ডান বা চুল ছোট করা;

       মারাকিয়ূল ফালাহ ২৮০ পৃঃ

 

মিকাত কাকে বলে? মিকাত মোট কতটি?

মিকাত অর্থ নির্দিষ্ট সময় বা নির্দিষ্ট স্থান, সমগ্র বিশ্ববাসী হজ্জ করতে আসার সময় যখন তারা মক্কা অভিমুখে রওনা হয় তখন সকলের সামনে এমন একটি স্থান আসে যেখান থেকে তার হজ্জের নিয়ত করতে হয়,বা ইহরাম বাধতে হয়,আর সে স্থানটিকেই মিকাত বলা হয়।মিকাত মোট ৬ টি।

  • জুলহুলাইফা মদিনার দিক থেকে আগতদের জন্য
  • জাহফা সিরিয়ার দিক থেকে আগতদের জন্য,
  • করনুল মানাজিল নজদের দিক থেকে আগতদের জন্য,
  • ইয়ালামলাম ইয়ামানের দিক থেকে আগতদের জন্য.
  • সানিয়াম মক্কার অধিবাসিদের জন্য,
  • জাতিই ইরাক,ইরাক থেকে আগতদের জন্য।

আমদের বাংলাদেশের হজগামীদের জন্য মিকাত হলো ইয়ালামলাম          

হজ্জের প্রকারভেদ;

আমরা জানি যে ইসলামে হজ্জের বিধান কে ফরজ করা হয়েছে,তবে তা একটা সময়-সাপেক্ষ ভাবে হয়ে থাকে,বিধায় আল্লাহর নবী সাঃ তিনার উম্মতদেরকে উমরার বিধান শিখিয়েছেন যা সবসময় করা যায় এবং একই দিনে একাধিকবার করা যায়, কিন্তু হজ্জের বিষয়টি এমন নয়,কেননা দূরদূরান্ত থেকে মানুষ হজ্জ করতে গেলে এক সাথে হজ্জ ও উমরাহ সবই করতে চায়,তাই হজ্জের মৌসুমে হজ্জ ও উমরার দিকে লক্ষ্য করে হজ্জকে মোট ‍তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।

হজ্জ তিন প্রকার.

  • হজ্জে ইফরাদ,
  • হজ্জে কেরান,
  • হজ্জে তামাত্তু,

হজ্জে ইফরাদঃ  ইফরাদ শব্দের অর্থ আলাদা করা,পৃথক করা. শুধুমাত্র হজ্জের নিয়ত করে ইহরাম বাধা ও তার কার্যবলী সম্পাদন করাকেই হজ্জে ইফরাদ বলা হয়।

হজ্জে কেরানঃ কেরান শব্দের অর্থ মিলান সুতরাং যে হজ্জের মধ্যে হজ্জ ও উমরার ইহরাম একসাথে বাধা হয় তাকে হজ্জে কেরান বলা হয়।

হজ্জে তামাত্তুঃ তামাত্তু অর্থ উপভোগ করা,হজ্জের মাস সমুহের মধ্যে উমরা নিয়ত করে উমরার কাজ শেষ করা এবং তারপর হজ্জের নিয়ত করে হজ্জের কাজ শেষ করাকে হজ্জে তামাত্তু বলা হয়।

কোন প্রকার হজ্জ উত্তম;

তিন প্রকার হজ্জের মধ্যে হজ্জে কেরান করাই সবথেকে ভলো,আতপর হজ্জে তামাত্তু অতপর হজ্জে ইফরাদ।কিন্তু সাধারণত বাংলাদেশের হাজি সাহেবরা হজ্জের যে মূল সময় (তথা জিল হজ্জ মাস)তার অনেক আগে হজ্জ করার জন্য মক্কা মুকাররমায় গমন করে থাকেন বিধায় দীর্ঘদিন ইহরাম অবস্থায় থাকা ও তার সমস্থ বিধিবিধান মেনে চলা অনেক দূরুহ ব্যাপার হয়ে দাড়ায়; বিধায় যারা অনেক আগেই মক্কা মুকাররমায় গমন করে থাকে তাদের জন্য হজ্জে তামাত্তুর নিয়তে ইহরাম বাধাই শ্রেয়।অবশ্য কেউ যদি জিলহজ্জ মাসে তথা হজ্জের বিশেষ দিনগুলোর সামান্ন্য কয়েকদিন আগে যাবার নিয়ত করে তাহলে তার জন্য হজ্জে কেরানের নিয়ত করাই ভালো।

উমরার শাব্দিক পারিভাষিক অর্থ;

উমরার শাব্দিক অর্থ হলো যিয়ারত করা,আবাদ করা,নির্মাণ করা, জনবহুল স্থানে ভ্রমন করা।

পরিভাষায় উমরা বলা হয়ঃ

  • পূণ্য অর্জনের আশায় কা‘বার ইচ্ছা পোষণ করা।
  • ইহরাম অবস্থায় কাবার চারোপাশে তওয়াফ করা এবং সফা মারওয়ায় সায়ী করা।

উমরা সর্ম্পকে কিছু জরুরি কথা;

তিন জিনিসের সমন্বয়কে উমরা বলা হয়।

  • ইহরাম বাধা*বাইতুল্লাহর তওয়াফ করা*সফা ও মারওয়া পাহাড়দ্বয়ের মাঝে সায়ী করা*
  • এ তিন কাজ হয়ে গেলে হলক বা কছর করার দ্বারা ইহরাম খুলতে হয়।
  • জীবনে একবার হলেও উমরা করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা।
  • উমরা করার জন্য কোনো নির্দিষ্ট সময় জরুরী নয় বরং বারো মাসের যে কোনো সময় উমরা করা যেতে পারে।
  • তবে উমরা রমজানে করা ভালো।
  • বছরে ৫ দিন উমরা করা নিষেধ।আর তা হলো ৯ই জিলহজ্জ থেকে ১৩ই জিল হজ্জ পর্যন্ত।

রাসূল সাঃ জীবনে কতবার হজ্জ ও উমরা করেছেন ?

উমরা;

রাসূল সাঃ মোট চারটি উমরা করেছেনে এমন বর্ণনা পাওয়া যায়।

  • ৬ষ্ঠ হিজরী সনে হুদায়বিয়ার উমারা।
  • ৭ম হিজরীতে উমরাতুল কাযা আদাই করেন।
  • উমরাতুল জিয়িররান।যা হুনাইন যুদ্ধ থেকে ফেরার পথে করে ছিলেন।
  • বিদায় হজ্জের সময় আদাই করা উমরা।

হজ্জ;

আল্লাহর নবী কতটি হজ্জ করেছেন এ বিষয়ে সাহাবায়ে কেরামের মাঝে মতানক্য রয়ছে।

  • হযরত জাবের রাঃ বলেন যে রাসূল সাঃ মোট তিনটি হজ্জ করেছেন দুইটি হিজরতের আগে ও একটি হিজরতের পর।
  • হযরত আনাস রাঃ বলেন আল্লাহর নবী সাঃ মাএ একটি হজ্জ করেছেন যা ছিল হিজরতের পর।

অনেকে বলেছেন যে রাসূল সাঃ হিজরতের পূর্বে প্রতি বছর হজ্জ করেছেন, কিন্তু জমহুরের নিকট এ বিষয়ে কোনো সহী দলীল পাওয়া যায় না।তবে এ বিষয়ে সকলে একমত যে হিজরতের পর আল্লাহর নবী শুধুমাএ একটি হজ্জ করেছেন।

বদলী হজ্জের মাসআলা;

বদলী হজ্জের অর্থ হলো কারো স্থানে অন্য কাউকে হজ্জ করার স্থলাভিষুক্ত করা।আমরা জানি যে হজ্জ মুসলমানদের জন্য একটি ফরজ ইবাদত যা পালন করা আবশ্যক কিন্তু তদুপরি অনেক সময় দেখা যায় কিছু প্রতিকুল অবস্থা শিকার হয়ে অনেকের জন্য হজ্জ করা সম্ভব হয়ে ওঠে না!! তাই বলে তো আর এটা মাফ হতে পারে না! ইসলামের সকল বিধান পালন করাই ফরজ তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে একটা বিধান পালন সম্ভব না হলে ইসলাম তার জন্য বিকল্প ব্যবস্থা রেখেছে যেমন ধরুন নামায ও রোযা যে বা যারা কোনো কারন বশত এ বিধান পালন করতে না পারল তাদের জন্য এর বিকল্প ব্যবস্থা হলো ফিদয়া প্রদান করা।কিন্তু হজ্জের বিষয়টি আলাদা কেননা এর জন্য ফিদয়া গ্রহণযোগ্য নয়। অবশ্য হ্যাঁ এর জন্যও বিকল্প ব্যবস্থা রয়েছে আর তা হলো বদলী হজ্জ।

কার জন্য ও কিভাবে বদলী হজ্জ করা যাবে এ বিষয়ে সামনে তুলে ধরা হলো।

  • হজ্জ ফরজ হওয়ার পর যে হজ্জ না করেই মারা গেছে…
  • হজ্জ ফরজ হওয়ার পর যার অর্থসম্পদ শেষ হয়ে গেছে এবং সে গরীব হয়ে গেছে এবং এ অবস্থায় মারা গেছে.,,

এ ধরনের মানুষ যদি মরার আগে ওসিয়ত করে থাকে তাহলে তার ওয়ারিছদের তার পক্ষ থেকে বদলী হজ্জ করাতে হবে।

  • অর্থ সম্পদ আছে কিন্তু যাবার সমর্থ নেই।যেমন পঙ্গু,অন্ধ,লেংড়া,বসতে অক্ষম ইত্যাদি লোকজন.
  • এমন মহিলা যার অর্থ সম্পদ আছে কিন্তু সাথে যাবার মতো কোনো মাহরাম নেই!!! এই দুই শ্রেণীর মানুষ তাদের জীবদ্দশায় অন্য কাউকে দিয়ে হজ্জ সম্পাদন করাবে।

বদলী হজ্জ সর্ম্পকে কিছু মাসআলা;

  • মৃত ব্যক্তির ওসিয়ত করে থাকলে তার ওয়ারিছদের মৃতব্যক্তির পরিত্যক্ত সম্পদের একতৃতীয়াংশ থেকে বদলী হজ্জ করানো ওয়ারিছদের জন্য ওয়াজিব। অন্যথায় নয়।
  • মৃত ব্যক্তির সম্পদের একতৃতীয়াংশ থেকে তার ওসিয়ত পূরন করা হবা এই জন্য যদি মৃত ব্যক্তির সম্পদই কম থাকে তবে ওয়ারিছরা বদলী হজ্জ করাতে বাধ্য নয়।
  • মৃত ব্যক্তি ওসিয়ত না করে থাকলে তার সন্তানদের সকলে বা যে কোনো একজন বা একাধিকজন চাইলে নিজেদের সম্পদ থেকে বাবা মায়ের নামে বদলী হজ্জ করাতে পারে।
  • বদলী হজ্জ পুরুষদের দিয়ে করান উত্তম।
  • এমন আলেম হলে ভালো হয় যার আমল ভালো,যে হজ্জের মাসআলা মাসায়েল সর্ম্পকে সম্যক অবগত। এবং যে নিজের হজ্জ পূর্বেই সমাপ্ত করেছে।
  • বদলী হজ্জের ক্ষেত্রে কার পক্ষথেকে হজ্জ করছে তা ইহরাম বাধার সময় সুস্পষ্ট করে নেওয়া ভালো।
  • কোনো সক্ষম ব্যক্তির পক্ষ থেকেও নফল হজ্জ ও উমরা করান যায়।

যে সব কারণে দম  বা সদকা দিতে হয়;

ইসলমী বিধানে হজ্জ ও উমরা এ দুটির অনেক গুরুত্ব রয়েছে বিধায় খুব খেয়াল ও য্বত্ন সহকারে এ বিষয়গুলির সমাপন করা দরকার,তদুপরি ইচ্ছা না থাকা স্বর্তেও মাঝেমাঝে হাজি সাহেবদের থেকে কিছু ছোটখাট ভুল হয়ে যায় যার দরুন এ মহৎ ইবাদত ত্রুটিযুক্ত হয়ে যায় বস্তুত যা কাম্য নয়!! সুতরাং এ ইবাদতকে কুলুসমুক্ত করার জন্য ইসলাম কিছু বিধিমালা প্রণয়ন করেছে যার নাম হলো “দম” বা সদকা” সাধাণত দম বলতে একটা পূর্ণ দুম্বা,গরু,বকরী বা ভেড়া বোঝায়।আর সদকা বলতে সাধারন সদকাতুল ফিতির(একটা ফিতরা)বোঝায়।

হজ্জের মধ্যে হাজি সহেবদের ইচ্ছানিচ্ছায় যে ভুল হয় তা দুই ধরনের (এক)এমন কিছু ভুল যার কারনে দম ওয়াজিব হয়।দুই এমন কিছু ভুল যার কারনে সদকা ওয়াজিব হয়। আমরা নিচে এ সর্ম্পকে বিস্তারিত আলোচনা তুলে ধরছি।

  • ইহরাম অবস্থায় মাথা.চেহারা.দাড়ি,হাত,পা,রান ইত্যাদি বড় অঙ্গের পূর্ণ স্থানে খুশবু লাগালে দম দিতে হবে।
  • যদি কাপড়ে খুশবু লাগানো হয় যা এক বিঘত বা তার থেকে বেশি হয় আর এ অবস্থায় একদিন অতিবাহিত করা হয় তা হলেও দম আসবে।
  • জাফরান বা কুশুম রঙ্গের কাপড় একদিন বা এক রাত পরিধান করে থাকলে তাতেও দম আসবে।
  • ইহরাম অবস্থায় নারীরা হাতে মেহেদী লাগোলে দম ওয়াজিব হবে।ঠিক এ ভাবেই যদি পুরুষেরা হাত বা দাড়িতে মেহেদী লাগায়তাতেও পূর্ণ দম ওয়াজিব হবে।
  • ইহরামকারী পুরুষ যদি সেলাই করা কাপড় পূর্ণ একদিন বা এক রাত পরিধান করে থাকে তাতেও দম ওয়াজিব হবে।আর এর থেকে কম সময় করলে সদকা করতে হবে।
  • পূর্ণ ঘাড় বা নাভীর নিচে বা যে কোনো এক বোগলের পশম দূর করার দ্বারও দম ওয়াজিব হবে।
  • সীনা বা পায়ের নলার পূর্ণ চুল মুন্ডালে দম দেওয়া ওয়াজিব হবে।
  • হাত বা পায়ের শুধুমাত্র পাঁচটি নখ কাটলে এক একটার বিনিময়ে এককটা সদকা করতে হবে।আর চারো হাত পায়ের নখ কাটলে চারটি দম দিতে হবে।
  • যদি হাত বা পায়ের কোনো নখ ভেঙ্গে যায় যার দরুন ইহরামকারী সমস্যা অনুভব করে তাহলে সে তার ঐ ভগ্ন নখ কাটতে পারে।এতে কিছুই ওয়াজিব হবে না।
  • শাহওয়াত সহকারে কোনো নারী বা বালকের সাথে মিলন করলে বা চুমু দিলে তাতেই দম ওয়াজিব হবে চাই তাতে বীর্যপাত হোক বা না হোক।
  • তবে বদ খেয়াল বা বদ নজরের কারণে যদি বীর্যপাত হয় বা স্বপ্নদোষ হয় তাহলে তাতে কিছুই ওয়াজিব হবে না।
  • হস্তমৈথুন করে বীর্যপাত ঘটালে তাতে দম ওয়াজিব হবে,আর বীর্যপাত না হলে তাতে দম ওয়জিব হবে না।
  • জানাবাত বা হায়েজ নেফাস অবস্থায় তওয়াফ করলে তাতে পূর্ণ দম ওয়াজিব হবে।
  • ইহরামাবস্থায় কেউ তিনের অধিক উকুন মারলে বা ইকুন মারার জন্য ঔষধ ব্যবহার করলে,বা অন্যের দ্বারা উকুন তোলালে বা উকুন তুলে মাটিতে ছেড়ে দিলে একটি পূর্ণ সদকা করতে হবে।
  • যে কোনো ধরনের ওয়াজিব ছুটেগেলে দম দেওয়া ওয়াজিব।

এ ধরনের আরো অনেক বিষয় আছে যা লক্ষ্য রেখে চলতে হবে।

মক্কা মুকাররমায় যিয়ারতের বিশেষ কয়েকটি স্থান;

  • মাকবারতুল মুআল্লা/জান্নাতুর মুআল্লা;

এটি মক্কার একটি কবরস্থান একারে অনেক সাহাবা,তাবেয়ী ও বুযুর্গ কবরস্থ হয়েছে।

  • মাওলুদুন নবী সাঃ

তথা মহানবী সাঃ এর জন্মস্থান এটি হারাম শরীফের পূর্ব চত্বরে অবস্থিত, বর্তমান সময়ে ঐ স্থানটিকে একটা পাছাগার বাননো হয়েছে।

  • জাবালে ছাওর;

এটি মক্কা নগরী থেকে তিন মাইল অদূরে দক্ষিন পূর্ব কোনে অবস্থিত

  • জাবালে নূর গারে হেরা;

মক্কা শরীফ থেকে তিন মাঈল দূরে  উত্তর পূর্ব দিকে অবস্থিত  একটি পাহাড়,যা ভূ-পৃষ্ঠ থেকে ২৮১ মিটার উচু। আর এ পাহাড়ের একটি গর্থকে বলা হয় গারে হেরা,এখানেই সর্বপ্রথম  ওহি নাযিল হয়েছে এবং আল্লাহর নবী নবুয়াতি পেয়েছেন।

  • মুযদালিফার ময়দান;

মুযদারিফা একটি ময়দানের নাম,মুযদালিফা অর্থ নিকটবর্তী বা রাতের বিশেষ একাংশ. জাহেলী যুগের লোকেরা এ স্থানে  একত্রিত হয়ে বংশিয় গৈারবগাধা ও বীরত্ব বর্ননা করতো,কিস্তু ইসলামের জুগে এ স্থারটিকে আল্লাহর জিকির ও তিনার বড়ত্ব বর্ণনা করা শিক্ষা দিয়ে সেখানে সকল হাজিকে একত্রিত হয়।

  • আরাফার ময়দান;

আরাফাত শব্দের অর্থ মিলিত হওয়া ,পরিচিত হওয়া.  কথিত আছে হযরত আদম আঃ এখানে হযরত হাওয়া আঃ এর সাথে মিলিত হয় এ জন্য এ স্থানকে আরাফাত ময়দান বলা হয়।

এখানে একটি মসজিদ রয়েছে যার নাম মসজিদে নামিয়া ।

  • মিনা মসজিদে খায়েফ;

মসজিদে হারাম থেকে ৭ কিঃ মিঃ দূরত্বে অবস্তিত একটি স্থানের নাম হল মিনা।এ স্থানের পশ্চিম দক্ষিন পাশে অবস্থিত মসজিদে খায়েফ। বার্ণিত আছে এখানে ৭০ জন নবীর কবর অছে।

  • মসজিদে জিন;

জান্নাতুল মুআল্লার একটু সামনে উত্তর পূর্ব কোনে অবস্থিত একটি মসজিদ,এখানে জিনেরা হাজির হয়ে রাসূল সাঃ থেকে তেলওয়াত শুনেছে। অন্য এক বর্ণনায় আছে জিনেদের প্রতিনিধি দলের সাথে সাক্ষাত করতে যাওয়ার সময় আল্লাহর নবী নাঃ আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাঃ কে এ স্থানে রেখে গিয়েছিলেন এ জন্য এ মসজিদের নাম মসিজিদে জিন।

  • মসজিদে তানঈম/মসজিদে আয়েশা;

মসজিদে হারাম থেকে মদিনা শরীফের রোডে ৭০৫ কিলোমিটার দূরে একটি মসজিদ যেখান থেকে আয়শা রাঃ উমরার নিয়ত করেছিলেন,হাজি সাহেবেরা সাধারণত এখান থেকে উমরার নিয়ত করে থাকেন।

  • জাবালে আবু কুবায়েছ;

এটা একটি পাহাড়,মসজিদে হারামের দক্ষিণ পুর্ব পাশে অবস্থিত। যার কিছু অংশ কেটে কাবার চত্বরের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। হযরত সূহ আঃ এর তুফানের সময় এ পাহাড়ের উপর হজরে আসওয়াদ রাখা হয়েছিল। মুজাহিদ রঃ এর এক বর্ণনায় আছে যে আল্লাহ তা‘আলা পৃথিবীতে যত পাহাড় বানিয়েছেন তার মধ্যে এটা প্রথম পাহাড়।

মদিনা  মুনাওয়ারায় যিয়ারতের বিশেষ কয়েকটি স্থান;

  • জান্নাতুল বাকী;

মদিনা শরীফের কবরস্থানের নাম জান্নাতুল বাকী,এটি মসজিদে নববীর সন্নিকটে পূর্বদিকে অবস্থিত।রাসূল সাঃ এর আহলে বায়াত,সাহাবায়ে কেরাম,তাবেয়ীন ও বিভিন্ন শুহাদায়ে কেরাম এখানে কবরস্থান রয়েছেন।হজ্জ করার প্রক্কালে এ কবস্থান যিয়ারত করা মুম্তহাব।

  • শুহাদায়ে উহুদ;

এহুদ পাহাড়ের পাদদেশে একটি কবস্থান যেখানে হযরত হামযা রাঃ,আব্দুল্লাহ ইবনে জাহাশ ও মুসাব ইবনে উমায়ের রাঃ সহ আরো ৭০ জন সাহাবীর কবর রয়েছে।

  • মসজিদে কোবা;

এটি মুসলমানদের প্রথমমসজিদ যা হিজরতের পর রাসূল সাঃ নিজ হাতে নির্মান করেছেন।সময় করে এ মসজিদ যিয়ারত করা সুন্নত.রাসূল রাঃ বলেছেন যে ব্যক্তি মসজিদে কোবায় এসে দুই রাকাত নামায আদাই করবে  তাকে একটি উমরার সমতুল্য সুয়ওাব দেওয়অ হবে।

  • মাসজিদে জুম‘আ;

এ মসজিদটি কোবার পথের সান্নিকটে,মদিনায় আসার পর সর্বপ্রথম আল্লাহর নবী সাঃএ মসজিদে জুমার নামায আদাই করে ছিলেন।

  • মসজিদে কেবলাতাইন;

হিজরতের পর মুসলমানরা বাইতুল মুকাদ্দাসের দিকে মুখ করে নামায আদাই করত,একদা মদিনার এক মসজিদে নামায পড়াবস্থায় আল্লাহ তা‘আলা কেবলা পরিবর্তন করে কাবার দিকে নামায পড়ার নির্দেশ দেন আর এ নির্দেষ এ মসজিদে হয়েছিল বিধায় এ মসজিদকে মসজিদে কেবলাতাইন বলা হয়।

  • মাসজিদে সাব‘আ;

সালা পাহাড়ের নিচে পশ্চিম প্রন্তে একটা মসজিদ আছে যায নাম হলো মসজিদে ফাতাহ। এ মসজিদের আসেপাশে বিভিন্ন সাহাবাদের নামে প্রতিষ্ঠিত ৭ টি  মসজিদ রয়েছে যেগুলোকে একত্রে মসেজিদে সাব‘আ বলা হয়।

  • মাসজিদে গামামাহ;

মসজিদে নববীর দক্ষিন পষ্চিম কোনে অবস্থিত একটি মসজিদের নাম হলো মসজিদে গামামাহ,রাসূল সাঃ দুই ঈদের নামায এখানে আদাই করতেন।

  • মাসজিদে আবু বকর;

মসজিদে গামামাহ এর উত্তর দিকে খুবই সন্নিকটে একটি মসজিদ আচে যেখানে হযরত আবুবকর রাঃ ঈদের নামায আদাই করে ছিলেন বিধায় এ মসজিদকে মসজিদে আবুবকর বলা হয়।

  • মাসজিদে ওমর;

মাসজিদে গামামাহ এর সামান্য দক্ষিনে একটি মসজিদ আছে যেখানে হযরত ওমর রাঃ মাঝে মাঝে নামায আদা্ করতেন বিধায় এ মসজিদের নাম মসজিদে ওমর রাখা হয়েছে।

  • মাসজিদুস সাজদাহ;

মসজিদুস সাজদাহ এটিই সে মসজিদ যেখানে আল্লাহর নবী সাঃ শুকরানা দীর্ঘ সেজদা আদাই করেছিলেন।কারন এখানে জিবরাঈল আঃ অহী নিয়ে এসেছিলেন যে যে ব্যক্তি অল্লাহর নবীর উপর দুরূদ পড়বে আল্লাহ তা‘আলাও তার উপড় দুরূদ পরবেন।যে আল্লাহর নবীকে সালাম দিবে আল্লাহ তা‘আলাও তাকে সালাম দিবেন।

  • মাসজিদুল ইজবাহা;

এখানে আল্লাহর নবী সাঃ দুই রাকাত নামায আদাই করে তিনটা দু‘আ করেছিলেন যার দুইটি কবূল করা হয়েছিল ও একটি কবূল করা হয়নি। দু‘আ গুলি হলো

  1. আল্লাহ তা‘আলা যেন এ উম্মতকে দূর্ভিক্ষ দিয়ে ধবংস না করেন আর এটা কবূল করা হয়েছে।
  2. আল্লাহ তা‘আলা যেন এ উম্মতকে নিমজ্জিত করে ধবংস না করেন, এটাও কবূল করা হয়েছে।
  3. যেন তার উম্মতেরা পরস্পর গৃহযুদ্ধে লিপ্ত না হয়। কিন্তু এ দু‘আটা কবূল করা হয়নি।

  • মাসজিদুশ শাইখাইন;

বদর যুদ্ধে গমনকালে আল্লাহর নবী সাঃ এখানে শুক্রবারে আসর ও মাগরিবের নামায আদাই করেন,এবং এখানে সেনা নির্বাচন করেন,ও ছোট দুই সাহবীকে ফেরত পাঠান।

বিঃ দ্রঃ
এ সকল মাসজিদগুলো যিয়ারতে গেলে শুধু দেখে চলে না এসে অন্তত দুই রাকাত নামায আদাই করা উত্তম।

এখানে মন্তব্য করুন

লেখক পরিচিতি

নামঃ মুহাম্মদ ইউনুছ আলী
ইফতাঃ দারুল আরকাম মাদরাসা, কামরাঙ্গীচর (২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষ)।
তাকমিলঃ জামিয়া শরইয়্যাহ মালিবাগ (২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষ)।
চলমান শিক্ষাঃ
বি,এ,অনার্সঃ তোলারাম কলেজ, নারায়ণগঞ্জ।
ফাজিলঃ ঢাকা আলিয়া, বখশি বাজার।
ইমামঃ নজরুল অয়েল মিলস্, কাঁচপুর।
সিনিয়ার শিক্ষকঃ জামিয়াতুশ শুহাদা দেওয়ানবাগ মাদরাসা, নারায়ণগঞ্জ।
মোবাইলঃ +৮৮০১৯৯৬-১০৩৪৩৫
ই-মেইলঃ mmyounusali@gmail.com

আমাদের অনুসরণ করুন

সর্বশেষ ইউটিউব ভিডিও

Play Video

সাম্প্রতিক পোস্ট

সাম্প্রতিক পৃষ্ঠা