বিপদ আপদে অবশ্যই আমাদেরকে ধৈর্যধারণ করতে হবে, হতাশ হলে চলবে না। সবর ও সালাতের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে চাইতে হবে সাহায্য। আল্লাহ পরীক্ষা নিবেন এটাই স্বাভাবিক বিষয়।
মহামারী করোনা ভাইরাস ও তার সমজাতীয় অন্যান্য ভাইরাস -এর বিষয়ে কুরআন ও হাদীসের নির্দেশনা

সূচিপত্র

মহামারী করোনা ভাইরাস ও তার সমজাতীয় অন্যান্য ভাইরাস -এর বিষয়ে কুরআন ও হাদীসের নির্দেশনা

মুফ্তী মুহসিন উদ্দীন (শান্তিনগর,ঢাকা)
যাবতীয় প্রশংসা মহান আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত এর জন্য যিনি আমাদেরকে এ ধারায় বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লাম এর উম্মত বানিয়ে পাঠিয়েছেন, সে জন্য আমরা সকলে অন্তরের অন্তস্থল থেকে মহান আল্লাহর কাছে শুকরিয়া জ্ঞাপন করি, আল-হামদুলিল্লাহ। শতকোটির দরুদ প্রেরণ করি মানবতার মুক্তির অগ্রদূত, দোজাহানের সরদার, আখেরি পয়গম্বর,মুহাম্মাদে আরাবী, সাইয়্যেদুনা হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি, যিনি এধারায় অন্ধকারে আচ্ছন্ন লোকদেরকে দেখিয়েছেন আলোর পথ এবং মাটির মানুষকে করেছেন সোনার মানুষে পরিণত।
হামদ ও সালাতের পর মূলকথা হল !
বিপদ আপদে অবশ্যই আমাদেরকে ধৈর্যধারণ করতে হবে, হতাশ হলে চলবে না। সবর ও সালাতের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে চাইতে হবে সাহায্য। আল্লাহ পরীক্ষা নিবেন এটাই স্বাভাবিক বিষয়,

এই দুইটি বিষয়ে মহান রব্বে কারিম সূরা আল-বাকারা-তে বলেছেন-

يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اسْتَعِينُوا بِالصَّبْرِ وَالصَّلَاةِ إِنَّ اللَّهَ مَعَ الصَّابِرِينَ [البقرة: 153

অনুবাদঃ
হে মু’মিনগণ! ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করো। নিশ্চয় মহান আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন।

সংক্ষিপ্ত তাফসীরঃ
মানুষের দু’টি অবস্থা হয়, আরাম ও স্বস্তি এবং কষ্ট ও অস্বস্তি। আরাম ও স্বস্তির সময় আল্লাহর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন এবং কষ্ট ও অস্বস্তির সময় ধৈর্য ধারণ ও আল্লাহর নিকট সাহায্য কামনার তাকীদ করা হয়েছে। হাদীসে এসেছে, “মু’মিনের ব্যাপারটা আশ্চর্যজনক। তার জন্য আনন্দের কোন কিছু হলে, সে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। আর ক্ষতিকর কোন কিছু হলে, সে ধৈর্য ধারণ করে। এই উভয় অবস্থা তার জন্য কল্যাণকর।” (মুসলিম ২৯৯৯)
ধৈর্য দু’প্রকারের প্রথম হল,
হারাম ও পাপ কাজ ত্যাগ করা ও তা থেকে দূরে থাকার উপর এবং লোভনীয় (অবৈধ) জিনিস বর্জন ও সাময়িক সুখ ত্যাগ করার উপর ধৈর্য ধারণ করা।
দ্বিতীয় হল,
আল্লাহর নির্দেশাবলী পালন করতে গিয়ে যে কষ্টের সম্মুখীন হতে হয়, তা ধৈর্য ও সংযমের সাথে সহ্য করা। কেউ কেউ সবর ও ধৈর্যের ব্যাখ্যা এইভাবে করেছেন, আল্লাহর পছন্দনীয় কর্মসমূহ সম্পাদন করা; তাতে দেহ ও আত্মায় যতই কষ্ট অনুভব হোক না কেন। আর আল্লাহর অপছন্দনীয় কর্মসমূহ থেকে দূরে থাকা; তাতে প্রবৃত্তি ও কামনা তাকে সেদিকে যতই আকৃষ্ট করুক না কেন।

(ইবনে কাসীর)

এবং

وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ بِشَيْءٍ مِنَ الْخَوْفِ وَالْجُوعِ وَنَقْصٍ مِنَ الْأَمْوَالِ وَالْأَنْفُسِ وَالثَّمَرَاتِ وَبَشِّرِ الصَّابِرِينَ [البقرة: 155

অনুবাদঃ
এবং অবশ্যই আমি তোমাদিগকে পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, মাল ও জানের ক্ষতি ও ফল-ফসল বিনষ্টের মাধ্যমে। তবে সুসংবাদ দাও সবরকারীদের।

সূরা আল-বাকারার অন্যস্থানে আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত বলেন-

أَمْ حَسِبْتُمْ أَنْ تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ وَلَمَّا يَأْتِكُمْ مَثَلُ الَّذِينَ خَلَوْا مِنْ قَبْلِكُمْ مَسَّتْهُمُ الْبَأْسَاءُ وَالضَّرَّاءُ وَزُلْزِلُوا حَتَّى يَقُولَ الرَّسُولُ وَالَّذِينَ آمَنُوا مَعَهُ مَتَى نَصْرُ اللَّهِ أَلَا إِنَّ نَصْرَ اللَّهِ قَرِيبٌ [البقرة: 214

অনুবাদঃ
তোমরা কি এমন ধারণা পোষণ করো যে, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ লাভ করবে, অথচ এখনো পর্যন্ত তোমাদের আগের লোকেদের মতো অবস্থা তোমাদের সামনে আসেনি ?  তাদেরকে অভাবের তীব্র তাড়না এবং মসীবত স্পর্শ করেছিলো এবং তারা এতদূর প্রকম্পিত হয়েছিলো যে, নবী ও তার সাথের মু’মিনগণ চিৎকার করে বলেছিলো মহান আল্লাহ্‌র সাহায্য কখন আসবে ? জেনে রেখো, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ্‌র সাহায্য নিকটবর্তী।

সংক্ষিপ্ত তাফসীরঃ
মদীনায় হিজরত করার পর মুসলিমরা যখন ইয়াহুদী, মুনাফিক এবং আরবের মুশরিকদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পীড়া ও কষ্ট পেতে লাগল, তখন কোন কোন মুসলিম নবী করীম (সাঃ)-এর কাছে অভিযোগ করল। তাই মুসলিমদেরকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য এই আয়াত নাযিল হল এবং রসূল (সাঃ)ও বললেন যে, “তোমাদের পূর্বের লোকদেরকে তাদের মাথা থেকে পা পর্যন্ত করাত দিয়ে চিরা হত এবং লোহার চিরুনী দিয়ে তাঁদের গোশত ও চামড়াকে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করা হত। কিন্তু এই অকথ্য যুলুম-নির্যাতন তাদেরকে তাদের দ্বীন থেকে ফেরাতে পারেনি।” অতঃপর বললেন, “আল্লাহর শপথ! মহান আল্লাহ এই দ্বীনকে এমনভাবে জয়যুক্ত করবেন যে, একজন আরোহী (ইয়ামানের) সানআ’ থেকে হাযরে-মাউত পর্যন্ত একা সফর করবে, তার মধ্যে আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো ভয় থাকবে না।”
(সহীহ বুখারী ৩৬১২)
এ থেকে নবী করীম (সাঃ)-এর উদ্দেশ্য, মুসলিমদের মধ্যে দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকার প্রেরণা ও অটল থাকার দৃঢ় সংকল্প সৃষ্টি করা। এই জন্যই বলা হয়, ‘যা আসবেই, তা আসন্ন’। আর ঈমানদারদের জন্য আল্লাহর সাহায্য যেহেতু সুনিশ্চিত তাই তা নিকটেই।

(আহসানুল বায়ান তাফসীর)

আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত সূরা ইউসুফ এর মধ্যে আরো বলেন

حَتَّى إِذَا اسْتَيْأَسَ الرُّسُلُ وَظَنُّوا أَنَّهُمْ قَدْ كُذِبُوا جَاءَهُمْ نَصْرُنَا فَنُجِّيَ مَنْ نَشَاءُ وَلَا يُرَدُّ بَأْسُنَا عَنِ الْقَوْمِ الْمُجْرِمِينَ [يوسف: 110

অনুবাদঃ
অবশেষে যখন রসূলগণ নিরাশ হল [১] এবং (লোকে) ভাবল যে, তাদেরকে মিথ্যা (প্রতিশ্রুতি) দেওয়া হয়েছে, [২] তখন তাদের কাছে আমার সাহায্য এল। [৩] অতঃপর আমি যাকে ইচ্ছা করলাম, তাকে উদ্ধার করা হল। [৪] আর অপরাধী সম্প্রদায় হতে আমার শাস্তি রদ করা হয় না।

সংক্ষিপ্ত তাফসীরঃ
[১] এ নৈরাশ্য স্বীয় সম্প্রদায়ের ঈমান নিয়ে আসার ব্যাপারে ছিল।
[২] ক্বিরাআত হিসেবে এই আয়াতের কয়েকটা অর্থ করা হয়েছে।
কিন্তু সবচেয়ে উপযুক্ত অর্থ এই যে, ظَنُّوا এর কর্তা القوم অর্থাৎ কাফেরদেরকে করা হোক। অর্থাৎ কাফেররা প্রথমে তো শাস্তির ধমক পেয়ে ভয় করল; কিন্তু যখন বেশি দেরী হল তখন ধারণা করল যে, পয়গম্বরের দাবি অনুসারে আযাব তো আসছে না, আর না আসবে বলে মনে হচ্ছে, সেহেতু বলা যায় যে, নবীদের সাথেও মিথ্যা ওয়াদা করা হয়েছে। উদ্দেশ্য নবী করীম (সাঃ)-কে সান্তনা প্রদান করা যে, তোমার সম্প্রদায়ের উপর আযাব আসতে দেরী হওয়ার কারণে ঘাবড়ানোর দরকার নেই, পূর্বের সম্প্রদায়সমূহের উপর আযাব আসতে অনেকানেক বিলম্ব হয়েছে এবং আল্লাহর ইচ্ছা ও হিকমত অনুসারে তাদেরকে অনেক অবকাশ দেওয়া হয়েছে, এমনকি রসূলগণ স্বীয় সম্প্রদায়ের ঈমানের ব্যাপারে নিরাশ হয়ে গেছেন এবং লোকেরা ধারণা করতে লেগেছে যে, তাদের সাথে আযাবের মিথ্যা ওয়াদা করা হয়েছে।
[৩] এতে বাস্তবে মহান আল্লাহর অবকাশ দানের সেই নীতির কথা বর্ণনা করা হয়েছে, যা তিনি অবাধ্যদেরকে দিয়ে থাকেন, এমনকি এ সম্পর্কে তিনি স্বীয় নবীদের ইচ্ছার বিপরীতও অধিকাধিক অবকাশ দেন, তাড়াহুড়া করেন না। ফলে অনেক সময়ে নবীদের অনুবর্তীরাও আযাব থেকে নিরাশ হয়ে বলতে শুরু করেন যে, তাদের সাথে এমনিই মিথ্যা ওয়াদা করা হয়েছে। স্মরণ থাকে যে, মনের মধ্যে শুধু এ ধরনের কুমন্ত্রণার উদ্রেক ঈমানের পরিপন্থী নয়।
[৪] এ উদ্ধারের অধিকারী শুধু ঈমানদাররাই ছিল।
(আহসানুল বায়ান তাফসীর)

কেন হচ্ছে এসকল মহামারী ?

১. পরস্পর সৌহার্দপূর্ণ বিষয়গুলিতে ঘাটতি থাকার কারণে, যেমনটি এসেছে কুরআনুল কারীমে-

وَلَوْلَا دَفْعُ اللَّهِ النَّاسَ بَعْضَهُمْ بِبَعْضٍ لَهُدِّمَتْ صَوَامِعُ وَبِيَعٌ وَصَلَوَاتٌ وَمَسَاجِدُ يُذْكَرُ فِيهَا اسْمُ اللَّهِ كَثِيرًا وَلَيَنْصُرَنَّ اللَّهُ مَنْ يَنْصُرُهُ إِنَّ اللَّهَ لَقَوِيٌّ عَزِيزٌ [الحج: 40

অনুবাদঃ
আল্লাহ যদি মানব জাতির এক দলকে অন্য দল দ্বারা প্রতিহত না করতেন, তাহলে বিধ্বস্ত হয়ে যেত খ্রিষ্টান সংসার-বিরাগীদের উপাসনা স্থান, গীর্জা, ইয়াহুদীদের উপাসনালয় এবং মসজিদসমূহ; যাতে অধিক স্মরণ করা হয় আল্লাহর নাম। আর আল্লাহ নিশ্চয়ই তাকে সাহায্য করেন যে তাঁকে (তাঁর ধর্মকে) সাহায্য করে। আল্লাহ নিশ্চয়ই মহাশক্তিমান, চরম পরাক্রমশালী।

২. রব্বে কারিম মানুষকে সৃষ্টি করেছেন যুগ-যুগান্তরে এবং মানুষের খাবারের ব্যবস্থা করেছেন।

৩. এবং কোনটা ভালো কোনটা ভালো না সেটাও বলে দিয়েছেন।

৪. যেগুলি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর মহান আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত সেগুলি নিষিদ্ধ করেছেন।

২) .   মহান আল্লাহ তায়া’লা এব্যাপারে বলেছেন যদি আমরা অপবিত্র বস্তু ভক্ষণ করি সেজন্য আমরা নিজেরাই দায়ী যেমন তিনি বলেন-

كُلُوا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا رَزَقْنَاكُمْ وَمَا ظَلَمُونَا وَلَكِنْ كَانُوا أَنْفُسَهُمْ يَظْلِمُونَ [البقرة: 57

অনুবাদঃ
(আর বললাম,) যে সকল ভাল জিনিস তোমাদের জন্য দিলাম তা থেকে আহার কর। তারা (নির্দেশ না মেনে) আমার প্রতি কোন অন্যায় করেনি, বরং তারা নিজেদেরই প্রতি অন্যায় করেছিল।

অন্য স্থানে আরও বলেন

يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُلُوا مِنْ طَيِّبَاتِ مَا رَزَقْنَاكُمْ وَاشْكُرُوا لِلَّهِ إِنْ كُنْتُمْ إِيَّاهُ تَعْبُدُونَ [البقرة: 172

অনুবাদঃ
হে মু’মিনগণ! আমার দেয়া পবিত্র বস্তুগুলো খেতে থাকো এবং মহান আল্লাহ্‌র উদ্দেশ্যে শোকর করতে থাকো, যদি তোমরা তাঁরই ‘ইবাদত করে থাকো।

সংক্ষিপ্ত তাফসীরঃ
এই আয়াতে ঈমানদারদেরকে সেই সমস্ত পবিত্র জিনিস খাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যা আল্লাহ হালাল করেছেন। আর খেয়ে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করার তাকীদ করা হয়েছে।
প্রথমতঃ এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, আল্লাহ কর্তৃক হালালকৃত জিনিসগুলোই পাক-পবিত্র এবং তাঁর হারামকৃত জিনিসগুলো অপবিত্র; যদিও তা মানুষের কাছে প্রিয় ও তৃপ্তিকর। (যেমন, ইউরোপবাসীদের নিকট শুয়োরের গোশত খুবই প্রিয়)।
দ্বিতীয়তঃ মূর্তিদের নামে উৎসর্গীকৃত জানোয়ার ও জিনিসাদি মুশরিকরা যে নিজেদের উপর হারাম করে নিত (যার বিস্তারিত আলোচনা সূরা আনআম ৬:১৩৬-১৪০ আয়াতে আছে), তাদের এ কাজ ভুল ছিল, এইভাবে কোন হালাল জিনিস হারাম হয় না। তোমরাও তাদের মত (হালালকে) হারাম করো না। (হারাম কেবল সেই জিনিসগুলো যার বর্ণনা পরের আয়াতে রয়েছে।)
তৃতীয়তঃ যদি তোমরা কেবল আল্লাহরই ইবাদত সম্পাদনকারী হও, তাহলে তাঁর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনে যত্নবান হও।
(আহসানুল বায়ান তাফসীর)

৩).  আর বিশেষ ধরণের খাবার নিষিদ্ধ করতে মহান আল্লাহ রাব্বুল ঘোষণা করেছেন যে,

إِنَّمَا حَرَّمَ عَلَيْكُمُ الْمَيْتَةَ وَالدَّمَ وَلَحْمَ الْخِنْزِيرِ وَمَا أُهِلَّ بِهِ لِغَيْرِ اللَّهِ فَمَنِ اضْطُرَّ غَيْرَ بَاغٍ وَلَا عَادٍ فَلَا إِثْمَ عَلَيْهِ إِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَحِيمٌ [البقرة: 173

অনুবাদঃ
নিশ্চয় মহান আল্লাহ তোমাদের প্রতি হারাম করেছেন মৃত-জীব, রক্ত এবং শূকরের মাংস এবং সেই দ্রব্য যার প্রতি যবেহ করার সময় মহান আল্লাহ ছাড়া অন্যের নাম নেয়া হয়েছে। তবে যে ব্যক্তি নিরূপায় হয়ে পড়ে, কিন্তু সে নাফরমান ও সীমালঙ্ঘনকারী নয়, তার কোন গুনাহ নেই। নিশ্চয় মহান আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।

সংক্ষিপ্ত তাফসীরঃ
এই আয়াতে চারটি হারামকৃত জিনিসের উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এখানে إنما শব্দ দ্বারা সীমিতকরণে এই সন্দেহের সৃষ্টি হয় যে, হারাম কেবল এই চারটি জিনিসই। অথচ এ ছাড়াও আরো অনেক জিনিস হারাম আছে। তাই
প্রথমতঃ এটা বুঝে নেওয়া উচিত যে, এই সীমিতকরণ বিশেষ কথা প্রসঙ্গে এসেছে। অর্থাৎ, মুশরিকরা হালাল জানোয়ারকেও হারাম করে নিত। তাই মহান আল্লাহ বললেন, হারাম শুধুমাত্র এইগুলো। কাজেই এই সীমিতকরণ তুলনামূলক। অর্থাৎ, এ ছাড়াও আরো হারাম জিনিস আছে যা এখানে উল্লিখিত হয়নি।
দ্বিতীয়তঃ হাদীসে প্রাণীর হালাল-হারাম সংক্রান্ত দু’টি মূলনীতি বলে দেওয়া হয়েছে। সেটাকে আয়াতের সঠিক তাফসীর হিসেবে সামনে রাখা উচিত। হিংস্র পশুর মধ্যে শিকারী দাঁত বিশিষ্ট পশু এবং পাখীর মধ্যে শিকারী নখ বিশিষ্ট পাখী হারাম। তৃতীয়তঃ যেসব পশুর হারাম হওয়ার কথা হাদীস দ্বারা প্রমাণিত; যেমন গাধা, কুকুর ইত্যাদি, সেগুলোও হারাম। এ থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, হাদীসও কুরআনের মত দ্বীনের উৎস এবং শরীয়তের দলীল। দুটোকে মেনে নিলেই দ্বীন পরিপূর্ণ হবে, শুধু কুরআন মানলে ও হাদীসকে প্রত্যাখ্যান করলে দ্বীন পরিপূর্ণ হবে না।
(আহসানুল বায়ান তাফসীর)

নিষিদ্ধতার এ বিষয়টি মহান আল্লাহ সুরা আল মায়িদা তে আরো পরিষ্কারভাবে বলেছেন

حُرِّمَتْ عَلَيْكُمُ الْمَيْتَةُ وَالدَّمُ وَلَحْمُ الْخِنْزِيرِ وَمَا أُهِلَّ لِغَيْرِ اللَّهِ بِهِ وَالْمُنْخَنِقَةُ وَالْمَوْقُوذَةُ وَالْمُتَرَدِّيَةُ وَالنَّطِيحَةُ وَمَا أَكَلَ السَّبُعُ إِلَّا مَا ذَكَّيْتُمْ وَمَا ذُبِحَ عَلَى النُّصُبِ وَأَنْ تَسْتَقْسِمُوا بِالْأَزْلَامِ ذَلِكُمْ فِسْقٌ الْيَوْمَ يَئِسَ الَّذِينَ كَفَرُوا مِنْ دِينِكُمْ فَلَا تَخْشَوْهُمْ وَاخْشَوْنِ الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الْإِسْلَامَ دِينًا فَمَنِ اضْطُرَّ فِي مَخْمَصَةٍ غَيْرَ مُتَجَانِفٍ لِإِثْمٍ فَإِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَحِيمٌ [المائدة: 3

অনুবাদঃ
তোমাদের জন্য হারাম (অবৈধ) করা হয়েছে মৃত পশু,  রক্ত  ও  শূকর-গোশত,  আল্লাহ ভিন্ন অন্যের নামে  উৎসর্গীকৃত পশু, [১] শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মৃত জন্তু, [২] ধারবিহীন কিছু দ্বারা আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে মৃত জন্তু, [৩] পতনে মৃত জন্তু,[৪] শৃঙ্গাঘাতে মৃত জন্তু [৫] এবং হিংস্র পশুর খাওয়া জন্তু; [৬] তবে তোমরা যা যবেহ দ্বারা পবিত্র করেছ তা ছাড়া। [৭] আর যা মূর্তি পূজার বেদীর উপর বলি দেওয়া হয় তা ৮] এবং জুয়ার তীর দ্বারা ভাগ্য নির্ণয় করা, [৯] এ সব পাপকার্য। আজ অবিশ্বাসীগণ তোমাদের ধর্মের বিরুদ্ধাচরণে হতাশ হয়েছে। সুতরাং তাদেরকে ভয় করো না, শুধু আমাকে ভয় কর। আজ তোমাদের জন্য তোমাদের ধর্ম (ইসলাম) পূর্ণাঙ্গ করলাম ও তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের ধর্ম হিসাবে মনোনীত করলাম। তবে যদি কেউ ক্ষুধার তাড়নায় (নিষিদ্ধ জিনিষ খেতে) বাধ্য হয়; কিন্তু ইচ্ছা করে  পাপের  দিকে  ঝুঁকে  না,  তাহলে (তার জন্য) আল্লাহ চরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। [১০]

সংক্ষিপ্ত তাফসীরঃ
[১] এখান থেকে ঐ সমস্ত নিষিদ্ধ বা হারামকৃত (পশুর) ব্যাপারে আলোচনা শুরু হচ্ছে, যার ইঙ্গিত সূরার প্রারম্ভে দেওয়া হয়েছে। আয়াতের এই অংশটুকু সূরা বাক্বারাতে উল্লেখ হয়েছে। ‘মৃত’ বলতে, এমন হালাল পশু যা যথানিয়মে যবেহ ছাড়াই স্বাভাবিকভাবে অথবা কোন দুর্ঘটনায়  মারা গেছে কিংবা শরীয়তের তরীকার পরিপন্থী নিয়মে যাকে যবেহ করা হয়েছে; যেমন, গলা টিপে অথবা পাথর ও লাঠির আঘাত ইত্যাদি দ্বারা মারা হয়েছে কিংবা বর্তমানের যান্ত্রিক যবেহ দ্বারা মারা হয়েছে যা আসলে আঘাত দিয়ে হত্যা করার শামিল (তা আসলে মৃত এবং হারাম)। তবে হাদীসে দু’টো মৃত প্রাণী বৈধ করা হয়েছে। আর তা হল, মাছ ও পঙ্গপাল। এ দু’টো মৃত হারাম হওয়ার বিধান থেকে স্বতন্ত্র। ‘রক্ত’ বলতে প্রবাহিত রক্ত। অর্থাৎ, যবেহ করার পর যে রক্ত বের হয়ে বয়ে যায়। গোশতের সাথে যে রক্ত লেগে থাকে, তা হালাল। এছাড়াও দু’টো রক্তকে হাদীসে বৈধ বলা হয়েছেঃ কলিজা (লিভার) এবং তিল্লী (প্লীহা)।
শুয়োর নিকৃষ্ট জানোয়ার;
বিধায় আল্লাহ তাকে হারাম করেছেন। শরীয়তে এমন জানোয়ারও হারাম, যাকে গায়রুল্লাহর নামে যবেহ করা হয়েছে। যেমন, আরবের মুশরিকরা লাত এবং উয্যা ইত্যাদির নামে এবং অগ্নিপূজকরা আগুনের নামে (বা উদ্দেশ্যে) যবেহ করত। আর এরই আওতাভুক্ত হল সেই পশু, যাকে অজ্ঞ মুসলিমরা মৃত ওলীদের ভালবাসায়, তাদের সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে অথবা তাদের ভয়ে এবং তাদের নিকট (কোন কিছু পাওয়ার) আশায় কবর ও আস্তানাসমূহে যবেহ করে বা আস্তানার খাদেমকে ওলীর নামে দান করে আসে।
[২] যাকে গলা টিপে হত্যা করা হয়েছে অথবা নিজেই কোনভাবে ফাঁস লাগা অবস্থায় শবাসরুদ্ধ হয়ে মৃত্যু বরণ করেছে, উভয় অবস্থায় এই মৃত (পশু ভক্ষণ) করা হারাম। [৩] অর্থাৎ, পাথর অথবা লাঠি অথবা অন্য কোন জিনিস দ্বারা আঘাত করার কারণে বিনা যবেহতে মারা গেছে।
জাহেলী যুগে এই সমস্ত পশুকে (হালাল মনে করে) ভক্ষণ করা হত। ইসলামী শরীয়তে তা নিষেধ করে দেওয়া হয়ছে। বন্দুকের শিকার; বন্দুক দ্বারা শিকার করা হয়েছে এমন পশুর ব্যাপারে উলামাদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। ইমাম শাওকানী (রঃ) বন্দুক দ্বারা শিকার করা পশুর ব্যাপারে একটি হাদীস থেকে প্রমাণ উল্লেখ করে তা হালাল বলেছেন। অর্থাৎ (শিকারী) যদি ‘বিসমিল্লাহ’ বলে গুলি ছুঁড়ে এবং যবেহ করার পূর্বেই শিকার মারা যায়, তাহলে তাঁর মতানুসারে তা ভক্ষণ করা বৈধ। (ফাতহুল ক্বাদীর) (অন্য মতে, যে বন্দুকের গুলি শিকারের দেহ ভেদ করে যায়, চামড়া কেটে ফেলে রক্তপাত ঘটায় সে বন্দুকের শিকার হালাল। পক্ষান্তরে ভেদ না করে কেবল আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে মারা গেলে তা খাওয়া বৈধ নয়।)
(সিলসিলাহ সহীহাহ ৫/৫১১)
[৪] (ঐ পশু) যে কোনভাবে পড়ে অথবা কেউ পাহাড় বা অন্য কোন উঁচু জায়গা থেকে ধাক্কা মারার কারণে পড়ে গিয়ে মারা যায়। [৫] نطيحة , منطوحة ঐ পশুকে বলা হয়; যাকে অন্য পশু শিং দ্বারা ধাক্কা মেরেছে বা শিং-লড়ায়ে বিনা যবাইয়ে তার মৃত্যু হয়েছে।
[৬] অর্থাৎ সিংহ, চিতা ও নেকড়ে বাঘ ইত্যাদি (শিকারী বা ছেদক দাঁতবিশিষ্ট) হিংস্রজন্তু যদি কোন শিকারকে নিজে খাওয়ার উদ্দেশ্যে ধরার ফলে মৃত্যু হয়েছে (এমন পশু)। জাহেলী যুগে এই ধরণের মৃত জানোয়ার খাওয়া হত।
(কিন্ত ইসলাম এই ধরণের মৃত পশু খাওয়া হারাম করে দিয়েছে।)
[৭] অধিকাংশ মুফাসসিরগণের নিকটে এই ব্যতিক্রম পূর্বে উল্লিখিত শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মৃত জন্তু, ধারবিহীন কিছু দ্বারা আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে মৃত জন্তু, পতনে মৃত জন্তু, শৃঙ্গাঘাতে মৃত জন্তু এবং হিংস্র পশুর খাওয়া জন্তুর ব্যাপারে। অর্থাৎ, ব্যতিক্রম হল, যদি ঐ সকল পশুকে তোমরা এমন অবস্থায় পাও যে, তার মৃত্যু হয়নি; এখনো জীবিত আছে, তারপর তাকে শরয়ী পদ্ধতিতে যবেহ কর, তাহলে তোমাদের জন্য (ঐ পশু) খাওয়া বৈধ হবে। জীবিত থাকার চিহ্ন হল, যবেহ করার সময় যেন তার হাত-পা নড়ে ওঠে। কিন্তু ছুরি চালানোর সময় যদি এই অবস্থা না হয়, তাহলে জানতে হবে সে পশুটি মৃত। যবেহর শরয়ী পদ্ধতি হল, ‘বিসমিল্লাহ’ বলে ধারালো ছুরি দ্বারা এমনভাবে তার গলায় পেঁচাতে হবে যেন তার সমস্ত মোটা শিরাগুলি কেটে যায়। যবেহ ছাড়াও শরীয়তে ‘নহর’ করা বৈধ; যার পদ্ধতি হল, পশু দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় সিনায় ছুরি (বা বর্শা) দ্বারা আঘাত করতে হবে; যাতে তার কণ্ঠনালী ও রক্তবাহী বিশেষ শিরা কেটে যায় এবং সমস্ত রক্ত প্রবাহিত হয়ে যায়।
[৮] মুশরিকগণ তাদের পূজ্যপ্রতিমার নিকটে পাথর বা অন্য কিছু স্থাপন করে একটি নির্দিষ্ট জায়গা বানিয়ে নিত; যাকে نصب (বেদী, থান বা আস্তানা) বলা হত। আর সেই স্থানে মানত ও নযর মানা পশু ঐ পূজ্যপ্রতিমার নামে বলি দিত। অর্থাৎ, এটি {وَمَا أُهِلَّ بِهِ لِغَيْرِ اللهِ} (গায়রুল্লাহর উদ্দেশ্যে যবেহ) এরই একটি ধরন। সুতরাং এখান থেকে প্রতীয়মান হয় যে, আস্তানা, কবরস্থান ও দর্গায় গিয়ে লোকেরা নিজের মনষ্কামনা পূরণ করার জন্য এবং কবরস্থ বুযুর্গের সন্তুষ্টি হাসিলের জন্য যে পশু (মুরগী, ছাগল ইত্যাদি) যবেহ বা উৎসর্গ করে কিংবা পোলাও বা (সিন্নি, মিঠাই) খাবার বণ্টন করে, তা ভক্ষণ করা হারাম। আর এ সব আল্লাহর বাণীঃ {وَمَا ذُبِحَ عَلَى النُّصُبِ} এর শামিল।
[৯] {وَأَن تَسْتَقْسِمُواْ بِالأَزْلاَمِ} এই অংশের দুটি অর্থ বর্ণনা করা হয়েছে ; (ক) তীরের মাধ্যমে বণ্টন করা (খ) তীরের মাধ্যমে ভাগ্য পরীক্ষা করা।
প্রথম অর্থের ব্যাপারে বলা হয় যে,
জুয়া ইত্যাদিতে যবেহকৃত পশুর গোশত বণ্টনের ক্ষেত্রে উক্ত তীর (লটারী হিসাবে) ব্যবহার করা হত। যার ফলে কেউ প্রাপ্য অংশের চাইতে বেশী পেত, আবার কেউ সম্পূর্ণরূপে বঞ্চিত হত।
দ্বিতীয় অর্থের ব্যাপারে বলা হয় যে,
বিশেষ তীর হত, তারা কোন কর্মের প্রারম্ভে তার মাধ্যমে ভাগ্য পরীক্ষা করত। তারা তিন ধরণের তীর তৈরী করে রেখেছিল। তার মধ্যে একটিতে (افْعَلْ) অর্থাৎ ‘কর’ এবং দ্বিতীয়টিতে (لاَ تَفْعَلْ ) অর্থাৎ ‘করো না’ লিখা থাকত। আর তৃতীয়টিতে কোন কিছু লেখা থাকত না। ভাগ্য পরীক্ষার সময় যদি প্রথম তীরটি (যাতে ‘কর’ লেখা আছে) বের হত, তাহলে তারা সে কর্মটি সম্পাদন করত, যদি দ্বিতীয় তীরটি (যাতে ‘করো না’ লেখা আছে) বের হত, তাহলে তারা সে কর্মটি সম্পাদন করত না, আর যদি তৃতীয় তীরটি (যাতে কোন কিছু লেখা থাকত না) বের হত, তাহলে তারা পুনরায় ভাগ্য পরীক্ষা করত। আর এটাও এক ধরণের গণকের কাজ এবং আল্লাহ ছাড়া অন্যের নিকট সাহায্য প্রার্থনারই একটি চিত্র মাত্র। এই জন্য (ইসলামে) একে হারাম বা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। استقسام এর অর্থ হল, ভাগ্য পরীক্ষা করা।
[১০] এখানে ক্ষুধার শেষ পর্যায়ের অবস্থায় উল্লিখিত হারাম খাদ্য ভক্ষণ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। হ্যাঁ, তবে তাতে যেন আল্লাহর অবাধ্যাচরণ উদ্দেশ্য না হয় এবং সীমালঙ্ঘন করা না হয়। অর্থাৎ প্রাণ বাঁচানোর জন্য যতটুকু প্রয়োজন শুধুমাত্র ততটুকু ছাড়া বেশী যেন ভক্ষণ করা না হয়।

(আহসানুল বায়ান তাফসীর)

সূরা আল মায়েদা অন্য স্থানে মহান আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত আরো বলেন

فَاجْتَنِبُوهُ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ [المائدة: 90

অনুবাদঃ
তোমরা তা বর্জন কর, যাতে তোমরা সাফল্যমন্ডিত হতে পার।

৪) মহান আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত মানুষকে প্রিপেইড ক্ষমতা দিয়েছেন এই ব্যাপারে রাজত্ব নামক সূরা আছে কুরআনুল কারীমে তথা সূরা আল মূলকঃ

মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দেওয়া এই প্রিপেইড ক্ষমতাকে আপনি কিভাবে ব্যবহার করেছেন সেটারই বিচার হবে কাল কেয়ামতের ময়দানে।
যেমন আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত বলেন-

الَّذِي خَلَقَ الْمَوْتَ وَالْحَيَاةَ لِيَبْلُوَكُمْ أَيُّكُمْ أَحْسَنُ عَمَلًا وَهُوَ الْعَزِيزُ الْغَفُورُ [الملك: 2

অনুবাদঃ
যিনি সৃষ্টি করেছেন মৃত্যু ও জীবন তোমাদেরকে পরীক্ষা করবার জন্য; কে তোমাদের মধ্যে কর্মে সর্বোত্তম?[১] আর তিনি পরাক্রমশালী, বড় ক্ষমাশীল।

সংক্ষিপ্ত তাফসীরঃ
روح (আত্মা) একটি এমন অদৃশ্যমান বস্তু যে, যে দেহের সাথে তার সম্পর্ক বহাল থাকে, তাকে জীবিত বলা হয়। আর যে দেহ হতে তার সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়, তাকে মৃত্যুর শিকার হতে হয়। জীবনের পর রয়েছে মৃত্যু। আল্লাহ তাআলা ক্ষণস্থায়ী এই জীবনের ব্যবস্থা এই জন্য করেছেন, যাতে তিনি পরীক্ষা করতে পারেন যে, এই জীবনের সদ্ব্যবহার কে করে? যে এ জীবনকে ঈমান ও আনুগত্যের কাজে ব্যবহার করবে, তার জন্য রয়েছে উত্তম প্রতিদান এবং যে এর অন্যথা করবে, তার জন্য রয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তি।

৫).  মহান আল্লাহ এ কথাও বলেছেন যে দুনিয়াতে তিনি চূড়ান্ত বিচার করবেন না চূড়ান্ত বিচার করবেন আখেরাতে তাইতো তিনি বলেছেন-

وَمَا كَانَ النَّاسُ إِلَّا أُمَّةً وَاحِدَةً فَاخْتَلَفُوا وَلَوْلَا كَلِمَةٌ سَبَقَتْ مِنْ رَبِّكَ لَقُضِيَ بَيْنَهُمْ فِيمَا فِيهِ يَخْتَلِفُونَ [يونس: 19

অনুবাদঃ
সমস্ত মানুষ (প্রথমে) এক জাতিই ছিল, অতঃপর তারা মতভেদ সৃষ্টি করল।[১] যদি তোমার প্রতিপালকের পক্ষ হতে পূর্ব-ঘোষণা না থাকত, তাহলে যে বিষয়ে তারা মতভেদ করছে, তার চূড়ান্ত মীমাংসা হয়ে যেত। [২]

সংক্ষিপ্ত তাফসীরঃ
[১] অর্থাৎ শিরক হল মানুষের নিজেদের মনগড়া কর্ম। কেননা, প্রথমে এর কোন অস্তিতত্ত্বই ছিল না। সকল মানুষ একই দ্বীন ও একই পথের পথিক ছিল। আর সে পথ হল ইসলামের পথ, যার আসল ভিত্তি হল তাওহীদ। নূহ (আঃ) পর্যন্ত মানুষ সেই তাওহীদের উপর অটল ছিল। পরবর্তীতে তাদের মাঝে একতত্ত্ববাদে মতবিরোধ সৃষ্টি হয় এবং কিছু মানুষ আল্লাহর সাথে, অন্যদেরকেও উপাস্য, প্রয়োজন পূরণকারী এবং দুঃখ-কষ্ট মোচনকারী ভাবতে আরম্ভ করে।
[২] অর্থাৎ যদি আল্লাহর এই ফায়সালা না হত যে, “পূর্ণ প্রমাণ সাব্যস্ত হওয়ার পূর্বে কাউকে শাস্তি দিব না”, অনুরূপ তিনি সৃষ্টি-জগতের (হিসাব-নিকাশের) জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় নির্ধারিত না করে থাকতেন, তাহলে অবশ্যই তিনি তাদের মাঝে ঘটিত মতবিরোধের ফায়সালা করে দিতেন এবং মু’মিনদেরকে বড় সুখী ও কাফেরদেরকে শাস্তি ও কষ্টের সম্মুখীন করতেন।
(আহসানুল বায়ান তাফসীর)

৬).  তারপরও স্বাভাবিক নিয়মে যুগ-যুগান্তরে বিভিন্ন জাতিকে সতর্ক করার জন্য বিভিন্ন সময় বিভিন্ন আজাব দিয়েছেন এ ব্যাপারে  আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সূরা আল-বাকারা-তে বলেন-

أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ خَرَجُوا مِنْ دِيَارِهِمْ وَهُمْ أُلُوفٌ حَذَرَ الْمَوْتِ فَقَالَ لَهُمُ اللَّهُ مُوتُوا ثُمَّ أَحْيَاهُمْ إِنَّ اللَّهَ لَذُو فَضْلٍ عَلَى النَّاسِ وَلَكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَشْكُرُونَ [البقرة: 243

অনুবাদঃ
তুমি কি সেই লোকদের প্রতি লক্ষ্য করোনি, যারা মৃত্যুকে এড়াবার জন্য নিজেদের ঘর থেকে হাজারে হাজারে বের হয়ে গিয়েছিলো, তখন মহান আল্লাহ্‌ তাদের বললেন, ‘তোমাদের মৃত্যু হোক’। তারপর তাদের জীবিত করে উঠালেন। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ্‌ লোকেদের প্রতি দয়াশীল কিন্তু অধিকাংশ লোক শোকর করে না।

সংক্ষিপ্ত তাফসীরঃ
মুত্যু ঘটানো লোকদের বর্ণনা ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন যে, এই লোকগুলো সংখ্যায় চার হাজার ছিলো। অন্য বর্ণনায় রয়েছে যে, তারা ছিলো আট হাজার। ইবনু আবী হাতিম (রহঃ) বর্ণনা করেন, ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেছেনঃ আয়াতে যে লোকদের কথা বলা হয়েছে তারা ‘দাওয়ারদান’ নামক এক এলাকার বাসিন্দা ছিলো। ‘আলী ইবনু ‘আসিম (রহঃ) -ও বলেন যে, তারা দাওয়ারদান এলাকার অধিবাসী ছিলো যা ‘ইরাকের ওয়াসিত নামক স্থান থেকে কয়েক মাইল দূরে একটি গ্রাম।
ওয়াকী‘ ইবনু জাররাহ (রহঃ) তার তাফসীরে বর্ণনা করেন যে,
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) বলেছেন, তারা সংখ্যায় ছিলো চার হাজার। প্লেগের ভয়ে তারা নিজ এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়। তারা বলেছিলোঃ আমাদের এমন এক স্থানে চলে যাওয়া উচিত যেখানে গেলে মৃত্যু থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। অতঃপর তারা এমন এক এলাকায় উপস্থিত হয় যেখানে পৌঁছার পর মহান আল্লাহ্‌ বলেন, ‘মরে যাও’ ফলে তারা সবাই সেখানেই মারা যায়। কিছু কাল অতিক্রান্ত হওয়ার পর কোন এক নবী ঐ স্থান অতিক্রম করার সময় মহান আল্লাহ্‌র কাছে দু‘আ করলে মহান আল্লাহ্‌ তার দু‘আ কবূল করে তাদেরকে পুনর্জীবিত করেন।
(ইবনে কাসীর)
তফসীরের বর্ণনায় এটাকে বনী-ইস্রাঈলদের যুগের ঘটনা বলা হয়েছে এবং যে নবীর দু’আয় তাদেরকে মহান আল্লাহ পুনরায় জীবিত করেছিলেন, তাঁর নাম ‘হিযক্বীল’ বলা হয়েছে। এরা জিহাদে নিহত হয়ে যাওয়ার ভয়ে অথবা মহামারী রোগের ভয়ে নিজেদের ঘর থেকে বের হয়ে গিয়েছিল; যাতে মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে যায়। কিন্তু মহান আল্লাহ তাদেরকে মৃত্যু দিয়ে
প্রথমতঃ এ কথা জানিয়ে দিলেন যে, আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত ভাগ্য থেকে বেঁচে তোমরা কোথাও যেতে পারবে না।
দ্বিতীয়তঃ এও জানিয়ে দিলেন যে, মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল হলেন মহান আল্লাহ।
তৃতীয়তঃ আল্লাহ তাআলা পুনরায় সৃষ্টি করার উপর ক্ষমতাবান। তিনি সমস্ত মানুষকে ঐভাবেই জীবিত করবেন, যেভাবে তাদেরকে মৃত্যু দিয়ে জীবিত করে দিলেন।
(আহসানুল বায়ান তাফসীর)
রব্বে কারীম স্বাভাবিক নিয়ম অনুযায়ী হযরত আদম আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম থেকে শুরু করে  হযরত নূহ আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালাম পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য কোন বিধি-বিধান নাযিল করেন নি, এই কারণেই মহান আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত এই বিশেষ সময়ে প্রতিরক্ষা, যুদ্ধ-ব্যবস্থা এবং এ সংক্রান্ত অন্যান্য বিষয়ে স্বয়ং নিজেই ব্যবস্থা গ্রহণ করতেন।

অতঃপর মহান আল্লাহ নাগরিক সকল বিধি-বিধান মূসা আলাইহিস সালাতু সালামের তাওরাতের মাধ্যমে নাযিল করেছেন। যেমনটি মহান আল্লাহ বলেছেন- সূরা আল-বাকারার ২৪৯, ২৫০, ২৫১ এবং ২৫২ নং আয়াতে।

আর বাকি আমাদের সমাজের স্বাভাবিক নিয়ম অনুসারে কারো যদি একাধিক বাচ্চা থাকে সেক্ষেত্রে দুষ্ট বাচ্চাটিকে ধমক, মৃদু প্রহার, অন্য কোন শাস্তি বা বিশেষ কোন পদ্ধতির মাধ্যমে আমরা তাকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকি ঠিক তেমনি মহান আল্লাহ আমাদের শাসন করেছেন- সিডর, সুনামি, আইলা ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের বিপদ-আপদের মাধ্যমে।

৭). মহান আল্লাহ যুগ-যুগান্তরে বিভিন্ন জাতিকে শাস্তি দিয়েছেন যেমন শাস্তি দিয়েছেন হযরত মূসা আলাইহিস সালাতু সালামের কওম-কে যে কথা তিনি সূরা আল-আরাফ বলে দিয়েছেন-

فَأَرْسَلْنَا عَلَيْهِمُ الطُّوفَانَ وَالْجَرَادَ وَالْقُمَّلَ وَالضَّفَادِعَ وَالدَّمَ آيَاتٍ مُفَصَّلَاتٍ فَاسْتَكْبَرُوا وَكَانُوا قَوْمًا مُجْرِمِينَ [الأعراف: 133

অনুবাদঃ
অতঃপর আমি তাদের উপর প্লাবন, পঙ্গপাল, উকুন, ব্যাঙ ও রক্তের বিপদ পাঠিয়েছিলাম সুস্পষ্ট নিদর্শন হিসেবে, কিন্তু তারা ঔদ্ধত্য প্রকাশ করল। তারা ছিল এক অপরাধী জাতি।

সংক্ষিপ্ত তাফসীরঃ
طوفان (তুফান) বলতে বন্যা, প্লাবন, প্রচুর বৃষ্টিপাত, যাতে প্রতিটি জিনিস ডুবে যায়। অথবা অধিক মৃত্যু বোঝানো হয়েছে, যাতে প্রতিটি ঘরে মাতম শুরু হয়।
جراد পঙ্গপালকে বলে। ফসলের উপর পঙ্গপালের আক্রমণ ও অনিষ্টকারিতা সর্বজন-বিদিত। এই সমস্ত পঙ্গপাল তাদের ফসল ও ফলাদি খেয়ে শেষ করে ফেলত।
قُمَّل উকুন যা মানুষের দেহ, পোশাক বা চুলে পাওয়া যায়। অথবা ঘুণ পোকা যা শস্যের অধিক অংশ খেয়ে নষ্ট করে দেয়। উকুনকে মানুষ ঘৃণা করে। আর বেশি পরিমাণে হলে মানুষ পেরেশান হয়ে যায়। আবার তা যদি শাস্তি স্বরূপ হয়, তাহলে তার কষ্ট অনুমেয়। অনুরূপ ঘুণ পোকা মানুষের রুযী ও আর্থিক পরিকাঠামো ভেঙ্গে ফেলার জন্য যথেষ্ট।
ضفادع ضفدعة এর বহুবচন। যার অর্থ ব্যাঙ। যা পানিতে খাল ও ডোবায় জন্মায়। এই সমস্ত ব্যাঙ তাদের খাবারে, বিছানায়, গুদামজাত শস্যে এসে উপস্থিত হত; মোটকথা চারিদিকে শুধু ব্যাঙ আর ব্যাঙই নজরে আসত। যার কারণে তাদের খাওয়া, পান করা, শোয়া, আরাম করা সব হারাম হয়ে গিয়েছিল।
دَم (রক্ত) এর অর্থ পানি রক্তে পরিণত হওয়া। ফলে তাদের পানি পান করা অসম্ভব হয়ে পড়ত। কেউ কেউ রক্ত বলতে নাক দিয়ে ঝরা রক্ত বুঝিয়েছেন। অর্থাৎ, প্রত্যেক ব্যক্তির নাক দিয়ে রক্ত ঝরার রোগ শুরু হয়।
آيات مفصلات এগুলি স্পষ্ট ও আলাদা আলাদা মু’জিযা ছিল; যা সময়ের ব্যবধানে তাদের উপর এসেছিল।

অন্য স্থানে মহান আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত আরো বলেছেন

وَلَقَدْ آتَيْنَا مُوسَى تِسْعَ آيَاتٍ بَيِّنَاتٍ فَاسْأَلْ بَنِي إِسْرَائِيلَ إِذْ جَاءَهُمْ فَقَالَ لَهُ فِرْعَوْنُ إِنِّي لَأَظُنُّكَ يَامُوسَى مَسْحُورًا [الإسراء: 101

অনুবাদঃ
আমি মূসাকে নয়টি স্পষ্ট নিদর্শন দিয়েছিলাম। বানী ইসরাঈলকে জিজ্ঞেস করে দেখ, যখন সে তাদের (অর্থাৎ ফির‘আওন ও তার প্রধানদের) নিকট আসল তখন ফির‘আওন তাকে বলল, ‘ওহে মূসা! আমি তোমাকে অবশ্যই যাদুগ্রস্ত মনে করি।’

সংক্ষিপ্ত তাফসীরঃ
নয়টি মু’জিযা (অলৌকিক ঘটনা) হল;
শুভ্র হাত, লাঠি, অনাবৃষ্টি, ফল-ফসলে কমি, তুফান, পঙ্গপাল, উকুন, ব্যাঙ এবং রক্ত। ইমাম হাসান বাসরী (রঃ) বলেন,
অনাবৃষ্টি এবং ফল-ফসলে কমি একই জিনিস। আর নবম মু’জিযা ছিল লাঠির যাদুকরদের ভেল্কিকে গিলে ফেলা। এ ছাড়াও মূসা (আঃ)-কে আরো মু’জিযা দেওয়া হয়েছিল। যেমন, লাঠিকে পাথরে মারলে তা থেকে ১২টি ঝরনা প্রবাহিত হয়েছিল। মেঘের ছায়া করা এবং মান্ন্ ও সালওয়া ইত্যাদি। কিন্তু এখানে ৯টি নিদর্শন বলতে কেবল সেই ৯টি মু’জিযাকেই বুঝানো হয়েছে, যেগুলো ফিরআউন ও তার সম্প্রদায় দর্শন করেছিল। এই জন্য ইবনে আব্বাস (রাঃ) সমূদ্র বিদীর্ণ হয়ে পথ তৈরী হয়ে যাওয়াকেও সেই ৯টি মু’জিযার অন্তর্ভুক্ত গণ্য করেছেন এবং অনাবৃষ্টি ও ফল-ফসলে কমি এই উভয়কে একটি গণ্য করেছেন। তিরমিযীর একটি বর্ণনায় নয়টি নিদর্শনের ব্যাখ্যা এর বিপরীত করা হয়েছে।

8). অন্য আয়াতে মহান আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত বিভিন্ন বিপদ-আপদ ও বালা-মুসিবত যে মানুষের কারণেই হয় সে বিষয়ে পরিষ্কার ঘোষণা দিয়েছেন, এভাবে যে,

وَمَا أَصَابَكُمْ مِنْ مُصِيبَةٍ فَبِمَا كَسَبَتْ أَيْدِيكُمْ وَيَعْفُو عَنْ كَثِيرٍ [الشورى: 31

অনুবাদঃ
তোমাদের যে বিপদ-আপদ ঘটে তা তো তোমাদের কৃতকর্মেরই ফল এবং তোমাদের অনেক অপরাধ তিনি ক্ষমা করে দেন।

সংক্ষিপ্ত তাফসীরঃ
এ থেকে উদ্দেশ্য যদি ঈমানদাররা হয়, তবে অর্থ হবে, তোমাদের কোন কোন পাপের কাফফারা সেই বিপদাপদ হয়, যা তোমাদের গুনাহের কারণে তোমাদের উপর আপতিত হয় এবং কিছু গুনাহ মহান আল্লাহ তো এমনিই ক্ষমা করে দেন। আল্লাহর সত্তা বড়ই দয়ালু। ক্ষমা করে দেওয়ার পর আখেরাতে এর জন্য আর পাকড়াও করবেন না, হাদীসে এসেছে যে, “মু’মিন যে কোন কষ্ট এবং দুশ্চিন্তা ও দুঃখের শিকার হয়; এমনকি তার পায়ে কাঁটাও যদি ঢুকে যায়, তাহলে তার ফলে মহান আল্লাহ তার গুনাহ মাফ করে দেন।”
(বুখারীঃ কিতাবুল মারয্বা, মুসলিমঃ কিতাবুল বির্র)
পক্ষান্তরে উদ্দেশ্য ও সম্বোধন যদি ব্যাপক ও সাধারণ হয়, তাহলে অর্থ হবে, দুনিয়াতে যে বিপদাপদের তোমরা সম্মুখীন হও, এ সবই তোমাদের পাপের ফল। অথচ মহান আল্লাহ অনেক পাপ তো এমনিই মাফ করে দেন। অর্থাৎ, হয় চিরদিনকার জন্য মাফ করে দেন। অথবা পাপের শাস্তি সত্বর দেন না। (আর শাস্তি দানে বিলম্ব করাও এক প্রকার ক্ষমাশীলতা) যেমন, অন্যত্র বলেছেন,

{وَلَوْ يُؤَاخِذُ اللهُ النَّاسَ بِمَا كَسَبُوْا مَا تَرَكَ عَلَى ظَهْرِهَا مِنْ دَآبَّةٍ}

অর্থাৎ, আল্লাহ যদি মানুষকে তাদের কৃতকর্মের কারণে পাকড়াও করতেন, তবে ভূপৃষ্ঠে চলমান কাউকে ছেড়ে দিতেন না।”
(সূরা ফাত্বির ৩৫:৪৫ আয়াত, সূরা নাহল ১৬:৬১ নং আয়াতও এই অর্থেরই।)

অন্য আয়াতে মহান আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত আরো পরিষ্কারভাবে বলেছেন-

ظَهَرَ الْفَسَادُ فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ بِمَا كَسَبَتْ أَيْدِي النَّاسِ لِيُذِيقَهُمْ بَعْضَ الَّذِي عَمِلُوا لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُونَ [الروم: 41

অনুবাদঃ
মানুষের কৃতকর্মের কারণে জলে স্থলে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে যাতে তিনি তাদেরকে তাদের কোন কোন কাজের শাস্তি আস্বাদন করান, যাতে তারা (অসৎ পথ হতে) ফিরে আসে।

সংক্ষিপ্ত তাফসীরঃ
‘স্থল’ বলতে মানুষের বাসভূমি এবং জল বলতে সমুদ্র, সামুদ্রিক পথ এবং সমুদ্র-উপকূলে বসবাসের স্থান বুঝানো হয়েছে। ‘ফাসাদ’ (বিপর্যয়) বলতে ঐ সকল আপদ-বিপদকে বুঝানো হয়েছে, যার দ্বারা মনুষ্য-সমাজে সুখ-শান্তি ও নিরাপত্তা বিনষ্ট হয় এবং মানুষের শান্তিময় জীবন-যাত্রা ব্যাহত হয়। এই জন্য এর অর্থ গোনাহ ও পাপাচরণ করাও সঠিক। অর্থাৎ, মানুষ এক অপরের উপর অত্যাচার করছে, আল্লাহর সীমা লংঘন করছে এবং নৈতিকতার বিনাশ সাধন করছে, যুদ্ধ-বিগ্রহ ও রক্তপাত সাধারণ ব্যাপার হয়ে পড়েছে। অবশ্য ‘ফাসাদ’-এর অর্থ আকাশ-পৃথিবীর ঐ সকল বিপর্যয় নেওয়াও সঠিক, যা আল্লাহর পক্ষ থেকে শাস্তি ও সতর্কতা স্বরূপ প্রেরণ করা হয়। যেমন দুর্ভিক্ষ, মহামারী, অনিরাপত্তা, ভূমিকম্প, বন্যা ইত্যাদি। উদ্দেশ্য এই যে, যখন মানুষ আল্লাহর অবাধ্যতাকে নিজেদের অভ্যাসে পরিণত করে নেয়, তখন আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রতিফল স্বরূপ তাদের কর্মপ্রবণতা মন্দের দিকে ফিরে যায় এবং তার ফলে পৃথিবী নানা বিপর্যয়ে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে, সুখ-শান্তি বিলীন হয় এবং তার পরিবর্তে ভয়-ভীতি, নিরাপত্তাহীনতা, ছিন্তাই-ডাকাতি, লড়াই ও লুটপাট ছড়িয়ে পড়ে। তার সাথে সাথে কখনো আকাশ ও পৃথিবীর বিভিন্ন আপদ-বিপদ (প্রাকৃতিক দুর্যোগ)ও প্রেরিত হয়। আর তাতে উদ্দেশ্য এই থাকে যে, ঐ সর্বনাশী বিপর্যয় ও আপদ-বিপদ দেখে সম্ভবত মানুষ পাপকর্ম থেকে বিরত হবে এবং আল্লাহর কাছে তওবা করে পুনরায় তাঁর আনুগত্যের দিকে ফিরে আসবে। এর বিপরীত যে সমাজের রীতি-নীতি ও চাল-চলন আল্লাহর আনুগত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত এবং যে সমাজে আল্লাহর ‘হদ্দ’ (দন্ডবিধি) কায়েম হয়, অত্যাচারের জায়গায় ন্যায়পরায়ণতা বিরাজ করে, সে সমাজে সুখ-শান্তি এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে মঙ্গল ও বরকত দেওয়া হয়। যেমন হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, “পৃথিবীতে আল্লাহ তাআলার একটি ‘হদ্দ’ কায়েম করা সেখানকার মানুষের জন্য চল্লিশ দিনের বৃষ্টি থেকেও উত্তম।”
(নাসাঈ, ইবনে মাজা)
অনুরূপ একটি হাদীসে এসেছে, “যখন একটি পাপাচারী মারা যায়, তখন শুধু মানুষই নয়; বরং গ্রাম-শহর, গাছপালা এবং প্রাণীরাও পর্যন্ত শান্তিলাভ করে।”
(বুখারীঃ কিতাবুর রিক্বাক, মুসলিমঃ কিতাবুল জানাইয)

বাঁচার উপায় সমূহঃ

 ১.   ইস্তেগফার-

وَمَا كَانَ اللَّهُ مُعَذِّبَهُمْ وَهُمْ يَسْتَغْفِرُونَ [الأنفال: 33

 অনুবাদঃ
এবং যখন তারা ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকবে এরূপ অবস্থায়ও আল্লাহ তাদেরকে শাস্তি দিবেন না।

মহান রব্বে কারীম সূরা আন-নূহে আরো বলেছেন

اسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ إِنَّهُ كَانَ غَفَّارًا [نوح: 10
يُرْسِلِ السَّمَاءَ عَلَيْكُمْ مِدْرَارًا (11
وَيُمْدِدْكُمْ بِأَمْوَالٍ وَبَنِينَ وَيَجْعَلْ لَكُمْ جَنَّاتٍ وَيَجْعَلْ لَكُمْ أَنْهَارًا (12 [نوح: 11 – 13

অনুবাদঃ
তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ক্ষমা প্রার্থনা কর। তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল। (১০ নং আয়াত)
(তোমরা তা তথা ক্ষমা প্রার্থনা করলে) তিনি অজস্র ধারায় তোমাদের উপর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন। (১১ নং আয়াত)
তোমাদের ধন সম্পদ ও সন্তানাদি বাড়িয়ে দেবেন, তোমাদের জন্য বাগান সৃষ্টি করবেন এবং তোমাদের জন্য নদীনালা প্রবাহিত করবেন।
(১২ নং আয়াত)

সংক্ষিপ্ত তাফসীরঃ
১০ নং আয়াত-এর তাফসীর
ঈমান এবং আনুগত্যের পথ অবলম্বন কর এবং তোমাদের প্রভুর কাছে নিজেদের বিগত পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে নাও।
১১ নং আয়াত-এর তাফসীর
এই আয়াতের কারণে কোন কোন আলেম ইস্তিসক্বার নামাযে সূরা নূহ পাঠ করাকে মুস্তাহাব মনে করেন। বর্ণিত আছে যে, উমার (রাঃ)ও একদা ইস্তিসক্বার নামাযের জন্য মিম্বরে আরোহণ করে কেবলমাত্র ইস্তিগফারের আয়াতগুলি (যাতে এই আয়াতও ছিল) পড়ে মিম্বর হতে নেমে গেলেন এবং বললেন, বৃষ্টির সেই পথসমূহ থেকে বৃষ্টি কামনা করেছি, যা আসমানে রয়েছে এবং যেগুলো হতে বৃষ্টি যমীনে বর্ষিত হয়। (ইবনে কাসীর) হাসান বাসরী (রঃ) এর ব্যাপারে বর্ণিত আছে যে, তাঁর কাছে এসে কেউ অনাবৃষ্টির অভিযোগ জানালে, তিনি তাকে ইস্তিগফার করার কথা শিক্ষা দিতেন। আর একজন তাঁর কাছে দরিদ্রতার অভিযোগ জানালে, তাকেও তিনি এই (ইস্তিগফার করার) কথাই বাতলে দিলেন। অন্য একজন তার বাগান শুকিয়ে যাওয়ার অভিযোগ জানালে, তাকেও তিনি ইস্তিগফার করতে বললেন। এক ব্যক্তি বলল যে, আমার সন্তান হয় না, তাকেও তিনি ইস্তিগফার করতে বললেন। যখন কেউ তাঁকে প্রশ্ন করল যে, আপনি সবাইকে কেবল ইস্তিগফারই করতে কেন বললেন? তখন তিনি এই আয়াতই তেলাঅত করে বললেন, ‘আমি নিজের পক্ষ থেকে এ কথা বলিনি, বরং উল্লিখিত সমস্ত ব্যাপারে এই ব্যবস্থাপত্র মহান আল্লাহই দিয়েছেন।’ (আইসারুত তাফাসীর)
১২ নং আয়াত-এর তাফসীর
ঈমান ও আনুগত্যের কারণে তোমরা শুধু আখেরাতের নিয়ামতই পাবে না, বরং পার্থিব জীবনেও আল্লাহ মাল-ধন এবং সন্তান-সন্ততি দান করবেন।

২.  অস্বাস্থ্যকর খাদ্য পানীয় থেকে বিরত থাকতে হবে।
৩. পশুপাখির অপ্রোজনীয় সংস্রব থেকে বিরত থাকতে হবে।

বিশেষ করে যে সকল পশু পাখির গোশত খাওয়া হারাম।বর্তমান সময়ের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর মহামারি আকার ধারনকারী করোনা ভাইরাস যেটি ছড়িয়েছে ইঁদুর ও বাঁদুরের শ্বাস থেকে। এখন যেহেতু প্রতিরক্ষায় কুকুরের প্রয়োজনীয়তা কম সেহেতু তা থেকে বিরত থাকতে হবে- আমরা অনেকেই হয়তো জানি না কুকুর নামের আমাদের অতি প্রিয় পোশা প্রাণীটি একটি মারাত্মক রোগের পোষক। রোগটির নাম হাইডাটিড সিস্ট ডিজিজ। ইকাইনোক্কোস গ্র্যানোলোসাস নামক এক ধরনের কৃমির সংক্রমণ হলে এ রোগের সৃষ্টি হয়।কৃমিটির আরেক নাম ডগ ট্যাপ ওয়ার্ম বা কুকুরের ফিতাকৃমি।

ডগ ট্যাপ ওয়ার্ম কুকুরের অন্তে বাস করে। একটি প্রাপ্তবয়স্ক ডগ ট্যাপ ওয়ার্ম কুকুরের অন্তে থেকে হাজার হাজার ডিম ছাড়ে। সে ডিম বেরিয়ে আসে কুকুরের মলের সাথে। মিশে যায় ঘাস কিংবা পানির সঙ্গে। এই দূষিত ঘাস কিংবা পানি খায় তারা কিংবা অন্যান্য গবাদিপশু। ওরা আক্রান্ত হয় ডগ ট্যাপ ওয়ার্ম দ্বারা। ডগ ট্যাপ ওয়ার্মের লার্ভা দশা ওদর অন্ত্রের গাত্র ছেদ করে রক্তের সাথে মিশে যায়। ছড়িয়ে পড়ে ওদের লিভার ফুসফুস আর কিংবা মস্তিষ্কে। সে সমস্ত অঙ্গে ওরা তৈরি করে এক ধরনের সিষ্ট। সিষ্টের ভিতরটা থাকে তরলপূর্ণ। অনেকটা আঙ্গুর ফলের মতো দেখতে সিষ্টগুলো তবে রংটা সাদাটে। এই সিষ্টের নাম ’হাইডাটিড সিষ্ট’।

এই হাইডাটিড সিষ্ট আস্তে আস্তে বড় হয়। কখনো বা মুরগির ডিমের মত আবার কখনো বা উটপাখির ডিমের মত। ডগ ট্যাপ ওয়ার্মের একটি আদর্শ জীবন চক্র সাধারণত এভাবেই আবির্ভূত হয় কুকুর এবং এরা উট কিংবা গবাদিপশুর মধ্যে। 

৪. পাঁচবার অজু এবং ইসলাম সাত বছর বয়স থেকে এ মর্মে নির্দেশ দিয়েছে যে,

حَدَّثَنَا مُؤَمَّلُ بْنُ هِشَامٍ، – يَعْنِي الْيَشْكُرِيَّ – حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ، عَنْ سَوَّارٍ أَبِي حَمْزَةَ، – قَالَ أَبُو دَاوُدَ وَهُوَ سَوَّارُ بْنُ دَاوُدَ أَبُو حَمْزَةَ الْمُزَنِيُّ الصَّيْرَفِيُّ – عَنْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ جَدِّهِ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ “‏ مُرُوا أَوْلاَدَكُمْ بِالصَّلاَةِ وَهُمْ أَبْنَاءُ سَبْعِ سِنِينَ وَاضْرِبُوهُمْ عَلَيْهَا وَهُمْ أَبْنَاءُ عَشْرِ سِنِينَ وَفَرِّقُوا بَيْنَهُمْ فِي الْمَضَاجِعِ ‏”‏ ‏.

৪৯৫. মুআম্মাল ইবনু হিশাম …………. আমর ইবনু শুআয়েব (রহঃ) থেকে পর্যায়ক্রমে তাঁর পিতা এবং দাদার সূত্রে বর্ণিত। তিনি (দাদা) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ যখন তোমাদের সন্তানরা সাত বছরে উপনীত হবে, তখন তাদেরকে নামায পড়ার নির্দেশ দেবে এবং তাদের বয়স যখন দশ বছর হবে তখন নামায না পড়লে এজন্য তাদেরকে মৃদু-প্রহার কর এবং তাদের (ছেলে-মেয়েদের) বিছানা পৃথক করে দিবে।
(আবু দাউদ, হাদীস নং-৪৯৪, পৃষ্ঠা নং-৭০, কিতাবুস্ সালাত অধ্যায়-মূল কিতাব)

৫. কাবিখা প্রকল্প-

তথা কাজের বিনিময়ে খাদ্য দ্রব্য গ্রহণ; কাজ করে কাজের বিনিময় হিসেবে খাদ্যদ্রব্য গ্রহণ করা। ঠিক তদ্রুপ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম কিছু দোয়া শিখিয়েছেন যেগুলির বিনিময়ে আমরা নিরাপদ  থাকবো, ইনশাআল্লাহ।

اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْبَرَصِ، وَالْجُنُونِ، وَالْجُذَامِ، وَمِنْ سَيِّئِ الأَسْقَامِ

বাংলা উচ্চারণঃ
“আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিনাল বারসি ওয়াল জুনুনি ওয়াল জুজামি ওয়া মিন ছাইয়্যি ইল আসক-ম”

অনুবাদঃ
ইয়া আল্লাহ! আমি শ্বেত (কুষ্ঠ) রোগ হতে, পাগলামী হতে, খুজলী-পাঁচড়া হতে এবং ঘৃণ্য রোগ হতে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করছি –

حَدَّثَنَا مُوسَى بْنُ إِسْمَاعِيلَ، حَدَّثَنَا حَمَّادٌ، أَخْبَرَنَا قَتَادَةُ، عَنْ أَنَسٍ، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم كَانَ يَقُولُ ‏ “‏ اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْبَرَصِ وَالْجُنُونِ وَالْجُذَامِ وَمِنْ سَيِّئِ الأَسْقَامِ ‏”‏ ‏.باب في الاستعاذه

১৫৫৪. মূসা ইবনে ইসমাঈল (রহঃ) ………….. আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম এরূপ দু’আ করতেনঃ ইয়া আল্লাহ! আমি শ্বেত (কুষ্ঠ) রোগ হতে, পাগলামী হতে, খুজলী-পাঁচড়া হতে এবং ঘৃণ্য রোগ হতে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করছি –
(আবু দাউদ, হাদীস নং-১৫৫৪, পৃষ্ঠা নং-২১৬, আত্মরক্ষা অনুচ্ছেদ -মূল কিতাব)

  اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ مُنْكَرَاتِ الْأَخْلَاقِ، وَالْأَعْمَالِ، وَالْأَهْوَاءِ  

বাংলা উচ্চারণঃ
“আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিন মুনকারা-তিল আখলাকি ওয়াল আমা-লি ওয়াল আহও-য়”

অনুবাদঃ
হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে পানাহ চাই মন্দ আখলাক, মন্দ আমল ও কুপ্রবৃত্তি থেকে।

حَدَّثَنَا سُفْيَانُ بْنُ وَكِيعٍ، حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ بَشِيرٍ، وَأَبُو أُسَامَةَ عَنْ مِسْعَرٍ، عَنْ زِيَادِ بْنِ عِلاَقَةَ، عَنْ عَمِّهِ، قَالَ كَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ ‏ “‏ اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ مُنْكَرَاتِ الأَخْلاَقِ وَالأَعْمَالِ وَالأَهْوَاءِ ‏”‏ ‏.‏ قَالَ هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ ‏.‏ وَعَمُّ زِيَادِ بْنِ عِلاَقَةَ هُوَ قُطْبَةُ بْنُ مَالِكٍ صَاحِبُ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم

৩৫৯১. সুফয়ান ইবন ওয়াকী (রহঃ) …… যিয়াদ ইবন ইলাকা-এর চাচা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (দু’আ) বলতেনঃ হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে পানাহ চাই মন্দ আখলাক, মন্দ আমল ও কুপ্রবৃত্তি থেকে।
{সহীহ, মিশকাত, তাহকিক ছানী ২৪৭১, তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ৩৫৯১ [আল মাদানী প্রকাশনী] এবং (আবু দাউদ, হাদীস নং-৩৫৯১, পৃষ্ঠা নং-১৯৯, খন্ড-০২ -মূল কিতাব)

 বিঃদ্রঃ
যিয়াদ ইবন ইলাকা (রহঃ) এর চাচা হলেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবী কুতবা ইবন মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু।

**উল্লেখিত দুটি দোয়া আমরা যখনই সময় পাব তখনি পড়ব! ইনশাআল্লাহ।**

 

*এছাড়া মাগরিব ও ফজরের সালাতের পর নিম্নক্ত দোয়াটি তিনবার পড়বো*

بِسْمِ اللَّهِ الَّذِي لَا يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ، فِي الْأَرْضِ، وَلَا فِي السَّمَاءِ، وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ

বাংলা উচ্চারণঃ
“বিসমিল্লাহিল্লাজি লা ইয়া দুররু মাআ’স মিহি শাইয়ূন ফিল আরদি ওয়ালা ফিস সামায়ি। ওয়াহুয়াস সামিউল আলিম”।

অনুবাদঃ
“আল্লাহর নামে যাঁর নামের বরকতে আসমান ও যমীনের কোনো বস্তুই ক্ষতি করতে পারে না, তিনি সর্বশ্রোতা ও মহাজ্ঞানী।”

حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مَسْلَمَةَ، حَدَّثَنَا أَبُو مَوْدُودٍ، عَمَّنْ سَمِعَ، أَبَانَ بْنَ عُثْمَانَ، يَقُولُ: سَمِعْتُ عُثْمَانَ يَعْنِي ابْنَ عَفَّانَ، يَقُولُ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: مَنْ قَالَ بِسْمِ اللَّهِ الَّذِي لَا يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ، فِي الْأَرْضِ، وَلَا فِي السَّمَاءِ، وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ، ثَلَاثَ مَرَّاتٍ، لَمْ تُصِبْهُ فَجْأَةُ بَلَاءٍ، حَتَّى يُصْبِحَ، وَمَنْ قَالَهَا حِينَ يُصْبِحُ ثَلَاثُ مَرَّاتٍ، لَمْ تُصِبْهُ فَجْأَةُ بَلَاءٍ حَتَّى يُمْسِيَ،

৫০৮৮। আবান ইবনু উসমান (রহঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আমার পিতাকে বলতে শুনেছি, এবং তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছেনঃ যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় তিনবার বলবেঃ “আল্লাহর নামে যাঁর নামের বরকতে আসমান ও যমীনের কোনো বস্তুই ক্ষতি করতে পারে না, তিনি সর্বশ্রোতা ও মহাজ্ঞানী।” সকাল হওয়া পর্যন্ত তার প্রতি কোনো হঠাৎ বিপদ আসবে না। অর যে তা সকালে তিনবার বলবে সন্ধ্যা পর্যন্ত তার উপর কোনো হঠাৎ বিপদ আসবে না। (আবু দাউদ, হাদীস নং-৫০৮৮, পৃষ্ঠা নং-৬৯৪, -মূল কিতাব)

এই দোয়া করি বেশি বেশি পড়লে আল্লাহ তায়ালা করোনা ভাইরাস ও অন্যান্য মহামারী থেকে আমাদেরকে রক্ষা করবেন, ইনশাআল্লাহ।

এখানে মন্তব্য করুন

লেখক পরিচিতি

নামঃ মুহসিন উদ্দীন
 

খুব শিঘ্রই বাকী তথ্য যুক্ত করা হবে।

আমাদের অনুসরণ করুন

সর্বশেষ ইউটিউব ভিডিও

Play Video

সাম্প্রতিক পোস্ট

সাম্প্রতিক পৃষ্ঠা